somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ হঠাৎ দেখা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এই যে দাড়ান । এতো রাতে কই যান ?

আমি সাইকেল থামালাম । সামনেই একটা পুলিশের গাড়ি দেখতে পাচ্ছি । টহল পুলিশ । আমার একটু ভয় পাওয়ার কথা । কারন এখন দেশের অবস্থা ভাল না । পুলিশ ধরলে খবর হওয়ার কথা তবে কেন জানি আমি ঠিক চিন্তিত হলাম না ।

একজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে ভাল করে দেখার চেষ্টা করলো ।

আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল

-এতো রাতে কোথায় যান ?

আমি বললাম

-কোথাও না । এমনি সাইকেল চালাচ্ছি । দিনের বেলাতে সাইকেল চালিয়ে মজা নেই তো তাই মাঝে মাঝে সাইকেল চালাই !

আমার উত্তর সম্ভবত পুলিশের ঠিক পছন্দ হল না । আমাকে দাড় করিয়েই পুলিশ চলে গেল দাড়িয়ে থাকা গাড়ির দিকে । আমি সাইকেল থেকে নেমে ফুটপাতের উপর বসলাম । সম্ভবত আমাকে এখানে লম্বা সময় বসতে হবে । এরা এতো সহজে আমাকে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না ।

তৃষাকে আরেকবার ফোন দিবো কি না ভাবছি । আজকে সারা দিনে ও একবারও আমার ফোন ধরে নি । ধরবে না জানতাম । আমার সাথে ওর যেদিন দেখা হওয়ার কথা থাকে সেদিনই ও ফোন ধরে না । আমি জানি ও আমার সাথে দেখা করবে না তবুও ওর পেছনে লেগেই থাকি দেখা করার জন্য । মাঝে মাঝে ও বলে যে কাল দেখা করবে কিন্তু সেই কাল আর কোন আসে না । সেই দিন সারাদিনই ওর ফোন অফ থাকে নয়তো ফোন ধরে না ও । আমি ফোন দিয়ে যাই । আজ সারা দিন তাই করেছি । ধরবে না তবুও দিয়েছি । কেন দিয়েছি আমি নিজেই জানি না । আমি ফোন বের হয়ে তৃষা কে ফোন দিতেই তৃষা ফোনটা রিসিভ করলো । বেশ অবাক হলাম । আজকে তো ওর ফোন ধরার কথাই ছিল না ।

-হ্যালো ।

ওপাশ থেকে কোন কথা শুনতে পেলাম না । আমি আবার বললাম

-হ্যালো ? শুনতে পাচ্ছো নাকি ?

-হ্যা পাচ্ছি !

তৃষার কন্ঠ শুনেই মনে হল ও বেশ কান্না কাটি করেছে । আমি আর ওসব জানতে চাইলাম না । বললাম

-মন ভাল ?

-ভাল হওয়ার কথা ?

-জানি না । সারা দিন ব্যস্ত ছিলে বুঝি ?

-না ! এক দম ব্যস্ত ছিলাম না ।

-ও !

আমি কি বলব ঠিক বুঝতে পারলাম না । তৃষা ওপাশে কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল

-তোমার রাগ হচ্ছে না আমার উপর ?

-কেন ?

-তুমি জানো কেন রাগ হবে ? রাগ হয় না ?

-না তো !

-অন্য কেউ হলে আমাকে ছেড়ে ঠিক চলে যেত । আমাকে আর কোন দিন ফোন দিতো না ।

-তারা তো তোমাকে ভালবাসে না ।

ওপাশ থেকে আবারও বেশ কিছুটা সময় কোন কথা শোনা গেল না । আমার কেন জানি মনে হল তৃষা নিজের কান্নাকে আটকানোর চেষ্টা করছে । আমি ওকে শান্ত করতে বললাম

-সমস্যা নেই । আমার সাথে না হয় অন্য কোন দিন দেখা কর । কেমন !

আমি তৃষার কান্না জড়িত কন্ঠ শুনতে পেলাম । ও বলল

-করবো না । কোন দিন দেখা করবো না । তবুও অপেক্ষা করবে ?

-হ্যা করবো !

আমার আরও কিছু বলার ছিল দেখি তার আগেই পুলিশের সেই লোকটা আমার কাছে ফিরে এল । আমার দিকে বলল

-চলেন !

আমার তখনও ফোন কানে । আমি বললাম

-কোথায় ?

-থানায় চলেন । আপনে গাড়িতে উঠেন । আমি আপনার সাইকেল নিয়ে আসতেছি !

এখানে আমার আসলে কিছুই করার নেই । আমাকে গাড়িতে উঠতেই হবে । ফোনের ওপাশ থেকে তৃষা বলল

-কার সাথে কথা বলছো ?

-পুলিশের সাথে !

-এতো রাতে তুমি বাইরে কি করছো ?

-এই তো একটু হাওয়া খেতে বের হয়েছিলাম ।

-মানে ? এখন কি হয়েছে ?

-ওরা বলছে থানায় যেতে !

ওপাশ থেকে আবারও কোন কথা শোনা গেল না । পুলিশ আমাকে আবারও তাগাদা দিল জলদি গাড়িতে ওঠার জন্য । তৃষা একটু পর বলল

-বলতো ওর কোন থানার ?

-জানি না তো !

একটু ধমকের সুরে বলল

-জানো না, জিজ্ঞেস কর !

আমি পুলিশ লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম

-ভাই আপনার কোন থানার ?

-কেন ?

-না মানে একজন জানতে চাচ্ছে ।

পুলিশ বলল

-বলেন যে আপনাকে বনানী থানায় নিয়ে যাচ্ছি আমরা !

আমি তৃষা কে থানার নাম বললাম । তৃষা ফোন রাখতে রাখতে বলল আমি যেন কোন চিন্তা না করি । ও দেখছে । যদিও আমি জানতাম ও ঠিক ঠিক দেখবে ।

আমি মোবাইল পকেটে রেখে গাড়িতে উঠলাম । পুলিশের গাড়িতে এর আগেও বেশ কয়েকবার উঠেছি । আমার ক্যাম্পাসের পাশেই বড় থানা ছিল । মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় যখন বাস পেতাম না, তখন পুলিশকে বললেই ওনারা পেছনে উঠবে বলল । কিন্তু আজকে ঘটনা একেবারেই অন্য রকম । আমি চুপচাপ বসে রইলাম । রাত বলেই রাস্তা ঘাট একেবারে ফাঁকা । গাড়িটা চলছে একভাবে তবে গাড়ির গতি খুব বেশি না । কত সময় গাড়িতে বসে ছিলাম জানি না দেখি গাড়িটা একটা বাসার সামনে এসে থামলো । আমি বসেই রইলাম । একটু পরে একজন অফিসার গাড়ির পেছনে এসে দাড়ালো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-নামেন ।

আমি নামলাম । বনানী থানা আমি চিনি । এটা যেন সেই থানা না সেটা বুঝতে কষ্ট হল না। আমার দিকে তাকিয়ে পুলিশ অফিসার টি বলল

-আরে রাস্তায় এমন একা একা চলেন কেন ? আর বলবেন না যে সৈয়দ সাহেব আপনার চেনা লোক ।

আমি মনে করার চেষ্টা করলাম এই সৈয়দ সাহেবটা আবার কে? আমাকে কি ভুল করে ছেড়ে দিবে নাকি ! তারপরেই আমার মনে পড়লো সৈয়দ হচ্ছে তৃষাদের বংশীয় পদবী ।

অফিসার আবার বলল

-ওনার ফোন এসেছিল । শুনুন এর পর থেকে আমাদের কেউ যদি আপনাকে ধরতে যায় তাহলে আগে পরিচিত মানুষের নাম বলবেন । ঠিক আছে !

আমি বললাম

-আচ্ছা ! আমার সাইকেল টা ?

-ওটা আসছে । এইখানে চলে আসবে । চিন্তা করবেন না । যান ভেতরে যান !

পুলিশ আমাকে হাত ইশারায় সামনের বাসাটা দেখালো । আমি বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এতো রাতেও বাসার সব আলো জ্বলছে । দারোয়ান গেট খুলে এদিকে এগিয়ে আসছে ।

আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে এসব তৃষার কর্ম । ও নিশ্চয়ই এই সময়ের ভেতরেই এই পুলিশকে ফোন দিয়েছে এবং অনুরোধ করেছে যেন আমাকে ওর বাসার সামনেই নামিয়ে দেয় ! এরা তাই করেছে ।

আমি আস্তে আস্তে গেটের দিকে এগোতে থাকলাম । তৃষার সাথে যে আমার এই ভাবে দেখা হয়ে যাবে আমি কোন দিন ভাবতেও পারি নি । অবশেষে আমাদের দেখা হতে যাচ্ছে । আমি একটু কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে যাই তৃষাদের বাসার দিকে ।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×