somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ জীবন এগিয়ে চলে ....

০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃষা ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলল

-ড্রাইভার চাচা ।

-জি মামনি !

-আপনি এখান থেকে বাসায় চলে যান । আমি আমার এক বন্ধুর কাছে যাবো ।

-কিন্তু মামনি .....

ড্রাইভার কি বলল তার পুরোটুকু শোনার আগেই তৃষা গাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লো । সোজা হাটা দিল ওদের থেকে দুই গাড়ি পাশে একটা কালো প্রাডোর দিকে । ওর বুকের ভেতরে কেমন একটা অচেনা অনুভুতি হতে শুরু করলো । এইটা আগেও ও অনুভব করেছে । তৃষা আরও দ্রুত পা চালালো । এখন যদি সিগনালটা ছেড়ে দেয় তাহলে আবার কবে দেখা হবে কে জানে !

তৃষার গাড়িটা এতোক্ষন কাটাবন সিগনালে বসে ছিল । তৃষাও চুপচাপ বসে ছিল কানে হেডফোন লাগিয়ে । ঠিক তখনই পাশের গাড়ির কাঁচ দিয়ে একেবারে শেষের গাড়ির দিকে নজর গেল । কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলো না । ড্রাইভিং সিটে অপু বসে আছে । চুপচাপ গম্ভীর মুখে । এতো দুর থেকেও ওর চেহারায় একটা দুশ্চিন্তার রেখা ঠিক ঠিক দেখা যাচ্ছে । এখান থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ।

তখনই তৃষার মনে হল ছেলেটার সাথে কথা বলা দরকার । ছেলেটা বলেছিল যোগাযোগ রাখবে কিন্তু একেবারে যেন কোন খোজ খবর নেই । যে নাম্বারটা ছিল সেটা সব সময় বন্ধ থাকে ।

বেশ রোদ উঠেছে । তৃষার চোখে অবশ্য কালো রোদ চশমা টা লাগানোই আছে । তৃষা সোজা গিয়ে কালো প্রাডোটার দরজা খুলে সামনের সিটে উঠে বসলো । বসেই তাকালো অপুর দিকে ।

অপুর গাড়ির দরজা খুলতেই সতর্ক হয়ে উঠেছিলো কিন্তু সামলে নিলো নিজেকে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে একটু অবাক হয়ে । এখানে ওকে কোন ভাবেই আশা করে নি । তৃষা পেছনে তাকিয়ে দেখে পেছনের সিটে তিনজন বসে আছে । একজনে সে খুব ভাল করে চেনে । বাবুল নাম তার । অন্যজনে চেনে না । মাঝে একটা ৭/৮ বছরের ছেলে । চোখ বন্ধ করে আছে । এমন ভাব করে আছে যেম ঘুমাচ্ছে । কিন্তু তৃষা ভাল করেই জানে যে ছেলেটা ঘুমাচ্ছে না । তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে ।

তৃষা বাবুলের দিকে তাকিয়ে বলল

-কেমন আছো বাবুল ?

বাবুল দাঁত বের করে হাসলো ।

-জে আফা মনি ভালা আছি ! আপনে ভালা ?

-আর ভাল কই ? তোমার ভাইয়ের খবর কি ?

এইকথা শুনে বাবুল যেন খুব মজা পেল দাঁত টা আরও বিস্তৃত হল । এপাশের জন্য এতোক্ষন খানিকটা ভয়ে ভয়ে ছিল কিন্তু তৃষা এদের পরিচিত দেখেই পেশিগুলো শিথিল হয়ে এল । ঘুমন্ত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অপুর দিকে তাকালো আবার ।

-কোথা থেকে তুললেন একে ?

-কেন ?

-জানতে চাইছি !

-আজিমপুর থেকে !

-কোথায় নিয়ে যাবেন ?

-গাজীপুর !

-আমাকে যেখানে নিয়ে গেছিলেন ?

-হুম !

-আমিও যাবো !

তৃষা কিছুটা সময় তৃষার দিকে তাকিয়ে তারপর বলল

-না ! তুমি এখনই নেমে যাবে । সিগনাল ছেড়ে দিবে এখনই !

-জি না, আমি নামবো না । দেখি আপনি কিভাবে নামান !

অপু কোন কথা না বলে তাকিয়েই রইলো মেয়েটার দিকে । এখনও ঠিক আগের মতই জেদি রয়েছে মেয়েটা । নিজের কাছেই একটু যেন অসহায় বোধ করলো । এমনিতেও টেনশনে আছে । যাকে তুলে এনেছে সে খুব বড়লোকের ছেলে । খবর ছড়িয়ে পড়তো খুব বেশি সময় লাগবে না । এর আগে যদি সেফজোনে ঢুকতে না পারে তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে । তার উপরে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না । এখন এই মেয়ে এসে হাজির । কোথা থেকে খোজ পেল কে জানে !

অপু খুব ভাল করেই জানে একে কোন ভাবেই গাড়ি থেকে নামানো যাবে না । শেষে নামতে গেলেই উল্টো ঝামেলা পাকাবে ! আরও কিছু চিন্তা করছিলো কিন্তু আর আগেই সিগনাল ছেড়ে দিলো । অপু গাড়ি ছুটালো শাহবাগের দিকে । ওখান থেকে ফার্মগেট হয়ে সোজা গাজীপুরের দিকে যেতে হবে ।

যখন গাড়িটা কোল্ডপার্ক রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করলো তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে । তৃষা এতোটা সময় কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলো তখনই বাবার ফোন এসে হাজির ।

-কোথায় তুমি ? গাড়ি থেকে ওভাবে নেমে গেছ কেন ?

-আব্বু আমি এক বন্ধুর বাসায় আছি ।

-তুমি এখনই বাসায় আসবে ! বল কোথায় আছো ?

-না বলবো না !

-দেখ তুমি কিন্তু আর ছোট্ট মেয়ে নেই । এরকম ছেলেমানুষী করবে না ।

-এক্সজেক্টলী । আমি এখন আর ছোট্ট মেয়ে নেই । আমি নিজের দেখাশুনা নিজে করতে পারি । তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না । আমার বন্ধুর কাছে আছি । ফিরতে রাত হবে । নাও ফিরতে পারি !

-তৃষা .......

তৃষা তার বাবার চিৎকার শুনতে পেল কিন্তু আর শোনার দরকার বলে মনে করলো না । লাইন কেটে দিয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিল । তারপর গাড়ি থেকে নেমে পড়লো একা একাই । তৃষার এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার এখানে আসা । এর আগে অবশ্য যখন প্রথমে এসেছিলো তখন পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল । ওর পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকানো ছিল তার মুখে মেডিক্যালে টেপ আটকানো ছিল যাতে কথা না বলতে পারে ।

এখানে নামিয়ে ওকে একটা সামনের বাংলোর বাড়ির একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিলো । আজকে এই ছেলেটার হাত যদিও বাঁধা নেই তবে তৃষা জানে ওকে ঐ ঘরেই আটকে রাখা হবে । তারপর তার বাবার কাছে মোটা অংকের টাকা চাওয়া হবে । যেমন টা ওর বাবার কাছে চাওয়া হয়েছিল ।

তৃষা আর অপুর ব্যাপারটা আসলেই অন্য রকম । অপুর ঠিক ওকে প্রথমে ভাল করে দেখে নি । বাবুলই ওকে জোর করে গাড়িতে তুলেছিল মুখে ক্লোফর্ম আর মুখে টেপ দেওয়ার কাজটাও বাবুলই করেছিলো । কিন্তু যখন তৃষাকে ঘরের ভেতরে আটকে রাখার পর অপু ওর মুখের টেপটা খুলে দিল তখনই খানিকটা ধাক্কার মত খেলো যেন ।

খুব পরিচিত একটা মুখ । কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো মেয়েটার মুখের দিকে । তানিয়ার চেহারার সাথে মেয়েটার চেহারার অদ্ভুদ একটা মিল আছে । তানিয়ার সামনে চুল চলে আসতো সব সময় এই মেয়েটারও ।

রাতে যখন তৃষা খেতে চাইলো না তখন অপু নিজে থেকে এগিয়ে এসে খাওয়াতে । তবুও কিছুতেই খাবে না সে । মুখ খুলে দিয়েছিলো তাই এক মুখ থুথু ছিটিয়ে দিলো অপুর মুখের দিকে ।

অপু একটু অবাক না হয়ে পারলো না । আগেও এরকম কাজ করেছে সে । এখানে ধরে আনার পরে সবাই কেমন ভয়ে সিটিয়ে থাকে । অথচ এই মেয়ে কেমন জেদ ধরে আছে । একটু ভয় পাওয়া তো দুরের থাকুক গায়ের জোর দেখাচ্ছে । কিন্তু অপু কিছু করতে পারছে না । শেষে অপু বলল যে খাওয়ার পর সে নিজে তাকে বাসায় দিয়ে আসবে । এখনই । কিন্তু আগে খেতে হবে ।

এতো সহজে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে সেটা তৃষা ভাবতেও পারে নি । খাওয়া শেষ করে ওর হাতকড়া খুলে দেওয়া হল । যখন গাড়িতে উঠতেছিলো তখনও তৃষার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না আসলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে । যাত্রা পথে জানতে চাইলো তাকে কেনই বা ধরা হল আর কেনই বা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে !

অপু কোন কথা বলে নি । কেবল চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছিলো । রাতের বেলা গাড়ি, রাস্তা ছিল ফাঁকা তাই বাসায় পৌছাতে খুব একটা দেরি হল না । অপু কোন কথা বলছে না দেখে তৃষা নিজের চোখ বন্ধ করেছিলো কিছু সময়ের জন্য । কখন ঘুম চলে এসেছিলো ও নিজের বলতে পারবে না । যখন আবার চোখ খুলল তখন তৃষা দেখে ওদের বাসার সামনে চলে এসেছে । গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল

-আপনার কোন ফোন নাম্বার আছে ?

-কেন ?

-আচ্ছা থাক । আপনি বরং আমার নাম্বারটা নিন !

এই বলে তৃষা নিজের নাম্বারটা দিল ওকে । এমন কাজ কেন করলো সেটা ও নিজেই জানে না । অপু ওর সাথে সারাটা রাস্তায় একটা কথাও বলে নি । কেবল মাঝে মাঝে ওর দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলো আর পুরানো কিছু কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো । বুকের ভেতরে কেমন একটা ব্যাথাও অনুভব করছিল বারেবার ।

নিজের অনুভুতি দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছিলো । ভেবেছিলো তানিয়াকে ও ভুলেই গেছে । মন থেকে বের করে দিতে পেরে খুব ভাল ভাবেই । কিন্তু কোথায় কি ! এই মেয়েটা আবারও ওকে কষ্টের সাগরে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে ।

অপু নাম্বার নিতে নিতে বলল

-তুমি সাবধানে থেকো !

-কেন ?

-কারন তোমার উপর আবার হামলা হবে । আর এবার কিন্তু আমি থাকবো না । কন্ট্রাক্ট অন্য কাউকে দেওয়া হবে । সে কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দিবে না ।

অপু কোন কথা বলে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল

-আপনি কেন ছেড়ে দিলেন ?

-জানি না !

-বলেন !

-বাসায় যাও । হয়তো সামনে কোন দিন আবার দেখা হবে । তবে সাবধানে থেকো । ঠিক আছে ?

-আচ্ছা ।

তারপর নিজের বাসার দিকে দৌড় দিল । সেটা তাও বছর খানেক আগের কথা ।

তৃষা বাংলোর বারান্দায় বসতে বসতে অপুর দিকে তাকিয়ে বলল

-এই কাজ আর কতদিন ?

-যতদিন চলে !

-অন্য কিছু ভাবেন ?

-কি লাভ ?

-আছে । অনেক লাভ আছে ।

বাবুল ফিরে এল একটু পরেই ।

-ভাই । পুলাডা ঘুমায়া আছে । রাইতের আগে উঠবো না মনে হয় ।

-হুম !

-আমি চইলা যামু ?

অপু কোন কথা বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো । রোদ একদম কমে গেছে । আর কিছু সময়ের পরেই আধার নেমে আসবে । কি করা যায় সেটা ভাবতে লাগলো । তৃষা বাবুলের দিকে তাকিয়ে বলল

-বাবুল !

-জে আফা !

-তোমার ভাই তো এই কাজ ছাড়বে না । ঠিক করেছি তোমার দলে যোগ দিবো ! কেমন হবে ?

-খুব ভালা হইবে আফা ! আপনে থাকলে ভাইয়ের মন ভালা থাকে !

এই বলতেই অপু বাবুলকে ধমক দিয়ে বলল

-যা তুই ভাগ । রাতের খাবার খেয়ে আবার আসবি । রনিকেও নিয়ে যা !

বাবুল ধকম খেয়ে বিন্দু মাত্র রাগ করলো না । বরং দাঁতটা যেন আরও একটু বিস্তৃত হল । বাবুল চলে যেতেই তৃষা তাকালো অপুর দিকে । কেমন একটা হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । ছেলেটা যদিও মনটা গম্ভীর করে রাখছে বাবুলের মত অপুও জানে যে ও আসে পাশে থাকলে অপুর মন ভাল থাকে ।

-আচ্ছা একটা কথা জানতে চাইবো ?

-আমার উপর আর কোন হুমকি নেই ?

-হঠাৎ এই কথা জানতে চাইছো কেন ?

-আহা বলেন না । আছে কি না !

-নাহ ! আপাতত নেই । পরে অবশ্য আবার আসতে পারে । কিছু বলা যায় না ।

-যদি আবার আসে ! তখন ? তখনই কি আমাকে আগের মত বাঁচাবেন ?

এই কথার জবার না অপু কেবল তৃষার দিকে তাকালো । অপুর কোন কিছু মুখ দিয়ে বলতে হল না । অপুর চোখই বলে দিচ্ছে সে কি করবে । তৃষা কোন কথা না বলে আরও একটু সরে এল অপুর দিকে । গাঁয়ের সাথে গা লাগিয়ে বসলো । কাছাকাছি থাকলে যে অপুর কেবল যে ভাল লাগে সেটা নয়, তৃষারও ভাল লাগে ।

তৃষাকে ফেরৎ পাঠানোর পরেই আবার যে তৃষার উপর হামলা হবে সেটা অপু খুব ভাল করেই জানতো । অপু যার হয়ে কাজ করে সে যখন জানতে পারে অপু কাজটা করে নি তখন একটু চিৎকার চেঁচামিচি করেছিলো, পরে অবশ্য আর কিছু বলে নি । এরকম কিডন্যাপিং তারা প্রায়ই করে । একটা হাত থেকে ছুটে গেলে খুব একটা যায় আসে না । তবে অপুকে এই কথাও বলেছিলো যে আমরা করি নি কিন্তু অন্য গ্রুপ ঠিকই করবে ।

তৃষার উপর হামলা হওয়ার এক মাস পার হয়ে গেছে । তৃষার সাথে যদিও একজন বডিগার্ড দেওয়া হয়েছে তবুও ভয়টা অনেকটাই কেটে গেছে । আগের মত সতর্কতাও আর অবলম্বন করা হচ্ছে না । ঠিক তখনই আবারও তৃষার গাড়ির উপর হামলা হল ।

ক্লাস শেষ করে তৃষার ড্রাইভারকে ফোন দিল গেটের কাছে আসার জন্য । গেট কাছে গাড়িটা আসতেই কোন কিছু না দেখে গাড়িতে উঠে বসলো সে । উঠে বসেই অনুভব করলো কিছু একটা যেন অন্য রকম ।

তখনই মনে পড়লো তার গাড়ির সামনে একজন বডিগার্ড থাকার কথা । সে গাড়িতে ওঠার সময় বডিগার্ড বাইরে বের হয়ে আসে প্রত্যেকবার কিন্তু আজকে বের হয় নি । আর সামনের ড্রাইভারকে কেমন যেন অন্য রকম লাগছে । তৃষা যখন পুরোপুরি বুঝতে পারলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । দুপাশ দিয়ে আরও দুজন চড়ে বসেছে ।

ঠিক আগের মতই ওর মুখে কিছু একটা দিয়ে চেপে ধরলো কেউ !

তৃষার আর কিছু মনে নেই । কেবল জ্ঞান হারানোর আগে একটা কথাই ওর মনে মাত্র এক মাসের ভেতরে আবারও কেমন করে এতো বড় বোকামী করলো সে । অন্য কারো চেহারা মনে না আসলেও কেবল অপুর চেহারাটাই ওর চোখের সামনে ভেসে এল । ছেলেটা ওকে সাবধান করেছিলো । কোথায় এখন সে !

----

তৃষার এবারের কিডন্যাপের কন্ট্রাক্ট পেয়েছিলো কালা মজনুর দলের লোকজন । কিডন্যাপিংয়ে দেশের ভেতরে রীতিমত অপ্রতিদ্বন্দীই বলা চলে । যে কাজ হাতে নেয় কোন ভাবেই সেটা অসমাপ্ত করে রাখে না । বিভিন্ন গ্রুপের ভেতরে রেষারেষি থাকলেও কেউ মজনু গ্রুপের সাথে লাগতে আসে না । কারন খুব ভাল করেই জানে এর ফল মোটেই ভালখবে না । প্রায়ই দেখা যায় এক গ্রুপ এক পার্টিকে কিডন্যাপ করেছে অন্য গ্রুপ তাদের কাছ থেকে সেই ভিটটিম থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপন আদায় করছে । কোন নিয়মের ভেতরে এসে পরে না । তবে মজনু গ্রুপের থাক থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কোন বন্দিকে ছিনিয়ে নিতে পারে নি । দুয়েকবার চেষ্টা যে করে নি তা কিন্তু তারা কেউ সফল হয় নি বরং পরে তারা বেঘরে মারা পরেছে । তাই এদিকে আর কেউ সাহস করে পা দেয় না ।

কিন্তু আজকে সব কিছু হিসাবের বাইরে চলে গেল । মজনু গ্রুপের প্রধান মজনুর ছোট ভাই রাজু যখন তৃষাকে নিয়ে নারায়নগঞ্জের পঞ্চবটি পার হয়ে এল তখন একটা ট্রাক পাশ থেকে এসে সোজা ওদের ধাক্কা মারলো । রাস্তা থেকে প্রায় ছিটকেই পড়লো পাশে ধান ক্ষেতে । রাজুর মাথাটা ঝিম ঝিম করা অবস্থায় দেখলো কেউ একজন ওদের গাড়ির কাছে চলে এসেছে । কোমরে গোজা পিস্তলটা বের করার সময় পেল না । তার আগেই একটা ভোতা আওয়াজ হল, সেই সাথে কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ । তারপর আরও কয়েকটা ভোতা আওয়াজ।

তৃষার মাথাও একটু ঝিমঝিম করছিলো ধাক্কার ফলে তবে সেটা বড় কিছু নয় । কিন্তু আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর পাশে যে দুজন ছিল দুই জনেই কেমন করে যেন পড়ে আছে । ওরা কেউ যে বেঁচে নেই সেটা বুঝতে তৃষার মোটেও কষ্ট হল না । সেই সাথে এও বুঝতে পারলো যে কেবল এক্সিডেন্টের ফলে এদের মৃত্যু হয় নি । রক্ত পাতের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা কিভাবে মারা গেছে ।

তৃষার খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কেন জানি ওর খুব একটা ভয় লাগছিলো না । ডান পাশের দরজাটা খুলে গেল । তৃষা তাকিয়ে দেখে সেখানে অপু দাড়িয়ে । হাত দিয়ে সেদিকের ছেলেটার বডিকে টেনে বের করলো । তারপর অপু ওকেও বের করে আনলো । ওর দিকে তাকিয়ে বলল

-তুমি ঠিক আছো ?

তৃষা কোন কথা বলল না । কেবল মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো । ওর কপাল সম্ভব একটু কেটে গিয়েছিলো । সেখানটাতে একটু জ্বালছিল । তৃষা সেখানে হাত দিল । তারপর বলল

-তোমার অনেক লেগেছে তাই না ?

-আমি ঠিক আছি ! আপনি আমার খোজ পেলেন কোথা থেকে ?

ততক্ষনে একটা গাড়ি চলে এসেছে রাস্তার উপর । তৃষাকে হাটতে সাহায্য করলো অপু । তারপর দ্রুত ওকে নিয়ে গাড়িতে নিয়ে চলে যায়।

অপু জানতো এর পর থেকে মজনু গ্রুপ ওর পেছনে লেগে যাবে । সেই সুযোগ আর তাদের দিল না সে । নিজেই আগে হামলা করে বসলো । একে একে যত গুলো মাথা আছে সব গুলো খুজে বের করে শেষ করে দিল । এখন এই ালইনে সবাই অপুর গ্রুপকে জমের মত ভয় পায় । কেউ ওদের পথে আসে না ।

অনেকটা সময় দুজন বসে রইলো । আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর তৃষাই একটা সময়ে বলল

-আপনি আপনার ঐ প্রেমিকাকে খুব ভালবাসতেন, তাই না ?

এই প্রশ্নের জবাব অপু দিল না । তৃষা বলল

-ঐ ভালবাসা থেকে একটু ভাল কি আমাকে বাসা যায় ?

অপু ওর দিকে ফিরে তাকালো । তারপর বলল

-আমি যে জীবন চলি সেখানে তুমি কিভাবে আসবে শুনি ? আমার সাথে থাকলে তুমিও যে বিপদে পড়বে !

-আই ক্যান লিভ উইথ দ্যান ।

-তাই ?

-হুম ! কারন আমি জানি এই পৃথিবীতে একটা মানুষ থাকতে আমার কোন ভয় নেই । কেউ আমার কিছু করতে পারবে না ।

-আর সেই মানুষটা মরে যায় তখন ?

এই কথা বলতেই তৃষা ওর মুখে হাত দিল ।

-খবরদার এই কথা বলবেন না । আপনি মরে গেলে আমিও মরে যাবো !

অপু কি বলবে খুজে পেল না । এই কথাটা আগেও ওকে একজন বলতো । সেই মানুষটা চলে গেছে ওকে ছেড়ে, না ফেরার দেশে । আর কারো সাথে অপু নিজের জীবনটাকে জড়াতে চায় না কিন্তু এই মেয়েটা ঠিকই ওর জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে । সে চাইলেও মেয়েটাকে জীবন থেকে বের করে দিতে পারবে না ।



রাত হতে থাকে । ওরা দুজন সেই একই জায়গাতে বসে থাকে চুপচাপ । কোন কথা বলে তবে নিরবতার মাঝেও দুজন অনেক কথা বলে ফেলে । এভাবে তাদের জীবন হয়তো এগিয়ে চলবে সামনের দিন গুলোতে ! এটাই তাদের জীবনের গল্প এভাবেই হয়তো এগিয়ে চলবে !

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:২১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×