somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মতি ডোম

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃষা আরেকবার ডোম লোকটার দিকে চাইলো । তাকাতেই পুরো শরীরে একটা অন্য রকম অনুভূতি হল । সেই অনুভুতিটা ঠিক কিসের অনুভূতি সেটা তৃষা কিছুতেই বলতে পারবে না, তবে ব্যাপারটা কিছুতেই স্বাভাবিক না ।

লোকটা একটা চোখ ফুলে গেছে । মানুষ জন এমন মাইর দিয়েছে যে আরেকটু হলেই মারাই পড়তো । এমনিতেই ডোম লোকটার একটা চোখ নষ্ট । অন্য চোখটাও মার খেয়ে ফুলে গেছে । তৃষা সেই চোখটাই পরীক্ষা করে দেখছে । লোকটা ব্যাথায় কুকু করছে ।

-ডাক্তার আফা , আমি কিছু করি নাই । বিশ্বাস লন !

তৃষা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । খুব বেশি দিন হয় নি এই হাসপাতালে ওর পোস্টিং হয়েছে । একেবারে গ্রাম না বললেও এটাকে যে শহর বলা চলে না সেটা তৃষা খুব ভাল করে জানে । কিন্তু ওর কিছুই করার নেই । নতুন পোস্টিং যে এখানে হয়েছে, এখানে কাজ করতেই হবে । তবে সুখের কথা হচ্ছে অপু চেষ্টা করে চলেছে ওকে নিজের কাছে নেওয়ার জন্য । সেটাও হতে হয়তো কিছু দিন সময় লাগবে । সেই কিছু দিন ওকে এখানে থাকতে হবে । অবশ্য খুব যে খারাপ ও আছে সেটা কোন ভাবেই বলা যাবে না । বরং বেশ ভাল সময় কাটছে ওর । ও যে হাসপাতালে আছে সেখানে সবাই খুব ভাল । ওকে নিয়ে মোট ৫ জন ডাক্তার আছে । একজন সিনিয়র সার্জন সহ ওরা মোট চার জন জুনিয়র রয়েছে । তবে ওই সব থেকে জুনিয়র । আর সবাই কয়েক বছর ধরেই এখানে কাজ করছে । সবাই খুব হাসি খুশি । একা ও মেয়ে ডাক্তার বলেই হয়তো অন্য সবাই ওকে বেশ একটু প্রশ্রয় দেয় । অনেকে অনেক রকম সাহায্য করে । তবে বিয়ে হয়ে গেছে বলেই হয়তো খুব বেশি এগোতে পারে না ।

তার কর্ম ক্ষেত্রের সবই ভাল কেবল একটা ব্যাপার ছাড়া । সেটা হচ্ছে হাসপাতালের মতি ডোম । লোকটা খুব বেশি লম্বা না । একটু বেটে ধরনের । ৪০/৫০ বয়স হবে । লোকটা একটা চোখ নষ্ট । সেখানে এক খন্ড মাংস পিন্ড ছাড়া আর কিছুই নেই । দেখলে কেমন যেন লাগে । সেটাও খুব একটা সমস্যার কথা ছিল না । মূল সমস্যা হচ্ছে লোকটার ব্যাপারে একটা কথা প্রচলিত আছে । লোকটা নাকি মানুষের অঙ্গ খায় । যে লাশ আসে হাসপাতালে তাদের অনেক কিছুই নাকি হারিয়ে যায় । ব্যাপারটা কেবলই শুনেছে । সত্য মিথ্যা প্রমান করার কোন উপায় নেই ।

আজকে সেটা নিয়েই সমস্যা বেঁধেছে । স্থানীয় এক প্রভাবশালী লোক মারা গিয়েছে গত পরশু দিন । স্বাভাবিক কোন মৃত্যু না । কে বা কারা তাকে মেরে ফেলেছে । নিয়ম অনুযায়ী পোস্টমোর্টাম হয়েছে । সেটা অবশ্য সাজ্জাদ সাহেবই করেছে । যদিও তৃষার সাথে থাকার কথা ছিল তবে ও খানিকটা ইচ্ছে করেই কাজটা করে নি । ওর হয়ে সাজ্জাদ সাহেব একাই কাজটা করে দিয়েছে । সেটাও সমস্যার কথা না । এখানে নিয়মের একটু হেরফের হলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না ।

কিন্তু সমস্যা বাঁধে অন্য খানে । লাশটা হস্তান্তার করার আগে বেশ কিছুটা সময় ছিল ওদের লাশ ঘরে । কাটাকাটুর কাজ থেকে দুরে থাকলেও দায়িত্বটা ওর ছিল বিধায় শেষ বারের মত একবার টেক করতে গিয়েছিলো ।

লাশটা দেখেই খানিকটা বিশ্মিত হয়ে হল । সেলাই গুলো কেমন যেন নড় বড়ে হয়ে গেছে । কেউ যেন সেগুলো টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করেছে । স্পষ্ট বুঝতে পারছে লাশটা যখন এখানে ছিল তখনই কেউ এখানে কিছু করেছে !

কে করেছে ?

আর কি করেছে ?

লাশের সাথে কি করতে পারে ?

তখনই কথাটা মাথায় এল !

মতি ডোম !

সে কি আসলেই কিছু নিয়ে গেছে এখান থেকে ?

খাওয়ার জন্য ।

অবিশ্ব্যাস ভরা চোখ নিয়ে আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো সে লাশটার দিকে । তারপর একটা নাইফ নিয়ে এগিয়ে গেল । একটা একটা করে সেলাইয়ের সুটা কাটতে শুরু করলো ।

কিছু সময় পরীক্ষা করার পরেই প্রবল বিশ্ময়ে লক্ষ্য করলো লাশের শরীরের ভেতর থেকে কলিজা আর কিডনি সহ আরও কয়েকটা জিনিস গায়েব । কাজটা কে করলো ?

কেন জানি কথাটা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগলো না । স্থানীয় নেতার লোকজনের মাথা এমনিতেই গরম ছিল এখন এটা জানার পরে আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল । ওরা মতিডোম কে টেনে হিচড়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে বেদম মার লাগালো । তবে পুলিশ চলে আসাতে এ যাত্রায় সে রক্ষা পেল । আহত মতিডোম কে তৃষা চিকিৎসা দিচ্ছিলো । তখনই কথাটা বলল সে ।

তৃষা মতি ডোমের ভাল চোখটার দিকে আরেকবার তাকালো । চোখ অল্প অল্প কাঁপছে। তবে কেন জানি সেই চোখ টা দেখে তৃষার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল। মনে হল লোকটা আসলেই সত্য কথা বলছে।
তৃষা বলল
-আচ্ছা কথা বলতে হবে না। ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি।
-আফা মনি আমি সত্যিই কিছু করি নাই।
-আচ্ছা। সেটা পরে ভাবলে চলবে। আর আমি পুলিশের সাথে কথা বলব।

মতিডোমকে বেডে রেখে যখন বাইরে বের হল তখন ডাক্তার সাজ্জাদ ওর সামনে এসে দাড়ালো। ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-বদমাইশটা কোথায়?

সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে তৃষা বলল

-বেডে আছে ।

সাজ্জাদকে বেশ উত্তেজিত মনে হল । সে তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল

-বাইরের লোকজন কত আছে তোমার ধারনা আছে ? এই বদ মাইশকে এখনই পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে !

তৃষা শান্ত কন্ঠে বলল

-দেখুন সাজ্জাদ সাহেব, এখন ও আহত হয়েছে । বেশ গুরুতর । ওকে এখন কোন ভাবেই ছাড়া যাবে না । পুলিশ যদি ওকে নিতে আসে তাহলে বলবেন যে নিজেদের রিক্সে যেন নিয়ে যায় । কারন যদি কাস্টেডিতে কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি নিজে পুলিশের নামে মামলা করবো !

তৃষার কন্ঠে দৃঢ়তা দেখে সাজ্জাদ যেন একটু চুপছে গেল । তৃষার কাছ থেকে এমন আচরন সে আশা করে নি । সাজ্জাদ বলল

-না মানে সেটা তো ঠিকই । যদি ওর শরীর বেশ খারাপ থাকে তাহলে ওকে এখানে রাখতেই হবে ।

-হ্যা । তাই । আর আমি খুজে দেখছি কাল রাতে কে লাশ ঘরে ঢুকেছিলো । করিডোরে না একটা সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে । সেটা দেখতে হবে ।

-ও হ্যা তাই তো !

সাজ্জাদ আর দাড়ালো না । যেদিক দিয়ে এসেছিলো সেদিক দিয়েই চলে গেল ।

তৃষার মাথায় এসবের কিছুই ঢুকছে না । এতো কিছু রেখে মানুষ কেন মরা লাশের অঙ্গ চুরি করবে । এমন না বাইরে বিক্রি করে টাকা পাবে । সেটাও সম্ভব না । এগুলোর কোন মূল্যই নেই । তবে মতি ডোমের চেহারা দেখে তৃষার কেবল মনে হয়েছে যে লোকটা অন্যায় করে নি । অনেক কথাই প্রচলিত আছে লোকটা গিয়ে । এমনটা অবশ্য স্বাভাবিক । যারা লাশ ঘরে লাশ কাটাকাটু করে লোকজন তাদের কে একটু ভয়ে ভয়ে দেখে । তাদের সম্পর্কে নানান কথা ছড়ায় । যার বেশির ভাগেরই কোন ভিত্তি নেই ।

বাইরে বের হয়ে তৃষা দেখলো সেখানে তেমন কেউ ই নেই । সাজ্জাদ সাহেব তো বলেছিলো লোকজন নাকি অনেক লোক জন আছে । এমন কি পুলিশও নাকি এসে বসে আছে । কিন্তু কই ? তারা তো কেউ এখানে নেই । পুলিশ এসেছে মতিডোম কে বাঁচিয়েছিলো । এখন সম্ভবত চলে গেছে ।

তৃষার তখনই মনে হল ওর সিকিউরিটি রুমে যাওয়া দরকার । একটা সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো আছে লাশ ঘরের করিডোরে । লাশ ঘরটা করিডোরের একদম শেষ মাথায় । কেউ যদি সেখানে যেতে হয় তাহলে তাকে ক্যামেরা ধরা পরতেই হবে ।

আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সেই রুমের দিকে । তখনই ওর মোবাইলটা বেজে উঠলো ।

মোবাইলটা তুলতেই দেখলো অপুর ফোন । গত পরশু দিন অপু এখানে এসেছে ছুটি নিয়ে । কাল চলে যাবে । আজকে তাই ওর একটু জলদি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু মাঝ খানে এই ঝামেলা বেঁধে গেল । ফোনটা রিসিভ করলো ও ।

-হ্যালো ম্যাডাম । আপনার এই অসহায় পুলা যে আপনার জন্য কত সময় ধরে অপেক্ষা করছে সে হিসাব কি আছে ?

-এই ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক কর !

-এখনও এই ল্যাঙ্গুয়েজ !

-হ্যা ।

-আর কত সময় ? আমি কাল চলে যাবো হিসাব আছে ?

-আছে । এই তো হাতের কাজ শেষ । এখনই চলে আসবো । একটু অপেক্ষা কর আর !

-জলদি আসো । আজকে তোমার খবর আছে ? কালকের ম্যাচ টাই হয়ে আছে মনে আছে !

-যা দুষ্ট !

তৃষা ফোন রেখে দিল । একটু আগে মনে যে খানিকটা বিরক্তির ভাব ছিল সেটা কেটে গেছে । তাই হয়তো ও লক্ষ্য করলো না যে একজন ওর দিকে লক্ষ্য রাখছে । তৃষা সিকিউরির রুমে ঘুকে দেখে সেখানে কেউ নেই ।

তখনই মনে পড়লো এখানকার গার্ডটা কদিন থেকেই ছুটিতে আছে । হাসপাতালের কয়েকজন বয় মাঝে মাঝে এখানে এসে দেখে যায় সব কিছু ঠিক চলছে কি না ।

লাশ ঘরের সিসিটিভিটা খুজে পেতে খুব বেশি সময় লাগলো না । আরেকটু খোজ খবর করতেই গতদিনের ফুটেজও বের করে ফেলল । এরপর সেটা দেখতে লাগলো আস্তে আস্তে । কে কে এই রাস্তা দিয়ে এসেছে আবার গিয়েছে । এই দিকটা একেবারেই নির্জন । মানুষজন দরকার না পড়লে এদিকে আসে না ।

গতদিনের পোস্টমোর্টেম করার পরে মতিডোম আর সাজ্জাদ সাহেব এক সাথে বের হয়ে যায় । তারপর অনেক সময় কোন নড়াচড়া নেই । তৃষা দেখতে দেখতে যখন ক্লান্ত হয়ে গেল, মনে হল যে আর কাউকে হয়তো আসতে দেখবে না তখনই একজনকে করিডোরে দেখা গেল । একটু যেন পা টিপে টিপে আসছে । কয়েকবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছে কেউ আছে কি না ।

তৃষা বিশ্মিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো । ওর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ।

ও চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তখনই কেউ ওর পেছনে এসে হাজির হল । এতো সময় ও এতোই মনযোগ দিয়ে সিসিটিভি ফুটেজের দিকে তাকিয়ে ছিল যে পেছনে যে কেউ চলে আসতে পারে সেটা ওর মনেই হয় নি । কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা রুমাপ ওর মুখে চেপে ধরলো কেউ । মিষ্টি একটা গন্ধ লাগলো ওর নাকে !

ক্লোরোফর্ম ! চেতনা হারানোর আগে পরিচিত মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় কেবল অবাক হয়ে । ভাবতেও পারছে না এই মানুষটা এই কাজটা করতে পারে !

দুই

তৃষার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ও দেখতে পেল ও একটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে । ওর হাত আর পা দুটো বেডের সাথেই আটকে রাখা হয়েছে । বেড টা খানিকটা আধশোয়া অবস্থায় রাখা হয়েছে । নাকে একটা পচা গন্ধ আসছে। কোথাও যেন কিছু পঁচেছে ।

তৃষা বোঝার চেষ্টা করলো ওকে কোথায় রাখা হয়েছে । কিন্তু বুঝতে পারলো না । একটু পুরাতন ঘর মনে হচ্ছে । মনের ভেতরে খানিক সন্দেহ হল ওকে হয়তো পুরানো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে । পুরানো বেড, পুরানো রুম এটাই দিকের নির্দেশ করে । ওদের নতুন হাসপাতাল থেকে বেশ খানিকটা দূরে আগের হাসপাতালটা অবস্থিত । কোন দিন সেখানে যাওয়া হয় নি তবে দূর থেকে দেখেছে সে ।

কিছু সময় অপেক্ষা করতেই একটা লোক এসে ঢুকলো । লোকটার দিকে তাকাতেই তৃষার মুখটা বিকৃত হয়ে এল ঘৃণাতে । লোকটা আর কেউ না ওদের সিনিয়র ডাক্তার আলী আহমেদ । তৃষার খুব কাছে এসে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল

-তোমার এতো কৌতুহল দেখানোর কি দরকার ছিল শুনি ?

-স্যার আপনি ?

তৃষার কথা যেন শুনতেই পায় নি । বলল

-এতো কৌতুহল ভাল নয় ! মোটেই না। তুমি জানো তোমার জন্য আমি কত বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছিলাম । তবে এখন আর কোন সমস্যা হবে না । যে টুকু ভুল করেছিলাম সেটুকু আমি শুধরে নিব ।

তৃষা কি বলবে খুজে পেল না । এখনও তার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । তৃষা কেবল বলল

-কিন্তু কেন স্যার ?

আলী আহমেদ বলল

-লাশের ভেতরের কি আছে না আছে এটা নিয়ে তোমাকে টেনশন করতে হল শুনি ? কি দরকার ছিল ? আর বলছো কেন ? দরকার তো আছেই । তবে অনেক আমি তাজা কিছু পাই নি । একদিন দিয়ে ভালই হল । অনেক দিন পর তাজা কিছু পাওয়া যাবে ।

তৃষা দেখতে পেল আলী আহমেদের চোখটা চকচক করে উঠলো । সেটা দেখে তৃষার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো । ঐ মৃত লাশ গুলোর ভেতরে থেকে যেই অঙ্গ গুলো খোয়া যেত এখন সেগুলো ওর শরীর থেকেই যাবে । সেটা ভাবতেই একটা তীব্র ভয়ের স্রোত বয়ে গেল । অপুর মুখটা ভাবার চেষ্টা করলো । ও ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে । আর কোন দিন কি দেখা হবে না ওর সাথে । নিজেকে আরও একটু ছাড়ানোর চেষ্টা করলো তবে কোন লাভ হল না । চিৎকার করলো কয়েকবার কিন্তু সেটাতে আলী আহমেদ খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করলো না । এর অর্থ হচ্ছে ওরা এমন কোথাও আছে যেখান থেকে শত চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পাবে না ।

আস্তে আস্তে আলী আহমেদকে এগিয়ে আসতে দেখলো সে । হাতের মেডিক্যাল নাইফটার দিকে তাকাতেই বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল । ওর মুখ দিয়ে আরেকটা চিৎকার বেরিয়ে গেল । আলী আহমেদ যেন বিরক্ত হল । তারপর ছুরিটা সরিয়ে টেবিল থেকে একটা সিরিঞ্জ নিয়ে এল । সেটা ওর ডান হাতে পুশ করে দিল ।

-আপনি কি করলেন এটা ?

-ভয় পেও না । আজকে তোমাকে কষ্ট দিয়ে মারছি না । ঘুমের ভেতরে তুমি মারা যাবে !

তখনই তৃষার মাথাটা ঘুরে উঠলো । বুঝতে পারলো ওর ঘুম আসছে খুব । ঘুমন্ত চোখে তৃষা দেখতে পেল আলী আহমেদ ওর দিকে ছুরি হাতে এগিয়ে আসছে । একটা তৃষার আর কিছু ভাবতে পারছে না । অপুর চেহারাটা খুব বেশি মনে পড়ছে । ওকে ছাড়া অপু কি করবে কে জানে !



তিন

চোখ মেলে তৃষা বুঝতে পারলো না ও কোথায় আছে । আরও একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখলো ও একটা হাসপাতালে শুয়ে আছে । একটু নড়তে গিয়েই টের বেল ওর পেট একটা ব্যাথা অনুভব করছে । আরেকটু নড়তে যাবে তখনই অপুর কন্ঠ শুনতে পেল ।

-খবরদার নড়বে না । একদম না ।

বাঁ দিকে মাথাটা নাড়ালো । দেখলো অপু এগিয়ে আসছে । প্রথমে মনে হল ও বুঝি স্বপ্ন দেখছে । কিন্তু তারপর মনে হল এটা স্বপ্ন হতে পারে না । আসলেই অপু ওর সাথে রয়েছে ।

-তুমি ? কিভাবে ?

অপু বলল

-কেন ? আমাকে দেখে খুশি হও নি ?

তৃষা একটু হাসার চেষ্টা করলো । তারপর বলল

-আমি কিভাবে এলাম এখানে ? আর আলী আহমেদ কোথায় ?

-সে আছে তার যেখানে থাকার !

-কিভাবে হল এসব !

-তোমার ঐ মতি সাহেব একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার । ও যদি তোমার খোজ বের করেছিলো । সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও যখন তুমি আসছিলেন না, ফোনেও পাচ্ছিলাম না তখন আমি তোমার হাসপাতালে এসে হাজির হলাম । কিন্তু তোমার কোন খোজ নেই । তোমাদের আরেকটা ডাক্তার আছে না কি যেন নাম, সাজ্জাদ সাহেব উনি বললেন নাকি তুমি সিসিটিভি রুমের দিকে গেছ । কিন্তু সেখানেও তোমার দেখা নেই । শেষে আমি যখন দিশেহারা অবস্থা তখনই মতি সাহেব এসে হাজির হল । সেই আমাকে বলল অনেক দিন থেকেই হাসপাতাল থেকে মৃত মানুষের ভেতরের জ কলিজা কিডনি নাকি হারিয়ে যাচ্ছে । কেউ সেগুলো নিয়ে যাচ্ছে । কে বা কারা নিতে পারে এই ব্যাপারে কেউ জানে না । তবে মতি সাহেব কিছু জানে । সে নাকি প্রায়ই তোমাদের স্যারকে এই মর্গে যেতে দেখেছে । প্রায়ই সময় তিনি সেখানে থাকতো । তাকে নাকি মাঝে মাঝে পুরাতন হাসপাতালেও যেতে দেখেছে । সেখানে সে কি করে কেউ জানে না । আমি তাকে এবং সাজ্জাদ সাহেব কে নিয়ে হাজির হলাম সেখানে । সেখানেই তোমাকে পাই । আরেকটু দেরি হলে হয়তো তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম !

তৃষা একটু হাসলো । তারপর বলল

-ভয় নেই আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছি না ।

-তোমাকে যেতে দিলে তো !

তারপর কিছু সময় চুপ করে থেকে তৃষা বলল

-আলী আকবরের কি হল ?

-তাকে পুলিশ ধরেছে । তুমি ভাবতে পারো ঐ বস মানুষের ভেতরের কলিজা কিডনি দিয়ে লাঞ্চ করতো !

-আমি ভাবতে চা্চ্ছি না !

তৃষা আসলেই ভাবতে পারছিলো না । অবশ্য ওর খুব একটা ভাবনার কারনও নেই । অপু ওর সাথে আছে এখন আর কিছুতেই ওর কোন চিন্তা নেই ।



সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:২২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×