somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের বাড়ি টা

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিড়ি দিয়ে ছাদে যাওয়ার সময় বারবার নিশাতের আজকে একটু গা ছমছম করতে লাগলো । মীরুনের মুখে কথাটা শোনার পর থেকেই মনের ভেতরে একটা সুক্ষ অস্বস্তির অনুভূতি কাজ করছে । একবার মনে হল আজকে আর ছাদে ওঠার দরকার নেই । কেবল আজকে কেন আর ওঠারই দরকার নেই । কি দরকার ছাদে ওঠার ! ওর কাজ হচ্ছে প্রতিদিন এসে মীরুনকে পড়ানো, সেই পড়িয়ে চলে যাবে । এতো ছাদে উঠে কি হবে ! এখানে পড়ানোর আগে যে ছাদে উঠতো না, তাতে কি তার দিন যেত না !


কিন্তু নিশাত ছাদে ওঠা থামালো না । একটার পর একটা সিড়ির ধাপ পেরিয়ে ছাদের কার্নিশে পা দিল । সাথে সাথে একটা ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া এসে লাগলো ওর মুখে । নিশার মনটা মুহুর্তেই ভাল হয়ে গেল । মন থেকে অস্বস্তিটাও চলে গেল ।

মীরুনদের এই ছাদটা অন্য সব বাসার ছাদ থেকে একটু আলাদা । এই বাসাটাও বেশ পুরানো । ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারের সব উচু উচু আকাশ চুম্বি বিল্ডিংয়ের মাঝে এই ছোট্ট ৫ তলা বাসার ছাদটা বিশাল । ছাদের চারিদিকে কোমড় পর্যন্ত রেলিং দেওয়া । ঠিক ওদের নিজের বাসার মত । যতবার নিশাত এই ছাদে উঠেছে ততবারই ওর নিজের বাসার ছাদের কথা মনে হয়েছে । ছাদটাকে বড় আপন আপন মনে হয় । তাইতো যখনই মীরুনকে পড়াতে আসে, তখনই একবার চেষ্টা করে ছাদে এসে একবার ঘুরে যেতে ।


আজকে ছাদে উঠেই নিশাতের মনটা আরও একটু ভাল হয়ে গেল । একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে । ছাদটা একটু ভেজা ভেজা রয়েছে । নিশাতের মনটা মুহুর্তের ভেতরেরই ভাল হয়ে গেল । সকল অস্বস্তি আর ভয় চলে গেল সাথে সাথে । কিছুটা সময় এদিক ওদিক মনের সুখে হাটাহাটি করলো । মাঝে মাঝে নিশাতের এই ছাদে উঠে দৌড়াদৌড়ি করতে ইচ্ছে করে । কিন্তু নিচে আওয়াজ যাবে বলে করতে পারে না । ছাদে বেশ কিছু ফুল আর ফলের গাছ লাগানো আছে । বৃষ্টি হওয়ার কারনে সেই গাছের পাতাতে এখনও পানি লেগে আছে । নিশাত একটা পেয়ারা গাছ ধরে একটু ঝাকি দিতেই সেখান থেকে একট পানি ঝরে পড়লো ওর শরীরে । মৃদু একটা আনন্দ চিৎকার ওর মুখ থেকে বের হয়ে এল ।

নিশাত নিজের পায়ের স্লিপার খুলে ফেলল । তারপর খালি পায়ে আরও বেশ কিছুটা সময় হাটতে লাগলো । আজকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে থাকবে ঠিক করে রেখেছে । আজ আর কোন কাজ নেই । কাল শুক্রবার তাই কাল এখানে আর আসা হবে না । আজকেই বরং একটু বেশি সময় থাকা যাক ।

তবে মীরুন সাথে আসলে আরও ভাল হত । মীরুন ওর কিছু ছবি তুলে দিতে পারতো । মীরুনের আরও একজন স্যার আসবে তাই ও আজকে আসতে পারে নি ।
এই বৃষ্টিস্নাত বিকেলে ওর ছবি গুলো বেশ আসতো । আজকে নিশাত লাল রংয়ের একটা ওড়না পরেছে । সাদা ধবধবে কামিজের সাথে সাদা লেগিংস । এমনিতেও ওকে সব কিছুতেই চমৎকার মানিয়ে যায় কিন্তু সাদা আর লালে মানায় সব থেকে বেশি । এই দুই রংয়ের পোশাক পরলেই, ওকে এমন ভাবে মানিয়ে যায় যে মনে হয় ওটা ওর জন্যই কেবল তৈরি হয়েছে ।

মোবাইলের সেলফি ক্যামেরা বের করে বেশ কয়েকটা ছবি তুলল ও । কিন্তু মন ভরলো না কিছুতেই । বারবার মনে হল কেউ ছবি তুলে দিলে সব থেকে ভাল হত । কিন্তু এই সময়ে কেউ ছাদে নেই । আর থাকলেও নিশাত তাকে নিশ্চয়ই বলতে ওর ছবি তুলে দেওয়ার কথা বলতে পারতো না । ওর একটু মন খারাপ হল ।

-আমি কটা ছবি তুলে দিব !

কথাটা কানে যেতেই নিশাতের চমকে উঠলো । আওয়াজটা এসেছে বাঁ দিক থেকে । সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেল সাদা টিশার্ট পরা একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে । এতো সময় তো ছেলেটা এখানে ছিল না । তাহলে কোথা থেকে এল ? আর কিভাবে জানলো যে ও কাউকে খুজছে ছবি তোলার জন্য ।

নিশাতের তখনই আবার মীরুনের কথাটা মনে পড়লো । আজকে পড়ানোর সময় মীরুন ওকে হঠাৎ বলল
-আপু আপনি একা একা ছাদে ওঠবেন না ।

নিশাত বলল
-কেন ? বাড়িওয়ালা কিছু বলেছে ?
-না সেটা না ।
-তাহলে ?

মীরুন যেন কিছু বলতে গিয়েও বলছে না । নিশাত আবার বলল
-কি হয়েছে বল !
আরও খানিকটা সময় ইতস্তত করে নিশাত বলল
-আসলে আপু আপনি শুনেন নি ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারে এমন একটা বাসা আছে যেখানে ভুত আছে !
নিশাত এমন গল্প অনেকই শুনেছে । তবে খুব একটা বিশ্বাস করে নি । করার অবশ্য কোন কারন নেই । নিশাত কোন কথা না বলে কেবল মাথা ঝাকালো । মীরুন বলল
-এটাই সেই বাসা !
-তাই নাকি ?
-হ্যা । মাঝে মাঝেই এই বাসার ছাদে কাউকে দেখা যায় । এই জন্য আমরা কেউ একা একা ছাদে যাই না । আপনিও যাবেন না । যদিও এখনও পর্যন্ত কারো কোন ক্ষতি হয় নি । যখন যাবেন আমাকে ডেকে নিয়ে যাবেন ।

মীরুনের কথাটাই নিশাতের মাথার ভেতরে ঘুরতে লাগলো । আপু আপনি একা একা ছাদে যাবেন না । নিশাতের মনে হল ওর বুকের ভেতরে একটা ভয় দলা পাকিয়ে আটকে আছে । বাঁ দিকে দাড়ানো ছেলেটা কিভাবে জানবে ওর ছবি তোলার ইচ্ছের কথা ! যদি না....

নিশাত আর কিছু ভাবতে পারলো না । বুকের ভেতরের ভয়ভয়টা আস্তে আস্তে বাড়ছেই । মুখে সেই ভয়ের ছাপটা স্পষ্টই ফুটে ওঠেছে। এক পা দুপা করে পিছিয়েই দৌড় দিলো সিড়ি ঘরের দিকে । কিভাবে সিড়ির ধাপ নেমে এল ও বলতে পারবে না । সিড়ি দিয়ে নামার সময় ওর মনে হল কেউ কেউ খুব জোরে জোরে হাসছে আর বলছে, টুকটুকি আসো তোমার ছবি তুলে দেই । আসো .....
চার তলায় এসে একটু দম নিল । বারবার পেছনের সিড়ির দিকে তাকাতে লাগলো । এখনও যেন ছেলেটার হাসি সে শুনতে পাচ্ছে । ছেলেটা কিভাবে জানলো নাক টুকটুকি ! কোন ভাবেই জানার কথা না । তাহলে কি সত্যিই ছেলেটা অশরীরি কেউ ? নিশাত আর কিছু ভাবতে পারছে না । এখনই নিচে চলে যেতে হবে । আবারও পা বাড়ালো সিড়ির দিকে ।

তখনই একজন সুন্দর চেহারার মহিলাকে দেখতে পেল ওর থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে । মহিলার কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-এই মেয়ে কি হয়েছে ? এভাবে হাপাচ্ছো কেন ?
মহিলাকে দেখে নিশাতের যেন জানে পানি এল । তারপর বলল
-ভয় পেয়েছি আন্টি !
-একা একা ছাদে উঠেছিলে ?
-জি !
-তোমাকে কেউ বলে নি একা একা ছাদে না উঠছে ? দেখি এসো আমার ঘরে । একটু দম নাও ।

নিশাতের হাত ধরে এক প্রকার জোর করেই তার ঘরে নিয়ে গেল । সোফার উপর বসে নিশাত একটু সুস্থির হল । বার বার ঐ ছাদের কথাই মনে পড়তে লাগলো । ছেলেটা ওর মনের কথা কিভাবে জানলো ? আর ওর নামই বা কিভাবে জানলো ? তাহলে ও সত্যি সত্যিই অশরীরি কিছু দেখেছে ? মনে মনে ঠিক করেই নিল আর একা একা কেন যাবেই না কোন দিন ছাদে ।
মহিলা একটু পরেই ফেরৎ এলেন । হাতে একটা পানির গ্লাস ! ওর দিকে তাকিয়ে বললেন
-এই নাও । এই পানি টুকু খেয়ে নাও !

নিশাত এক ঢোকেই যেন সব টুকু পানি পানি খেয়ে নিল । তারপর মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনাকে ধন্যবাদ আন্টি ! আমি এখন আসি !

মহিলা একটু হাসলপ । তারপর বলল
-আরে তোমার পায়ের স্যান্ডেল কোথায় ?

নিশাত নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই ওর হুস হল । ভেজা ছাদে ও ওর স্লিপার খুলে হাটাহাটি করছিলো । তখনই ছেলেটাকে দেখে ভয় পায় । তখন আর স্লিপারটা পায়ে দেওয়ার কথা মনে ছিল না । এখনও সেটা সম্ভবত ছাদেই রয়ে গেছে ।
নিশাত বোকার মত কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-ওটা ছাদে ।
-এখন ? নিয়ে আসবে ?
-না না । আমি এখন আর ছাদে যেতে পারবো না । বাসার নিচে একটা বাটার শোরুম আছে । ওখান থেকে একটা কিনে নিবো !
মহিলা যেন খুব মজা পেল কথা শুনে । একটু হেসে বলল
-আরে বোকা মেয়ে বলে কি ! আমি ছাদ থেকে এক সময় নিয়ে এসে রাখবো নে । তুমি আমার কাছ থেকে নিয়ে যেও । এখন আর কিনতে হবে না । তুমি বরং আমার একটা স্যান্ডেল পায়ে দাও ।

তারপর নিজের পা টা নিশাতের পায়ের কাছে এনে মাপ দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল
-আমার আর তোমার পা তো একই রকম । নাকি ? তুমি একটু বস । আমি নিয়ে আসছি ।

নিশাত বেশ খানিকটা খুশি হল । ঢাকা শহরে মানুষ জন নিজের টা ছাড়া অন্যেরটা একদমই ভাবে না । সেখানে এই অচেনা মহিলা ওকে কত যত্ন করে নিজের ঘরে নিয়ে এল । এই কাজটা কে করে !

নিশাত নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে গেল । ঘড়িতে বলতে ছয়টা বেজে গেছে । কিন্তু এতো সময় যাাওয়ার কথা না । আজকে মীরুনকে পড়ানো শেষ হয়েছে চারটার দিকে । তার পরপরই ও ছাদে উঠেছে । বড় জোর পনের মিনিট ছিল । সব মিলিয়ে চারটা পনের বাজার কথা । আর এখানে এসেছে ৫ মিনিটও হয় নি । তবুও খুব বেশি হলে সাড়ে চারটা বাজার কথা । কিন্তু এখন বাজে ছয়টা দশ । মানে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।
নিশাত জলদি করে হাতের মোবাইলের স্ক্রিন চালু করলো । সেখানেও ছয়টা দশই দেখাচ্ছে ।

কি হচ্ছে ওর সাথে ! বুকের ভেতড়ে আবারও কু ডেকে উঠলো । এদিকে পেছনের ঐ মহিলাও আসছে না । যখন আরও ১০ মিনিট অপেক্ষা করেও মহিলা এল তখন নিশাতের আসলেই ভয় করতে শুরু করলো । একবার মনে হল ও এখনই ঘর থেকে বের হয়ে যায় । কিন্তু এভাবে চলে যাওয়া কেমন লাগে । কয়েকবার আন্টি বলে ডাক দিয়েও কোন কাজ হল না । তারপর নিশাত আর থাকতে পেরে নিজেই একটু ভেতরে গিয়ে দেখার কথা ভাবলো । তার আবার কোন বিপদ হল না ।

ড্রয়িং রুমের পাশেই একটা লম্বা প্যাসেজ । একেবারে মীরুনদের বাসার মতই ফ্ল্যাটের কাঠামো । নিশাত জানে এই প্যাজের শেষ মাথায় দুইটা শোবার ঘর । আর শুরুতেই ডান দিকে বাথরুম আর বা দিকে রান্না ঘর ।

নিশাত বাথরুমের সামনে এসে হাজির হল । বাথরুমটা হাট কোরে খোলা । বাইরে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার দরুন ঘরের ভেতরে হঠাৎ করেই অন্ধকার হয়ে আসছে । নিশাত সামনে এগোতে যাবো তখনই ওর চোখ গেল বাথরুমের দিকে । মীরুনদের বাসার মতই এই ফ্ল্যাটের কমন বাথরুমটা বেশ বড় । ওখানে একটা বাধটাব দেখা যাচ্ছে । নিশাতের চোখ আটকে গেছে । বাথটাবে কিছু একটা ভাসছে ।

নিশাতের বুকের ভেতরটা লাফাতে লাগলো হঠাৎ করেই । ওর মনে হল ও এমন কিছু দেখে ফেলেছে যেটা ওর মোটেই দেখা উচিৎ হচ্ছে না । বারবার ওর মন বলছে এখনই এখান থেকে বের হয়ে যেতে । এখান থেকে চলে যেতে । কিন্তু বাথটাবের ভেতরে আসলে কি দেখা যাচ্ছে সেটা না দেখে থাকতে পারছে না । হাতের মোবাইলের ফ্ল্যাশটা জ্বালিয়ে নিশাত বাথরুমের ভেতরে ঢুকে পড়লো । তারপর পর বাথটাবের উপর আলোটা ফেলতেই ওর বুকটা লাফ দিয়ে উঠলো ।

বাথটাব ভর্তি পানি !
এখানে একট বাচ্চা ভাসছে । মৃত । চোখ দুটো ফ্ল্যাসের আলোতে জ্বলজ্বল করছে । ঐ মহিলার কোলে এই বাচ্চাটা ছিল । নিশাট কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । বাচ্চাটাকে সে কিছু সময় আগেও দেখেছে । কিন্তু এই মৃত্য বাচ্চাটার পেট ফুলে উঠেছে । অনেক সময় আগেই যে মারা গেছে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ।

নিশাত আর কিছু ভাবতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে ও ভুল কোথাও চলে এসেছে । এখনই ওর এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ । বাথরুম থেকে বের হয়ে সোজা রান্না ঘরের দিকে চোখে যেতেই নিশাত আরও বড় একটা ধাক্কা খেল । রান্না ঘরের সিলিং থেকে একটা মহিলার ঝুলন্ত দেহ দেখা যাচ্ছে । আবছায়া অন্ধকারেও ভেতরে নিশাত মহিলার বেরিয়ে আসার জিহ্বটা পরিস্কার দেখতে পেল । ওর দিকেই যেন তাকিয়ে আছে । যেন একটু একটু হাসছে । নিশাত কিছুটা সময় কেবল চোখ বড় বড় করে সেদিকেই তাকিয়েই রইলো । চোখে তী্ব্র আর অবিশ্বাস !
কি হচ্ছে ওর সাথে ?
এই আন্টি কিভাবে এখানে ঝুলে আছে ? আর ওনার বাচ্চাটাই বা বাথটাবে ওভাবে পড়ে আছে কেন ?

নিশাতের পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হল না । একটা চিৎকার বেরিয়ে এল গলা থেকে আপনা আপনি । তারপর করিডরের মেঝেতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল ।



নিশাত যখন আবার চোখ মেলে তাকালো তখন চোখের সামনে পরিচিত আবহাওয়া দেখতে পেল । মীরুন ওর দিকে ঝুকে তাকিয়ে আছে । ওকে চোখ মেলতে দেখেই মীরুন চিৎকার করে বলল
-আম্মু আপুর জ্ঞান ফিরেছে । নিশাত তাকিয়ে দেখলো মীরুনের আম্মু ওর দিকে এগিয়ে এল । তারপর বলল
-নিশাত ঠিক আছো তুমি ? এখন কেমন লাগছে ?
-এখন ভাল । আমি কোথায় ছিলাম ?
মীরুনের আম্মু বলল
-সেটাই তো প্রশ্ন ? তুমি চার তলাতে গিয়েছিলে । ওখানে কেউ থাকে না । আমি মীরুনকে এই জন্যই বলেছিলাম একা একা ছাদে না যেতে ।
আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তবে বলল না । মীরুন বলল
-আপু আপনি কি দেখে ভয় পেয়েছেন বলেন তো ?
নিশাত আবারও মনে করার চেষ্টা করলো । সেই মৃত বাচ্চাটার ছবি ভেসে উঠলো । তারপর আবার সেই মহিলার জিহ্বা বের করা ছবি । কি ভয়ংকর সেই ছবি !
মীরুন বলল
-আপনাকে বলেছিলাম, চার তলাতে সেই ফ্ল্যাট । ওখানে এক ভাড়াটিয়ার বউ আর বাচ্চা মারা পড়েছিলো । বাচ্চাটা বাধটাবে ডুবে মারা গিয়েছিল । আর বাচ্চার মা সম্ভবত এই কারনে আত্মহত্যা করেছিলো ।

নিশাত একটু উঠে বসতে চাইলো । মীরুনের আম্মু বলল
-এখন ওঠার দরকার নেই । শুয়ে থাকো !
-না আন্টি । হোস্টেলে ফিরতে হবে । নয়টার পরে গেলে গেট বন্ধ হয়ে যাবে !
-ও !

মীরুনের আম্মু কি যেন ভাবলো । তারপর মীরুনকে বলল
-এই যা তো অভিকে ডেকে নিয়াই । অভি ওকে পৌছে দিবে ।
নিশাট তাড়াতাড়ি বলল
-না না আন্টি কাউকে ডাকতে হবে না । আমি একা যেতে পারবো ।
-এই মেয়ে বেশি কথা বলবা । যা বলছি শোন । এখন আট টা বেজে গেছে । অভির বাইক আছে । ও তোমাকে পৌছে দিবে । আর ঐ তোমাকে চার তলা থেকে নিয়ে এসছে ।

মীরুন একটু পরে যে ছেলেটাকে সাথে নিয়ে ঘরের ভেতরের ঢুকলো তাকে দেখে নিশাত আবার চমকে উঠলো । ছাদের সেই ছেলেটা । তার মানে ছেলেটাকে দেখে সে এমনিতেই ভয় পেয়েছিলো । ছেলেটা তাহলে ভুত নয় । ভাবনা টা আসতেই নিজেকে গাধা মনে হল ওর । একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে আজকে এমন কিছুই হত না ।

বাইকটা যখন নিশাতেরট হোস্টেলের সামনে এসে থামলো তখন নয়টা বাজতে অল্প কিছু বাকি আছে । বাইকের এই পথ টুকুতে নিশাত টুকটাক কথা বলেছে অভির সাথে । ছেলেটাকে প্রথম দেখে ভয় পেয়েছে, এটা ভেবে নিজের কাছেই হাসি আসছে ।

বাইক থেকে নামতে নামতে নিশাত বলল
-আচ্ছা আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে ? আর কিভাবে বুঝলেন যে আমি ছবি তোলার কথা ভাবছি ।

অভি হাসলো । তারপর বলল
-আসলে আমি আপনার ফেসবুকে ফলোয়ার ! আপনি ঐদিন একটা সেলফি তুলে ক্যাপসন দিয়েছিলেন যে ছবি তুলে দেওয়ার কেউ নেই । তাই মনে হল যে আজকে আমি ছবি তুলে দেই ।

নিশাতও হাসলো । হাসলে ওর গালে টোল পড়ে এটা নিশাত ভাল করেই জানে । সামনে দাড়ানো মানুষটা সেই হাসির দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ।

নিশাত আসি বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল । গেটের কাছে গিয়ে ফিরে তাকালো আবার । অভি তখনও তাকিয়ে আছে । নিশাত কে উদ্দেশ্য করে বলল
-আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা গ্রহন করে নিয়েন ! অন্তত এই টুকু আমার চাইতেই পারি । নাকি ?

নিশাত কেবল হাসলো । তারপর আবারও হাতটা নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকে পড়লো ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×