somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ তরুণীর নীল খাম

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিশাতের মনের ভেতরে একটা আলাদা আনন্দ কাজ করছে । বুকটা যেন স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশি লাফাচ্ছে । এই আনন্দ ধরে রাখতে পারছে না নিজের ভেতরে । কিন্তু আবার কাউকে বলতেও পারছে না ।

এতো দিন পরে গাধাটা একটু সাহস জোগার করেছে ওকে কিছু বলার ! গত রাতেই সে খবর পেয়েছে শুভ আজকে নিশাতের সাথে কথা বলবে । সাথে সাথে নিশাতকে এও জানানো হয়েছে যে শুভ কয়েক দিন থেকেই একটা নীল রংয়ের খাম খুব যত্ন করে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । খামটা যে ওর জন্য সেটা আর কারো বুঝতে বাকি নেই । নিশাতের ইচ্ছে ছিল শুভ কথাটা ওকে সরাসরি মুখেই বলুক । কিন্তু চিঠিতে বলাটাও খুব মন্দ না । অনেক আগে যখন এখনকার মত মোবাইল ইন্টারনেট ছিল না তখন মানুষ ঠিক এই ভাবে চিঠি লিখে মনের কথা প্রিয় মানুষকে জানান দিতো । এটাই বা কম কি !

ক্যাম্পাসে পা দিতেই নিশাতের মনের ভেতরকার ধুকধুকানী আরও একটু বৃদ্ধি পেয়ে গেল । ওর চোখ চারিপাশে শুভকে খুজতে লাগলো । ছেলেটা কোথায় গেল ? আজকে যদি সত্যিই শুভ কিছু না বলে তবে ঠিক করে আর কোন দিন ওর সাথে কথাই বলবে না ।
নিশাত মনে মনে কপট অভিমান করে করলো । সাথে সাথে নিজের মনেই হেসে উঠলো । নিজের এমন ছেলেমানুষী কাজে নিজের কাছেই লজ্জা পেয়ে গেল ও ।

শুভকে ও কত দিন থেকে পছন্দ করে । কিন্তু একটা মেয়ে হয়ে আগে কিভাবে বলবে ওর ভাল লাগার কথা । তাই চুপচাপ সব সময় শুভর দিকে তাকিয়ে থাকতো । ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করলেও কথা বলতে পারতো না লজ্জায় । খুব ইচ্ছে করতো শুভ ওর কাছে এসে কথা বলুক !

তারপর একদিন নিশাত নিজেই জানতে পারলো যে ও যেমন শুভকে কিছু বলতে চায় ঠিক তেমনি শুভও ওকে অনেক দিন থেকে কিছু বলতে চায় । বেচারা লজ্জা ওর সাথে কথাই বলতে পারে না । এটা জানার পরে সেদিন নিশাতের মনে যে কি পরিমান আনন্দ হয়েছিলো তা সে বলে বোঝাতে পারবে না ।

তারপর অনেক কয়টা দিন কেটে গেছে । কেবল ওদের দুজনের চোখাচোখি হয়েছে । কথা হয় নি । যখন দু পক্ষেই কথা বলতে আগ্রহী কিন্তু দ্বিধা আর লজ্জার কারনে কেউ আগে এগিয়ে আসতে পারছে না তখন ওদের বন্ধুরা এগিয়ে এল । প্লান করে ঠিক করা হল ওরা কোথায় দুজন কথা বলবে । তবে শুভকেই বলতে হবে সব ।

শুভ প্রথমে একটু ইতস্তত করেছিলো বটে তবে পরে রাজি হয়ে গেল । তারই পরিপেক্ষিতে আজকের এই পরিকল্পনা । পরিকল্পনাটা খুব সহজ । আজকে ওদের দ্বিতীয় প্রিয়ডে কোন স্যার নেই । স্যার যখন প্রথম প্রিয়ডে ক্লাস নিয়ে বের হয়ে যাবে তখনও ক্লাসের সবাই রুম থেকে বের হয়ে যাবে । কেবল বসে থাকবে নিশাত আর শুভ । তারপরই শুভর যা বলার বলবে !

নিশাত উৎকন্ঠা নিয়ে প্রথম ক্লাসটা পার করলো । স্যার বের হয়ে যাওয়ার ৫ মিনিটের মাথায় আস্তে আস্তে সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেল । নিশাত তাকিয়ে দেখলো শুভ সামনের দিকে একটা বেঞ্চে বসে আছে । চুপচাপ সেও কিছু সময় বসে রইলো । বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করতে লাগলো । সেই সাথে এৎা ভাল লাগার অনুভূতি ধীরে ধীরে বেড়ে চলছে ।

এই তো শুভ উঠছে । ওর মুখটা দেখা যাচ্ছে !
ইস !
কেমন নার্ভাস লাগছে !
নিশাতের হাসি পেয়ে গেল !
ছেলে গুলো সব জাগয়াতে এতো বাহাদুরী করে কিন্তু এই সামান্য একটা কথা বলতে গেলেই ওদের গলা শুকিয়ে যায় !

নিশাত দেখতে পেল শুভ কেমন ধীর পায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে । একটা সময়ে ঠিক ওর সামনে এসে দাড়ালো ।
কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেল !
নিশাতের আবারও হাসি পেয়ে গেল । শুভ যেন ঠিক মত নিঃশ্বাস নিতে পারছে না । শেষে নিশাত নিজে বলল
-বস আমার সামনে ! ঠিক মত শ্বাস নাও !
এই কথা শুনে শুভ যেন একটু প্রাণ ফিরে ফেল । ফ্যাকাশে ভাবে হাসলো । তারপর বসে পড়লো ওর ঠিক সামনে । নিশাত তখন তীক্ষ চোখে শুভ কে লক্ষ্য করছে । ছেলেটা আসলেই একটু নার্ভাস হয়ে গেছে । আজকে কি বলতে পারবে যে কথাটা বলতে এসেছে ?
শুভ বলল
-তুমি কেমন আছো ?
নিশাত হেসে ফেলল । ওর হাসি দেখে শুভ যেন একটু বুকে বল পেল । মনে মনে ঠিক করেই নিল আজকে কথাটা ওকে বলতেই হবে । যদি মুখে নাও বলতে পারে তাহলে নীল রংয়ের খামে সেটা লিখে নিয়ে এসেছে । খাম টা ওকে দেবেই ।
নিশাত নিশ্চয়ই রাগ করবে না । রাগ করতে পারে না !
নিশাত বলল
-বল কি বলবে চাও ?
-আসলে ...
-অনেক দিক থেকেই তো বলতে চাচ্ছো, তাই না ?
-আসলে হ্যা । আমি অনেক দিন থেকেই কথাটা তোমাকে বলতে চাচ্ছি কিন্তু বলতে পারছি না ।
-তাহলে বলে ফেল !
-রাগ করবে না তো ?
-তোমার কি মনে হয় রাগ করলে আমি এখানে আসতাম ?
-তাও ঠিক ! তাহলে বলেই ফেলি । তাই না ?
-হুম বলে ফেল ।

শুভ বড় করে একটা দম নিল । কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না । একটা সময়ে বুঝতে পারলো যে তার পক্ষে নিশাতের সামনে কথাটা কোন ভাবেই বলা সম্ভব না । বকের ধুকধুকানী বেড়ে গেল অনেক গুণে । তারপর নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলল
-মানে আমি বলতে চাইছি তুমি তো নিজেকে তরুনী কর তাই না ?
নিশাত খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-এই প্রশ্ন কেন ?
-না মানে এমনি ! আসলে আমি আমি যা বলতে চাই সেট আমি মুখে বলতে পারছি না । এই নীল খামটাতে লিখে এনেছি !

এই কথা বলেই শুভ নীল খামটা বের করে নিশাতের হাতে বাড়িয়ে দিল । তারপর বলতে গেলে একেবারে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ক্লাস রুম থেকে । নিশাত নীল খামটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । একবার মনে হল খামটা এখন না খুলে বাসায় গিয়ে খুলবে । কিন্তু তারপরই মনে হল এতোটা সময় ওর পক্ষে অপেক্ষা করা কোন ভাবেই সম্ভব না । দ্রুত খামটা খুলে ফেলল । ভেতরে মাত্র একটা লাইণ লেখা । লাইন গুলো পড়ে নিশাত কেবল থ হয়ে রইলো!

শুভ লিখেছে "কেবল তরুণ ভোটার নয়, তরুণী ভোটারের কাছেও একটাই চাওয়া "নৌকা মার্কায় ভোট টা দিও"
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×