somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ উপকারে বিপত্তি

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘরের প্রতিটি মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কেউ কোন কথা বলছে না। কারো মুখে কোন কথা আসছে না। কেবল অবিশ্বাস ভরা চোখ নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে।

ছায়াটা আস্তে আস্তে ধোয়া থেকে মানুষের আকৃতি নিতে শুরু করলো। তারপর পরিপূর্ণ মানুষে পরিনত হতে আরো মিনিট পাঁচেক সময় লাগলো। একজন মাঝ বয়সী মহিলার আকৃতি ধারন করলো সেটা।

-আপনি কি চান?

জুয়েল গম্ভীর গলাতে জানতে চাইলো। কন্ঠটা এতোটাই শান্ত আর গম্ভীর ছিল যে রুমের ভেতরে অন্য সবাই একটু নড়ে চড়ে বসলো। সে আবার বলল

-এখানে কি চান?

তখনই মহিলা তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠলো

-এটা আমার বাড়ি !

-ভুল। এটা আর আপনার বাড়ি নেই। আপনি মারা গেছেন। আপনি এখানে থাকতে পারেন না।

-না আয়ায়ায়ায়ায়ায়া!

মহিলা একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার দিলো। সেই সাথে সাথে মহিলার শরীর যেন আবার ধোয়ায় পরিনত হতে শুরু করলো। আর তখনই জুয়েল সেই লোকটাকে আবার দেখতে পেল। জুয়েল কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। লোকটার চোখ দেখতে মোটেই ভাল লাগছে না। আর আজকে যেন আরও একটু কাছে চলে এসেছে। চেহারা যেন আরও একটু স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ।

প্রথম যেদিন দেখেছিল তখন অনেক দূরে একটা মৃদ্যু বিন্দুর মত মনে হচ্ছিলো। যতই দিন যাচ্ছে সে ততই কাছে চলে আসছে।

জুয়েল আর মনযোগ রাখতে পারলো না। মনযোগ ভেঙ্গে ফেলল। সাথে সাথেই চোখের সামনে থেকে সব গায়েব হয়ে গেল। রুমে আর কোন অস্বাভাবিকতা দেখা গেল না। জুয়েলের কপালে ততক্ষণে ঘামে ভিজে উঠেছে। পাশ থেকে টিস্যুর বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে কপালের ঘাম মুছলো।

বাড়ির কর্তা জামান সাহেব বলল

-কি হল?

-দেখলেন তো! বেশির ভাগ সময়ই এমনই হয়। অতৃপ্ত আত্মা জানেই না, মানে বুঝতেই পারে না যে সে মারা গেছে।

-এখন?

-সমস্যা নেই। আরও কয়েকদিন তাকে ডাকতে হবে। তাহলেই সে বুঝতে পারবে।

জুয়েল আর দাড়ালো না। বাড়ির কর্তাকে বলল যে ও আবার আসবে। তখন সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছে।

জুয়েল যখন গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে এসেছে তখন দেখলো রাস্তা ঘাটের যান চলাচল অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। যদিও সাড়ে এগারো টা ঢাকার জন্য খুব বেশি রাত নয় তবে শীতটা বেশ ভাল ভাবেই পড়া শুরু করেছে। নিজের জ্যাকেটের টুপিটা তুলে নিল । স্কুটিটা বাসার সামনেই পার্ক করা ছিল। উঠে বসে চাবি ঘুরাতেই চালু হয়ে গেল। গিয়ারে মোচড় দিতেই তা চলতে শুরু করলো।

আজকে জুয়েলের বেশ ক্লান্ত লাগছে। আগে এই কাজে এতো ক্লান্তি আসতো না বরং কাজ গুলো করতে জুয়েলের ভালই লাগতো। কিন্তু ইদানিং কেমন যেন একটা ক্লান্তি এসে ভর করে। যেদিন থেকে ঐ মানুষটাকে দেখা শুরু করেছে সেদিন থেকেই ওর কাছে পুরো ব্যাপারটাই কেমন যেন অন্য রকম ঠেকছে। বারবার মনে হচ্ছে কোথাও যেন একটা সমস্যা হচ্ছে। কিংবা ও কোন বিপদে পরতে যাচ্ছে।

তাই এখন আর এই কাজ গুলো করতে আগ্রহ পাচ্ছে না। কিন্তু মানুষজন এমন ভাবে অনুরোধ নিয়ে আসে যে কোন ভাবেই সেটা ফেলে দেওয়া যায় না।

জুয়েলের ভেতরে এই অদ্ভুদ ক্ষমতাটা ছোট বেলা থেকেই আছে। প্রথম প্রথম ওর বাবা মা ব্যাপারটাকে ঠিক পাত্তা দেয় নি কিন্তু যখন তাদের সামনেই একজন মৃত মানুষকে ডেকে তার সাথে কথা বলল এবং সেটা তারা নিজে থেকে দেখতে পেল তখন আর না বিশ্বাস না করে পারে নি । তারপর থেকেই তারা তাকে নিয়ে চিন্তার ভেতরে ছিলেন । তারা এই ক্ষমতাটাকে লুকিয়ে রাখার সর্বাত্তক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু এমন কথা লুকিয়ে রাখার কোন উপায় নেই । একটু একটু করে সবাই জেনে গেল ।

অবশ্য জুয়েলের ব্যাপারটা খারাপ লাগতো না । একটু ক্লান্তি হত প্রতি সেশনের পর তা ছাড়া আর তেমন কোন সমস্যাই হত না । মৃত মানুষটার অনেক কিছু বলার থাকে । ব্যাপারটা জুয়েলের কাছে সব সময়ই অন্য রকম লাগে । কত মানুষের কত রকম কথা । কত রকম মানুষ আসে তার কাছে । ওর ভাল লাগে তাদের উপকার করতে পেরে ।

সব কিছু ঠিক মতই চলছিলো কিন্তু তারপরই সে ঐ লোকটাকে দেখতে শুরু করলো । এমনটা আগে কোন দিন হত না । যে ঘরে কিংবা যে জায়গাতে যেত কেবল একটা মানুষই এসে হাজির হত । কিন্তু একটা সময় লক্ষ্য করলো যে মৃত মানুষটার সাথে দেখা করার কথা ওর, সেই মানুষটা বাদ দিয়েও অন্য একটা মানুষকে সে দেখতে পাচ্ছে ।

ব্যাপারটা এমন যে তুমি একজন মানুষের সাথে কথা বলছো সেই সময়ে লক্ষ্য করলে খুব দুর থেকে কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে আছে । ব্যাপারটা তুমি পছন্দ করছো না তবুও তাকিয়েই আছে । তারপর একটা সময় লক্ষ্য করতে শুরু করলে যে আস্তে আস্তে সেই লোকটা তোমার দিকে এগিয়ে আসছে । ঠিক এই ব্যাপারটাই হচ্ছে জুয়েলের সাথে ।

তারপর থেকে যতবারই জুয়েল কারো সাথে যোগযোগ করার চেষ্টা করেছে ততবারই সেই লোকটাকে দেখতে পেয়েছে । এবং প্রতিবারই একটা ব্যাপার সে লক্ষ্য করেছে সে মানুষটা আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসছে । এই ব্যাপারটাই জুয়েলের ভাল লাগছে না মোটেও । যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন লোকটা ওর দিকে এগিয়ে আসছে আর এটাই ওর ভাল লাগছে না । দিন দিন লোকটা চেহারাও স্পষ্ট হয়ে আসছে । কেমন একটা কুটিল চেহারা দেখা যাচ্ছে লোকটা । আর কি ভয়ংকর সেই লোকের দৃষ্টি !



দুই

সন্ধ্যা নেমে গেছে অনেক আগেই । পুরান ঢাকার এই গলিটা এমনিতেই নির্জন । সন্ধ্যার পরে যেন আরও নির্জন হয়ে গেছে । জুয়েল বাসাটার সামনে এসে দাড়িয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে দরজাটায় কড়া নাড়তে লাগলো । কড়াটা নাড়তেই লাগলো । যে কোন মূল্যেই দরজার ওপাশের মানুষটার সাথে ওর কথা বলা লাগবেই । আগে থেকে আসতে না বলা হলে এই দরজা ঝাকিয়ে কোন লাভ হয় না । এই দরজা খোলে না কখনও । কিন্তু জুয়েলের দরজার ওপাশে যাওয়াটা খুব বেশি দরকার !

গত কয়েকদিন ধরে জুয়েল ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছে । জুয়েল যেদিন থেকে বুঝতে পারলো সেদিন থেকেই ভেবে এসেছে সে কেবল এই কাজটা করে মানুষের উপকার করার জন্য । অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয় । সেই সময়েই এই মানুষটার সাথে ওর পরিচয় হয়েছিলো । একদম সোজা ওর বাসাতেই এসে হাজির । জুয়েল প্রথমে ভেবেছিলো হয়তো অন্যদের মত তারও কোন সমস্যা আছে । সেটার জন্যই এসেছে । কিন্তু সে বলল অন্য কথা ! জুয়েল যা বলল সেটা করতে মানা করলো । সে নাকি নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনছে ।

জুয়েলের তখন নিজের উপর একটা আলাদা বিশ্বাস জন্মে গেছে । সেটা কি আত্মবিশ্বাস ছিল নাকি আত্ম অংকার সেটা জুয়েল বলতে পারবে না । সে মানুষের উপকার করছে, মানুষ তাকে বাহবা দিচ্ছে । এটাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল । তারপর যখন শুনলে সেও মানুষের উপকার করে এই ভাবে তখন জুয়েলের মনে হল যে জুয়েল হয়তো তার মার্কেট নিয়ে নিচ্ছে, এই জন্যই সে এমন কথা বলছে । জুয়েল তার কথা শুনলো তো নাই বরং তাকে ভাল মন্দ বলে চলে যেতে বলল ।

তারপর অনেক বারই জুয়েলের সাথে সেই মানুষটার দেখা হয়েছে । অদ্ভুদ মানুষটার নাম । রাফায়েল । শহরে এমন অনেকেই আছে । জুয়েল যেহেতু এই পথেই মানুষকে উপকার করে তাই সেও বেশ খোজ খবর রাখতো । অবশ্য এই লাইনের বেশির ভাগ মানুষকেই জুয়েলের ভন্ড মনে হয়েছে । তবে রাফায়েলের নামে কখনও কোন খারাপ কিছু শুনে নি । বরং যত রকম ওঝা আর এরকম অতি প্রাকৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে তাদের সবাই রাফায়েল নামেই এই মানুষটাকে বেশ সমীহ করে চলে । তার ভেতরে আসলেই অন্য কিছু আছে এটা সবাই বলে । আরও অনেক খবরই জুয়েলের কানে এসেছে । আর তার কাছে সাহায্য চেয়ে কেউ ফেরৎ এসেছে এমন কোন দিন হয় নি । তাই যখনই বিপদটা পরেছে সবার আগেই এই মানুষটার কথাই জুয়েলের মনে হয়েছে । এই মানুষটা তাকে আগেই সাবধান করতে গিয়েছিলো কিন্তু সে কানে নেয় নি ।

আজকে এই বিপদে পড়ে সে নিজেই চলে এসেছে সাহায্য নিতে । কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই । কতটা সময় সে দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিল বলতে পারবে না, একটা সময়ে মনে হল ওর পেছনে কেউ দাড়িয়ে আছে। ভয়ের একটা তীব্র শ্রোত বয়ে গেলে ওর পুরো শরীর জুড়ে । গত কয়েক দিন ধরেই এমন হচ্ছে । নির্জন কোন স্থানে গেলেই ওর কেবল মনে হচ্ছে কেউ যেন ওর পেছনে এসে দাড়াচ্ছে । এবং পেছনের সেই দাড়ানোটা কেউ টা যে ঐ লোকটাই সেটা বুঝতে জুয়েলের কষ্ট হয় নি । তবে লোকটাকে ওর ভয় লাগছে । ভয়ংকর ভয় লাগছে । ইচ্ছে করছে দুরে কোথাও পালিয়ে যেতে ।

জুয়েল তাকাবে না তাকাবে না করেও পেছন ফিরে তাকালো । কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না । ঠিক সেই সময়ে দরজা খোলার আওয়াজ হল । জুয়েল দরজার দিকে ফিরে দেখলো রাফায়েল নামের মানুষটা দাড়িয়ে । রাফায়েলের মুখ দেখেই জুয়েলের মনে হল সে মোটেই অবাক হয় নি তাকে এখানে দেখে ! যেন সে জুয়েলকেই আশা করছিলো ।

-কি ব্যাপার মিস্টার জুয়েল ! এখানে হঠাৎ ?

-আ-আমি অনেক বিপদে পরেছি । খুব বড় বিপদে !

-সেটা তো পড়ারই কথা ছিল ।

-প্লিজ আপনি আমাকে সাহায্য করুন ! প্লিজ আমি ...।

-আচ্ছা । আসো ভেতরে আসো !

এই বলে রাফায়েল দরজার ভেতরে চলে গেল । জুয়েল পেছনে আরেকবার রাস্তার দিকে তাকালো । কাউকে দেখতে পেল না তবে ওর মনে হল যেন কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে । প্রচন্ড রাগান্বিত চোখে সে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । জুয়েল আর দাড়ালো না । দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দরজা বন্ধ করে দিল ।

-এবার বল কি হয়েছে ?

-আমি ঠিক জানি না কি হয়েছে ! তবে কিছু একটা হয়েছে সেটা হওয়ার কথা ছিল না । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি ঠিক ঠিক জানেন যে কি হয়েছে ! ঐ জিনিসটা কি আর ঐদিন কি বের হয়ে এসেছে হয়ে এসেছে আমি বলতে পারবো না তবে সেটা যে আমার ক্ষতি করতে চায় সেটা আমি পরিস্কার বুঝতে পারছি ।

-খুলে বল । তারপর দেখি কি করা যায় !

জুয়েল টিটেবিলের সামনে রাখা পানির গ্লাস থেকে পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিল । তারপর বলল

-আপনি তো জানেনই আমি কি কাজ করি । কোন স্থানে যদি কোন অতৃপ্ত আত্মা থাকে তাহলে আমি সেটার সাথে যোগাযোগ করতে পারি । তার সাথে কথা বলতে পারি ।

-হ্যা । তারপর !

-এই কাজটাই আমি অনেক দিন ধরেই করে আসছি । আপনি একবার আমাকে মানা করেছিলেন কিন্তু আমি শুনি নি । আমার কেবল মনে হয়েছিলো যে আপনি ঈর্ষা থেকে এই কাজটা করেছিলেন কিন্তু পরে আমার ভুল ভেঙ্গেছে । আপনি সত্যিই আমাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন ।

-এসব কথা পরে হবে ! এখন কি হয়েছে আর কিভাবে হল সেটা বল শুনি ।

-আমি যথারীতি ২৭ নম্বরের একটা বাড়িতে যাচ্ছিলাম একটা আত্মার সাথে যোগাযোগ করার জন্য । বাড়ির মালিক খুব বিপদে পড়েছিলেন ফ্ল্যাট টা কিনে । কিন্তু সেখানে একটা অদ্ভুদ ব্যাপার লক্ষ্য করি ।

কিছুটা সময় থেমে জুয়েল আবার বলল

-আগে যখন কারো সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতাম তখন সেখানে থাকা সেই আত্মাটাই কেবল দেখা দিত । আর কাউকে দেখা যেত না কিন্তু ঐদিনই দেখলাম এই নির্দিষ্ট একজন ছাড়াও আমি আরেকজনকে দেখতে পাচ্ছি । এবং সেটা আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আচে । প্রথমে ব্যাপারটা কিছু মনে করলাম না । কারন সেটা অনেক দুরে ছিল কিন্তু যতই দিন যেতে লাগলো দেখতে পেলাম সেটা একটু একটু করে আমার কাছে এগিয়ে আসছে । কাউকে ডাকতে গেলেই আমি তাকে দেখতে পেতাম । এবং সেটা আস্তে আস্তে আমার কাছে চলে আসছিলো এবং ....

জুয়েল চুপ করে রইলো কিছুটা সময় । রাফায়েল তখন বলল

-এবং সেশনের একটা দিন দেখলে ঐ অন্য লোকটাকে তুমি দেখলে সে তোমার চোখের সামনে দিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেল । রাইট ?

-হ্যা । ঐদিন মাথা ঘুরে গিয়েছিলো । আমি কেবল দেখলাম সেটা আমার সামনে দিয়ে যেন আমার বের হয়ে এল । তারপর বেরিয়ে গেল চোখের সামনে দিয়ে । আমি ছাড়া আর কেউ ই দেখতে পেল না সেটা কে ! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা আমার পেছনে লেগেছে । আমার কোন ক্ষতি করতে চায় !

রাফায়েল কোন কথা না বলে খানিকটা সময় চুপ করে রইলো । উঠে গেল নিজের চেয়ার থেকে । সেলফ থেকে একটা বই বের করে কি যেন দেখলো তারপর আবার ফিরে এল । তারপর বলল

-ঐটা তোমার কেবল ক্ষতি করতে চায় না । তোমাকে মেরে ফেলতে চায় ।

-কেন ? আমি তো তার কো ক্ষতি করি নি ।

-না ক্ষতি কর নি । বরং তুমি তো তাকে মুক্ত করেছো ! তাকে এই জগতে নিয়ে এসেছো ?

-তাহলে আমাকে কেন মারবে ?

-কারন হচ্ছে তুমি যদি মারা যাও তাহলে তাকে আর তার ঐ জগতে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না ! সে সারা জীবন এখানেই থাকবে ।

জুয়েল কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । রাফায়েল বলল

-জানোই তো মানুষ যখন মারা যায় তখন সেটা অন্য জগতে গিয়ে হাজির । তবে মাঝে মাঝে কোন কোন আত্মা সেই অন্য জগতে যেতে পারে না । মাঝখানের কোন মধ্যবর্তি এলাকাতে আটকে যায় ! এটা কে তুমি নো ম্যানস ল্যান্ডের সাথে তুলনা করতে পারো । না সেইটা এই জগতের না ঐ জগতের ! আর তুমি এবং তোমাদের মত কিছু মানুষ হচ্ছে সেই নো ম্যানস জগত মধ্য মধ্যবর্তি অস্বাভাবিক জগতের চাবি ! মানে তোমার শরীরের ভেতরেই সেটাতে ঢোকা এবং বের হওয়ার দরজা আছে !

জুয়েল বলল

-আমার মত আরও আছে ?

-আছে তবে খুব অল্প । তোমার ভেতরে আসলে ঐ ক্ষমতা আছে যে তুমি এই জগত আর ঐ নোম্যানস জগতের মধ্যে একটা সেতু বন্ধুন সৃষ্টি করতে পারো । দরজাটা খুলতে পারো । দরজা খুলে ঐ নোম্যান জগতের কাউকে নিয়ে আসতে পারো ! বুঝেছো ?

-হুম !

-ঐ যে নো-ম্যানস ল্যান্ডের অবস্থা । না এই দেশের না ঐ দেশের । এমন স্থানে অনেক কিছুই অনেক দিন ধরে আটকে আছে । ওখানে থাকতে থাকতে ওরা প্রবল শক্তি অর্জন করে নিয়েছে । এখন তুমি চিন্তা কর তুমি একটা জেলে আটকা আছে । একদিন লক্ষ্য করলে যে একটা লোক প্রতিদিন জেলের একটা দরজা খুলে একজনকে নিয়ে যাচ্ছে এবং দরজাটা খুলেই রেখে দিচ্ছে তখন তোমার মনে কি হবে ? নিশ্চয়ই পালানোর কথা আসবে রাইট ?

-হ্যা । তার মানে আমি যখন অন্য কাউকে ডাকতাম তখন কোন একটা আত্মা ঐ দরজা দিয়ে বের হয়ে এসেছে ।

-হ্যা । আগে সে দেখেছে যে তুমি দুই জগতের ভেতরে একটা দরজা খুলে দিতে পারছো ! সে বের হয়ে এসেছে । এবং তোমাকে সে মেরে ফেলতে চায় কারন তুমি মরে গেলে সেই দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবে । আর তাকে ফিরে যেতে হবে না !

-তাহলে ? এখন আমার কি হবে ?

-এই জন্যই আমি তোমাকে সাবধান করেছিলাম । কিন্তু তুমি শোন নি ।

জুয়েল কিছুটা সময় চুপ করেই রইলো । আসলেই সে তখন অন্য জগতে ছিল । নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা পরিচয় দেওয়া সবাই তার দিকে অন্য চোখে তাকাতো, এই সবই তাকে পেয়ে বসেছিলো ।

রাফায়েল কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

-সব সমস্যারই সমাধান আছে ।

-কি সমাধান ?

-তোমাকে আবারও সেই কাজ করতে হবে যা তুমি করছিলে ?

-মানে আবারও ঐ দরজা খুলবো ?

-হ্যা । তবে এবার এতো সহজ হবে না । কারন কি জানো ?

জুয়েল খানিকটা মাথা চুলকে বলল

-সে জিনিসটা আমাকে কাজটা করতে দিবে না ?

-হ্যা । কারন কারন এবার দরজাটা খুললে আরও একটা জিনিস সেখান থেকে বের হয়ে আসবে ?

জুয়েল এবার খানিকটা কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলো রাফায়েলের দিকে । কি বলতে চাইছে বুঝতে পারছে না ।

রাফায়েল বলল

-আমার এই জগতটা কত ভাগে বিভক্ত আমরা নিজেরাও জানি । কত রকম প্রাকৃত অপ্রাকৃত প্রাণী যে আছে আমরা সেটাও বলতে পারি না । প্রত্যেক জগত আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত । এক জগতের বাসিন্দাদের অন্য জগতে যাওয়ার কোন নিয়ম নেই । এই প্রত্যেক জগতেই এই ব্যাপারটা দেখার জন্য প্রহরী আছে । তারা এটা খেয়াল করে যেন এই লেয়ার ভেদ করে যেন কেউ অন্য জগতে না যেতে পারে । আর যদি চলেও যায় তাহলে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা তারা করে ।

-তার মানে আমাকে এখন সেই প্রহরীকে ডেকে আনতে হবে ?

-হ্যা । সেই নিয়ে যেতে পারবে ।

জুয়েলের দিকে তাকিয়ে রাফায়েলের মনে হল তার মনে আরও একটা কথা জেগেছে । কিন্তু করবে কি না ভাবছে । রাফায়েল বলল

-কি ভাবছো এতো ?

-না মানে আপনি বললেন না যে প্রহরীরা এক জগতের বাসিন্দাকে অন্য জগতে যেতে দেয় না । আমি যে এই কাজটা করি । আমার আবার ক্ষতি করবে না তো ?

-তারা তোমাকে পছন্দ করে না এটা সত্যি । তবে না তারা তোমার ক্ষতি করবে না ।

-কেন ?

-আছে কারন ! সব কিছু না জানলেও চলবে ।

জুলেয়ের একটু একটু ভয় ভয় করতে লাগলো । ঐদিনের পর থেকে আর একটা বারের জন্য সে এই কাজটা করে নি । বারবার কেবল মনে হয়েছে যে কেউ ওকে পেছন থেকে ফলো করছে । কোন কাজেই ঠিক মত মনযোগ দিতে পারছে না । কেমন একটা অদ্ভুদ ভয় করছে । রাতে একা একা ঘুমাতেও সে ভয় পাচ্ছে । এখন রাফায়েল নামের এই মানুষটার সাথে কথা বলে একটু শান্তি লাগছে । এখন কেবল আবার কোন ভাবে দরজাটা খুলতে পারলেই হবে । বাকি কাজটা সেই অন্য জগতের প্রহরীই করবে !

২৭ নম্বরের সেই জামান সাহেবের ফ্ল্যাটে ওরা আবার গিয়ে হাজির হল রাফায়েলকে নিয়ে । সাথে রাফায়েলকে দেখে সেই ভদ্রলোক একটু অবাকই হল ।

এই কদিনে ভদ্রলোকে বেশ কয়েকবার জুয়েলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু জুয়েল নানান কারন দেখিয়ে সেটা এড়িয়ে গেছে । আজকে সরাসরি হাজির হতেই ভদ্রলোক বেশ অবাক হলেন । তবে তিনি জানালেন যে এই বাসায় তিনি আর থাকবেন না । তার ফ্যামিলি অন্যখানে চলে গেছে । সেও চলে যাবে ।

জুয়েল যেন মনে মনে খুশিই হল । ঝামেলা আজকে কম হবে । জুয়েল ঠিক আগের মত করেই বসে বসলো সেই ঘরটাতে । জুয়েল বসতেই রাফায়েল ওকে ঘিরে চক দিয়ে একটা গোল বৃত্ত একে দিল । তারপর জুয়েলের দিকে তাকিয়ে বলল

-আমি জানি না এটা তাকে কতটা সময় আটকে রাখবে তবে তোমার মনযোগ হবে কেবল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ! কেমন ? অন্য দিকে তাকাবা না ! অন্য কোন কিছু ভাববা না । মনে থাকবে ?

জুয়েল মাথা ঝাকালো । তারপর জামান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল

-আজকে আপনার এই ঘরে না থাকলেই বরং ভাল । আমরা দেখি কি করতে পারি ! ঠিক আছে ?

জামান সাহেব কি বুঝলো কে জানে । কেবল মাথা ঝাকালো । কোন উপায়ে যদি তার এই ফ্ল্যাট টা মুক্ত হয় তাতেই তিনি খুশি । এর বেশি কিছু চান না । জামান সাহেব দরজা খুলে বের হয়ে গেল । তারপরেই রাফায়েল ঘরের লাইট গুলো সব বন্ধ করে দিল ।

চোখ বন্ধ করতেই জুয়েলের মনে হল কেউ ওকে কাজটা করতে মানা করছে । সাথে সাথেই চোখ খুলে ফেলল । একবার পেছনে ঘুরে দেকার চেষ্টা করলো কেউ আছে কি না । রাফায়েল পেছন থেকে বলল

-ভয় পেও না । কেবল মনযোগ দাও । দরজাটা খুলতেই হবে ।

জুয়েল এবার বড় করে দম নিল । তারপর চোখ বন্ধ করলো । চেষ্টা করলো সংযোগ সৃষ্টি করার । প্রতিবার সংযোগ সৃষ্টি করার সময়ই জুয়েলের মনে হয় ও কোন সমুদ্রের পাড়ে দাড়িয়ে আছে । তারপরই সে দুর থেকে দেখে কেউ ওর দিকে এগিয়ে আসছে । সমুদ্রের পাড়ে দাড়িয়ে অনুভব করার চেষ্টা করে অস্বাভাবিক কিছু আশে পাশে আছে কি না । যদি সেই ঘরে অস্বাভাবিক কিছু থেকে তাহলে জুয়েল দেখতে পায় সেই সমুদ্রের পাড়ে কেউ আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে আসছে । যতই সেই মানুষটা এগিয়ে আসে ততই ধোয়ার মত অয়বয়টা ফুটে উঠতে থাকে । যখন মানুষটা একেবারে সামনে চলে আসে তখনই সেই ধোয়াটা পরিপূর্ণ রূপ নেয় । তখন কথা বললে কথার জবার আসে । তবে অনেক সময়ই আসে না ।

আজকে অনেকটা সময় চোখ বন্ধ করেও জুয়েল কাউকে দেখতে পেল না । তাহলে কি কেউ আর নেই এখানে ? যদি না থাকে তাহলে আজকে আর হবে না । জুয়েল আরও একটু মনযোগ দিল । বারবার ডাকতে লাগলো কেউ আছে কি না । ঠিক সেই সময়েই দুরে দেখতে পেল কাউকে । জুয়েলের গভীর আগ্রহ নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো । কিন্তু যতই সেটা জুয়েলের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো ততই জুয়েলের একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হতে লাগলো । জুয়েলের মনে হল হঠাৎ করেই ঘরের তাপমাত্র হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে অনেক বেশি । যখন কেউ এসে হাজির হয় তখন এমনিতেই ঘরের তাপমাত্রা একটু বেড়ে যায় কিন্তু এই তাপমাত্রটা অনেক বেশি ।

ঠিক সেই সময় দরজাটা শব্দ করে খুলে গেল । জুয়েলের মনযোগটা ছুটে গেল । চোখের সামনে থেকে ধোয়ার আয়বয়টা ছুটে গেলেও একটা অদ্ভুদ অনুভুতি শুরু হল ওর ভেতরে । ওর মনে হল সে এখনও সেই সমু্দ্রটা দেখতে পাচ্ছে আর সেই দুরের মানুষটা আস্তে আস্তে এখনও এগিয়ে আসছে !

জুয়েল অবাক না হয়ে পারলো না । ঠিকঠাক মত মনযোগ না দিলে এমনটা কোন ভাবেই হয় না কিন্তু আজকে এসব কি হচ্ছে । জুয়েল দরজার দিকে তাকালো । সেখানে জামান সাহেব দাড়িয়ে আছে ! কিন্তু তার দাড়ানোর ভঙ্গিটা মোটেই স্বাভাবিক না । এই অন্ধকারের ভেতরেরও জামান সাহেবের টকটকে লাল চোখ জুয়েলের চোখ এড়ালো না । জুয়েল রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেও জামান সাহেবের দিকেই তাকিয়ে আছে । জামান সাহেব বলে উঠলো

-এখনই চলে যাও !

কন্ঠটা যেন একটু কেঁপে কেঁপে আসছে । জুয়েলের মনে হল কেউ যেন জামান সাহেবের ভেতর থেকে কথা বলছে । জুয়েল কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাফায়েল তাকে হাতের ইশারা করে থামিয়ে দিল । তারপর নিজেই বলল

-এই নিরীহ লোকটাকে ছেড়ে দাও !

-নাআআআআ !

-দেখো ছেড়ে দাও বলছি !

-দিবো না । কিছুতেই ছাড়বো না । আমি ঐ জগতে ফেরৎ যাবো না ।

রাফায়েল বলল

-এখানে তোমার থাকার কথা না । তোমাকে যেতেই হবে ।

-নাআআআআ ! আমি যাবো না !

-এখানে থেকে চলে যেতেই হবে । যদি আলিনা চলে আসে তাহলে কিন্তু তোমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না ।

-জামান সাহেব যেন রাগে ফেঁরে পড়লেন । তারপর বললেন

-তাহলে আমি এই লোককে মেরে ফেলবো । তোমাদের জন্য এই লোকটা মরে যাবে ! আলিনাকে চলে যেতে বল । ওকে ডাকবে না !

রাফায়েল বলল

-আচ্ছা ডাকবো না । আগে এই ভদ্রলোককে ছেড়ে দাও । তারপর তুমি যেখানে ইচ্ছে চলে যাও ! আমরা আলিনাকে ডাকবো না ।

জুয়েল অনুভব করলো সেই সমুদ্র পাড়ে সেই জন একদম কাছে চলে এসেছে । তাকে দেখতে অনেকটাই মানুষের মত । আরও ভাল করে বললে মেয়ে মানুষের মত । তবে ওর মাথার উপরে দুটো বড় শিং সে দেখতে পাচ্ছে । নাকটাও যেন একটু একটু বেশি চওড়া । বাদ বাকি সবই মানুষের মত । জুয়েলের মনে হল এই প্রাণীটার নামই কি আলিনা !

রাফায়েল বলল

-দেখো এই সুযোগ আর পাবে না । আমরা আলিনা কে ডাকছি না । এই দেখো জুয়েল তোমার দিকে তাকিয়ে আছে । এই লোকটাকে ছেড়ে দাও তারপর সোজা চলে যাও সেদিকে চোখ যায় ! কিন্তু যদি এই লোকটা মারা পড়ে তাহলে জেনে রেখ আলোনা তোমাকে কোন ভাবেই ছাড়বে না । এবং তোমাকে কঠিন শাস্তি দিবে !

সামনে দাড়ানো জামান সাহেব যেন কিছুটা সময় দ্বিধায় পড়ে গেল । রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল

-তোমরা যেতে দিবে তো আমাকে ?

-হ্যা । কিন্তু আগে ওকে ছাড়ো । তুমি চলে যাও তোমার মত !

জুয়েল দেখতে পেল জামান সাহেব যেন কেঁপে উঠলো । তারপর এক পাশ ছিটকে লাফিয়ে পড়লো । ঠিক সেই সময় জুয়েল রাফায়েলকে লাফিয়ে উঠতে দেখলো । যেমন দড়ি ধরে টান দেয় ঠিক সেই ভাবে দুই হাতে ধরে শূন্য যেন ডড়ি ধরে টান দিল । আর সাথে সাথেই জুয়েল দেখলো জামান সাহেবের দেহটা ছিটকে সরে এল রাফায়েলর কাছে । দুর থেকে দেখলে মনে হবে যে জামান সাহেবের শরীরে কোন দড়ি বাধা ছিল সেটা ধরে টান দিতেই সেই সরে এসেছে ।

জুয়েল আবারও সেই প্রাণীটাকে দেখতে পেল । যেন এতো সময় এই মুহুর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো । জুয়েলের কেবল মনে হল কেউ যেন ওর ভেতর থেকেই লাফ দিয়ে বের হয়ে গেল দরজার দিকে । তারপরই কারো জোড়ে চিৎকার শুনতে পেল । কেউ যেন ওর নাম ধরে বলছে সে ওরা তার সাথে প্রতারণা করেছে । এটার প্রতিশোধ সে নিবে !

তারপর কেটে গেল কয়েকটা মূহুর্ত । আবারও জুয়েলের মনে কিছু একটা সেই দরজা দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো আর আবারও ওর ভেতরে ঢুকে পড়লো । জুয়েল কেবল একটা ঝাকি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেল ।

সব কিছু ঘটতে সব মিলিয়ে একট মিনিটের কম সময় লাগলো । যখন আবার সে উঠে পড়লো তখন মাথাটা ঝিমঝিম করছে । তাকিয়ে দেখে রাফায়েল ওর দিকে তাকিয়ে আছে । জামান সাহেবও উঠে দাড়িয়েছে । ওদের দিকে তাকিয়ে বলল

-আমি এখানে কেন ? কি হয়েছে ? সমাধান হয়েছে ?

জুয়েল কি বলবে খুজে পেল না । কারন আজকে তো ওরা সেই কাজে আসেও নি । রাফায়েল জলদি জলদি বলে উউঠলো

-হ্যা । অনেকটা । দেখা যাক সামনে কি হয় !

জামান সাহেবের মুখে হাসি ফুটলো । তারপর বলল

-কিন্তু আমি এখানে কিভাবে এলাম ? আর শরীরে এমন ব্যাথা করছে কেন ?

-আপনি আসলে স্লিপ ওয়াকিং করছিলেন । এই জন্য এমন মনে হচ্ছে !

জামান সাহেব আর কোন প্রশ্ন করলেন না ।



পরিশিষ্টঃ

রাত বারোটা পার হয়ে গেছে অনেক আগেই । এদিকটার রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা । জুয়েল ফুটপাতের উপর বসে আছে । সামনেই ওর স্কুটিটা দাড় করানো । রাফায়েল বসে আছে ওর থেকে একটু দুরে । কি যেন ভাবছে । জুয়েল বলল

-ওটা কি আবার কোন সমস্যা করবে ?

-নাহ ! আমার মনে হয় না । এবার ওকে আরও সাবধানে রাখা হবে । ঐ পুরো জগতটাই একটা জেল খানার মত । তবে এখন ওকে আরও ভেতরে আটকে রাখা হবে । সো চিন্তা নিও না ।

-আর আমি কি এসব করবো ?

-আবার যদি বিপদ ডেকে আনতে চাও তাহলে কর !

জুয়েল হাসলো কেবল । তারপর বলল

-আর না । অনেক হয়েছে মানুষের উপকার ! চলেন আপনাকে পৌছে দেই !

-নাহ ! তুমি চলে যাও । আমি কিছুটা সময় বসি এখানে ।

জুয়েল আর বেশি সময় থাকলো না । বেশ রাত হয়ে গেছে । আজকে বাসায় গিয়ে একটু শান্তিমত ঘুমাতে চায় । অনেকটা দিন সে শান্তিমত ঘুম দেয় না ! স্কুটি স্টার্ট দিল সে ।



রাফায়েল সিরিজ ১১
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৮
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×