somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ হারানো হৃদয়

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবি গুগল


নিজের কাজের সময় আমি অন্য দিকে তাকানো মোটেই পছন্দ করি না । বিশেষ করে মেয়েদের দিকে তাকানোটা আমার স্বভাবের ভেতরে পড়ে না মোটেই । কিন্তু আজকে আমি কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না । বারবার কেবল মেয়েটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে । বেশ কয়েকবার নিজেকে ধমক দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু কাজ হল না খুব একটা ।

নিজের কাজ থেকে মুখ সরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম । কিন্তু মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না কোথাও । একটু আগেই মেয়েটা ছিল ঐদিকে । ছেলে মেয়েদের ভিড়ের মাঝে বসে তাদেরকে ঔষধ দিচ্ছিলো । তাদের বলে দিচ্ছিলো কিভাবে সেগুলো খেতে হবে ! কোথায় গেল এখন ?
আমি পুরো ক্যাম্পের দিকে আবার চোখ বুলালাম । মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না কোথায় ?
কোথায় গেল মেয়েটা ?

আমি নিজের আচরন দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম । এমন কেন হচ্ছে ?
মেয়েটাকে আমি এর আগে কেবল একবার দেখেছি নিশিদের বাসায় !
আর মেয়েটাকে আমি দেখি নি । কেবল নাম আর মেয়েটা কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ে সেটা ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না । তাহলে মেয়েটার ব্যাপারে আমার এতো আগ্রহ কেন জন্মাচ্ছে ?


-আমাকে খুজছেন ?
আমি চমকে উঠলাম । আমার ঠিক ডান দিকে এসে দাড়িয়েছে কেউ । আমার বুঝতে মোটেও কষ্ট হল না কে দাড়িয়েছে । আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন একটু ঝিমঝিম করে উঠলো । নিজেকে শাসন করতে চেয়েও কেন যেন পারলাম না । মেয়েটা আবার বলল
-কি অপু সাহেব ? বললেন না ? আমাকে খুজছেন ?
-আসলে .....

মেয়েটা ততক্ষনে আমার মুখোমুখি এসে দাড়িয়েছে । উচ্চতায় মেয়েটা আমার নাক পর্যন্ত হবে । নিশিদের বাসায় ঐদিন দেখেছিলাম । আজকে অবশ্য মেয়েটাকে আরও একটু উচু মনে হচ্ছে । মেয়েটা আজকে ছেলেদের মত কেডস পরেছে । আর জিন্সের সাথে একটা কালো টিশার্ট । তার উপরে সাদা এপ্রোন ।

আমাদের অফিস থেকে মাঝে মাঝে জনকল্যার মূলক কাজ করা হয় । বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আমরা মানুষদের কে ডাক্তারি সেবা, জন সচেতনতা মূল কাজ করে থাকি । প্রাইভেট কোম্পানী গুলো সমাজে নিজেদের নাম কে উচু করতে মাঝে মাঝেই এমন সেবা মূলক কাজ করে থাকে । এবারের ক্যাম্প পরিচালনা করার দায়িত্ব পড়েছে আমার উপর । আমরা ঢাকা মেডিক্যালে থেকে কিছু ইন্টার্ন ডাক্তারকে নিয়ে এসেছি এই ক্যাম্প পরিচালনা করতে । এই মেয়ে তাদের সাথে ।

আমি নওশাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম আরও কিছু সময় । কিছু বলতে গিয়েও যেন বলতে পারছি না । নওশাবা বলল
-থাক, আপনাকে মিথ্যা বলতে হবে না । আমি জানি আপনি আমাকে খুজছিলেন । কেন খুজছিলেন সেটাও আমি জানি ।

আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-জানেন ?
-হ্যা জানি । কিন্তু আপনি জানেন না, তাই না ?

আমি আরও একটু দ্বিধায় পরে গেলাম । আমি আসলেই জানি না আমি কেন নওশাবাকে খুজছিলাম । কেবল ওকে দেখতে মন বলছিলো । নওশাবা বলল
-একটা কথা কি জানেন ?
-কি কথা ?
-যদিও এই কথার কোন মেডিক্যাল ব্যাখ্যা নেই তবুও কথাটা সত্যি !
আমি চুপ করে রইলাম । নওশাবা বলল
-মানুষের হাসি হচ্ছে তার হৃদয়ের প্রতিফলন ! হাসি দেখেই তার হৃদয়টা অনুভব করা যায় !
আমি ঠিক বুঝলাম না মেয়েটা হঠাৎ আমাকে এই কথা কেন বলল । এমন কথা বলার পেছনের কোন কারনও খুজে পেলাম না ।

আমি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তখনই দেখি মেয়েটার চেহারার ভাবটা বদলে গেল । একটু আগে যেখানে আনন্দ ছিল সেখানে একটা বিষাদের ছায়া দেখতে পেলাম । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি একটু আসছি ।

এই বলে মেয়েটা সামনের দিকে হাটা দিল । দেখতে পেলাম নওশাবা একটা ছেলের দিকে হেটে যাচ্ছে । একটু আগেই ছেলেটা গাড়িতে করে এসেছে । কেন জানি ছেলেটাকে দেখে আমার মোটেই পছন্দ হল না । নওশাবা ছেলেটার সামনে দাড়িয়ে কিছু কথা বলতে লাগলো । ছেলেটার ভাব ভঙ্গি দেখেই আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে ছেলেটার সাথে নওশাবার খুব ভাল সম্পর্ক । নওশাবা যেহেতু ইন্টার্ন করছে সেই হিসাবে ছেলেটা নওশাবার স্বামী হওয়াটাও খুব একটা অস্বাভাবিক নয় । প্রেমি নয়তো ফিয়ন্সে তো হবেই ।

আমার বুকের ভেততে হঠাৎ করেই কষ্ট হতে লাগলো । সত্যিই কষ্ট হতে লাগলো নওশাবার জন্য ।
কি অদ্ভুদ ! এমন তো মোটেই হওয়ার কথা না !
মোটেই হওয়ার কথা না !

নিশি ছাড়া আমি কারো প্রতি এমন কিছু অনুভব করবো এটা আমি ভাবতেই পারি না । এমনটা তো কোন দিন হয় নি ।

নওশাবাকে আমি প্রথম দেখি নিশিদের বাসাতেই । নিশির রুমে এখনও আমি মাঝে মাঝেই যাই । নিলয় আমার ছোট বেলার বন্ধু । আগে আমাদের বাসা পাশা পাশিই ছিল । তারপর এলাকা বদলাতেও নিয়মিত যাওয়া আসাটা রয়েই গেছে । তাই মাঝে মাঝেই অফিস শেষ করে আমি ওদের বাসাতেই গিয়ে হাজির হই । নিলয় আসে অফিস থেকে ওর মাও থাকে সব সময় । আন্টি আমাকে খুব আদর করেন । তাই নিশির রুমে ঢুকতে আমার খুব একটা সমস্যা হয় না ।

ওর রুমটা এখনও আগের মত করেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে । সব জিনিস পত্র ওর ব্যবহারের সব কিছু আগে যেমন ছিল তেমনই আছে সব । কোন কিছু বদলানো হয় নি । আমি রুমের ভেতরে যাই বসে থাকি । ওকে অনুভব করার চেষ্টা করি । ও যে টেবিলে বসে পড়তো সেখাে গিয়ে বসে থাকি । ওর পড়ার বই গুলো হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখি । অদ্ভুদ লাগে নিজের কাছে ! মনে হয় যেন মেয়েটা এখনও আমার পাশেই আছে । হয়তো এখনই দরজা খুলে ঢুকবে । তারপর আমার দিকে চোখ পাঁকিয়ে বলবে, কি ব্যাপার অপু ভাই তুমি আমার রুমে কি কর ? যাও বের হও ! বের হও !

আমি নিজের চোখ সরিয়ে নিলাম । নওসাবার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার কষ্ট হচ্ছে । মেয়েটা ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলছে এটা আমার মোটেই সহ্য হচ্ছে না । নিশির বেলাতেও এমন হয়েছিলো । আমার থেকে কয়েক বছর জুনিয়ার ছিল ও । আমাড় উইনিভার্সিটিতেই পড়তো । একদিন ক্লাস শেষ করে নিশির ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে দেখি ও একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে । ব্যাপারটা দেখে আমার খুব বেশি রাগ হয়েছিলো ।
এতোই রাগ করেছিলাম যে নিশির সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম । এমন কি ওদের বাসাতে গেলেও দেখা করি নি ওর সাথে । ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমার সাথে নিজ থেকে দেখা করতে এল । ঐদিন নিলয় আসে নি ক্লাসে । আমি ক্লাস থেকে বের হতেই দেখলাম নিশি দাড়িয়ে আছে । আমি এড়িয়ে চলে যেতে চাইলেও পারলাম না । নিশি ঐদিনই আমার হাত ধরলো । তারপর এক প্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেল ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ের দিকে । ওখানে ক্লাসের সময় খুব একটা মানুষ থাকে না ।

আমি সেখানে গিয়েও মুখ গোমড়া করে বসে থাকলাম । নিশি আমার সামনে দাড়িয়ে বলল
-আচ্ছা আমি কি কোন ভুল করেছি ? কোন অপরাধ ?
-কেন ? এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছিস ?
-তাহলে আমার সাথে এমন কেন করছো ?
-কি করছি ?
-তুমি জানো না কি করছো ? দেখো অপু ভাই আমি কষ্ট পাচ্ছি । যদি আমি ভুল করে থাকি আমাকে বল প্লিজ । তোমার ইগ্নোর আমার সহ্য হচ্ছে না ।
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । নিশির চেহারা দেখে আমার সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল । আমার সাথে কথা না বলতে পেরে ও যে কষ্টে আছে সেটা আমার বুঝতে মোটেই কষ্ট হচ্ছে না । কেন জানি এই অনুভূতিটা আমার কাছে খুব বেশি ভাল লাগলো । আমি বললাম
-ঐ ছেলেটা কে শুনি ?
নিশি যেন আকাশ থেকে পড়লো । তারপর বলল
-কোন ছেলেটা ?
-ঐদিন যে যার সাথে কথা বলছিলি ?

নিশি অনেকটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-একটা কাজ কর আমার বুকে কান পেতে শোন তো !
-মানে ?

আমি খানিকটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা হঠাৎ করে এমন কথা বলবে আমি বুঝতে পারি নি । নিশি বলল
-কথা কম বলে যা বলছি তাই কর !

তারপর নিজেই এগিয়ে এল । আমি প্রথমে কি করবো বুঝতে পারলাম না । নিশিকে সত্যি সত্যি বেশ গম্ভীর মনে হল । সে সত্যিই সত্যিই এগিয়ে এল একদম আমার কাছে । কাছে আসতেই ওর শরীরের একটা মিষ্টি গন্ধ পেলাম আমি । আমি খুব আস্তে করে ওর বুকে মাথা রাখলাম । প্রথমে কিছু না শুনতে পেলেও পরে ওর হৃদয়ের ধুকধুকানি শুনতে পেলাম । নিশি মৃদ্যু স্বরে বলল
-শুনতে পাচ্ছো ?
-হু
নিশির নিঃশ্বাস তখন আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে । তখনই আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে ওর বুকের ভেতর থেকে যেন আমার নাম ভেসে আসছে । ব্যাপারটা হাস্যকর শোনালেও আমার মনে হল আমি সত্যিই শব্দ গুলো শুনতে পাচ্ছি !

অপু অপু অপু অপু .....
সত্যি সত্যিই শুনতে পেলাম শব্দটা ! কিন্তু এটা তো অসম্ভব একটা ব্যাপার !

কত সময় ধরে নিশির বুকে কান পেতে ছিলাম আমি জানি না । মনে হল যেন সব থেমে গেছে । একটা সময় নিশি নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বলল
-এর থেকে আর এমন করে আমাকে কষ্ট দিবা না, কেমন !
আমি কিছু বলতে পারলাম না । তারপর নিশি খুব আলতো করে আমার ঠোঁটে চুমু খেল ।



নওশাবা ফিরে এল একটু পরেই । আমি তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেটা এখনও রয়েছে ক্যাম্পে । নওশাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-অপু সাহেব, আমাকে একটু আগে আগে চলে যেতে হচ্ছে । কিছু মনে করবেন না আশা করি ।
-না না ঠিক আছে । সমস্যা নেই । কাজ তো প্রায় শেষ !

কিন্তু আমার কেন জানি খুব রাগ হতে লাগলো । বারবার মনে হতে লাগলো তুমি কেন যাবে ওর সাথে । খুব বলতে ইচ্ছে হল ওকে বলি যেন যে তুমি কিছুতেই যেতে পারবে না । এখানেই থাকতে হবে ।
আমার মনের কথা যেন নওশাবা বুঝতে পারলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি রাগ করছেন ?
-আরে না না । রাগ কেন করবো ?
নওশাবা অদ্ভুদ ভাবে হাসলো । তারপর বলল
-রাগ করবেন না । মানুষ অনেক কিছু চাইলেও করতে পারে না ।
-মানে ?
-মানে কিছু না । রিয়াদের সাথে আমার সামনে মাসে বিয়ে । বাইশ তারিখ !
-ও !

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না । পা দুটো যেন একটু বেশি অবস মনে হল । মনে হল যেন এই মেয়েটা আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে । অথচ এই মেয়েটাকে আমি এই নিচে মাত্র দুইদিন দেখছি । সপ্তাহ খানেক আগে নওশাবাকে আমি প্রথম দেখি নিশির ঘরে । মাঝে মাঝে নিশিদের বাসায় আমি যাই নিশির ঘরে কিছুটা সময় একা একা কাটানোর জন্য । সেদিন অফিস থেকে ওদের বাসায় যেতেই লক্ষ্য করলাম ওদের বাসার সোফার ঘরে এক ভদ্রলোক বসে কথা বলছে । লোকটা কে আমি ঠিক চিনতে পারলাম না । নিশির মায়ের সাথে বসে কথা বলছে । আমি আন্টির দিকে একটু তাকিয়ে ঘরের দিকে হাটা দিলাম । নিলয়ের রুমটা ছাড়িয়ে নিশির রুমটা । আগে সেদিকেই যাবো বলে ঠিক করলাম ।

নিশির রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলাম । সেখানে একটা মেয়ে ঘুরে ঘুরে সব দেখছে । আমি নিঃশব্দে ঘরে ঢুকেছি বলে ও আমাকে ঠিক খেয়াল করে নি । একটু পরেই লক্ষ্য করলো আমাকে । সাথে সাথে চমকে উঠলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । মেয়েটার চোখে দৃষ্টি রয়েছে বিস্ময় আর বিস্ময় মিশ্রিত আনন্দ । আমাকে দেখে মেয়েটা যেমন বিস্মিত হয়েছে সেই সাথে আনন্দিত হয়েছে । ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ।
আমি বললাম
-ও সরি ! আমি বরং আসি !
-না না ঠিক আছে ! এটা নিশির ঘর !
-আপনি নিশিকে চিনেন কিভাবে ?

মেয়েটা এই প্রশ্নের জবাব দিল না । কেবল হাসলো । তারপর বলল
-আপনি কিভাবে ওকে চিনেন ?
আমি এই প্রশ্নের জবাব দিবো বুঝতে পারলাম না । তার থেকেও বড় কথা মেয়েটা আমাকে এই প্রশ্ন কেন করলো ঠিক বুঝতে পারলাম না । মেয়েটা তখন আবারও বলল
-আপনাকে দেখে ভাল লাগছে । আপনি মাঝে মাঝেই এই ঘরে আসেন । তাই না ?
-হ্যা ।
-কেন আসেন ?

আমি সত্যিই মেয়েটাকে চিনতে পারছি না । মেয়েটা কি নিশির বন্ধু ছিল নাকি আত্মীয় ! কিন্তু ওদেরকে এতো দিন ধরে চিনি । কোন দিন এদেরকে দেখতে পাই নি আমি । মেয়েটা আমার দিকে কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো বেশ কিছুটা সময় । মুখে এটা চমৎকার হাসি লেগে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে যেন মেয়েটার ভাল লাগছে ।

ঐদিন আরও কিছুটা সময় মেয়েটা আমার সাথেই ঘরের ভেতরে ছিল । আমি ঘরের বিভিন্ন জাগয়া ঘুরতেছিলাম । মেয়েটা সেসব দেখছিলো হাসি মুখে ।

তারপর মেয়েটার সাথে আবার আজকে দেখা হল । লিস্ট থেকে মেয়েটার নাম জানতে পারলাম নওশাবা জারিন । মেডিক্যাল স্টুডেন্ট ! আর কিছুই জানি না মেয়েটা সম্পর্কে । অথচ আমার ওর প্রতি কি অদ্ভুদ অনুভূতি হচ্ছে ।
কি আশ্চর্য !


তারপরের দিন গুলো আমার কেন জানি আরও বেশি খারাপ কাটতে লাগলো । নওশাবাকে কিছুতেই মন থেকে বের করতে পারছিলাম না । নিউইয়র্ক থেকে যখন নিলয় আমাকে ফোন করে নিশির মারা যাওয়ার সংবাদটা জানিয়েছিলো তখন আমার পুরো পৃথিবীটা যেন থেকে গিয়েছিলো । আমার মনে আছে আমি মাস খানেক একেবারে ঘোরের ভেতরে ছিলাম । শরীর শুকিয়ে গিয়েছিলো না খেয়ে থাকার কারনে । আমি নিশির লাশ দেখতেো যাই নি । যেতে পারি নি । এমন কি ওর কবরের সামনেও যেতে পারি নি এখনও । সেই সাহস আমার হয়ে ওঠে নি ।

আমি ভেবেছিলাম হয়তো আর কোন দিন আমি কোন মেয়েকে ভাল বাসতে পারবো না । কিন্তু কি হচ্ছে আমার সাথে ? আর কেনই বা হচ্ছে ? আমি কিছু বুঝতে পারছি না ।

পরের মাসের বাইশ তারিখ নওশাবার বিয়ের হওয়ার কথা । আমি চাইলে মেয়েটার সাথে দেখা করে নিজের মনের অনুভূতির কথা বলতে পারতাম কিন্তু তাকে এসবের পেছনের কারন কি বলতাম ? কোন কিছুই বলার ছিল না আমার ! তাই নিজের কাছেই ঠিক করলাম যে কোন কথা বলবো না । বারবার নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে নওশাবা আমার কিছু হয় না । মেয়েটার যদি অন্য কারো সাথে বিয়েও হয়ে যায় তাহলে কিছু যায় আসে না আমার !

বাইশ তারিখে সন্ধ্যা বেলা হঠাৎ নিলয় আমাকে ফোন করে ওদের বাসায় আসতে বলল । আমি বললাম
-হঠাৎ ?
-আরে আয় তো । দরকার আছে !

আমি কিছু না বুঝে নিলয়দের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । তখনও ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে । সেটা বুঝতে পারলাম নিশির ঘরে ঢুকে । সেখানে নওশাবা বসে আছে বউ সেজে ! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় । কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না । এই মেয়ে এখানে কেন ?
নাওশাবা আমাকে ওর পাশে বসতে ইশারা করলো । আমি চুপচাপ বসে পড়লাম । তারপর বলল
-তোমার কানটা আমার বুকে পাতো তো !
-কি ! কি বললে ?
-যা বলছি করতো !
তারপর সত্যিই নিজেকে খানিকটা আমার দিকে এগিয়ে আনলো । আমি দ্বিধা নিয়ে কান পাতলাম । প্রথমে কিছু শুনতে পেলাম না । তারপর শুনতে পেলাম ওর হৃদ স্পন্দন ! এবং আরও কিছুটা সময় পরেই ......।

আমার দম বন্ধ হয়ে এল যেন !
এটা তো সম্ভব না । কোন ভাবেই সম্ভব না !

আমি আবার শুনতে পেলাম নিজের নামটা ।

অপু অপু অপু ..... অপু অপু !!

নওশাবা বলল
-শুনতে পাচ্ছো ?
-হুম !
-নিশির বুকে শুনতে না এইটা ?
-হুম !

আমি তখনও কান পেতেই রয়েছি । আমার চোখ দিয়ে পানি পরা শুরু করেছে কখন আমি টেরও পাই নি । নওশাবা বলল
-নিশি যখন নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল হাসপাতালে মারা যায় ঠিক সেই সময়ে আমিও ওখানে ছিলাম । আমার হার্ট টা বারবার রিসপন্ড করা বন্ধ করে দিচ্ছিলো । যখন নিশির ব্যাপারে ডাক্তারেরা জানতে পারলো তখন তারাই রিকোয়েস্ট টা করে নিশির ভাইকে । কি মনে করে নিশির ভাই রাজিও হয়ে যায় !

আমি মাথা তুলে নওশাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম । নওশাবা বলল
-আমি বেঁচে আছি নিশির হৃদয় নিয়ে । আর নিশির পুরোটা হৃদয়টা জুড়ে ছিলে তুমি !
আমি তাকিয়েই রইলাম নওশাবার দিকে । সেদিন নওশাবা বলেছিলো মানুষের হাসি হচ্ছে তার হৃদয়ের প্রতিফলন । এই জন্যই হয়তো নওশাবার হাসি আমার কাছে এতো পরিচিত মনে হচ্ছিলো, এতো আপন মনে হচ্ছিলো । আমি নওশাবাকে বললাম
-আমি কি আরেকবার কান পাততে পারি ?
নওশাবা হাসলো । তারপর বলল
-পারো ! এখন থেকে সারা জীবন আমার হৃদয় তোমারই !

আমি আবারো নিশির হৃদয়ে কান পাতলাম । সেখান থেকে এখনও আমার নামই ভেসে আসছে !

অপু অপু অপু অপু .....



পরিশিষ্টঃ

রাত দশটায় কাজী এসে হাজির হল নিলয়দের বাসায় । আমার বাবা মা কেও ডেকে পাঠানো হয়েছিলো । তারা প্রথমে কিছু সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে । তারা ধরেই নিয়েছিলো আমি কোন দিন বিয়ে করবো না । বিয়ে যে করছি এটাতেই তারা খুশি । নওশাবা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে বিধায় আপাতত তার পরিবারকে জানানো হয় নি । সেটা পরে জানানো হবে । কেবল নওশাবার বাবার মোবাইলে একটা মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হল যে সে বিয়ে করতে না । সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে ! নিলয় মনে হচ্ছিলো সব থেকে বেশি খুশি । সে যেন নিজের বোনেরই বিয়ে দিচ্ছে ।

বিয়ের পর আমাদের বাসর রাত নিশির ঘরেই সাজানো হল । আমি কোন দিন ভাবতেও পারি নি নিশিরকে হারানোর পর আবারও এভাবে ওকে ফেরৎ পাবো !




সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:০৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×