somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ রহস্যময় অপু

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ রাত। একটু আগেও রাতের যে কোলাহল ছিল সেটাও এখন থেমে গেছে । মাঝে মাঝে পাড়ার কুকুর গুলো ডেকে উঠছে কেবল । তাড়াছা আর কোন আওয়াজ আসছে না আপাতত ! ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দুইটা বেজে এগারো মিনিট । পাশের ঘরের সব মেয়ে গুলোও ঘুমিয়ে পড়েছে ।
এখনই সময় !

মিতু ফোনটার দিকে তাকালো আরেকবার । চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে । খুব ইচ্ছে করছিলো ওর বাবার সাথে শেষ বারের মত কথা বলতে । কিন্তু জানে যতবারই ও ফোন দিক না কেন ওর বাবা সেই ফোন ধরবে না । আজকে কতদিন মিতুর বাবা ওর সাথে কথা বলে না । আজকে ও সকল ধৈর্য্যের শেষ সীমানায় পৌছে গেছে । অনেক চেষ্টা করেছে নিজের মনকে শক্ত করতে কিন্তু পারে নি । আজকে তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে তার এই জীবন আর রাখবে না ।

একবার ভেবেছিলো অনেক বড় করে একটা চিঠি লিখবে । সেখানে সবার কথা লেখা থাকবে । সে তার বাবাকে কতখানি ভালবাসে, মাকে কিভাবে মিস করে কিংবা ফয়সালকে কিভাবে মনের ভেতরে বসিয়ে রেখেছে আর ওর ক্লাসের বন্ধুদের কত টুকু পছন্দ করে -সব কিছু কিন্তু পরে মনে হল এতো কথা লিখে কোন লাভ কি আছে ! ও তো মরেই যাবে তখন এইসব কথা মানুষকে জানিয়ে কি লাভ ! যারা জীবিত থাকতে ওর কথা বুঝতে পারে নি, মরে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে কি লাভ !

সিলিং ফ্যানের সাথে নিজের ওড়নাটা ঝুলিয়ে রেখেছে অনেক সময় হল । আর দেরি না । এবার উঠতে হবে । মিতুর মনে হল এবার সময় হয়ে গেছে । এবারই ওর মরতে হবে ! এই পৃথিবীর সব কষ্ট থেকে নিজেকে সে মুক্ত করে ফেলবে । মিতু উঠে দাড়ালো । বিছানার উপর টুলটা উঠিয়ে নিল । তারপর সেটার উপর নিজে উঠে দাড়ালো ।

মিতু আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল । তারপর ওড়নাটা হাত দিয়ে ধরলো । সেটা নিজের গলাতে পেঁচাতে যাবে ঠিক তখনই বিকট শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো । মিতু খানিকটা চমকে উঠলো । এতোটাই চমকে উঠলো যে পুরো শরীরটা নড়ে উঠলো । আর বিছানার উপর টুলটাও নড়ে উঠলো সাথে সাথে । আর নিয়ন্ত্রন না রক্ষা করতে পেরে পড়ে গেল । তবে পড়লো বিছানার উপর ।

খানিকটা অবাক না হয়ে পারলো না । কারন ওর ফোন সব সময় সাইলেন্ট থাকে তাহলে এখন আওয়াজ হচ্ছে কিভাবে । ভাবতে ভাবতেই রিং হওয়া বন্ধ হয়ে গেল । মিতু ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অপরিচিত একটা নাম্বার । কি করবে বুঝতে পারলো না । খুব সাধারনত ওর কাছে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে না ।

নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আবারও কল চলে এল ঐ নাম্বার থেকে । তবে এবার অবাক করার মত ব্যাপার হল ফোনটা কেবল ভাইব্রেট করছে । রিং বাজছে না । তাহলে একটু আগে কিভাবে রিং হল ! মিতু কোন কিছু বুঝতে পারছিলো না । মনের ভেতরে খানিকটা ভয় ঢুকে গেল ।
কাঁপা কাঁপা হাতে সে ফোন টা রিসিভ করলো । হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে একটা ধমক শুনতে পেল ।
-কি করতে যাচ্ছিলে তুমি ? হ্যা কি করতে যাচ্ছিলে ?

মিতু কি বলবে বুঝতে পারলো না । ও কি করতে যাচ্ছিলো সেটা কারো বুঝতে পারার কথা না । দরজা জানালা সব বন্ধ করা । ঘরের ভেতরে কি হচ্ছে কারো জানার কথা না । মিতু বলল
-কে ? কে বলছেন ?
-আমি অপু !
মিতু প্রথমে চিনতে পারলো না । আবারও সেই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
-কোন অপু ?
-কয়টা অপুকে চিনো তুমি ?

এবার মিতু সত্যিই অবাক হয়ে গেল । ও কেবল একজন অপুকেই চিনে । ওর ক্লাসে পড়ে । কিন্তু সেই অপুর সাথে ওর কোন দিন কথা হয় নি । খুবই অন্য রকম ছেলে এই অপু । ক্লাসের কেউ ই ঐ ছেলের সাথে কথা বলে না । ছেলেটা একটু কেমন অদ্ভুদ ধরনের । মিতু কয়েকবার অপুকে লক্ষ্য করেছে কিন্তু কোনদিন কথা হয় নি । সেই ছেলে ওকে ফোন দিয়েছে ?
মিতু ব্যাপারটা কোন ভাবেই ঠিক বুঝতে পারছে না । মিতু নিজেকে খানিকটা শান্ত করে বলল
-তুমি কি আমাদের ক্লাসের অপু ?
-হ্যা । এখন আমাকে বল তুমি কি করতে যাচ্ছিলেন ?
-কই কি-কিছু নাতো !

কথাটা বলতে বলতেই ওর চোখ আবারও সিলিংয়ের দিকে চলে গেল । কিছুতেই সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে অপু ওর এই ব্যাপারটা জেনে গেছে । কিন্তু অপু যেভাবে কথা বলছে সেটা দেখে মিতুর কেবল এই কথাই মনে হচ্ছে যে অপু ওর সব কিছু জানে । কিন্তু কিভাবে জানে ?

অপু বলল
-দেখো আমি জানি তুমি কি করতে যাচ্ছিলে । জানতে চেয়ো না যে আমি কিভাবে জানি । তবে আমি জানি এটা বলে রাখলাম ।

মিতু কোন কথা না বলে কেবল চুপ করে রইলো । কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না । অপু কিভাবে সব কিছু জানলো সেটাও সে বুঝতে পারছে না । অপু বলল
-কাজটা তুমি মোটেই ঠিক করছিলে না ।
মিতু দেখলো অপুর কন্ঠস্বর বেশ মোলায়েম হয়ে এসেছে । সে নিজের মধ্যেই কেমন সিক্ত অনুভব করলো । ফোনের ওপাশের ছেলেটা ওকে নিয়ে চিন্তিত । মিতু বলল
-আমি আর পারছি না অপু !
-তুমি পারবে । আমি জানি ।
-তুমি কিভাবে জানো ?

ফোনের ওপাশ থেকে কোন কথা শোনা গেল না কিছু সময় । তারপর অপু বলল
-এক কাজ কর একটু বাইরে আসো তো ।
-মানে ?
-মানে দরজা খুলে তোমার বাসার সামনে আসো !
-কি বলছো এসব ?
-আমি এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি । তোমার বাসার সামনে ফুটপাতে বসে আছি ।
মিতুর এবার সত্যিই কেমন যেন ভয় করতে লাগলো । এই ছেলেটা ওর বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছে । ব্যাপারটা ওর মাথায় আসছে না ।
অপু আবার বলল
-আসো প্লিজ ! ভাল লাগবে । আসো !

মিতু আর কিছু ভাবলো না । অপুর কন্ঠটা শুনতে ভাল লাগছে হঠাৎ করেই । বারবার মনে হচ্ছে ওর সাথে অনেক দিন এমন করে কেউ কথা বলে নি । মিতু সিলিং থেকে ওড়নাটা খুলে নিল । তারপর সেটা গায়ে জড়িয়েই বের হল রুম থেকে ।

বাসায় অন্য ঘরের রুমমেটরা সব ঘুমিয়ে গেছে । তবুও খুব সাবধানে দরজা খুললো । চাবির গোছাটা হাতে নিয়ে বের হল দরজা দিয়ে । তারপর চাবি দিয়ে সেটা বন্ধ করে সিড়ি দিয়ে পা টিপে টিপে বেরিয়ে এল মেইন গেটের কাছে । এই গেটও চাবি দিয়ে আটকানো তবে সব ভাড়াটিয়ার কাছেই একটা করে চাবি দেওয়া থাকে ।

মিতু কোন দিন এতো রাতে বাসার বাইরে বের হয় নি । চারিদিকে নিশ্চুপ নিরবতা দেখে মিতুর একটু ভয়ভয় করতে লাগলো । সামনের দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেল ল্যাম্পপোস্টের আলো থেকে একটু দুরে অপু বসে আছে । কথা না বললেও প্রায় প্রতিদিনই অপুর সাথে ক্লাসে দেখা হয় ওর । চিনতে খুব একটা কষ্ট হল না । আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সেদিকে । মনের ভেতরে ভয়টা তবুও কাজ করছে । এতো রাতে এভাবে চলে আসাটা কি খুব ঠিক হল ?
তবে এখন আর এতো চিন্তা করে লাভ নেই । ছেলেটার মাঝে কিছু একটা অস্বাভাবিকত্ব আছে । এটা ক্লাসের সবাই জানে । কিন্তু আজকে মিতু সেটা নিজের চোখে দেখেছে ।

মিতু ঠিক অপুর পাশে গিয়ে বসলো । একটু একটু ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে । মিতুর হঠাৎই মনে হল একটু আগে ও কি করতে যাচ্ছিলো ? কেন করতে যাচ্ছিলো ? এতো চমৎকার একটা পৃথিবী থেকে ও চলে যেতে চাইছিলো । যদি অপু ওকে ফোন না করতো তাহলে হয়তো এতো সময়ে ও মারাই যেত ।

অনেকটা সময় কেউ কোন কথা বলল না । তারপর মিতু বলল
-আমি জানি না তুমি কিভাবে জানলে তবে থ্যাংকস ! তুমি না হলে হয়তো আমি এতো সময়ে মারা যেতাম !
অপু বলল
-আমি জানি ।
-কিভাবে জানলে বলবে ?
-নাহ ! থাকুক । সেটা তোমার না জানলেও চলবে । তবে তোমার কি জানা উচিৎ জানো ?
-কি ?
-জানা উচিৎ যে জীবনটা কখনই অন্যের উপর নির্ভর করে কাটিয়ে দেওয়া উচিৎ না ।
-কিন্তু ভালবাসার মানুষ গুলো যদি এমন করে চলে যায় তাহলে কিভাবে একা একা বেঁচে থাকা যায় ?
-তবুও বেঁচে থাকতে হয় । চমৎকার ভাবে বেঁচে থাকা যায় ! একটা কথা কি জানো ?
-কি ?
-ঝড়কে কখনই আটকানো যায় না, ঝড়কে শান্ত করাও যায় না । এই কাজটা চেষ্টা করাও বোকামী । কিন্তু ঝড়ের সময় যথাযত সুরক্ষা নিয়ে নিজেকে শান্ত করে রাখতে হয় । এই কাজটা করা সম্ভব । নিজেকে শান্ত রাখা । ঝড় এক সময় শেষ হবে ! আবার মেঘ কেটে গিয়ে সূর্য উঠবে ।
মিতু কথাটা শুনে বেশ কিছুটা সময় চুপ করে ইলো । সত্যিই কি ওর জীবনে আবার সূর্য উঠবে ? সেটা কবে ? কিন্তু ও জীবনে অনেক ভুল করেছে । সেই ভুল গুলোর জন্য ওর জীবন বদলে গেছে একদম । মিতু বলল
-আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি ।
-স্বাভাবিক ! তুমি মানুষ । মানুষ ভুল করবেই ।
-কিন্তু তাহলে আমার বাবা আমার সাথে কথা কেন বলে না ? আমি মানছি ঐ ছেলেটার সাথে পালিয়ে যাওয়া আমার মোটেই উচিৎ হয় নি । আমি ভুল করেছিলাম । কিন্তু বাবা কি আমাকে ক্ষমা করে দিতে পারে না ?
-অবশ্যই পারে । এবং সে দিবেও । তুমি কি জানো তোমার বাবা লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার ফেসবুক প্রোফাইল দেখে নিয়মিত । আজকে যে স্টাটাস টা তুমি দিয়েছো, সেটা পড়ে তিনি রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে ।

মিতু কি বলবে বুঝতে পারলো না । এক ভাবে অপুর দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-তুমি কিভাবে জানলে ?
অপু কেবল হাসলো । তবে এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না । তার বদলে বলল
-তবে তোমার ঐ প্রেমিক কিন্তু ভুল করে নি । সে তোমার সাথে অন্যায় করেছে । তোমার সাথে সে রিলেশনে গিয়েই ছিল তোমাকে শরীরটার জন্য । যখন সেটা সে পাচ্ছিলো না তখনই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে । তুমি কি জানো তোমার সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই ও আরও দুইটা মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছে ।
-কি ? তুমি এসব কি বলছো ? আর কিভাবে জানো এসব ?
অপু আবারও সেই রহস্যময় হাসি দিল । তারপর বলল
-যাক সেসব কথা । দেখি তোমার হাত দুটো !
-মানে ?
-মানে তোমার হাত দুটো আমার দিকে বাড়িয়ে দাও ।

মিতু খানিকটা দ্বিধা হয়েই তাকিয়ে রইলো অপুর দিকে । তারপর নিজের হাত বাড়িয়ে দিল ওর দিকে । অপু আলতো করে ওর দুই হাত দিয়ে মিতুর দুই হাত ধরলো । মিতু প্রথমে কিছু বুঝতে পারলো না তবে একটা সময় অবাক হয়ে আবিস্কার করলো আপুর হাত টা ওর কাছে খানিকটা উষ্ণ ঠেকছে । আস্তে আস্তে মিতু যেন ঘোরের মধ্যে চলে গেল । ওর সামনে কত কিছু এসে হাজির হতে লাগলো । সেই শৈশব থেকে সব ঘটনা আস্তে আস্তে সব কিছু মনে পড়তে লাগলো । ওর কাছে কেবল মনে হল কেউ যেন ওর উপর কেউ মুভি বানিয়েছে এবং সেটা ওর সামনে ছেড়ে দিয়েছে । সে সেটাই দেখতে শুরু করলো ।

ক্লাস নাইনে থাকতে ও একটা ভুল করেছিলো । একটা ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছিলো । মিতুর ফ্লাশ ব্যাকে যখন সেই ঘটনাটা এল মিতু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো সে সেদিন বাইরে বের হল না । মিতুর স্পষ্ট মনে আছে ঐদিন কিভাবে সে ঘর থেকে পালিয়েছিলো । তবে অপুর হাত ধরে যে ঘটনা সে দেখছে সেটাতে কিছুই হচ্ছে না । সেই ঘটনা ঘটনা না দেখে পরবর্তিতে অনেক কিছু ওর জীবনে নতুন করে ঘটতে শুরু করলো । ক্লাস নাইনের পর ওর জীবনের কোন অংশে বাবা ছিল না কিন্তু এই খানে অনেক দৃশ্যেই ওর বাবা ছিল । ওর বাবার সাথে মধুর ঘটনা গুলো চোখের সামনে আসতেই যেন ওর চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়তে লাগলো ।
তারপর এল ফয়সালের ব্যাপারে । মানসিক ভাবে মিতু অশান্তিতে ছিল বলেই ফায়সালের সাথে ওর সম্পর্কটা হয়েছিলো । ওর কেবল মনে হয়েছিল যে ফয়সাল হয়তো ওকে শক্ত করে ধরে রাখবে । কিন্তু এই ফ্ল্যাশ ব্যাকে সেটাও ঘটলো না । কেবল ঐ পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা না ঘটনার কারনে ওর জীবনে অনেক কিছু বদলে গেল এই ফ্রাস ব্যাকে ।

যখন মিতু অপুর হাত ছেড়ে দিল তখন প্রায় ভোর হয়ে গেছে । অপু বলল, তুমি বরং এখন বাসায় ফিরে যাও । কেমন ? ক্যাম্পাসে দেখা হবে !
মিতু চুপ করে উঠে দাড়ালো । তারপর আস্তে আস্তে হাটা দিল বাসার দিকে । কিন্তু একটু পরে আবার ঘুরে দাড়ালো । তারপর অপু জড়িয়ে ধরলো । অনেকটা সময় পরে অপুকে ছেড়ে দিয়ে বলল
-তুমি আজকে না থাকলে সত্যিই আমি আজকে কোথায় যেতাম কে জানে ? আর এই চমৎকার স্বপ্নটা দেখানোর জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ । অনেক !
অপু কোন কথা বলল না । কেবল হাসলো ।

মিতু আবার যখন নিজের রুমে ফিরে এসেছে তখনই ভোরের আযান দিল । নিজের মোবাইল হাতে নিতে অবাক হয়ে দেখলো সেখানে ওর বাবার নাম্বার থেকে মিসকল এসেছে । তাও একটা না চারটা !
মিতু কিছুই বুঝতে পারলো না কিছু সময় । ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । তারপর মনে হল হয়তো ওর মায়ের মোবাইলে ব্যালেন্স নেই দেখে বাবার মোবাইল দিয়ে ফোন দিয়ে থাকতে পারে । মনের ভেতরে অপুর দেখানো সেই স্বপ্নটার কথা ঘুর পাক খেতে লাগলো । বারবার মনে হল ইস যদি স্বপ্নটা সত্যি হত !

মনের কথা মনেই রয়ে গেল । আবার ওর বাবার নাম্বার থেকে ফোন এসে হাজির । বুকের দমটা আটকে নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ।
-হ্যালো ? ঘুমিয়েছিলি ? কতবার ফোন দিয়েছি ! তোকে না বলেছি সকালে উঠে নামাজ পড়তে !

মিতু নিজের কানকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । ওর বাবার সাথে কম করেও ছয় বছর পরে কথা হচ্ছে কিন্তু ওর বাবার কন্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে যেন ওর বাবা ওর সাথে নিয়মিত কথা বলেন । তাহলে কি ......
মিতু আর কিছু ভাবতে পারলো না ।
ওর দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো । মিতু কোন মতে বলল
-বাবা !
ফোনের ওপাশ থেকে সাথে সাথেই শোনা গেল
-বল মা । তোর কন্ঠস্বর এমন কেন রে শোনাচ্ছে ? সব কিছু ঠিক আছে তো ?

মিতু নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিলো না । কোন মতে বলল
-বাবা তুমি কি আজকে একটু ঢাকাতে আসতে পারবা ?
-হ্যা পারবো ? আমি নামাজ পড়েই রওনা দিচ্ছি । তুই কোন চিন্তা করিস না । আর কোন কান্না কাটি করিস না । কেমন ! আমি আসছি এখনই রওনা দিচ্ছি !

মিতুদের বাসাটা ঢাকা থেকে খুব দুরে নয় । মুন্সিগঞ্জ জেলাতে । গাড়িতে করে ঢাকাতে আসতে খুব বেশি হলে ঘন্টা খানেক সময় লাগে ! আর মিতুদের নিজেদের গাড়ি আছে তাই খুব আরও দ্রুত পৌছে যাওয়ার কথা !

পরিশিষ্টঃ

মিতুর জীবনটা এখন সত্যিই অন্য রকম । ঐদিন সত্যিই ওর বাবা সকাল সাতটার ভেতরেই ওর বাসার সামনে গিয়ে হাজির হয়েছিলো । ওর বাবার আচরন দেখে মিতুর কেবল মনে হয়েছে ওদের সম্পর্ক একেবারে স্বাভাবিক । তবুও মিতুর বারবার মনে হচ্ছিলো সব যেন স্বপ্ন । এখনই ওর ঘুম ভেঙ্গে যাবে । দেখবো সব আগের মত হয়ে গেছে ।

ঐ রাতের বেলা অপু যখন ওর হাত ধরে ওর জীবনের ফ্লাশ ব্যাক দেখাচ্ছিলো তখন কোন ভাবেই অপু সব কিছু বদলে দিয়েছে । ওর অতীতটা বদলে দিয়েছে । কিভাবে করেছে সেটা মিতু জানে না তবে এটাই হয়েছে । ওর জীবনটা সত্যি একবারে বদলে গেছে । এখন ওর কাছে এই জীবনটাই ওর সত্যিই মনে হচ্ছে আর যেটা আগে ছিল সেটাকে কেবলই একটা দুঃস্বপ্ন মনে হয় ! অপু ঠিকই বলেছিলো একদিন নতুন সূর্য উঠবে । তবে সেটা যে এমন ভাবে আসবে সেটা বুঝতে পারে নি ।

কিন্তু এত কিছু পরেও মিতুর জীবনে একটা অপূর্ণতা রয়েই গেছে । ঐদিনের পর সে আর অপুকে দেখে নি । ঐদিনের পর অপু আর ক্লাসে আসে নি । ফোন দিয়েছে সেই নাম্বারে কিন্তু সেই নাম্বারটা ইনভ্যালিড দেখাচ্ছে ! অনেক খোজ খবর করেও সে আর অপুর কোন খোজ পায় নি । যার জন্য ওর জীবনটা এভাবে আবার ট্রাকে ফিরে এল সেই মানুষটাকে একটা ধন্যবাদ দিতে পারছে না জেনে মাঝে মাঝে ওর খারাপ লাগে । তবে ওর বিশ্বাস একদিন আবারও অপুর সাথে ওর দেখা হয়েই যাবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×