somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু-গল্পঃ স্বপ্ন

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝুমুর মেইলটার দিকে অনেকটা সময় তালিয়ে রইলো। কিছুটা সময় পর কেবল অনুভব করলো যে ওর চোখের এক কোনে পানি জমতে শুরু করেছে।
অপুটা এমন কেন? বারবার এমন কেন করে!

কদিন থেকেই ওর অফিস যাওয়ার উপর অপু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যদিও ঝুমুর কারো কথা শোনার মানুষ ছিল না আগে কিন্তু অপুর সাথে বিয়ের পর সব কিছু কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। নিজের আগের ঝুমুরকে সে যেন কোথায় হারিয়ে ফেলেছে। কিছুতেই আগের মত আর সবার উপর খবরদারি করতে পারে না। ঠিক সবার উপরে না, কথাটা হবে অপুর উপরে কিছুতেই সেটা কাজ করে না। যদি অপু নিজে কখনওই ওর ইচ্ছের বাইরে যায় না তেমনি আস্তে আস্তে ঝুমুর নিজেও অপুর পছন্দের ব্যাপার গুলোর সাথেই নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে, মানিয়ে নিতে ওর ভালও লাগছে।
আর তারপর ওর ভেতরে এই নতুন প্রাণের সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই যেন সব কিছু বদলে যেতে শুরু করলো।

যেদিন প্রথম ও অপুকে প্রথম কথাটা বলল অপু কিছুটা সময় কথাই বলতে পারে নি। কেবল নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলো অনেকটা সময়। একটা সময় ঝুমুর অনুভব করলো যে অপু কাঁদছে। বাঁচ্চা ছেলের মত কান্না।

তারপর পর থেকে অপু আসলেই বদলে যেতে শুরু করলো। অপুর ভেতরে কোন দিনই ভালবাসার কমতি ছিল না সেই সাথে কেয়ার নেওয়ার ব্যাপারটাও কিন্তু সেটা যেন আরও অনেক গুনে বেড়ে গেল। আগে পুরো সংসার ছিল ঝুমুরের নিয়ন্ত্রনে, সেদিনের পর থেকে পুরো সংসার তো বটেই ওর পুরো জীবনের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিল সে। কোথায় কি লাগবে কি খেতে হবে, কোথায় যেতে হবে সব কিছুই উপর অপুর দৃষ্টি।

আগে ঝুমুরের কিছু ইচ্ছে না করলেই বলত, করবো না, খাবো না। তার উপর আর কথা চলতো না।। কিন্তু এখন সে সব কিছু চলে না। সব কিছু করা চাই একদম নিয়ম মাফিক। একটু হেরফের করার উপায় নেই। আর খাবো না, এই কথা তো বলাই যাবে না। সময় মত নিয়ম করে তাকে খাওয়া দাওয়া করতেই হবে।

কিন্তু আজকে ঘটনা ঝুমুরকে সত্যিই নিশ্চুপ করিয়ে দিয়েছে। অপুর জীবনে ঝুমুর ছিল পুরোটা স্থান ঝুড়ে তবে সেটার পড়েই ছিল তার গল্প লেখা। ওয়াটপ্যাড কমিউনিটি তার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিবছর কোরিয়াতে তাদের একটা সেমিনার হয় এই গল্প লেখার উপর নির্ভর করে। পুরো বছর জুড়ে সেরা গল্প লিখিয়েদের আমন্ত্রন জানানো হয়। অপুর অনেক দিনের ইচ্ছে সেখানে যাওয়ার। এই জন্য অনেক পরিশ্রমও করেছে।

এইবার অপুও সেখানে যাওয়ার আমন্ত্রন পেয়েছে। অনেক আগে থেকেই সেটা ঠিক হয়ে ছিল। কিন্তু ঝুমুর জানতে পারলো অপু সেখানে যাচ্ছে না। ঝুমুরের ল্যাপটপ টা ঠিক মত কাজ করছে না সকাল থেকে। তাই অপুরটা চেয়ে রেখেছিল। সেখানেই কাজ করার সময়ই একটা মেইল আসার নোটিফিকেশন আসলো। সেখানে লেখা যে অপু যে আসতে পারছে এটা জেনে তারা দুঃখিত বোধ করছে তবে সেই সাথে এটাও আশা করছে যে সামনের বছর অপু ঠিকই যোগ দিবে।

সেন্ট মেইল চেক করে দেখলো অপু আসলে নিজের যাওয়াটা ক্যান্সেল করে মেইল পাঠিয়েছিল।

অপুর আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেল। বাসায় এসেই অপুর প্রথম কাজই হচ্ছে ঝুমুরের কাছে এসে কিছু সময় ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকা। আজকেও তাই করলো প্রথমে।

তারপর ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর মুখ ভার। অবাক হয়ে বলল, কি ব্যাপার মুখ ভার কেন?
ঝুমুর সেটার উত্তর না দিয়ে বলল, তুমি যাবা না কেন?
অপু ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে বলল, যাবো না? কোথায়.....
বলতে বলতেই চুপ হয়ে গেল।
ঝুমুর বলল, একটা সপ্তাহ তো! এতো দিন ধরে স্বপ্ন দেখছো তুমি আর এখন সুযোগ এসছে!
অপু কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল, এই যে সকাল থেকে অফিস করি, তোমার আর আমাদের এই বাবুর কাছ থেকে দূরে থাকি এটাই আমার সহ্য হয় না। আর একটা সপ্তাহ আমি কিভাবে থাকবো বল? আমার জীবনের সব থেকে বড় স্বপ্ন হচ্ছে তোমার সাথে বেঁচে থাকা, আমাদের মেয়েকে এক সাথে সকালে ঘুম থেকে ওঠা। এর থেকে বড় আর কিছু নেই আমার জীবনে। বুঝছো!

ঝুমুরের এখনও মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না যে আসলেই ওর ভাগ্যে এমন কেউ ছিল। নিজেকে ওর খুব বেশি ভাগ্যবতী মনে হয়!






থিম একটি এড থেকে অনুপ্রাণিত

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×