somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ছেলেটা এবং তিনি

০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটির এখন কোন কাজ নেই । কোন কিছু করার নেই । সময়ের হিসাব অনেক আগেই সে হারিয়ে ফেলেছে । কখন সকাল হয় আর কখন রাত নামে সেটাও সে জানে না । মাঝে মাঝে তীব্র গরম অনুভুত হয় । তখন মনে হয় দুপুর বেলা । তার কিছু সময় পরেই খাবার দেওয়া হয় তাকে । সম্ভবত সেটা দুপুরের খাবার !

সারাটা সময় তাকে এই বদ্ধ সেলে আটক করে রাখা হয় । কখনই বাইরে বের করা হয় না । ঘরটা চার ফিট বাই চার ফিটের একটা ছোট্ট ঘর । কোন জানালা নেই । লোহার শিকের একটা দরজা আছে তবে সেটাও জেলখানার এই ভেতরের দিকে । বাইরের কোন আলো এখানে আসে না । এক কোনাতে একটা প্যান সেট করা আছে । সেখানেই বাথরুম করতে হয় । সেটা দিয়ে তীব্র গন্ধ আসে । এমন কি সারাদিন পানি ঢাললেও সেই গন্ধ যায় না ।

দিনে দুইবার তার জন্য খাবার আসে । ব্যাস আর কেউ এখানে আসে না । ছেলেটি কারো সাথে কথা বলতে পারে না । কোন কথা বলার মানুষ নেই । মানুষের সাথে কথা বলার জন্য তার মনটা ব্যকুল হয়ে থাকে । কিন্তু কেউ আসে না তার কাছে । কেবল খাবার নিয়ে আসা সেই লোকটা ছাড়া । সেও তার দিকে ঘৃণার চোখেই তাকিয়ে থাকে । কোন প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় না । ডাক দিলেও শুনে না ।

-এই যে ভাই । শুনেন না ? এই পুলিশ ভাই ?

লোকটা খাবারের প্লেট টা সামনের দিকে ঠেলা দিয়ে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো । ছেলেটা বুঝতে পারে কি ঘৃণা চোখেই তার দিকে তাকিয়ে আছে । এই দৃষ্টি তার চেনা । সেই দিনও ঠিক এই ঘৃণা চোখেই তার আসে পাশের মানুষ গুলো তাকিয়ে ছিল তার দিকে । তবে সেটা সে খুব বেশি সময় দেখার সুযোগ পায় নি ।

এতো দিন কেবল গনধোলাই কথা শুনেই এসেছিলো মানুষের মুখে । কিন্তু সেটা যে কি আসলে কি জিনিস সেটা ছেলেটা সেদিন বুঝেছিলো । ভেবেছিলো কাজটা করেই সে দৌড় মারবে । কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে দৌড় দিয়ে পার পেয়ে যাবে । আগেও অনেকে এমন কাজ করেছে । সবাই পার পেয়ে গেছে । ছেলেটিও তেমন ধারনা ছিল । তাকে সেই ভাবেই বলা হয়েছিলো ।

বলা হয়েছিলো একবার যখন আঘাত করা হবে তখন কেউ সাহস করে এগিয়ে আসবে না । সবাই ভয়ে পালিয়ে যাবে । সে ভেবেছিলো বড়ভাই যখন বলেছে তখন এমনই হবে । এমই হওয়ার কথা । জীবনে সে যখন অন্য পথে চলে যাচ্ছিলো তখন এই বড় ভাই ই তাকে সঠিক পথে নিয়ে এসেছে । সঠিক পথ দেখিয়েছে । কিন্তু সঠিক পথে তো অনেক বাধা আসবে । সেটা মোকাবেলা করতে হবে । এমনই বলেছিলো সেই বড় ভাই । সেই দায়িত্বই সে নিয়েছিলো । সেই বাঁধা সরাতে হবে ।

লোকটার ঠিক পেছনেই দাড়িয়ে ছিল । কালো রংয়ের একটা টিশার্ট পরেছিলো সেদিন । পেছন থেকে কেবল তার মাথা ভর্তি কাচা পাকা সাদা চুপ দেখতে পাচ্ছিলো সে । সুযোগের অপেক্ষা করছিলো । এসেও গেল সেই সময় ।
ব্যাস ।
আর দেরি করে নি ।

কিন্তু যেমনটা ভেবেছিলো তেমন কিছুই হল না । ওকে বলা হয়েছিলো সে প্রথম কোপের সাথে সাথেই সবাই পালিয়ে যাবে ভয়তে । কিন্তু তেমন কিছু হল না । কোপ গুলো সে ঠিক মত দিতেও পারে নি । তার আগেই চার পাশ থেকে মানুষ জন তাকে ধরে ফেলল ।
তারপর মাইর শুরু !
এমন মাইর সে তার জীবনে কোন খায় নি । যখন পড়াশুনা করতো তখন মাঝে মাঝে মার খেয়ে না পড়ার জন্য । ওর বাবার হাতেও খেয়েছে মাইর । কিন্তু এই মাইর সেই মাইরের কাছে কিছু নয় ।

প্রথমে কিছুটা সময় নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলো সে কিন্তু একটা সময় দেখলো এটা দিয়ে লাভ নেই । চারিদিক থেকে কিল ঘুসি আর লাথি আসছেই । একটা সময় ছেলেটার স হ্যের সীমা হারিয়ে যায় । সে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় । তারপরেও কিছুটা সময় চলে তার উপর কিল ঘুসির বর্ষন !

তারপর যখন সে চোখ খুলে তাকালো তখনই সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলো । তার দুইহাত বেডের সাথে হ্যান্ড কফ দিয়ে লাগানো । সেখানেও ওর সাথে কেউ কথা বলতো না । কেবল সবাই ঘৃণার চোখে তাকাতো !

কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না । সে তো ভাল কাজ করতে গিয়েছিলো । তাদের ধর্মের শত্রুকে শেষ করতে গিয়েছিলো । সবার তো তাকে বাহবা দেওয়া কথা । কিন্তু সবাই এমন করে ঘৃণা ভরা চোখে তাকে দেখছে কেন !
ছেলেটা কিছু বুঝতে পারে না ।
এমন তো হওয়ার কথা ছিল না । তাহলে কেন হচ্ছে !


হঠাৎই ছেলেটা আবার বাস্তবে ফিরে আছে । দেখলো আবারো সেই পুলিশ লোকটা এসেছে । তবে আজকে ছেলেটা খানিকটা অবাকই হল । কারন লোকটা একা আসে নি । তার সাথে আরও একজন এসেছে । লোকটা হাবভাব দেখেই মনে হচ্ছে বড় অফিসার । তার হাতে চাবি দেখে ছেলেটা আরও অবাক হল । লোকটা আগের পুলিশ কে চোখের ইশারা করতেই পুলিশটা এগিয়ে এল । তারপর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল

-এই উঠে দাড়া ! হাত সামনে দে !

ছেলেটা কোন প্রতিবাদ না করেই হাত সামনে দিল । তার হাতে একটা হাত কড়া লাগানো হল । তারপর গেটের তালা খোলা হল । বের করা হল তাকে । সেল থেকে বাইরে এসে সে দেখলো আরও দুইজন পুলিশ দাড়িয়ে আছে । ওকে নিয়ে যেতে এসেছে !
তাহলে আজকে ওর রায়ের দিন ! দুইদিন ওকে কোর্টে হাজির হতে হয়েছে এরই মধ্যে ! আজকেও কি নিয়ে যাবে তাকে ।

ছেলেটা আস্তে আস্তে হাটতে লাগলো । সামনে দুজন পুলিশ আর পেছনে দুজন । সে হাটছে মাঝখানে ।

কিন্তু তাকে আজকে কোন গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল না । বরং একটা ঘরে এনে রাখা হল । একটা টেবিলের দুই পাশে দুইটা চেয়ার পাতা । একটা চেয়ারে তাকে বসতে বলা হল । তারপর তার হ্যান্ডকাফটা টেবিলের একটা আংটার সাথে আটকে দেওয়া হল ।

ঘরের এক কোনে একজন পুলিশ দাড়িয়ে আছে এটেনশন হয়ে । তাকে রেখেই সবাই বাইরে চলে গেল । কিছু সময়ে কিছুই হল না । ছেলেটা চুপ করে বসেই রইলো । তারপরে আবার দরজা টা খুলে গেল । ছেলেটা তাকিয়ে রইলো সেই দরজার দিকে । কিন্তু দরজা দিয়ে যে মানুষটা প্রবেশ করলো তাকে দেখার জন্য ছেলেটা মোটেই প্রস্তুত ছিল না ।
কোন ভাবেই প্রস্তুত ছিল না ।

কাঁচা পাকা সাদা চুলের চশমা পরা সেই মানুষটা ! মুখে একটা স্মিত হাসি লেগে আছে । ওর সামনে এসে দাড়ালো । লোকটার পেছনে সেই অফিসার পুলিশ । লোকটা সেই পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল
-এর হ্যান্ড কাফ খুলে দাও । এটা তো এমনিতেই জেলখানা । এর ভেততে আবার হাত কড়া কেন ?
পুলিশ অফিসার টি বললল
-স্যার, আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে এ আপনার উপর হামলা করেছিলো । আবার করতে পারে !

এই কথা শুনে লোকটা আবার হাসলো । তারপর বলল
-ভয় পেও না । খুলে দাও ।

অফিসারটি অনিচ্ছা স্বত্তেও হাত কড়া খুলে দিল । লোকটা তার সামনের চেহারে বসলো । তখনও সেই হাসি লেগেই আছে । ছেলেটা অবাক হয়ে দেখলো এই এতো দিন যার সাথেই তার দেখা হয়েছে সবাই কেবল তাকে ঘৃণার চোখেই দেখেছে অথচ এই মানুষটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে হাসি মুখে । চোখে বিন্দু মাত্র ঘৃণা নেই । বরং সেখানে একটা অদ্ভুদ মায়া আছে । ছেলেটার কাছে এই দৃষ্টি একেবারে অচেনা আর নতুন !

ছেলেটার মাথা ঠিক মত কাজ করছে না । এমন তো হওয়ার কথা না । এই সামনে বসা মানুষটা তো তাকে দেখতে আসার কথা না । কোন ভাবেই না। লোকটা কিছুটা সময় ছেলেটার সামনেই বসে রইলো । ওর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ! ছেলেটা তাকাতে পারছে না তার দিকে । অন্য রকম একটা অনুভুতি হচ্ছে তার ।
লোকটা হঠাৎ বলল
-তুমি ঐদিন আমাকে কেন আঘাত করেছিলে আমি জানতে চাইবো না । আমার ব্যাপরে তুমি কি ভাবো সেটাও বদলানোর চেষ্টা করবো না । কেবল একটা কথা বলতে এসেছি যে তোমার উপর আমার কোন রাগ নেই । তুমি যে ধর্মের দোহাই দিয়েই আমাকে আঘাত করেছো কেবল সেটাই নয়, পৃথিবীর কোন ধর্মই হিংসা বিদ্বেষ আর হানাহানিকে সমর্থন করে না । এমন কাজ করে নিজের এই ধর্মকে কুলষিত কর না । ঠিক আছে !

এই বলে লোকটা আবারও হাসলো । তারপর উঠে দাড়িয়ে ছেলেটার কাছে এসে দাড়ালো । মাথায় হাত দিয়ে বলল,
-আমি চেষ্টা করবো যেন তোমার কম সাজা হয় । আইন তো আমার হাতে নেই তবুও চেষ্টা করবো ! কেমন ? চেষ্টা করবো যাতে জেল থেকে বের হয়ে নতুন করে আবার জীবন শুরু করতে পারো ! নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানতে পারো !

কথা শেষ করে লোকটা আরও কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো ওর মাথায় হাত দিয়ে । তারপর বলল
-আজ আমি যাই !


ছেলেটা একটা কথাও বলতে পারলো না । কেবল প্রবল বিশ্ময় নিয়ে লোকটার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলো ।


(সমাপ্ত)




সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:০৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×