somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শেষ চুম্বন

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বারবারই মনে হয় তানহা আমাকে পছন্দ করে । ওর তাকানোর ধরনটা দেখকেই আমার কেবল এই কথা মনে হয় । মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে । কিন্তু এখানে আমার কিছুই করার নেই ।

অফিসে একটা কানাঘুষা চলছে যে এবার রায়হান সাহেবের চোখ পরেছে তানহার উপরে । রায়হান সাহেব আমাদের অফিসের এসিসট্যান্ট ম্যানেজার ! ঘটনা সত্য হোক আর মিথ্যা হোক আমি যদি তানহার সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতে চাই তাহলে সেটা ভাল হবে না আমার জন্য ।

মাঝে মাঝে এই রায়হান বদমাইশের উপর এমন রাগ হয় ! বেটা বিবাহিত । বাড়িতে বউ আছে, একটা মেয়েও আছে তবুও অফিসের মেয়েদের সাথে তার কিছু না করলে চলেই না । অফিসের সব মেয়ে কলিগদের উপরেই বেটার নজর । অনেকে তার এই আচরনের কারনে বিরক্ত তবে কেউ কিছু বলতে পারে না ।

আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় তার বউকে সব কিছু বলে দেই । তারপর ভয় হয় । রায়হান সাহেবের আবার বসের সাথে বেশ ভাল সম্পর্ক । কোন দিক দিয়ে যেন আত্মীয় হয় । তাই কিছু বলারও উপায় নেই সহ্য করে নেওয়া ছাড়া ! কিন্তু তানহা যখন আমার দিকে তাকায় আমার মনের ভেতরে কেমন যেন লাগে । মনে হয় মেয়েটার সাথে প্রেম না হোক অন্তত চমৎকার কিছু সময় কাটানো যেতেই পারে !

কিন্তু কয়েকদিন পরেই একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেল । যেটার জন্য আমরা কেউ তৈরি ছিলাম না

এমনিতে আমি খবরের কাগজ খুব একটা পড়তাম না । সেদিন অফিস আসার সময় একটা খবর আমার চোখ আটকে গেল । গাজিপুরের এক রিসোর্টে একজন গার্মেন্ট কর্মকর্তার লাশ পাওয়া গেছে । লাশের অবস্থা এতোই বিভৎস যে ঠিক মত চেনাও যাচ্ছে না । লাশ দেখলে মনে হয় কেউ যেন লাশটাকে খুবলে খুবলে খেয়েছে । অনেক স্থানে খাওয়াও ছিল । তার পকেটে থাকা আইডি কার্ডের মাধ্যমে তাকে তার পরিচয় উদ্ধার করা গেছে । এবং সেই মানুষটা আর কেউ নয় আমাদের এজিএম রায়হান সাহেব । আমি নিজের চোখকে যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ।

অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে দেখি সেখানে সবাই আগে থেকেই এই ব্যাপারে জানে । সবার মুখ বেশ গম্ভীর । তবে আমার কেন যেন মনে সবাই বিশেষ করে মেয়েরা যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে । যদিও তারা খানিকটা মুখটা দুঃখী দুঃখী করে রাখার চেষ্টা করছে তবে একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই দেখা ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম যে বেশ কিছু মেয়ে কলিগ বরং খুশিই হয়েছে । আমাদের বস আজকে অফিস ছুটি দিয়ে দিলেন । তবে চলে যেতে দিলেন না । পুলিশ নাকি আসবে আমাদের সাথে কথা বলার জন্য । যেহেতু আমাদের কলিগ খুন হয়েছে তা সম্পর্কে কিছু তথ্য তার নাকি লাগবে ।

পুলিশ এসে আমাদেরকে কিছু প্রশ্ন করলেন । রায়হান সাহেব কেমন ছিলেন, কারো সাথে কোন ঝামেলা চলছিলো কি না কিংবা অন্য কিছু যেটা স্বাভাবিক কি না এই সব । একবার মনে হল আমি আসল কথাটা বলে দেই । বলে দেই যে রায়হান সাহেব বিরাট নারীবাজ ছিলেন । অফিসের সব নারীরা তার উপর বিরক্ত ছিল । কিন্তু বলতে পারলাম না । ভাল ভাল কথাই কেবল বললাম ।

পুলিশের কাছ থেকেই জানতে পারলাম যে রায়হান নাকি রিসোর্টের রিপিসশনে বলে রেখেছিলেন একজন নারী তার সাথে দেখা করতে আসবে । তার নাম বললেই যেন তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু এমন কোন মেয়ে নাকি আসে নি ঐদিন । তাদের সন্দেহ যে নারী ঠিকই এসেছিলো । হয়তো তখন রিসিপশনে কেউ ছিল না । রিসোর্টে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না বলে পুলিশ কিছুই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না । এই ব্যাপারে আমরা কেউ কিছু জানি কি না । আমি বললাম যে আমি কিচুই জানি না ।

পুরো পৃথিবীতে ভারসাম্য বজায় থাকে সব সময় । তাই যখনই একজনের উপর কোন বিপদ নেমে আসে সেটা তখন সেটা অন্য জনের উপর নেমে আসে সৌভাগ্য । এটা আমার ছোট বেলার এক বন্ধু বলতো । পৃথিবীতে যেমন শক্তি ভারসাম্য রয়েছে ঠিক তেমন ভাবে সুখ আর দুঃখের ভারসাম্য রয়েছে । একজন দুঃখপেলে অন্য জন সুখ পাবে । এই কথাটা সত্য করতেই যেন পরের দিন ঘটনাটা ঘটলো ।

পরদিন অফিস যেতেই বসের রুমে আমার ডাক পড়লো । রায়হান সাহেব যে মারা গেলেন তার জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল । এখন সেখানে আজ থেকে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । রায়হান সাহেবের দুঃখ আমার সুখে পরিনত হতে সময় লাগলো না । সেই সাথে আরেকটা ঘটনা ঘটলো । তানহা আমার সাথে প্রথম কথা বলল । আমাকে আসলে ঐ সবার আগে অভিনন্দন জানালো । তারপর নিজ থেকেই আমার কাছে ট্রিট চাইলো ।

আমার কাছে সত্যিই খানিকটা অবাক লাগছিলো । সব সৌভাগ্য এক সাথে আমার কাছে ধরা দিবে সেটা আমি ভাবতেও পারছিলাম না ।

পরের শুক্রবারই তানহাকে নিয়ে এলাম ২৭ নাম্বারের একটা রেস্টুরেন্টে । সন্ধ্যা থেকে প্রায় রাত ১০ টা পর্যন্ত এক সাথে থাকলাম ওর সাথে । এতো কথা বলতে পারে ও আমি জানতামই না । তানহা যেন মন খুলে আমার সাথে কথা বলছিলো । আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছিলাম যে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে । কোন সন্দেহ নেই ।

পরের সপ্তাহে অফিসের পর প্রতিদিননই আমরা দেখা করতে লাগলাম । তানহাকে যেন দিন দিন আমার আরও ভাল লাগতে শুরু করলো । আমি ওর কথাই ভাবতে থাকলাম সব সময় । তারপর ঘটলো আসল ঘটনা । অফিস শেষ করে উবার ডাকতে যাবো এমন সময় তানহা এসে বলল " চল আজকে রিক্সা নিই"

বললাম, " রিক্সা নিয়ে কোথায় যাবে?"

-কোন ঠিক নেই । যেদিকে দুচোখ যায় । আজকে মন ভাল লাগছে না ।

আজকে অফিসে বস তানহাকে একটু বকাবকি করেছে । সেটার জন্যই হয়তো ওর মন খারাপ । আমি বললাম, চল আজকে তাহলে তাই হোক ।

ঠিক করলাম । তারপর আমাদের রিক্সা ভ্রমন শুরু হল । আজকে তানহা খানিকটা মন খারাপ করেই ছিল । রাতের অন্ধকারে আমাদের রিক্সা এগিয়ে যেতে লাগলো এদিক ওদিক । তখনই আমি একটা কাজ করে ফেললাম । রিক্সা চলতে চলতে পুরান ঢাকার একটা গলীর ভেতরে ঢুকে পরলো আর তখনই বিদ্যুৎ চলে গেল । চারিদিকে একেবারে অন্ধকার নেমে এল মুহুর্তের মাঝেই। আমার মাঝে কি হল আমি নিজেও বলতে পারবো না আমি হঠাৎ তানহার গালে চুমু খেয়ে ফেললাম । কিছু সময় পরে রিক্সা চলে এল আবার আলোময় জায়গাতে । আমি ততক্ষণে তানহার গাল থেকে মুখে সরিয়ে ফেলেছি । মনের ভেতরে একটু সুক্ষভয় ছিল যে তানহা হয়তো রেগে উঠবে কিন্তু রেগে উঠলো না । আমার পাশে চুপ করে বসেই রইলো । এক সময় দেখলাম ও আমার হাত ধরলো । ওর হাত টা একটু যেন গরম গরম মনে হল ।

আমি বললাম, তোমার কি জ্বর ?

তানহা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আমার গাল ঠিক গরম না, হাতও না । সব থেকে উত্তপ্ত স্থান কোনটা জানো ?

আমি খানিকটা ঢোক গিলে বললাম, কোন টা ?

তানহা হাসলো কেবল । আমার বুঝতে কষ্ট হল না আসলে ও কোন অঙ্গের কথা বলছে । কিন্তু আমি আর সুযোগই পেলাম না । রিক্সা কোন অন্ধকার স্থানে এলোই না ।

আমাকে আমার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে ও রিক্সা নিয়ে চলে গেল ।

এরপর থেকেই আমাদের প্রেম শুরু হল পুরো দমে । দিনে দিনে ওর প্রতি আমার আকর্ষন বাড়তে লাগলো । বুঝতে পারছিলাম ওর বেলাতে ঠিক একই ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল । বিশেষ করে যখন ওকে চুমু খেতাম ওর পুরো শরীর যেন কেঁপে উঠতো । একদিন আমাকে ওকে চুমু খাওয়ার সময় আমার ঠোঁটে এতো জোড়ে কামড় দিয়ে বলসো যে রক্ত বের হয়ে গেল । রক্ত দেখে বারবার আমার কাছে ক্ষমা চাইতে শুরু করলো ।

আমি বললাম, আরে ঠিক আছে । কোন সমস্যা নেই ।

-না না । আসলে আমার মাঝে মাঝে কি যে হয়ে যায় ! তোমাকে চুমু খেতে গেলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি । সরি আর হবে না ।

-আরে বাবা কোন সমস্যা নেই ।

তবে এর পর থেকে তানহা যেন একটু বদলে গেল । আমি ওকে চুমু খেতে চাইলেও ও খানিকটা এড়িয়ে যেত । এমনিতে আমার প্রতি এফেকশন ওর কমলো না কিন্তু চুমু খেতো না । এদিকে আমি ওকে চুমু খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকতাম সব সময় । কিন্তু ও আমাকে কিছুতেই দিতো না । একদিন আমি হঠাৎ ওকে জিজ্ঙেস করলাম,

-তুমি আর আমাকে ভালবাসো না ?

-মানে কি বলছো এসব ?

-বলছি ভালবাসো না ?

-হ্যা বাসি ।

-তাহলে কেন এমন কর ? আগে তো কেবল চুমু খেতে দিতে দিতে না এখন তো হাতও ধরতে দাও না । যদি সমস্যা হয় যে বিয়ের আগে এসব করবে না, ওকে ফাইন তাহলে চল আজই বিয়ে করে ফেলি ।

-বিয়ে !

তানহা আমার মুখ থেকে এটা আশা করে নি সম্ভবত । আমিও ওর অবাক হওয়া দেখে খানিকটা অবাক হলাম । বললাম,

-কেন ? তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না ?

তানহা আমার প্রশ্ন শুনে খানিকটা সময় থামকে দাড়ালো । তারপর বলল,

-আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না ।

-কেন ?

-কারনটা আমি তোমাকে বলতে পারবো না ।

-না বলতে হবে ।

-প্লিজ আমাকে জোর করবে না । আমি বলতে পাারবো না ।

-অন্য কাউকে পছন্দ হয়েছে ?

-কি ! নাহ ! আমার অন্য কাউকে পছছন্দ হয় নি ।

-তাহলে সমস্যা কোথায় ? আমাকে তুমি ভালবাসো, পছন্দ কর অন্য কাউকে পছন্দ না তাহলে আমাকে বিয়ে করতে সমস্যআ কোথায় ?

তানহা খানিকটা সময় অধৈর্য্য হয়ে বলল, প্লিজ এমনটা করো না । যেমন চলছে তেমন চলুক না ।

-না এমন চলবে না । তুমি বলবে কেন আমাকে বিয়ে করবে না । নয়তো আজকের পর আর আমাদের কথা হবে না ।

আমি উঠে চলে গেলাম । আর কোন কথা হল না ।

পরের একটা সপ্তাহ সত্যিই আামদের মাঝে আর কোন কথা হল না । আমি কোন কথা বললাম না ওর সাথে । ও কয়েকবার এগিয়ে এল তবে আমি এড়িয়ে চললাম । আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম যে ও ঠিক থাকতে পারছে না । মনে মনে অপেক্ষা করতে লাগলাম যে কখন ও নিজ থেকেই এগিয়ে আসবে ।এলোই তাই ।

রাত তখন প্রায় বারোটা বাজে । হঠাৎ আমার ফোনে তানহার ফোন এসে হাজির । রিসিভ করতেই ও বলল, তোমাদের বাসার ছাদে এসেতো !

আমি তীব্র বিশ্ময় নিয়ে বললাম, কি আমাদের বাসার ছাদে ?

কিন্তু ততক্ষণে ফোনের লাইন কেটে গেছে । আরেকবার ফোন না করেই আমি ছাদে হাটা দিলাম । এবং সেখানে গিয়ে সত্যিই আবিস্কার কারলাম যে তানহা সেখানে দাড়িয়ে আছে । আমি বললাম, তুমি এখানে এলে কিভাবে !

তানহা সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, তুমি সত্যিই জানতে চাও আমি কেন তোমাকে বিয়ে করতে চাই না ।

আমি বললাম, হ্যা ।

-যে কোন কিছুর বিনিময়ে ?

-হ্যা ।

-যদি তোমাকে সত্যি কথা বলি তাহলে আজকের পর আমাকে আর দেখতে পাবে না । চলবে ?

আমার মাথায় আসলে তখন অন্য কোন কিছু চলছিলো না । আমি তানহাকে বিয়ে করতে চাই কিন্তু ও আমাকে বিয়ে করতে চায় না । এই লাইনটার বাইরে আমার আর কিছুতেই কাজ করছিলো না । আমি কেবল কারনটা জানতে চাই । আর কিছু না ।

তানহা কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আমি মানুষ নই অপু !

আমি যেন ঠিক মত কথাটা ববুঝতে পারলাম না । বললাম, মানে ? কি বলছো মানুষ না ! মানুষ না তো কি ভুত ?

আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । কিন্তু তানহা হাসলো না । তানহা গম্ভীর মুখে বলল, আমি জ্বীন । জ্বীন তো বিশ্বাস কর নাকি ? আমি সেটাই ।

-দেখো হাস্যকর কথা বল না ।

-তোমার মনে এই প্রশ্ন জানে নি যে আমি এখানে কিভাবে এলাম । এই ছাদে । যেখানে রাত এগারোটার পর তোমাদের বাড়ির মেইন গেট বন্ধ হয়ে যায় । তাই না?

আরে তাই তো ? রাত এগারোটার পরে আসলেই বাড়ির গেট বন্ধ হয়ে যায় । তানহা শান্ত চোখে বলল, আমার প্রজাতির নাম হচ্ছে ঘৌল । ঘৌল জ্বীনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছো ? তোমাদের নেটফ্লিক্সে এই নামে একটা মিনি সিরিজও আছে ।

আমি সেই সিরিজটা দেখেছি । আমি জানি ঘৌল জ্বীণ কি ! তাহলে তো ...

তানহা হাসলো । আমার মনের কথা যেন ধরতে পেরেই তানহা বলল, হ্যা তোমার ধারনা ঠিক । আমি মানুষের মাংস খাই । তোমাদের অফিসের যে তানহা ছিল, আসল তানহা তাকে দিয়েই এখানে ঢুকেছি । তুমি জানো ঘৌলরা যাদের মাংস খায় তাদের রূপ ধারণ করতে পারে । তানহা আর তোমার অফিসের বস রায়হান আমার পেটে গিয়েছে ।

আমি বললাম, দেখো ভাল হচ্ছে না এই সব বললাম ।

আমি আরও কিছু বলতে যাবো তার আগেই তানহার চেহারা বদলে রায়হান সাহেবের মত হয়ে গেল । আমি অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে । আমি কি দেখলাম এটা !

না হতে পারে না এইটা !

তানহা নামের ঐ জ্বীণটা বলল, তোমাকেও খাওয়ার প্লানই ছিল আমার কিন্তু ঐদিন তোমার চুমুতে কি ছিল আমি বলতে পারবো না । আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম । আমরা জ্বীন হলেও আমাদের চিন্তা করার মন আছে । আমি কিছুতেই পারি নি তোমার ক্ষতি করতে । কিন্তু নিজের আদিম প্রবৃত্তিও নিবারন করতে পারতাম না মাঝে মাঝে । তুমি যখন আমার কাছে আসতে তখন তোমার তাজা মাংসের গন্ধে আমি পাগল হয়ে যেতাম । যেদিন রক্ত বেরুলো তোমাকে চুমু খেতে গিয়ে সেদিন সত্যিই আমি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছিলাম কিছু সময়ের জন্য । সেদিনই বুঝলাম যে তোমার কাছাকাছি থাকলে একদিন না একদিন দূর্ঘটনা ঘটবেই ।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । কিছুই আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না । আমি কেবল তাকিয়ে রইলাম অবাক হয়ে । এতোদিন আমি একটা জ্বীণের সাথে পরেম করেছি । তাও আবার ঘৌলার সাথে । ইয়া খোদা রক্ষা কর !

আমি বললাম, তোমার আসল রূপ কি নেই ?

-আছে । দেখতে চাও ?

-হ্যা ।

রায়হান সাহবের শরীর থেকে অন্য একটা রূপে রূপান্তর হল সে । স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে একটু লম্বা ! শরীরে কোন পোশাক নেই ওর । তবে স্পষ্ট করে কিছু দেখাও যাচ্ছে না । মনে হ্চ্ছে আলো দিয়ে তৈরি সে । ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল জীবনে এতো সুন্দর মুখ আমি কোন দিন দেখি নি । সত্যিই দেখি নি ।

বললাম, তোমার নাম কি ? আসল নাম?

তানহা বলল, আরিয়াত, আমার নাম আরিয়াত।

আমি বললাম, তানহা তোমাকে একটা বার স্পর্শ করতে চাই । একটা শেষ চুম্বন ।

তানহা বলল, উহু । না সেটা হবে না । তোমার কাছে গেলেই তোমার রক্তের গন্ধ আমাকে পাগল করে দিবে । হয়তো ...

আমাকে আর কিছু বলার আগেই আমার চোখের সামনে তানহা অদৃশ্য হয়ে গেল । আমি কেবল বোকার মত দাড়িয়ে রইলাম । তখনও যেন ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না আমার ।



পরিশিষ্টঃ

মিতুল আহমেদ অপু নিজের লেখাটা শেষ করলেন । তারপর ট্যাবটা বন্ধ করে দিলেন । এখন তার শেষ সময় । যৌবন বসয়ের এই যৌলা জ্বীণের সাথে প্রেমের কথা তিনি কাউকে বলেন নি । নিজের মাঝেই লুকিয়ে রেখেছেন । তবে সেই আরিয়াতকে অপু কোন দিন ভুলতে পারে নি । ওর নিজের কাছেও মনে হয়েছে আরিয়াতও ওকে কোন দিন ভুলতে পারে নি ।

তারপর অপুর জীবন থেমে থাকে নি । দুই বছর পরে সে বিয়ে করে । দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার কেটে খুব ভাল ভাবেই । মেয়েদের বিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে কাটিয়েছেন অনেক বছর । এখন তার বয়স আশি ছুইছুই করছে । তার স্ত্রী গত বছর মারা গেছেন । তারও যাওয়ার সময় চলে এসেছে । তিনি এটা বুঝতে পারছেন । তার জীবনে কোন আফসোস নেই। কেবল একটা আফসোস রয়েই গেছে । আরিয়াত কে সে শেষবার চুমু খেতে চেয়েছিলেন । সেটা পূরন হয় নি ।

-অপু !

মিতুল আহমেদ চমকে গেল । বা দিকে তাকিয়ে দেখলেন সেখানে একটা আয়োবয় ফুটে উঠেছে । এতো বছর পরেও তার সেই মুখটা চিনতে কষ্ট হল না ।

আরিয়াত এসেছে ।

মিতুল আহমেদের মুখ আনন্দে ভরে উঠলো । তাকে কিছু বলতে হল না । আরিয়াট ধীরে ধীরে এগিয়ে এল মিতুল আহমেদের দিকে । তাকে চুমু রত অবস্থায়ই মিতুল আহমেদের মৃত্যু হল । তার চেহারাতে একটা প্রশান্তির ছায়া ছিল । তার শেষ ইচ্ছে পূরন হয়েছে ।









গল্পের থিমটা পাঠিয়েছে "তানজিলা ইসলাম তানহা"

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×