somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুইটি অতিপ্রাকৃত অনু-গল্প

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অনুগল্পঃ বিদায়

লুবনার ঘুম বেশ পাতলা। একটু শব্দতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে কতবার যে ওর ঘুম ভাঙ্গে সেটার কোন ঠিক নেই। তবে ঘুম ভাঙ্গলেও সেটা আবার তাড়াতাড়িই চলে আসে। তাই খুব একটা সমস্যা হয় না।
আজকেও রাতের বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে কিছু সময়ে ঠিক বুঝতে পারলো না কিসের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলো না। তারপর লক্ষ্য করলো ওর ঘরের দরজাটা খুলে যাচ্ছে। তারপর অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো ঘরের ভেতরে একটা অয়বয় প্রবেশ করছে। যখন অয়বয়টাকে চিনতে পারলো তখন ওর বিস্ময়ের সীমা রইলো না। কারন মানুষটা ওর দাদী। দাদী বহুদিন ধরে অসুস্থ। নিজের বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। আজকে নিজের ঘর ছেড়ে লুবনার ঘরে এসে হাজির।
লুবনা বলে উঠলো, দিদা তুমি হাটছো?
দাদী হাসলো একটু। তারপর বলল, তুই খুব ভাল রে দিদি ভাই। ভাল থাকিস।
লুবনা বলল, কি বলছো দিদা?
দিদা বলল, আচ্ছা তুই ঘুমা। আমি যাই।

লুবনা কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। দেখলো আবারও আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। লুবনার মনটার সত্যিই ভাল হয়ে গেল। লুবনার দাদী আগে এমন রাতের বেলা পুরো বাড়িময় হেটে বেড়াতো। অনেকদিন পরে আবার দাদী সুস্থ হয়ে উঠছো। আবার শুয়ে পড়লো। ঘুম চলে এল একটু পরেই।

লুবনার ঘুম ভাঙ্গলো একেবারে সকালে। কান্নার আওয়াজ শুনে। ঘুম ভেঙ্গে কিছু সময় বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে। তারপর বুঝতে পারলো ওর ছোট ফুফি কাঁদছে। দৌড়ে গিয়ে দেখলো ওর দাদীর ঘরে বেশ কিছু মানুষ৷ ওর দাদী মারা গেছে৷

কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। রাতে কি চমৎকার ওর দাদী ওর কাছে এসে কথা বলল! আর এখন কি না শুনছে মারা গেছে ! কিন্তু যখন ওর ডাক্তার চাচার কথা শুনলো তখন যেন আকাশ থেকে পড়লো। ওর চাচা বক্তব্য মতে দাদী মারা গেছে অন্তত আট ঘন্টা আগে। কিন্তু রাতে যখন ওর কাছে এসেছিল তখন ভোরের আযানের একটু আগে।
তাহলে?
তাহলে কি ওর দাদী ওর কাছ থেকে বিদায় নিতে এসেছিল?


link





অনু গল্পঃ নিমুর কান্না


নিমু চিৎকার করে কাঁদছে। কান্নার আওয়াজটা আমি পরিস্কার শুনতে পেলাম। রাতের বেলা এই আওয়াজ শুনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছুটা সময় চুপ করে শুয়েই রইলাম৷
আমার মেয়েটা তখনও কান্না করেই চলেছে৷ আমাকে ডাকছে যেন। এমন অবস্থায় নিজেকে ধরে রাখা মুস্কিল।
আমি পাশ ফিরে অপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম। বাইরের চাঁদের আলোতে অপুর ঘুমন্ত মুখটা দেখা যাচ্ছে৷ গাঢ় নিঃশ্বাস পড়ছে৷ রাতের বেলার অপুর ঘুম বেশ গাঢ় হয়। সহজে ভাঙ্গে না৷ আমি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। আরেকবার তাকিয়ে দেখলাম। একটু যেন নড়ে উঠলো তবে ওর ঘুম ভাঙ্গলো না। আমি উঠে দাড়ালাম।

পাশের ঘরে নিমুর দোলনার কাছে যেতেই বড় ধাক্কাটা খেলাম। আমার মেয়েটা এখানে নেই৷ অথচ ওর কান্নার আওয়াজ আমি পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি। এখনও চিৎকার করে কান্না করেই চলেছে।
আমি আওয়াজ লক্ষ্য করে হাটতে লাগলাম। আমার বুকের ভেতরে তখন কেবল নিমুর চিন্তা। নিমু কেন কাঁদছে? আমি ওকে একা রেখে ঘুমিয়েছি এই জন্য কাঁদছে ও?
ভয় পেয়েছে ও?
কোন ভয় নেই। আম্মু এখনই চলে আসবে। আমি দ্রুত পা বাড়ালাম।

বাড়ির পেছনের দরজা খুলে ফেলতেই আওয়াজটা আরও একটু বেড়ে গেল। ঐতো বড় আম গাছটার কাছ থেকে আসছে আওয়াজটা৷ আমার নিমু ওখানেই আছে৷
আমি দরজা দিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবো এমন সময় পেছন থেকে অপুর আওয়াজ শুনতে পেলাম।
-লুবনা! লুবনা!
আমি অপুর দিকে না তাকিয়েই বললাম
-অপু আমার নিমু কাঁদছে। তুমি শুনতে পাচ্ছো না?
অপু দ্রুত আমার কাছে এগিয়ে এল। আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে রাখলো কিছুটা সময়। একটা সময় আমি লক্ষ্য করলাম আর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না আমি। অপু কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
-আমার মেয়ে আর বেঁচে নেই। এই কথাটা তোমাকে মেনে নিতে হবে। বুঝতে পেরেছো তুমি!

আমি কিছুটা সময় চুপ করে থাকি। কোন কথা বলতে পারি না। ঐ আম গাছটার নিচে নিমুকে কবর দেওয়া হয়েছে। আমি জানি ও মারা গেছে, তবুও এটা মানতে আমার কষ্ট হয়। আমি প্রতিদিন ওর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। ওকে ছেড়ে থাকতে যেমন আমার কষ্ট হয়, ওরতো আমাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়!

link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কল্প-গল্প : অনন্ত নীহারিকার মাঝে (পর্ব দুই এবং শেষ)

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ২১ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ১:৫২


অনন্ত নীহারিকার মাঝে (১ম পর্ব )
১।
"আমি কোথায়?" অর্ধঘুমন্ত অবস্থায় বলে ওঠে অর্পিতা।

"আমরা তোমাকে আবার ধরে এনেছি!"

অর্পিতা চোখ মেলে দেখে, সেই ঝলমলে আলোর দুনিয়ায় ফিরে এসেছে। এবার শূন্যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি ব্লগ( শ্বশুরাল গেন্দা ফুল)

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:১৮

গ্রাম যেন প্রকৃতির আঁকা এক শান্ত জলরঙ।আকাশজোড়া নীলের নিচে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ।
বিশাল পুকুর পাড়ে সবুজের ছোঁয়া যেন হাতে আঁকা ছবি, শান্ত চলনবিলের তীরে উত্তাল বাতাস,বর্ষার মৌসুমে বিল ভরে ওঠা
জল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভালোবাসা মূলত পুরুষালি কাজ, মেয়েরা খুব কমই সক্ষম এতে

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ২১ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৪



ভালোবাসা মোটের উপরে আসলে ছেলেরই যেন কাজ! 'মেয়েদের ভালোবাসার মাত্রা' বোঝাতে নিচের রম্য গল্পটিই যথেষ্টঃ
বিবাহিত মহিলাদের জন্য আয়োজিত এক সেমিনারে এক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলো।
আপনি শেষ বার কবে আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে ডাকছে ইরান

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:০৮







মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। আর এর জন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে যৌথ সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। তেহরানের শীর্ষ নেতা ও প্রভাবশালী রাজনীতিক মহসেন রেজাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েলের আয়রন ডোমে ফুটা আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২১ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:৫১



ইসরায়েলের ভূমিতে মিচাইল পড়া থেকে বুঝা যাচ্ছে ইসরায়েলের আয়রন ডোমে ফুটা আছে। এ ফুটা দিয়েই শত্রুরা ইসরায়েলকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করবে।দুই কোটি ইসরাইলীর দুইশত কোটি শত্রু। তারা মেরে-কেটে কত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×