somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ লাভ অন ফায়ার

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মেঘলা চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলো না ও কোথায় আছে । মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগলো ওর সব কিছু মনে করতে । সাথে সাথেই মনে পড়ে গেল অজ্ঞান হওয়ার আগে কি ঘটেছিলো ।

ওদের অফিস বিল্ডিং এ আগুন লেগেছিলো । মেঘলাদের অফিসটা একটু বেশিই আইসোলেটেড ! জানলাতে ভারী পর্দা দেওয়া । বাইরে থেকে কোন আলো আসে না । জানলা গুলোতে আলাদা ভাবে সাউন্ডপ্রুফ গ্লাস লাগানো । বাইরে থেকে কোন আওয়াজও ভেতরে আসে না । বাইরে থেকে খুব একটা আওয়াজ আসে না ভেতরে । তাই নিচের ফ্লোরে আগুন লাগার বেশ কিছু সময় ওরা টেরই পায় নি যে আগুন লেগেছে । যখন ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো তখন ধোয়াতে ভরে গেছে পুরো বিল্ডিং । লিফট বন্ধ হয়ে গেছে ।

ওদের অফিসের যে যেমন করে পেয়েছে নিচে সিড়ি দিয়ে নেমে গেছে । নয়তো উপরে উঠে গেছে । মেঘলাও বের হতে গিয়েছিলো । কিন্তু পারে নি । ওর একটু শ্বাস কষ্ট আছে । ধোয়াতে একদম নিঃশ্বাস নিতে পারে না । সিড়ি অনেকটাই ধোয়াতে ভরে গিয়েছিলো । জীবনের মায়া সবারই আছে । দম বন্ধ করে করে মেঘলা একটু নামতেও গিয়েছিলো কিন্তু পারে নি । সিড়িতে অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো । জ্ঞান হারানোর আগে ওর কেবল ওর মায়ের মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছিলো ।

আর এখন জ্ঞান ফিরে এসে ও নিজেকে মেঝেতে আবিস্কার করলো । ওর মুখের সামনে একটা পরিচিত মুখ উদ্বিগ্ন ভাবে তাকিয়ে আছে । মেঘলা একটু অবাক না হয়ে পারলো না । ও কোন দিন রিয়াদকে এখানে আশা করে নি ।
মেঘলা খানিকটা উঠে বসতে বসতে বলল, আমরা কি মারা গেছি ?
রিয়াদ শব্দ করে হেসে উঠলো । তারপর বলল, না এখনও মরি নি । তবে বেশি দেরি নেই । আগুন উঠে আসছে দ্রুত !
মেঘলা ভীত চোখ তাকিয়ে রইলো রিয়াদের দিকে । তারপর চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো । ওর ওয়াশ রুমে বসে আছে । রিয়াদ বলল, আপাতত এটাই সব থেকে নিরাপদ স্থান মনে হচ্ছে । ওয়াশরুমের উপরে স্টোর রুম থাকে । উপরে নিচ উভয়ই । সেই হিসাবে সব থেকে শক্ত কাঠামোর একটা । এখানে আগুন পৌছাতে একটু সময় লাগবে !

মেঘলা দেওয়ালে হেলাম দিয়ে বসলো । এখন খানিকটা সুস্থবোধ করছে । সেই সাথে একটু সাহসও লাগছে মনে । একটু আগে যখন আগুনের কথা শুনে সবাই পালিয়ে পাচ্ছিলো মেঘলার নিজেকে বড় অসহায় লাগছিলো । কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না । সবাই কেবল নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত । এমনটাই সম্ভবত হয় । নিজের জীবনটাই সব থেকে মূল্যবাস সব সময় । শাহেদের কথা মনে হতেই মেঘলার মন খানিকটা খারাপ হল । ও যখন অফিস থেকে বের হচ্ছিলো তখন কি মেঘলার কথা ভেবেছিলো ? মেঘলা আশা করেছিলো অন্তত সিড়ি দিয়ে নামার সময় শাহেদ ওর হাত ধরে থাকবে । হাত ধরে থাকলে মেঘলা হয়তো নিচে নামতে পারতো !

মেগলা বলল, আমরা কি মারা যাবো ?
-কি জানি ! বলা যাচ্ছে না । নিচ থেকে আগুন উপরে উঠছে । এই ফ্লোর ধরে ফেলবে একটু পরেই । তখন আসলে কি হবে জানি না ।
মেঘলা কিছু সময় চুপ করে রইলো ।
রিয়াদ বলল, আশা যদিও আছে । ফায়ারব্রিগেড চলে এসেছে । ওরা কাজ করছে । এমন হতে পারে এই ফ্লোরে আসার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলল ।
-আসলে মরন লেখা থাকলে কিছুই করার নেই । তবে এমন ভয়ানক ভাবে মরন হবে ভাবি নি ।
-আমার অবশ্য খারাপ লাগছে না ।
-কেন ?
-না মানে মরার সঙ্গী রয়েছে কি না !
মেঘলা হাসলো । সত্যই তাই । অন্তত মরতে হলেও একজন সাথে আছে ।


মেঘলা হঠাৎ বলল, আপনি নামতে পারলেন না কেন ? সবাই তো নেমে গেছে কিংবা উপরের দিকে উঠে গেছে !
রিয়াদ কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর নিচু স্বরে বলল, আমি নেমে গিয়েছিলাম ।
-তারপর ?
-শাহেদ সাহেবকে যখন দেখলাম একাই বের হয়ে যেতে .....।
মেঘলা কিছু সময় কোন কথা বলতে পারলো না ।
-আপনি ফিরে এসেছেন ........ আমার জন্য ?

মেঘলা সত্যিই বুঝতে পারছিলো না ওর আসলে কি বলা উচিৎ ?

এই অফিসে যে প্রায় দের বছর ধরে আছে । রিয়াদ কে তখনই থেকেই চেনে । তখন থেকেই মেঘলা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে যে রিয়াদ এমনিতে সবার সাথে হাসি খুশি হলেও ওর সাথে ঠিক সহজ বোধ করে না । কেমন একটা এড়িয়ে যাওয়ার ভাব । প্রথমে কিছুটা খারাপ লাগলেও মেঘলা সেটা মেনে নিয়েছে । সেই রিয়াদের পথে আসতো না খুব একটা । তারপর শাহেদের সাথে যখন পারিবারিক ভাবেই বিয়ের কথা বার্তা ঠিক হল তখন তো অফিসের কারো সাথেই আর ঠিক মেশা হত না অফিসের বাইরে !

মেঘলা বলল, আমি শুরু থেকে দেখে এসেছি আপনি সব সময় আমাকে এড়িয়ে চলতেন ।
রিয়াদ একটু হাসলো । অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । তারপর বলল, স্কুলে আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম । মেয়েটাকে দেখলেই আমরা দম বন্ধ হয়ে আসতো ! কথা বের হত না ।
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? মেয়েটা ক্লাস নাইনে উঠতেই আমারই একটা বন্ধুর সাথে যুক্ত হয়ে গেল । সেটাও অবশ্য টেনে নি খুব বেশি । এসএসসির পরে মেয়েটা অন্য স্থানে চলে গিয়েছিলো ।

রিয়াদ আরও কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল, আমি ভেবেছিলো হয়তো আর কোন প্রেমে পড়বো না । তারপরই আপনাকে দেখলাম । আমার আবারও সেই অবস্থা হল । আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো । আপনি আশে পাশে আসতেই এমনটা হত । আপনি জানেন এই দেড় বছরে আমি একটা দিনও শান্তিমত ঘুমাতে পারি নি ।

রিয়াদ নিজের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে মেঘলার হাত দিল । স্ক্রিন অন করতেই মেঘলা নিজের ছবি দেখতে পেল । ওর ফেসবুকে এই প্রোফাইল পিকচার দেওয়া আছে ।
রিয়াদ বলল, যেদিন শুনলাম শাহেদের সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে মনে হচ্ছিলো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে যাই । কিন্তু চলে গেলে আপনাকে আর দেখতে পাবো না । এই জন্য পারি নি ।
মেঘলা বলল, আজকে দম বন্ধ হয়ে আসছে না?
রিয়াদ এবার তাকালো মেঘলার দিকে । তারপর বলল, কেন জানি হচ্ছে না। সম্ভবত মারা যাবো এই জন্যই হয়তো । আজকে না বললে হয়তো আর কোন দিন সুযোগই আসবে না !

রিয়াদ কিছু সময় তাকিয়েই রইলো মেঘলার দিকে । তারপর বলল, আমি কি আপনার হাতটা একটু ধরতে পারি । লাস্ট উইস বলতে পারেন । মেঘলা রিয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল । ওর মনের মাঝেই একটা অদ্ভুদ অনুভূতি হতে শুরু করলো । শাহেদ যখন ওর বাসাতে বিয়ের জন্য প্রস্তব পাঠিয়ে ও খুশিই হয়েছিলো । তারপর থেকে ও শাহেদর সাথে অনেক সময়ই কাটিয়েছে কিন্তু ভালবাসা বলতে আসলে যেমনটা বোঝায় সেটা কোন দিন অনুভব করে নি । শাহেদ ছেলে হিসাবে চমৎকার । হয়তো বিয়ের প্রস্তব দিয়েছে, বিয়ে ঠিক হয়েছে বলেই তার সাথে মিশছে । শাহেদের ব্যাপারটাও নিশ্চয়ই তেমনই । নয়তো সে মেঘলা কে একা রেখে কিভাবে নিরাপদে নেমে গেল !

কিন্তু রিয়াদের চোখের দিকে মেঘলার অদ্ভুদ অনুভূতি হল । ছেলেটা ওকে তীব্র ভাবে ভালবাসে, ওর হাত ধরার জন্য রিয়াদের চোখে তীব্র আকুকতা দেখতে পেল সে । মেঘলা তখন অন্য কিছু করে ফেলল । নিজের ঠোঁট সামনে বাড়িয়ে দিল । রিয়াদকে তীব্র বিস্মিত করে দিয়ে ওর ঠোঁটে চুমু খেল ।


তখনই কিছু একটা ফাটার আওয়াজ হল । মেঘলা যেন আরও একটু কাছে সরে এল । তবে ঠোঁট সরালো না । আরও তীব্র ভাবে রিয়াদকে চুমু খেতে শুরু করলো ।

মেঘলার কাছে দুনিয়ার সব কিছুই যেন গায়েব হয়ে গেছে । মনে হচ্ছে যে পুরো দুনিয়াতে কেবল রিয়াদ আর ও আছে । আর কেউ নেই !



ছবি গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×