somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্পঃ সাইকেল

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-একটা কথা বলি?

সুমন চুপচাপ খাচ্ছিলো। মিতুর কথা শুনে ওর দিকে তাকালো। তারপর বলল
-বল।
মিতু বলল
-গ্যারেজে যে লাল রংয়ের সাইকেলটা আছে ওটা কি তোমার?
-হ্যা। আগে যখন টিউশনি করতাম তখন চালাতাম। এখন আর সময় হয় না।
-ও।

মিতু চুপ করে রইলো। যদিও এটাই ওর আসল কথা না। মিতু আগে থেকেই জানতো যে লাল রংয়ের সাইকেলটা সুমনের। দারোয়ানের কাছে থেকে জেনেছে। এখন আসল কথাটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু ঠিক ভরশা হচ্ছে না। আজকে কথাটা বলবে বলেই সুমনের পছন্দের বেগুনের ভর্তা বানিয়েছে। বেগুন ভর্তা দেখলেই সুমনের মন ভাল হয়ে যায়।
মিতুর চেহারা দেখে সুমন নিজেই বলল
-আরও কিছু বলবা?
-হু।
-কি?
মিতু আরও কিছুটা সময় চুপ করে তারপর বলল
-আমি যদি মাঝে মাঝে তোমার ঐ সাইকেলটা চালাই তাহলে কি তুমি রাগ করবে?
সুমন খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-তুমি সাইকেল চালাতে পারো?
-হুম।
-আরে তাই নাকি? বেশ। তা আমি রাগ কেন করবো?
-না মানে আব্বা খুব রাগ করতো। জানো কি হয়েছিল ভাইয়াকে সাইকেল কিনে দিয়েছিল আমি সেটা লুকিয়ে লুকিয়ে চালানো শিখে ফেললাম। আব্বা যখন থাকতো না তখন চালাতাম। কিন্তু একদিন ঠিক ধরা পড়ে গেলাম। কি মাইর সেদিন খেলাম।
সুমন বলল
-কি? সত্যিই নাকি?
সুমনের মুখের ভাব দেখে মিতু হেসে ফেলল। তারপর বলল
-হ্যা। বাবা এইসব ব্যাপারে খুব কড়া।
-তারপর?
-তারপর আর কি? ভাইয়ার সাইকেল টা বাবা আর রাখলো না। বিক্রি করে দিল। আমারও আর সাইকেল চালানো হল না। তবে মাঝে মাঝে ঠিকই চালাতাম।
-তাহলে? যদি শ্বশুর মশাই দেখে ফেলে! তখন?
মিতু খানিকটা চিন্তার ভাব করে বলল
-এখন আর কিছু বলবে না। আর বকলে তোমাকে বকবে। একটু না হয় শুনলেই বকা!
-ইস! না বাবা দরকার নেই। আমি বকা টকা শুনতে পারবো না।


পরদিন থেকেই মিতুর সাইকেল চালানো শুরু হয়ে গেল। ঐদিন বিকেল বেলাতেই সুমন সাইকেলের সিট টা নিচে নামিয়ে দিয়ে ছিল আর সাইকেলের দোকান থেকেও ধুয়ে মুছে পরিস্কার করিয়ে নিয়ে এসেছিল।
মিতুদের বাসার সামনেই একটা খোলা মাঠ ছিল। মুলত সেখানেই সাইকেল চালাতো মিতু। কেউ কেউ অবশ্য মিতুর এই সাইকেল চালানো দেখে নানান কথা বলত তবে সুমন ওকে পরিস্কার বলে দিল যে যা বলুক ও যেন কানে না নেয় সেই সব কথা। নিজের পছন্দমত কাজ করে।


তারপর একদিন বিকেলের কথা। নিতু আপন মনেই সাইকেল চালাচ্ছিলো তখনই সুমনকে দেখতে পেল ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ওর চেহারাতেই একটু তাড়াহুড়া ছিল। কাছে আসতেই মিতু বলল
-কি হয়েছে?
-সাইকেল থেকে নামো। জলদি নামো।
-কি হয়েছে!
এক প্রকার জোর করেই নামিয়ে দিল মিতুকে। তারপর নিযে চড়ে বসলো। তারপর মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল
-ওঠো।

মিতু আসলেই কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না। এভাবে হঠাৎ করে এসে সাইকেলে চড়ে বসা। তারপর ওকে উঠতে বলা। মিতু কিছু না বলে সাইকেলের সামনে রডে উঠে বসলো। সুমন ওকে নিয়ে চালাতে শুরু করলো। যখন বাসার গেটের কাছে পৌছালো, দেখলো ওদের সাথেই আরেকটা রিক্সা থেমেছে সেখানে। মিতু সাইকেল থেকে নেমে যেই না সুমনকে জিজ্ঞেস করতে যাবে ব্যাপার কি তখন ওর চোখ গেল রিক্সার দিকে। মিতুর বাবা আর মা নামছে। সাথে সাথেই সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল।


সুমন নিশ্চয় কোন ভাবে টের পেয়েছে যে মিতুর বাবা আসছে। যদি ওর বাবা দেখতো ও সাইকেল চালাচ্ছে তখন কি হত কে জানে।
সুমন সাইকেল রেখেই মিতুর বাবা মা কে সালাম করলো। ওর বাবা ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-এখনো তুই ঠিক হলি না।
-আমি কি করলাম?
সাথে সাথেই সুমন বলল
-আসলে আমি সাইকেল চালাচ্ছিলাম তো, ভাবলাম যে ওকে নিয়ে চালাই একটু।
-এসব ঠিক না। বুঝেছো?
-জি বাবা! আপনারা বাসায় যান আমি সাইকেল রেখে আসতেছি। এই মিতু আব্বাদের নিয়ে যাও।


মিতু তখন সুমনের দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে একটা আনন্দমিশ্রিত অনুভুতি। মিতুর বাবা আর মা আগে আগে হাটতে শুরু করলেই মিতু চট করে সুমনের কাছে এসে পড়লো। তারপর গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বলল
-থেঙ্কিউ।

তারপর মৃদ্যু হেসে আবার দৌড় দিল বাবা মায়ের পেছন। কয়েকবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো সুমন খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রাস্তার মাঝেই যে ওকে চুমু খেয়ে ফেলবে সেটা সুমন হয়তো ভাবতে পারে নি।

এমন ছোট ছোট আনন্দঘন মুহুর্ত নিয়েই তো মানুষের জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×