somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আজ সাবরিনার বাসর রাত

০৩ রা আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসর রাত নিয়ে একটা মেয়ের কত রকম কল্পনা থাকে । যখন থেকে তার ভেতরে নারীত্বের ব্যাপারটা এসে হাজির হয় তখন থেকেই অন্য অনেক স্বপ্নের মত এই বাসররাত নিয়ে একটা স্বপ্ন এসে হাজির হয় তার মনে । এমন একটা স্বপ্ন যেটা মনে আসতেই তার মুখে আপনা আপনিই একটা হাসি চলে আসে । নিজের কাছেই নিজে লজ্জা পায় । এই স্বপ্নটার কোন শ্রেণী বিভাগ হয় না । সমাজের ধনী গরিব সুন্দর অসুন্দর সব মেয়েই এই স্বপ্নটা দেখতে ভালবাসে । নিজের মত করে সাজিয়ে নেয় ।

সাবরিনার কত রকম কল্পনা ছিল কিন্তু যখন সত্যি সত্যিই সে বাসর ঘরে বসে আছে তখন সে সবের কিছুই হচ্ছে না । সে চুপ করে বসে আছে নিজের বাসর ঘরে । যদিও এটাকে কোন ভাবেই বাসর ঘর বলা যাবে না । ঘরটা কোন ফুল দিয়ে সাজানো হয় নি । এমন কি খাটে একটা নতুন চাদর পর্যন্ত নেই । যখন এ বাড়িতে উঠে আসে তখন সাবরিনার মনে হয়েছিলো যেন ও কোন মৃত্যুপুরিতে এসে হাজির হয়েছে। পুরো বাড়িতে সম্ভবত ওর নতুন স্বামী সাফায়েত আর ও ছাড়া আর কেউ নেই । অবশ্য বিয়ের আগে থেকেই ও জানতো যে সাফায়েত এতিম, ঠিক ওর মতই । কেউ ওর বাসায় থাকবে না এটাই স্বাভাবিক ।

সাবরিনা চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকে । ওকে বাসায় রেখেই সাফায়েত একটু আগে বাইরে গেছে । ওকে বলে গেছে যে ও বাইরে থেকে তালা দিয়ে যাচ্ছে । একটু পরেই ফিরে আসবে । ঘরে খাওয়ার মত কোন জিনিস পত্র নেই । সকালে উঠে কিছু রান্না করা লাগবে সেই জন্যই বাজার করতে হবে । সাবরিনা একবার বলার চেষ্টা করেছিলো যে রাতে কিছু আনা লাগবে না । সকালে আনলেই চলবে কিন্তু সেটা বলতে পারলো না । কেন বলতে পারলো না কে জানে । যাওয়ার আগে সাফায়েত আরও বলে গেল যে ও চাইলে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখতে পারে । নয়তো ওর জন্য অপেক্ষা করতে পারে । ওর আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না ।

মফস্বলের ছোট্ট একটা এতিম খানাতে সাবরিনার বেড়ে ওঠা । এসএসসি পাশের পরপরই তাকে ঐ এতিমখানা ছেড়ে দিতে হয় । সেখান থেকে শহরের একটা খাবার রেস্টুরেন্টে কাজ নেয় ও । ওদের ঐ রেস্টুরেন্টের সব ওয়েটারই ছিল মেয়ে । এই জন্য রেস্টুরেন্ট টা বেশ জনপ্রিয় ছিল পুরো শহর জুড়ে । সাবরিনা দেখতে শুনতেও মোটামুটি ভালই ছিল । তাই একটু পড়াশুনা কম জানা থাকলেও রেস্টুরেন্টের মালিক তাকে কাজে নিয়ে নেয় । রেস্টুরেন্টের পেছনে একটা রুমে সব মেয়েদের সাথে থাকার একটা ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছিলো । মালিকই লোকটা ভাল ছিল ।

তারপরই একদিন সাফায়েত নামের মানুষটার সাথে দেখা হয় । ওদের রেস্টুরেন্টে নিয়মিত খেতে আসতো । সম্ভবত রেস্টুরেন্টের আশে পাশেই তার অফিস ছিল । এই জন্য তাদের এখানে খাওয়া দাওয়া করতে আসতো । তারপর একদিন হঠাৎ করেই তার মালিক তাকে ডেকে সাফায়েত নামের ছেলেটার কথা বলে । মালিক তাকে জানায় যে সাফায়েত তাকে বিয়ে করতে চায় । বিশেষ করে তার এই জগতে কেউ নেই, এই কথাটা জেনেই বিয়ের করতে আগ্রহী হয়েছে । সাফায়েত নামের মানুষটা নিজেও নাকি এতিম ।

প্রথম প্রথম সাবরিনা একটু দ্বিধার ভেতরে থাকলেও কয়েকদিন পরেই সে রাজি হয়ে যায় । সাফায়েতও বিয়ের জন্য একটু তাড়া দিচ্ছিলো কারন তার অফিস থেকে তাকে বদলি করে দিয়েছে । কদিন বাদের সে এই শহর ছেড়ে চলে যাবে । তাই সাবরিনা আর অমত করে নি । বিয়ের দুদিন আগেই সাফায়েত ওকে জানালো যে ওর নতুন বাসা সে নিয়ে নিয়েছে । বিয়ের পরই তাকে সেখানে নিয়ে যাবে । সেখান থেকেই তাদের নতুন জীবন শুরু হবে ।

কাজী অফিসে বিয়ে তারপর রেস্টুরেন্টে কাজ টা মেয়েদের সাথে একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে সাবরিনা একটা ভাড়া করা মাইক্রোতে উঠে বসলো । ওদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় সাবরিনা র কেমন কান্না পাচ্ছিলো । বিয়ের সময় মেয়েরা তার মা বাব ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করে কিন্তু সাবরিনা র তো এমন কেউ নেই । এরাই হচ্ছে ওর সব থেকে কাছের মানুষ ।


যখন ওরা এই বাসাতে এসে হাজির হয় তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে । মাইক্রোতে করে আসার সময় সাবরিনা চারিপাশে তাকিয়ে দেখছিলো । একটা সময় লক্ষ্য করলো লোকালয় ছেলে জায়গাটা বেশ ভেতরে যাচ্ছে । শাফায়েত যেন ওর মনের কথা ধরতে পেরেই বলল
-আমার এনজিও টা অনেকটা শহর ছেড়ে ভেতরে । আমি যেখানে থাকবো সেখান থেকে অফিসটা একটু কাছে হবে তাই কাছাকাছি বাসা নিয়েছি ।
সাবরিনা একটু হাসলো । সাফায়েত আবার বলল
-আসলে যেন অফিস থেকে এসে দ্রুত দুপুরের খাবারটা খেয়ে যেতে পারি এই জন্য ! যদি তোমার সেখানে মন না টেকে তাহলে সামনের মাসেই আবার নতুন বাসা খুজবো ।
সাবরিনা বলল
-আরে না না । আমি কি তাই বলেছি ? এখন আপনার যা সুবিধা হবে সেটাই করবেন । যখন আমাদের বাবু হবে তখন না হয় শহরের কাছে বাসা নেওয়া যাবে !

কথা বলতেই সাবরিনা দেখলো সাফায়েত কেমন যেন হাসলো । হাসির কারনটা একটু পরেই বুঝতে পারলো ও । সবে মাত্র ওদের বিয়েটা হয়েছে । এখনও ওদের বাসররাত পর্যন্ত হয় নি আর এখনই সাবরিনা ওদের বাচ্চার কথা তুলে ফেলেছে । কথাটা মনে হতেই সাবরিনা বেশ লজ্জা পেয়ে গেল । সাফায়েতের থেকে মুখ সরিয়ে আবারও বাইরের দিকে তাকালো ।



সাবরিনা নিজের বিছানার উপর থেকে নেমে এল । বিছানার চাদরটা একটু টেনেটুনে ঠিক করে নিল । তারপর পুরো ঘরময় হাটতে লাগলো । বাইরে সন্ধ্যা নেমে এসেছে । একটু পরেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসবে । সাবরিনার মনে হল এখনই একটা আলোর ব্যবস্থা করা ভাল । নয়তো এই একা বাড়িতে ওকে অন্ধকারের ভেতরে বসে থাকতে হবে । সাফায়েত বলে গেছে এই বাসাতে এখনও বিদ্যুৎের কোন ব্যবস্থা করা নি । তবে দুই একদিনের মাঝেই ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে ফেলবে । তা ছাড়া একটা ব্যাটারীও কথা চলছে । কাল পরশুর মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে । এই দুটো দিন ওকে একটা কষ্ট করতে হবে ।

পুরো ঘরে একবার চোখ বুলিয়েও সাবরিনা মোমবাতি কিংবা হ্যারিক্যান জাতীয় কিছু পেল না । বাইরের ঘরে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে । সাবরিনা বইরের ঘরে বেরিয়ে এল । এই ঘরটার একই সাথে ড্রয়িং আর খাবার ঘর হিসাবে ব্যব হার হবে । এটার ঠিক ডান দিকে আছে রান্না ঘর । আর ওদের ঘরের দরজার পাশেই আছে বাধরুম । তার পাশেই আরেকটা রুম আছে । ওটা এখনও ঠিক পরিস্কার করা হয় নি । আপাতত দুইটা ঘর ওদের ব্যবহারের জন্য ঠিক করা হয়েছে । সাবরিনা ঠিক করলো আগামীকালই সব ঘরদোর পরিস্কার পরিছন্ন করে ফেলবে । নিজের মত করে গুছিয়ে নেবে সব কিছু । এখন থেকে এটাই হচ্ছে তার নিজের সংসার ।

রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেল । সেখানে কিছু একটা পাওয়া যাবে । ওর হাতে কম দামি মোবাইল ফোনটা ধরা । সেটার ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে সে চারিদিক দেখতে লাগলো । চারিপাশটা এখনই কেমন অন্ধকার হয়ে এসেছে । কিন্তু রান্না ঘরেও কোন মোমবাতি কিংবা কুপি জাতীয় কিছু পেল না । ঠিক সেই সময়ে খুট করে আওয়াজ শুনতে পেল ও ! সারিনার মনে হল হয়তো সাফায়েত ফিরে এসেছে । রান্না ঘর থেকে চট জলদি বের হয়ে এল । কিন্তু দরজা খুলে কেউ বের হয়ে এল না । তার পরেই সে আবার আওয়াজটা শুনতে পেল ।

আওয়াজটা সদর দরজা থেকে আসছে না । আওয়াজটা আসছে বাথরুমের পাশের রুম থেকে । সাবরিনা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ঘরটার কাছে । সাফায়েত বলেছিলো এই ঘরটা অনেক দিন ধরেই খোলা হয় না । সাবরিনার মনে হল হয়তো ঐ বন্ধ ঘরের ভেতরে ইদুর ঘোরাফেরা করছে । তাই আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে কিন্তু তখনই আবার আওয়াজটা শুনতে পেল ।
সাবরিনার আর যাই মনে হোক না এইটা অন্তত পরিস্কার বুঝতে পারলো যে এই আওয়াজটা কোন ইদুর বেড়ালের করা নয় । আওয়াজটা শুনে মনে হচ্ছে কেউ যেন কাঁচে ধাক্কা দিচ্ছে । এবং সেটা আসছে ঐ ঘর থেকে । আস্ছা ঐ ঘরের জানালার কাঁচ ধরে কেউ ধা্ক্কা দিচ্ছে না তো ?
হয়তো ঐদিকে কেউ এসেছে । কাছেই কোন গ্রাম আছে সাফায়েত বলেছিলো । সাবরিনা আর কিছু না চিন্তা করে ঐ দরজার সামনে চলে গল । দরজাতে কোন তালা মারা নেই । কেবল হুক দিয়ে আটকানো রয়েছে । সেটা খুলতে সাবরিনার খুব একটা কষ্ট হল না ।

দরজা খুলতেই মোবাইলের আলোটা সামনের দিকে এঘিয়ে ধরলো । এবং সাথে সাথেই বেশ অবাক হয়ে গেল । সাবরিনা ঘরটাকে বেশ বড় মনে করেছিলো । ওদের শোবার ঘরটা আর এই ঘরটা পাশাপাশি । মাঝে একটা বাথরুম আছে । সেই হিসাবে ওর শোবার ঘরটা যত ভেতরে যত খানি জায়গা থাকা দরকার । প্রস্থে ঘর দুটোর আয়তন প্রায় একই রকম কিন্তু লম্বাতে এতো কম মনে হচ্ছে কেন ? ঘরটা যেন শুরু হতেই শেষ হয়ে গেছে । মোবাইলের ফ্ল্যাশ আলোতেই সামনের দিকে তাকালো । ঘরটাকে বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্নই মনে হল ওর কাছে । দেওয়ালে ঠিক মাঝে একটা বড় আয়না সেট করা আছে । তা ছাড়া এই ঘরে আর কিছু নেই । এমন কি একটা জানালাও নেই !


জানালা নেই কথাটা মনে হতেই সাবরিনা খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়লো । যদি জানলা না থাকবে তাহলে কাঁচে টোকার দেওয়ার আওয়াজ টা কোথা থেকে আসবে ? তাহলে কি অন্য কোথা থেকে আওয়াজটা আসছে ? ওর শোবার ঘর থেকে আসছে আওয়াজটা ?
ওর প্রশ্নের জবাব দিতেই যেন আবারও আওয়াজটা শুনতে পেল ও । এবার বেশ জোড়ে । আওয়াজটা যে কাঁচে টোকা দেওয়ার সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । এবং আওয়াজটা এতোই কাছে মনে হচ্ছে যে সাবরিনার মনের ভেতরে এবার একটু ভয় জন্মাতে শুরু করলো । সে তাকিয়ে রইলো দেওয়ালের মাঝে বসানো ঐ কাঁচের আয়নার দিকে । সাবরিনার কোন সন্দেহ রইলো না যে আওয়াজটা আসছে আয়নার ওপাশ থেকে । চিন্তাটা মনের ভেতরে আসতেই শিরদাড় দিয়ে একটা ঠান্ডা বাতাশ বয়ে গেল ।

সাবরিনা এক ভাবে তাকিয়ে রইলো আয়নাটার দিকে । হাতে ধরা মোবাইলের ফ্ল্যাশ আলোতে নিজের চেহারাটা আয়নাতে খুব ভাল করেই দেখা যাচ্ছে । এখন ওর কি করা উচিৎ ?
এই ঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে চলে যাবে ? নাকি দেখার চেষ্টা করবে আয়নার ওপাশ থেকে আওয়াজটা কিভাবে আসছে । নাকি সব টুকুই ওর মনের ভুল ।
নাহ মনের ভুল হতে পারে না । এখনও আওয়াজটা আসছে পরিস্কার ভাবেই । সাবরিনার মনে হল কেউ যেন আয়নাতে মাথা ঠুকছে ।

আচ্ছা আয়নার ওপাশে কেউ নেই তো ? কাউকে আটকে রাখা হয় নি তো । কোন একটা মুভিতে সাবরিনা দেখে ছিল । বাড়ির ভেতরে একটা গুপ্ত কক্ষ থাকে সেখানে মেয়েটা আটকে যায় । তারপর আস্তে আস্তে সেখানেই মারা যায় ।


সাবরিনা আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় । আয়নার উপর হাত রাখলো । হাত রাখার সাথে সাথে আওয়াজটা কমে গেল । সাবরিনা অনেকটা সময় অপেক্ষা করলো । কিন্তু কোন আওয়াজ এল না আর । যখন এক পা পিছিয়ে এসেছে তখনই আরেকটা নতুন আওয়াজ শুনতে পেল । কেউ যেন হাহাকার করছে । ছাড়া পাওয়ার জন্য চিৎকার করছে । এবং এই আওয়াজ গুলো যে আয়নার ভেতর থেকে আসছে সেই বিষয়ে সাবরিনার কোন সন্দেহ নেই । মনে মনে ঠিক করেই ফেলল । আয়নার ওপাশে কি আসে সেটা ওকে দেখতেই হবে । সাফায়েত আসা পর্যন্ত কি অপেক্ষা করবে ?
না । এতো সময় ও অপেক্ষা করতে পারবে না । আর সাফায়েত কখন আসবে কোন ঠিক নেই । এই সময়ে সে কি করবে ? তার থেকে এই কাজটা করলে হয়তো খানিকটা সময় কাটবে । সাবরিনা আয়নাটাকে উপর থেকে নিচে পরীক্ষা করে দেখলো । দেওয়ালের সাথে চার কোনে চারটা স্ক্রু দিয়ে আটকাবো ।

একবার মনে হল আয়নাকে ভেঙ্গে ফেলে সে কিন্তু সেটা করলো না । রান্না ঘরে গিয়ে হাজির হল । যা খুজছিলো সেটা পেয়ে গেল মুহুর্তের ভেতরে । একটা খুন্তি । এটা দিয়ে বড় বড় স্ক্রু খুলতে মোটেই কষ্ট হবে না ।

সাবরিনা মনে মনে উত্তেজনা বোধ করতে লাগলো । আয়নার ওপাশে সে কি দেখতে পাবে এখনও জানে না । এই বাড়িটা অনেক পূরানো । কি আছে কে জানে !

আয়না খুলতে ওর খুব বেশি সমস্যা হল না । সাবরিনা মনে হল এই আয়নাটা মাঝে মাঝেই দেওয়াল থেকে খুলে আনা হয় । নয়তো এতো সহজে খুলে আসার কথা না ।

আয়নাটা সাবধানে খুলে আনতেই একটা তীব্র দুর্গন্ধ এসে নাকে লাগলো । গন্ধটা এতোটাই তীব্র যে সাবরিনার বমি চেপে গেল । কয়েকবার চেষ্টা করেও সেটা আটকাতে পারলো না ।

আয়নাটা এক পাশে সরিয়ে রেখে কিছু ধরে ও বমি করলো । তারপরও আরও কিছুটা সময় লাগলো নিজেকে সুস্থির করতে । সত্যি সত্যি আয়নার পেছনে একটা ঘর দেখা যাচ্ছে । সাবরিনা ভেতরে ঢুকতে চাইলো কিন্তু একটা তীব্র কৌতুহল ওকে ঘরটার ভেতরে টানতে লাগলো । যখন ভেতরে প্রবেশ করলো তখন মনে হল যে এই ঘরে হয়তো না আসাটাই ওর ভাল ছিল । এসব না দেখাই ভাল ছিল ।

মোবাইলের ফ্ল্যাশের আলোতে সাবরিনা দেখতে পেল পুরো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কয়েকটা মৃত দেহ । লাশ গুলোর বিভিন্ন স্থানে কেউ যেন খুবলে খুবলে খেয়েছে । কি ভয়ংকর দেখাচ্ছে সেগুলো । সব গুলোই যে মেয়ের সেটা চিনতে ওর কষ্ট হল না । পঁচা গলা লাশ গুলোর দিকে সাবরিনা তাকিয়ে রইলো অপলক চোখে । বারবার মনে হচ্ছে খুব অশুভ কিছুর ভেতরে ও চলে এসেছে । কেবল এই ঘরে নয় পুরো বাড়িটাই একটা মৃত্যু পরি ।

ঠিক তখনই পেছনে আওয়াজ শুনতে পেল । চরকির মত পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে সাফায়েত দাড়িয়ে আছে । সাফায়েত কে দেখে ওর মনে সাহস ফিরে আসার কথা কিন্তু সাফায়েত কে দেখে ওর মনের ভয়টা যেন আরও বেড়ে গেল । সাফায়েতের চোখে যেন আগুন জ্বলছে । ওর দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে । সাবরিনা হঠাৎ বলল
-এই বাসাটা তোমার নিজের, তুমি এটা ভাড়া নাও নি । তাই না ?
সাফায়েত অস্বীকার করার কোন চেষ্টাই করলো না । সাফায়েত বুঝতে পেরেছে এই সাবরিনার কাছে এখন লুকিয়ে রাখার কোন দরকার নেই । মেয়েটা এখনওর হাতে বন্দি । চাইলেও মেয়েটা এখান থেকে পালাতে পারবে না । সাফায়েত বলল
-তুমি ঠিকই ধরেছো । এই বাড়ি আমারই ।
-এই মেয়ে গুলোকেও তুমিই মেরেছো ?
সাফায়েত এই প্রশ্নের জবাব দিল না । কেবল হাসলো । তারপর বলল
-তোমাকে আমার আরও কয়েকদিন বাঁচিয়ে রাখার ইচ্ছে ছিল । অন্তত আজকের বাসরটা তো হতেই পারতো আমাদের । কিন্তু বেশি কৌতুহল দেখিয়ে ফেলেছো তুমি !

এই বলে সাফায়েত তার মাথার চুলের একটা অংশ ধরে টান দিতেই সেটা খুলে চলে এল । সাবরিনা দেখলো সাফায়েতের মাথাটা চকচকে টাক । তবে এই টাক মাথাটা যেন আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে । সাবরিনা ভয় পেতে ভুলে গেছে । কেবল অবাক হতে থাকিয়ে আছে । সাফায়েত নামের মানুষটার কান দুটো আরও একটু লম্বা হয়ে গেছে । খানিকটা খাড়া খরগোসের মত ।

সাবরিনার হাতের মোবাইলের ফ্ল্যাশটা এখনও ধরা রয়েছে । একটু একটু কাঁপছে ওর হাতটা । এতোক্ষনে ওর বিশ্ময়টা বেড়ে ভয়ে রূপান্তর হচ্ছে । সামনে দাড়ানো সাফায়েত নামের প্রাণীটা আবার বলল
-অন্য ভাবে নিও না প্লিজ কিন্তু আমার আর কিছু করার নেই । আমাকে বেঁচে থাকার জন্য তোমার মত কাউকে দরকার হয় । বুঝতেই পারছো !

সাবরিনা দেখতে পেল এবার প্রাণীটা ওর দিকে এগিয়ে আসছে । আস্তে আস্তে যেন গতি বাড়াচ্ছে । এখনই ওর উপর ঝাপিয়ে পড়বে । যখনই একদম কাছে চলে এল সে সাবরিনা মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট টা চট করে বন্ধ করে দিল । সাথে সাথে ঘরটা একেবারে অন্ধকার হয়ে গেল । সাবরিনা আগেই দেখে রেখেছিলো কোন দিন দিকে পালাতে হবে । এক ডান দিকে সরে এসে সে সাফায়েতকে কাটিয়ে সোজা দৌড় দিল গুপ্ত ঘরের দরজার দিকে । সেটা দিয়ে বের হতে পর সময় লাগলো না । তারপরেই সামনের ঘরের দরজা । কিন্তু সেটা পার হওয়ার আগেও পেছন থেকে ওর উপর কেউ ঝাপিয়ে পড়লো যেন । কে ঝাপিয়ে পড়লো সেটা বুঝতে কষ্ট হল না ।

সাবরিনা উপুর হয়ে পড়ে গলে । তারপরই অনুভব করলো সাফায়েত ওর শরীরের পেছন থেকে ঝাপতে ধরেছে । আস্তে আস্তে ওর শরীরের উপরে উঠছে । সাবরিনার হাত দিয়ে কিছু একটা খুজতে শুরু করলো । কিছু যদি বাধে তাই হবে । যখন সাফায়েত ওর মুখটা সাবরিনার মুখের কাছে নিয়ে এসেছে তখনই সাবরিনার হাতে কিছু বাঁধলো । রান্নাঘর থেকে আনা সেই খুন্তিটা ।

সাফায়েতের গরম নাকের নিঃশ্বাস ওর কাধের কাছে পড়ছে । সে সাবরিনার নিচের পায়জা খোলার চেষ্টা করছে । তাই এদিকে সাবরিনার কি করছে সেদিকে তার খুব একটা লক্ষ্য নেই । তখনই সুযোগটা এল । সাবরিনা অনুমানের উপর ভিত্তি করেই খুন্তিটা সাফায়েতের মুখের বরাবর চালিয়ে দিলো উল্টো হাতে । হাতে একটু মোচড় লাগলো বটে কিন্তু সাথে সাথেই একটা তীব্র চিৎকার শুনতে পেল সে । তারপরেরই শরীর উপর থেকে ভারটা সরে গেল । সাবরিনা চট করে উঠে দাড়ালো । তারপর আর দেরি করলো না । দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে এল । ড্রয়িং রুমে । মনের ভেতরে একটু ভয় ছিল যে হয়তো সদর দরজাটা বন্ধ থাকবে । অন্ধকারের ভেতরে দরজা খুজে পেতে কষ্ট হল না । সেটা বন্ধই ছিল তবে তালা দেওয়া ছিল না । সেটা খুলে সাবরিনা বাইরে চলে এল । তারপর বুদ্ধি করে বাইরে থেকে হুকটা আটকে দিয়েই দৌড় শুরু করলো । কোন দিকে যাবে সাবরিনা জানে না । তবে মনে হল ওকে পালাতে হবে । যেদিকে দুচোখ যায় কেবল ওকে পালাতে হবে এই পিশাচ পুরি থেকে ।

দৌড়াতে দৌড়াতেই সাবরিনা শুনতে পেল পেছন থেকে কেউ যেন চিৎকার করছে । তবে আশার কথা হচ্ছে সেই চিৎকারটা আস্তে আস্তে কমে আসছে । ওর পিছু পিছু আসছে না ।


পরিশিষ্টঃ

-আরে আরে ব্রেক কর ব্রেক !

কথাটা কানে যেতে আরিফা সর্ব শক্তি দিয়ে গাড়ির ব্রেকে পা দিল । টায়ারের তীব্র আর্তনাদ শুনতে পেল ওরা দুজনেই । সেই সাথে টায়ার পোড়া গন্ধ এসে নাকে লাগলো । তবে গাড়িটা এক সময় থেকে গেল । আরিফা পাশে বসা ওর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল
-প্লিজ বল যে আমি কাউকে ধাক্কা দেই নি !
-আমি ধাক্কা খাওয়ার আওয়াজ পাই নি । চলে বাইরে বের হয়ে দেখি ।

ওরা দুজনেই বাইরে বের হয়ে এল । গাড়ির হেডলাইটের আলোতেই দেখতে পেল যে ওদের গাড়ির থেকে হাত দুয়েক দুরে একটা মেয়ে পড়ে আছে । মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে তবে মেয়েটার জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে । আরিফা দৌড়ে গেল কাছে । মেয়েটাকে পরীক্ষা করে জানে পানি এল । ওর গাড়ি মেয়েটাকে ঢাক্কা মারে নি । মেয়ে হাপাচ্ছে, তার মানে দৌড়ে এসেছে । কিন্তু এই নির্জন রাস্তায়, এমন রাতের বেলা এমন একটা মেয়ে এল কোথা থেকে ।

হঠাৎ মেয়েটা চোখ মেলে তাকালো । তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমাকে বাঁচান প্লিজ !

এই বলেই মেয়েটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল । আরিফা ওর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল
-মেয়েটা এই রাতের বেলা এখানে কি করছে বল তো ?
-ভূত প্রেত নয়তো !
-তুমি না !
আরিফা বিরক্ত হল । তারপর বলল
-একে একটু ধর তো । কাছেই কোন হাসপাতালে নিয়ে যাই । এসো এসো ।


মেয়েটাকে গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সময়ও তারা খেয়াল করে দেখলো না দুটো লাল চোখ তাদের দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১০:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×