somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো জীবন দৃশ্যঃ তাদের অসমাপ্ত গল্প :(

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিতু জানতো ওর সাথে কথা বলার জন্য লিলি ঠিকই ওর রুমের বাইরে দাড়িয়ে থাকবে । ক্লাস নেওয়ার সময়ই মিতুর মনে হয়েছিলো মেয়েটা আসবে । লিলির চোখে যেমন বিশ্ময় ছিল তেমনি মিতু নিজেও অবাক হয়েছে । লিলি যে ওর নিজের ইউনিভার্সিটিতেই ভর্তি হবে এটা মিতুর ধারনায় বাইরে ছিল । মেয়েটা কিংবা ওদের পরিবারের সবাইকে ও একেবারে মন থেকে বের করে দিয়েছিলো । যদিও তাকে ভুলতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে মিতুর !
কিন্তু আজকে আবার সব কিছু চুরমার হয়ে গেল । যে দেওয়ারটা সে তৈরি করে ছিল নিজের কাছেই সেটা আবারও আজ ভেঙ্গে যাবে । যেটুকু এখনও বাকি সেটাও নষ্ট হবে !

কাজ শেষ করে বের হতেই দেখলো বারান্দায় দাড়িয়ে আছে লিলি । ওকে দেখে একটু হাসলো । তারপর বলল
-কেমন আছেন ম্যাম ?
লিলির মুখে ম্যাম ডাক শুনে একটু যেন অস্বস্থি লাগলো । মিতুর বলল
-ম্যাম !
-আপনি টিচার ম্যামই তো ডাকা উচিৎ !
-হ্যা তা ঠিক । তবে ক্লাসের বাইরে আগে যা ডাকতে তাই ডেকো । কেমন !
লিলি যেন কথা শুনে খুশি হল । একটা সময় লিলি ওকে আপুই ডেকেছে অনেক ! মিতু বলল
-তোমাকে এখানে দেখবো ভাবি নি ।
-আমিও না !

ওরা হাটতে হাটতে হাটতে ইউনিভার্সিটির ক্যাফেটরিয়ার দিকে এগিয়ে গেল । দুইটা কফির অর্ডার দিয়ে লিলির কথা শুনতে লাগলো । মিতু অনেক সময় ধরেই যে কথাটা জিজ্ঞেস করবে কি না ভাবছিলো শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল ।
-তোমার ভাইয়ার কি খবর ?

প্রশ্নটা শুনতেই লিলির মুখটা খানিকটা মলিন হয়ে গেল । বলল
-জানি না আপু !
মিতু অবাক হয়ে গেল । বলল
-জানো না মানে ?
-ভাইয়া কোথায় আছে আমরা জানি না । ঐ ঘটনার পরে ভাইয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে । বাবা মায়ের সাথে আর কথা বলে নি ।

মিতু আসলেই অবাক হল কথাটা শুনে । ছেলেটা এমন কাজ করবে সেটা বুঝতেই পারে নি । দুই বছর শাহেদ বাসা ছেড়ে চলে গেছে । কারো সাথে যোগাযোগ রাখে নি ।
কেবল ওর জন্য ?

শাহেদের সাথে দুবছর আগে মিতুর পরিচয় হয় । খুব স্বাভাবিক ভাবে । দুই পরিবারের ভেতরে যোগাযোগ হয় দুজনের বিয়ের ব্যাপারে কথা বার্তা বলার জন্য । মিতুর তখন অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করছে অন্য দিকে শাহেদ চাকরিতে ঢুকেছে । কথা বার্তা বেশ ভালই চলছিলো । শাহেদকে প্রথম দেখাতেই মিতুর ভাল লেগে গেল । একটু রোগা তবে চেহারার ভেতরে একটা মায়া রয়েছে । সব ছেলের চোখ এতো গভীর হয় না ।

মিতুর এটাও বুঝতে কষ্ট হল না যে শাহেদেরও ওকে খুব পছন্দ হয়েছে । সেই ধারনা আরও বিশ্বাসে পরিনত হত যখন পরদিনই শাহেদকে ওর ক্যাম্পাসের সামনে দেখলো । এদিক ওদিক হাটাহাটি করছে । মিতুর মজা লাগলো । একবার মনে হল কিছু সময় শাহেদ ঘুরানো যাক পরে মনে হল দরকার নেই ।
এমন একটা ভাব করে বের হল যেন শাহেদ কে ও দেখতেই পায় নি । রাস্তায় বের হয়ে দেখা হবে । মিতু জানে শাহেদও ওকে দেখে কি বলবে ! বলবে যে এদিক দিয়েই যাচ্ছিলো একটা অফিসের কাজে ।
শাহেদ ওকে দেখেই হাত নাড়লো । মিতু এগিয়ে গেল ওর দিকে । বলল
-আপনি এখানে ? অফিসের কাজে এসেছিলেন বুঝি ?
শাহেদ বলল
-না ! তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি ।

মিতু একটু অবাকই হয়েছিলো । ছেলেটা যে ওর প্রেমে পড়েছে সেটা সে একটুও লুকানোর চেষ্টা করছে না । সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মিতু সাহেদের সাথেই থাকলো । মিতুর নিজেরও যে সাহেদের সাথে থাকতে ভাল লাগছিলো সেটা সে অস্বীকার করলো না ।


তারপর প্রায়ই দিনই শাহেদ অফিস শেষ করে ওর হলের সামনে এসে হাজির হত । কখনও রেস্টুরেন্টে কিংবা ওদের ক্যাম্পাসেরই কোথাও বসে গল্প করতো । আর ফোনে তো কথা আছেই ।

এভাবেই কখন যে দিন চলে যেতে লাগলো মিতুর ঠিক বুঝতেই পারে নি । মিতুর গায়ের রং ছিল একটু চাপা ধরনের । এই নিয়ে মিতুর কানে নানান কথা আসতো মাঝে মাঝেই । ওর বাবা মাও চিন্তায় ছিল ওর বিয়ে নিয়ে । কিন্তু শাহেদের চোখে ও এমন কিছু দেখে নি কোন দিন । বিশেষ করে এই ব্যাপারটাই ওকে সব থেকে বেশি পছন্দ হল ।

বিয়ের কথা বার্তা একদম প্রায় পাকা হয়ে গেল তখনই মিতু একটা কথা জানতে পারলো । কথাটা ওর বাবা মাও ওর কাছ থেকে লুকিয়েছিলো । শাহেদদের পরিবার থেকে বেশ ভাল পরিমানে যৌতুক চাওয়া হয়েছে এবং সেটা নাকি হয়েছে ওর গায়ের রংয়ের জন্য । এমন মেয়ের বিয়ে নাকি যৌতুক ছাড়া হয় না । ওর বাবা মাও ব্যাপারটা ওর কাছ থেকে গোপনই রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু সেটা ও জেনে ফেললো ।

মিতুর কেবল মনে হল ওকে কেউ বিক্রি করে দিচ্ছে । এতো ছোট লাগলো নিজের কাছে । তারপর থেকেই মিতুর বিয়ের জন্য বেঁকে বসলো । কোন ভাবেই সে আর বিয়ে করবে না । ওর বাবা মা প্রথমে ওকে বুঝতে চেষ্টা করলো কিন্তু মিতুর এক কথা সে কোন ভাবেই বিয়ে করবে না । এইখানে করবেই না ।

শাহেদের সাথেও দেখা করা বন্ধ করে দিল । শাহেদ অনেক কয়বার ওকে ফোন দিন মেসেজ করলো এমন কি ওর হলের সামনেও এসে দাড়িয়ে থাকতে লাগলো কিন্তু মিতুর মন গললো না । শাহেদ কে দেখলেই ওর মেজাজ টা আরও গরম হয়ে যেত । একদিন ক্লাসে যেতে গিয়ে শাহেদ ওর সামনে এসে হাজির হল । ওকে বোঝাতে চেষ্টা করলো যে ও এসবে রকিছুই জানতো না কিন্তু মিতুর সেসব কথায় কান দিল না । সাহস করে শাহেদ ওর হাতটা ধরতেই মিতুর মাথায় যেন আরও আগুন চেপে গেল । ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল শাহেদের গালে ।

চড়টা মারার পরে মিতু নিজেই খানিকটা অবাক হল । শাহেদ কেবল বিশ্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । সেদিন মিতু শাহেদের চোখে কি নিদারুন অভিমান দেখেছিলো যা এখনও মাঝে মাঝে মিতুর চোখের সামনে ভাসে ।

ঐ দিনের পরে শাহেদ আর কোন দিন মিতুর সামনে আসে নি । আজকে লিলির কাছ থেকে শুনতে পেল ঐদিনই শাহেদ বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো । যে চাকরিটা করতো সেটাও ছেড়ে দিয়েছিলো । সে কোথায় আছে কেউ বলতে পারে না । কারো সাথেই যে কোন যোগাযোগ রাখে নি ।

লিলি উঠে যাওয়ার সময় বলল
-আপু একটা কথা আপনাকে বলি । আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানি তবুও বলি । ভাইয়া আপনাকে অনেক পছন্দ করতো । অনেক বেশি । এখনও করে । আর ঐ যৌতুকের ব্যাপারে আমি কিংবা ভাইয়া আমরা কেউ জানতামই না । আমি জানলেও ভাইয়াকে বলতাম । ভাইয়া কোন দিন এটা হতে দিত না !

মিতু কি বলবে ঠিক খুজে পেল না । কথাটা মিতু নিজেও এতো দিন জানতো । কেবল সেই সময় তীব্র রাগের কারনে সেটা ঊপলব্ধি করতে পারে নি । শাহেদ যে তীব্র চোখে ওর দিকে তাকাতো সেই চোখ কোনদিনও ওর কাছে মিথ্যা বলতে পারে না এটা মিতু নিজেও জানতো ।

এতো দিন সব কিছু জোর করে মন থেকে দুর করে রেখেছিলো কিন্তু আজ থেকে আবার সেই কষ্ট টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো । রাতে কিছুতেই ঘুম এলো না । বারবার কেবল সেই শাহেদের গভীর চোখে তাকিয়ে থাকাটা ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো । কি ঘোর লাগা চোখেই না ছেলেটা ওর দিকে তাকাতো !

সেদিন যদি মিতু ছেলেটার কথা শুনতো তাহলে আজকে হয়তো শাহেদ সব কিছু ছেড়ে যেত না । সেদিন ওর শোনা উচিৎ ছিল হয়তো । সেদিন ওর একটু বোঝার দরকার ছিল যে ছেলে ওর দিকে ওমন ঘোর লাগা চোখে তাকাতে পারে সেই ওমন কাজ করতে পারে না । তাহলে হয়তো ওদের দুজনের কারোরই জীবনই এমন থাকতো না । ওর মতই শাহেদও নিশ্চয়ই রাত জেগে ওর কথা ভাবছে ।

জীবন এমনই । মাঝে মাঝে মানুষ এমন কাজের শাস্তি ভোগ করে যেটা সে করে নি । মিতুর গায়ের রংয়ের ব্যাপারে ওর নিজের হাত ছিল না তবুও ওকে কত কথাই শুনতে হয়েছে জীবন ভয় । আর শাহেদকে সেই শাস্তিই ভোগ করতে হচ্ছে যেটার ব্যাপার তার কোন ধারনাই ছিল না । জীবন হয়তো এমনই ! কারো গল্প গুলো অসমাপ্তই রয়ে যায় !
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৯
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×