somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ আলাউদ্দিন সাহেবের ছেলে যেভাবে পরীক্ষায় প্রথম হল :D

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছর যখন আলাউদ্দীন সাহেবের ছেলে গলু পরীক্ষায় পাশ করে দেখালো তখন সবারই অবাক হওয়ার কথা ছিল । কারন গলুর পড়াশুনার যে অবস্থা ছিল তাতে তার সব বিষয়ে পাশ করা তো দুরে থাকুক টেনেটুনে সব থেকে সহজ বিষয়েও পাশ করাটা একেবারে অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিল । এমন কি পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন জোগার করেও তার পক্ষে পাশ করা সম্ভব ছিল না । কিন্তু আলাউদ্দীন সাহেব সেই কাজটাই করে দেখালেন । এবং এটা গ্রামের সবারই জানা ছিল । তাই তারা অবাক হয় নি ।

কিন্তু এইবার আলাউদ্দীন সাহেবের মনে ইচ্ছে জেগেছে যে তার ছেলেকে সে পরীক্ষাতে প্রথম স্থান অধিকার করাবে । সবার কাছে গর্ব করে বলবে যে তার ছেলে পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে । এই কথা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিক মিয়ার কাছে বলতেই সে হাত জোর করে বলল
-স্যার, গতবারের কথাটা তো আপনি জানেন ! এই কথা এমনিতেও বাইরে চলে গিয়েছে । এইবারও যদি এমন কিছু হয় তাহলে হয়তো আমার চাকরি চলে যাবে । বোর্ড থেকে এই স্কুলের এমপিও বাতিল হয়ে যেতে পারে । আর হচ্ছে পরীক্ষায় পাশ করানোটা খুব একটা কঠিন হবে না কিন্তু ফার্স্ট বানানো একটু কঠিন স্যার !
আলাউদ্দীন সাহেব বললেন, তুমি সেটা নিয়ে চিন্তা কর না । ওর ক্লাসের অন্যান্য ছেলে মেয়েরা যাতে ওকে সাহায্য করে সেটা আমি দেখবো । তুমি কেবল স্কুলের পরীক্ষা দেওয়া আর খাতা দেখার ব্যাপারটা দেখবা !

রফিক মিয়া কেবল দাঁত বের করে হাসলো । সে এটা সামলে নিতে পারবে । যদি কয়েকজন শিক্ষক আছে যারা গতবারও ঝামেলা করেছিলো তবে এবার তিনি আগে থেকেই সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন । বছরের শুরু থেকে তার অনুগত শিক্ষকদেরই কেবল গলুর ক্লাসে পাঠিয়েছেন । এবং পরীক্ষার গার্ডেও এমন ব্যবস্থা করবেন যাতে অন্যরা ঝামেলা না করতে পারে ।

যথারীতি পরীক্ষার দিন এল । গলু পরীক্ষা দিতে হলে উপস্থিত হয়ে গেল । সেখানে গিয়ে দেখে পুরো হলে সে কেবল একা । আর কেউ নেই। এদিকে গলুর ক্লাস মেটটা যেই পরীক্ষা দিতে আসছে, আলাউদ্দীন সাহেবের চামচারা তাদের গেট থেকেই বাসায় ফেরৎ পাঠাচ্ছে । আর তাদের বলতেছে, যাও তোমরা বাসায় । তোমাদের পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গেছে ।
জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই করা চলে না । তারপরেও কারো কারো বাবারা এটার প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের কপালে কি জুটছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখতেছে না ।

রেজাল্টের দিন দেখা গেল যে গলু পুরো ক্লাসের ভেতরে কেবল একজন যে সব বিষয়ে পাশ করেছে । আর সবাই এক দুই বিষয়ে ফেইল করেছে ।

আলাউদ্দীন সাহেবের আনন্দ আর ধরে না । তিনি সবার কাছে বুক ফুলিয়ে বলতে লাগলেন যে দেখো দেখো আমার ছেলে পাশ করেছে । কেবল পাশই করে নি সে হয়েছে ফার্স্ট । আমার মেধাবী ছেলে । গ্রামের ভেতরে সব থেকে মেধাবী ছেলে !

সাথেই সাথে কিছু মানুষ বলা শুরু করলো যে গলুর মত মেধাবী ছাত্র আমাদের গ্রামে এই প্রথম । এমন ছাত্র আর জন্মাই নি এই গ্রামে । এই গ্রামের জন্য গলু হচ্ছে একটা রত্ন । তাকে তো ক্যাম্ব্রিজে পড়াশুনা করা উচিৎ । কেউ কেউ আবার গলুকে সরাসরি অক্সফোর্ডে সরাসরি ভর্তির জন্য দাবী জানালো !

আলাউদ্দীন সাহেব ঠিক করলেন এইবার তিনি একটা আনন্দ অনুষ্ঠান করবেন । সারা গ্রামের সব মানুষকে সে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবে । সারা দিন আনন্দ মিছিল হবে । কিন্তু তবুও সবার মুখ তো আর বন্ধ করা গেল না । গ্রামে আলাউদ্দীন সাহেবের চামচাদের সংখ্যাও নেহত কম ছিল না। এদের ভেতরে আবার দুই গ্রুপ ছিল । প্রথম গ্রুপ এমন ছিল যে তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতো যে গলু সত্যিই সত্যিই পরীক্ষা দিতেই পাশ করেছে । আছে একদল যারা প্রভু ভক্ত । প্রভু যা বলে তাই বিশ্বাস করে । আগে পিছে কিছুই ভাবে না । আরেকদল ছিল তুলনা মূলক ভাবে কম প্রভুভক্ত । এদের কিছুটা বোধ বুদ্ধি ছিল । কিন্তু প্রভুর প্রতিও তো এদের আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে । তাই এরা বলতে লাগলো যে গলু এবার সত্যিই পরিশ্রম করেছে । যদি এসব কাজ আলাউদ্দীন সাহেব নাও করতো তাহলেও গলুই প্রথম হত ।

এদের মধ্যে আবার দুই বিশেষ চামচা ব্লগ লিখতো সামহোয়্যান ইন ব্লগে । তারা দুই জন সারা দিন গলু আর আলাউদ্দীন সাহেবের জয়গান গাইতেই লাগলো । তারা বলতে লাগলো একজন বাবা তার ছেলের জন্য কত ত্যাগই না স্বীকার করে । এমন বাবাই যুগে যুগে দরকার আবাদের । মাঝে মাঝে এরা যখন আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখতো কেমন নিজের কাছেই মনে হত যে তাদের চেহারাটা এক বিশেষ প্রাণীর মত হয়ে গেছে ।





অতি সাধারন গল্প । এর ভেতরে কেউ আবার কোন কিছু খুজতে যাবেন না ।
:D
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:২২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×