somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ খিচুড়ী

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যা থেকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে । আজকে রাতের মধ্যে আর থামবে বলে মনে হচ্ছে না । থেমে থেমেই মেঘ ডেকে উঠছে । ঢাকা শহরে বৃষ্টির শব্দ ঠিক মত শোনা যায় না । বৃষ্টিতে মাটির গন্ধটাও ঠিক মত বোঝা যায় না । কিন্তু মফস্বলের এই অখ্যাত এলাকাতে সেই বৃষ্টিকে যেন পুরোপুরি উপভোগ করা যাচ্ছে ! তরী আর ওর দুই বন্ধু ফারিহা আর তনিকা সেই কাজটাই করছে এখন । ঢাকার বৃষ্টির থেকে এই মফস্বলের বৃষ্টি যে আলাদা ভাবে উপভোগ করা করা যায় সেটা হয়তো এখানে না আসলে ওরা জানতোই না !

তরীর বাবা স্থানীয় থানার ওসি। পুলিশের চাকরি বিধায় কয়েকদিন পরপরই বদলি হতে হয়। একটা সময় পর্যন্ত তরীরাও ওর বাবার সাথে সাথে বিভিন্ন জায়গাতে গিয়ে হাজির হত। কিন্তু মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পরে আর বাসা বদলায় নি। তখন কেবল ওসি সাহেব নিজেই বদলী হয়ে যেত। তরীরা থাকতো একই জায়গাতে। সেখানে ওদের তিন জনের পরিচয়। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। পুরোটা স্কুল আর কলেজ তিনজন একই সাথে কাটিয়েছে তারপর উচ্চ মাধ্যমিকের পর তিন জন গেছে তিন দিকে। তবুও ফোনে তিন জনের সাথে নিয়মিতই কথা বার্তা হত। দেখাও হত মাঝে মধ্যে তবে আগের মত সেই এক সাথে দেখা হওয়াটা আর হত না।

তিনজন ই যখন নিজেদের পড়াশুনা নিয়ে হাপিয়ে উঠেছে তখনই একটা সুযোগ চলে এল। তিনজনেরই এক সাথে ক্যাম্পাস ছুটি হয়। ব্যাস আর চিন্তা ভাবনা না করে চলে এল তরীর বাবার কাছে। মাত্র কদিন আগেই তরীর বাবা এখানে পোস্টিং হয়ে এসেছে। এইবারই তরীর প্রথম আসা এখানে।

আজকে ওদের বাড়ির উঠানে বার্বি কিউ করার কথা ছিল । কিন্তু দুপুর থেকে টিপটিপ বৃষ্টি তারপর সন্ধ্যার পর ঝুম বৃষ্টির জন্য কিছুই হয়ে উঠলো না। এদিকে বিদ্যুৎ যে সেই কখন গেছে এখনও আসার নাম নেই। নতুন বাসা বলে এখনও আইপিএস লাগানো হয় নি। মোম জ্বালিয়েই তিনজন বসে ছিল ড্রয়িং রুমে। তখনই তনিকা প্রস্তাব করলো
-চল ভুতের গল্প করা যাক।
ফারিহা সবার আগে চিৎকার করে উঠলো
-এই খবরদার তনিকা, তুই কিন্তু আমার কাছে মাইর খাবি।
তিনজনের ভেতরে ফারিহার ভুতের ভয়টা সব থেকে বেশি । বই পড়ার নেশা হওয়ার সত্ত্বেও ফারিহা কখনই ভুতের বই পড়ে না ।
তনিকা যেন আরও উৎসাহ পেয়ে বলল
-আরে দেখ না এই আবহাওয়া, বাইরে বৃষ্টি, ঘর অন্ধকার। কেবল আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। এখন মনে কর দরজায় কড়া নড়ে উঠলো। তখন?

তনিকার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল তখনই সদর দরজায় কড়া নড়ে উঠলো। ওরা তিন জন এক সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো। এতো সময় তনিকা ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও এখন খানিকটা ভীত চেহারা নিয়ে বাকি দুজনের দিকে তাকাতে লাগলো। ফারিহা বলল
-হয়তো কাজের লোকটা ফিরে এসেছে। এই তনিকা যা তুই খুব সাহস দেখাচ্ছিলি তুই গিয়ে দরজা খোল।
তনিকা ফারিহার দিকে আরেকটু সরে এসে বলল
-না বাবা আমি পারবো না।
তরী উঠে গিয়ে দরজা খুলতে চাইলে তনিকা
-আচ্ছা চল আমরা তিন জন মিলের দরজা খুলি।
-যদি অন্য কেউ হয়!
তরী বলল
-আরে অন্য কেউ হলে কি হবে! সবাই জানে এটা পুলিশের বাড়ি।
-ভুতে কি পুলিশ চিনে ?

ওরা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল দরজার দিকে । দরজার কড়া নড়ে যাচ্ছে । কেউ বারবার দরজর কড়া নাড়ছে । তরী দরজা খুলেই দিল । ওর পেছনে ফারিয়া আর তনিকা লাইণ ধরে দাড়িয়ে !

দরজা খুলে দেখলো বাইরে কাজের লোক আব্দুল আসে নি । অন্য কেউ এসেছে !
-আপনি?
ওরা তিনজনই তাকিয়ে দেখলো রেইন কোর্ট পরা একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে। রেইনকোর্টটা দেখেই ওদের সব ভয় মুহুর্তেই দূর হয়ে গেল। ওরা তিনজনই জানে কেবল পুলিশেরাই এমন রেইনকোর্ট পরে।

মেয়েটি বলল
-আমি এস আই সাদিয়া ইসলাম। ওসি স্যারের মেয়ে.....
তরী বলল
-আমি। আর এরা আমার বন্ধু।
সাদিয়া হাসলো। তারপর বলল
-হ্যা। স্যার বলেছে। আসলে স্যার একটা কেইস নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমাকে বললেন তোমরা বাসায় একা আছো তাই আমি যেন যাওয়ার পথে দেখা করে যাই। আব্দুল কোথায়?
-আব্দুল চাচা তো বাসায় নেই।

এই কথা শুনে সাদিয়া একটু ভুরু কুচকে তাকালো। তারপর বলল
-বাসায় নেই নামে কি? তোমরা একা বাসায়?
ফারিহা পেছন থেকে বলল
-একা কোথায়? এই যে আমরা তিনজন।
ফারিহাকে পেছন থেকে খোঁচা দিয়ে তনিকা বলল
-হ্যা আমার মাঝে যখন ফারিহার মত সাহসী আর মহীয়সী নারী বিদ্যমান তখন আমাদের ভয় কি!

সাদিয়া আবার বলল
-আব্দুল গেছে কোথায়?
-বিকেল বেলা বলল যে বাজারে যাবে। বৃষ্টি তে আটকা পড়েছে সম্ভবত।
-আটকা পড়েছে! ব্যাটা নিশ্চয় জুয়া খেলছে। আসুক আজকে ব্যাটা।

এই বলে সাদিয়া মোবাইল বের করে কিছু সময় টেপাটেপি করতে লাগলো কিন্তু কিছু সময় পড়ে বলল
-আমার ফোনে নেটওয়ার্ক নেই। এই হচ্ছে এখানকার সমস্যা। ঝড় বৃষ্টি হলে আর নেট থাকে না। তোমরা একটু ওসি স্যারকে ফোন দাও দেখি।
তরী বলল
-আমাদেরও একই অবস্থা। বিকেলের দিকে একবার কথা হয়েছিল আব্বুর সাথে। আর নেট নেই।

সাদিয়া কিছু সময় চিন্তা করে বলল
-আব্দুল আসা পর্যন্ত আমি থাকি?
তরী বলতে গেল যে থাকার দরকার নেই। ওরা তিনজন মনের সুখে গল্প করছিলো তার ভেতরে আবার অন্য কেউ ঢুকে গেলে কেমন হবে। পেছনে তাকিয়ে দেখে বাকি দুজনের চেহারাতেও খানিকটা দ্বিধা দেখা দিয়েছে। ওরা চাচ্ছে যেন সাদিয়া না থাকুক আবার এই অচেনা বাসাতে একা একা থাকতেও খানিকটা ভয় ভয় লাগছে। চোখে চোখে কিছু সময় কথা হল ওদের। তারপর তরী দরজা ছেড়ে ভেতরে ঢুকার জায়গা করে দিল।


রেইন কোর্ট টা দরজার বাইরেই একটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়েই সাদিয়া ভেতরে ঢুকে পড়লো। ড্রয়িংরুমে বসতে বসতে বলল
-বাসায় কি রান্না করে গেছে আব্দুল?
তিন জনই মাথা নাড়ালো।
-বলেছিল এসে রান্না করবে।

সাদিয়া আবারও বিরক্ত হল আব্দুলের উপর। বলল
-এতো কাণ্ডজ্ঞানহীন কেউ হয়! মেয়ে গুলা একা বাসায়! আর সে জুয়া খেলতে গেছে। আজ আসুক ব্যাটা!
ফারিহা বলল
-না আপু সমস্যা নেই। আমরা তিনজন গল্প করেই সময় কাটিয়ে দিচ্ছি। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।
-আরে তা হয় নাকি। দেখি সর দেখি! রান্না ঘরটা ঐ দিকে না ?
তরী কেবল হাত দিয়ে দিয়ে দেখিয়ে দিল ।

এই বলেই এস আই সাদিয়া রান্না ঘরের দিকে হাটা দিল তরীকে নিয়ে। যখন আবার তরীকে নিয়ে বসার ঘরে ফেরৎ এল তখন আধা ঘন্টা পার হয়ে গেছে। ফারিহা ভেবেছিল যে রান্না বসিয়ে এস আই সাদিয়া হয়তো নিজের বাসার দিকে হাটা দিবে কিন্তু তার ভাব চক্করে সেটা মনে হল না। সে সোফার উপর বসতে বসতে বলল
-স্যার না আসা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করি। রান্নাটাও হোক
তরী বলল
-আপু আপনার কষ্ট করতে হবে না। আমরা ঠিক আছি, আর থাকবও। পুলিশের বাড়িতে কে আসবে বলেন! কার এতো বড় সাহস!

সাদিয়া হাসলো একটু। তারপর বলল
-তা অবশ্য ঠিকই বলেছ। তবে মাঝে মাঝে যখন বিপদ আসে তখন পুলিশ দারোগা চিনে না গো!
ফারিহা এই কথা শুনেই কেমন রহস্যের গন্ধ পেল। তারপর বলল
-এই কথা কেন বলছেন? আপনার জানা এমন কোন পুলিশ কেইস আছে নাকি?

সাদিয়ার মুখ দেখেই মনে হল আসলেই তার জীবনে এমনে এমন ঘটনা আছে। পুলিশের জীবনে কত ঘটনা ঘটে। কত রকম মানুষের কেস তাদের হাতে আসে। সাদিয়া বলল
-তা তো অনেকই আছে। এমন অনেক রহস্যও আছে যা এখনো সমাধান হয় নি।
-আপু বলেন একটা শুনি ! হাতে যেহেতু অনেক সময় আছে ।

ওরা তিনজনই বলে উঠলো। এখনও খিচুড়ি হতে বেশ খানিকটা সময় বাকি আছে। আর বাইরে বৃষ্টির তোড়টা যেন আরো একটু বেড়েছে। আজকে যে আর কমবে না সেটা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। সাদিয়া ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। তারপর বলা শুরু করলো

ঘটনা কিছু দিন আগের। আমাদের সাথেরই এক মেয়ে কলিগ ছিল। নাম শিমু। এই থানাতে আমরা কেবল দুজন মেয়ে এস আই ছিলাম। বছর খানেক আগে বিয়ে করেছিল। তবে বিয়েতে ওদের বাসার রাজি ছিল না। অবশ্য তাতে ওদের দুই জনের কোন সমস্যা ছিল না। মেয়েটি পুলিশের এস আই আর ছেলেটা একটা ব্যাংকে চাকরি করতো।

একদিন এক সিপাহী দৌড়াতে দৌড়াতে এসে খবর দিল যে শিমুকে নাকি কে বা কারা মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে। ওসি স্যার আর আমরা সব গিয়ে হাজির হলাম।

শিমুর বাসাটা শহরের এক কোনায় ছিল। স্বামী স্ত্রীর সুন্দর সংসার ছিল তাদের। ওর শোবার ঘরে গিয়ে আসলেই ওর ঝুলন্ত লাশ দেখলাম। লাশটা ঝুলছে, শিমুর হাত পেছনের দিক দিয়ে একটা হ্যান্ডকাপ লাগানো। দু পা এক সাথে বাধা। মুখে টেপ দিয়ে আটকানো। বুঝতে কষ্ট হল না কেউ ওকে ঝুলিয়ে মেরেছে। কিন্তু কে আর কেন?

দরজা বন্ধ ছিল না, ভেড়ানো ছিল কেবল। লাশ যেখানে ছিল তার আসে পাশে কোন টুল বা চেয়ার জাতীয় কোন জিনিস দেখলাম না। আত্মহত্যা করলে যেমন টা থাকে। কেবল পুরো ফ্লোরে পানিতে ভেসে আছে। সেটা কেন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। লাশ নামিয়ে পোস্ট মর্টাম এর জন্য পাঠিয়ে দিলাম। ওর বাসায় আমি আগেই এসেছি। পুরো বাসা খোজ খবর করতে লাগলাম কিছু চুরি হয়েছে কি না সেটা দেখার জন্য। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ডাকাতির উদ্দেশেই ওকে মেরে ফেলা হয়েছে কিন্তু পুরো বাড়ি সার্চ করার পর মনে হল চুরি বা ডাকাতি হয় নি। যে মেরেছে, তার পেছনে অন্য কোন কারন আছে।

কথা গুলো বলে সাদিয়া থামলো একটু। ওরা তিনজন মনযোগ দিয়ে সে কথা শুনছে। তিনজন ই বলে উঠল
-এরপর?
-এরপর!
সাদিয়া একটু ভাবল। আবার কোথা থেকে শুরু করবে সেটাই ভাবতে হয়তো। তারপর আবার শুরু করলো

কোন কারন নেই কিন্তু আমার প্রথম সন্দেহ গিয়ে পড়লো শিমুর স্বামী রুপমের উপর। ঐদিন সকালেই সে অফিসের একটা কাজে ঢাকা গিয়েছিল। আমার কেবল মনে হল যে ও শিমুকে মেরে ঝুলিয়ে রেখে চলে গেছে। প্রথমিক জিজ্ঞাসা বাদে সে কিছুই স্বীকার করলো না। যে দড়িতে শিমুকে ঝুলিয়া মারা হয়েছিল সেটার উপরে কেবল শিমু আর রুপমের হাতের ছাপ পাওয়া গেল। ধারনা এবার আরও পরিস্কার হয়ে উঠলো।
কিন্তু কিছুটা দ্বিধা রয়েই গেল যে মারবে কেন? মোটিভ কি? দুজনের কারো বাসা থেকেই কিন্তু মেনে নেয়নি। ভালবেসে বিয়ে করেছিল রুপম হিন্দু অন্য দিকে শিমু মুসলিম । দুপরিবারই দুজনকে ত্যাগ করেছিলো । ওদের দুজন ছাড়া আর কেউ নেই । তাহলে কেন মারবে? সেটারও খোজ মিলে গেল। রুপমের অফিসেরই এক কলিগের সাথে রুপমের প্রেম চলছিল। বিয়ে করেছে এক বছরও হয় নি আর এর ভেতরেই এমন কিছু। কিন্তু শিমু তো পুলিশে চাকরি করে এতো সহজে তো রুপম কে ছেড়ে দিতো না। তাই রুপম ওকে পথ থেকেই সরিয়ে দিল। এটাই আমার মনে হয়েছিল। কিন্তু.....

কিন্তু বলে সাদিয়া আবার থামলো। ওরা তিনজন ই গল্প থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল কারন অন্যান্য স্বাভাবিক খুনের কেইসের মতই এই কেসটা কোন বিশেষত্ব নেই। কিন্তু সাদিয়ার মুখে কিন্তু শুনেই আবার খানিকটা আগ্রহবোধ করতে লাগলো। সাফিয়া বলল
কিন্তু রুপম আসলেই সত্য কথা বলছিলো। সে শিমুকে মারে নি।
-তাহলে কে মেরেছে?
-এটাই তো এখানে রহস্য!

সাদিয়ার চেহারা দেখে ওরা ঠিক বুঝতে পারলো না যে সাদিয়ার মনে এখন কি? চলছে তবে ওরা তিনজনই বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সাদিয়ার দিকে। সাদিয়া আবার বলে চলল
-আসলে দূর থেকে থেকে দেখলে এটাকে একটা খুন বলেই মনে হবে। কিন্তু আরও একটু ভাল করে দেখলে কিছু অসংগতি ধরা পরে। রুপম আমাদের বলেছিল যে দড়িটা সেই কিনে এনেছিল। শিমুই তাকে নাকি কিনে আনতে বলেছিল, তাই তাতে তার হাতের ছাপ পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আর যদি রুপম তাকে খুনই করতে হাতে হ্যান্ডকাপ পরাতে যাবে কিংবা পা দুটো এক সাথে বাঁধতে যাবে, শিমুর নিশ্চয়ই স্ট্রাগল করার কথা, যেহেতু সে পুলিশ বাধা তো দেওয়ারই কথা। কিন্তু পোস্টমর্টেম এ জিরো স্ট্রাগল চিহ্ন পাওয়া গেছে। কেবল হাতের কাছে একটু লাল চিহ্ন পাওয়া গেছে। দড়িটা যখন ওর গলাতে ফাঁশ আটকে যাচ্ছিলো তখন হাতদুটো ছোটানোর ট্রাই করেছিল। সেখান থেকেই দাগ।

ওরা একে অন্যেত দিকে তাকাতে লাগলো। আসলেই ওরা কিছু বুঝতে পারছে না। সাদিয়া আবার বলল
-প্রথমে খুন মনে হলেও পড়ে আসলে আমরা বুঝতে পারলাম যে খুন না। ওটা আত্মহত্যা ছিল।
-কি!! কিভাবে?

ওরা তিনজনই এক সাথে চিৎকার করে উঠলো। ওদের তিনজনের ভেতরে ফারিহার গোয়েন্দা বই পড়ার অভ্যাস বেশি। তাই ফারিহা ব্যাপারটা ধরে ফেলে বলল
-কিভাবে আত্মহত্যা হয় বলেন? হাত পায়ের বাধনের ব্যাখ্যা না হয় বুঝলাম কিন্তু একটা মানুষ কিভাবে নিজেকে ঝুলাতে পারে। এর জন্য তো টুল জাতীয় কিছু লাগবেই। তাই।

সাদিয়া একটু যেন হাসলো। তারপর বলল
-হ্যা ঠিকই ধরেছো। শিমুও এখনে তেমন কিছু ব্যবহার করেছিল।
-কিন্তু আপনি বলেছিলেন এমন কিছুই ছিল না।
-বলেছিলাম। ছিল কিন্তু আমরা প্রথমে দেখতে পারি নি।
-কি?
আবারপ তিনজন এক সাথেই প্রশ্নটা করল। সাদিয়া বলল
-পানি।
-পানি !
-হুম। শক্ত পানি। মানে হচ্ছে বরফ!

তিনজন ই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো সাদিয়ার দিকে। আসলেই এমন টা তো চিন্তা করে নি আগে। বরফের উপর পা দিয়ে সে গলায় ফাঁস নিয়েছে। তারপর বরফটা সরিয়ে দিয়েছে। বরফ এদিকে গলে পানি হয়ে গেছে।
সাদিয়া বলল
-শিমু আসলে আত্মহত্যাই করেছিল। তবে সেটার কারন ছিল রুপমের প্রতারণা। রুপমের এমন আচরনে ও ভেঙ্গে পড়েছিল। সিদ্ধান্ত নেয় নিজের জীবন শেষ করার। কিন্তু সেই সাথে এও সিদ্ধান্ত নেয় যেন রুপমও এর শাস্তি পায়।
-তারপর ?
-রুপমের শাস্তি হয়েছিলো ?

এই কথা জবাব না দিয়ে সাদিয়া হাসলো কেবল । তারপর বলল
-আমি খিচুড়িটা দেখে আসি ।

তরী উঠতে যাচ্ছিলো কিন্তু সাদিয়া মানা করলো । তারপর নিজেই রান্না ঘরের দিকে চলে গেল । তার সেই সময় আবার দরজার কড়া নড়ার শব্দ হল । এখন আর ওদের ভেতরে সেই ভয়টা কাজ করছে না । তরী খুব স্বভাবিক ভাবেই দরজা খুলে দিল । তাকিয়ে দেখলো ওর বাবা আর আব্দুল চাচা বাইরে দাড়িয়ে আছে । তরীর বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-সরি মা মনি অনেক দেরি হয়ে গেল । তাই না ?

ফারিহা সোফা থেকেই বলে উঠলো,
-কোন সমস্যা নেই । আমরা গল্প করেই কাটিয়ে দিয়েছি !
তনিকা তারপরই বলল
-আর সাদিয়া আপু তো ছিলই !

তরীর বাবা হঠাৎ করেই সচকিত হয়ে গেল । তারপর একবার মেয়ে পরে, মেয়ের বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে বলল
-সাদিয়া মানে ? কোন সাদিয়া ?
তরী অবাক হয়ে বলল
-তোমার থানার এস আই ? তুমিই না পাঠিয়েছো ?

তরী দেখলো ওর বাবা ততক্ষনে পিস্তল বের করে ফেলেছে । তরীর দিকে তাকিয়ে বলল
-কোথায় সে ?
তরী আর ওর বন্ধুরা ঠিকই বুঝতে পারলো কোন একটা সমস্যা হয়েছে । ওরা তিনজনই হাত দিয়ে রান্না ঘরের দিকে দেখালো । তরীর বাবা ধীরে ধীরে রান্না ঘরে হাজির হলেন। কিন্তু সেখানে কাউকে না দেখে পুরো বাসা সার্চ করলেন ।

তারপর আব্দুলকে খুব করে বকলেন । কেন সে মেয়েদের কে একা রেখে বাইরে গিয়েছিলো । যদি কিছু হয়ে যেত !

ওরা কিছুই বুঝতে পারছিলো না । ওরা নিজেরাও অবাক হয়ে গেল যখন রান্না ঘরে কাউকে দেখতে পেল না । কিন্তু রান্না ঘর দিয়ে বের হওয়ার কোন উপায় নেই । ভয়ের একটা শিরশিরে অনুভুতি বয়ে গেল ওদের শিরদাড় দিয়ে ।
-আঙ্কেল কি হয়েছে আমাদের বলবেন প্লিজ ?
ফারিহা এগিয়ে এসে বলল
-তোমরা যা বলছো সেটা ঠিক সম্ভব না ।
-কেন ? এস আই সাদিয়া নামে আপনাদের কোন অফিসার নেই ?
তরীর বাবা খানিকটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-নেই তবে ছিল ।
-মানে ?
-মাস খানেক আগে সে মারা গেছে ! শহরের অপর প্রান্তে ছিল ওর বাসা !

ফারিহা একবার তনিকা আরেকবার তরীর দিকে তাকালো । দুজনেই চেহারা থেকে রক্ত সরে গেছে । ফারিহা কোন মতে বলল
-আঙ্কেল এস আই সাদিয়ার স্বামীর নাম কি রুপম ? হিন্দু সে ?
-হ্যা । তোমরা কিভাবে জানলে ?
-কোন ছবি আছে তার ?
-পুলিশ ফাংশনে এক সাথে ছবি ছিল । দাড়াও দেখি আছে কি না । কিন্তু কি হয়েছে আমাকে বল তো ?

তারপর নিজের মোবাইল বের করে ছবি খুজতে লাগলো । একটা ছবি বের করে ওদের সামনে ধরলো । একেবারে সামনে দুজন মেয়েকে দেখা যাচ্ছে । তরীর বাবা বলল
-ডানের জন সাদিয়া আর বামের জন শিমু ! এই দুজনই মহিলা এস আই !

তিনজন কেবল চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো ছবির দিকে । একটু আগে যে এসেছিলো সেই সাদিয়া । যে কি না এক মাসে আগে মারা গেছে ! তিনজনেরই হাত পা ঠান্ডা হয়ে এল । কেন এসেছিলো সে ? নিজে যে ফাঁদ পেতেছিলো তার স্বামীর জন্য সেটার সত্য প্রকাশ করতে ?

এমন রান্না ঘর থেকে আব্দুল বেরিয়ে এল । সবার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই খিচুড়ী কে রানছে ? আফা মনি আপনারা ? সেই টেস্ট হইছে কিন্তু !

ওরা আবারও একে অন্যের দিকে তাকালো । যতই টেস্ট হোক এই ভুতের রান্না করা খিচুড়ী ওরা কিছুতেই খাবে না !
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×