somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্পঃ দ্য গডফাদার (পর্ব ০৩)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি গুগল

আগের পর্ব

পাঁচ

নিকিতা এরকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতে পরে নি এর আগে । কি বলবে আর কি বলা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারলো না । যদিও কোন ভাবেই তাকে দোষ দেওয়া যায় না । এখানে কেউ যদি অস্বাভাবিক এসে হাজির হয়েছে সেটা হচ্ছে অপুর আগের প্রেমিকা ! নিকিতা কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো কেবল ।
নাদিয়া হাত তালি দিক একটা । তারপর অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, এতো দুর ?
অপু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । নাদিয়া আবার বলল
-বাহ ! আমার হাতও ঠিক মত ধরতে পারতে না আর এই মেয়ের সাথে .... এই মেয়ে দেখছি খুবই ফার্স্ট !

কথাটা শোনার পরপরই নিকিতার কান গরম হয়ে উঠলো । তার এখন আর চুপ করে থাকাটা মানায় না । সে একটু এগিয়ে এসে বলল, এক্সকিউজ মি ? কথা বার্তা সাবধানে !
নাদিয়া বলল, ওহ প্লিজ ! আমি তোমার সাথে কথা বলছি না !

নিকিতা অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা তোমরা কথা বলি আমি চলে যাই !
নিকিতা ঘরের ভেতরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবে তখন অপু বলল, দাড়াও । তুমি কেন যাবে ?
তারপর নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কেন এসেছো এখানে এসেছো ?
নাদিয়া বলল, মানে ? তুমি কি বলছো ?
অপু খুব শান্ত কন্ঠে বলল, তুমি কেন এসেছো ? তুমি খুব পরিস্কার কন্ঠে আমাকে নিজের জীবন থেকে চলে যেতে বলেছো । আমি চলে এসেছি । সম্পর্ক তুমি শেষ করেছো ! নতুন একজন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো বিয়ে করার জন্য আর আমি যদি মুভ করি তাহলে সমস্যা কোথায় ?

নাদিয়া যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না যে অপু এই কথা বলছে । এই ছেলে ওকে ছাড়া কিছু বুঝতো না আজকে মাত্র কটা দিনেই সব কিছু ভুলে গেলো । নতুন আরেক জনের সাথে যুক্ত হয়ে গেল ! এতো স হজে ?
অপু বলল, তুমি চলে যাও প্লিজ !

নাদিয়া আর কোন কথা বলতে পারলো না । ঘুরে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো ।

নিকিতা তখনও দাড়িয়ে আছে । অপু ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো । তারপর বলল, নাস্তা করবে না ?
নিকিতা ধীরে ধীরে অপুর দিকে এগিয়ে এলো । অপু বলল, সরি । সকালটা এভাবে শুরু হবে ভাবি নি ।
-আমিও না । তবে বেশ ভালই হয়েছে ।
-ভাল ?
-হ্যা । আমি আরও পরিস্কার ধারনা পেলাম তোমার ব্যাপার ?
-কি ধারনা ?
-সেটা থাকুক । আমার যা বুঝে নেওয়ার নিয়েছি ।

নিকিতা আরও একটু কাছে এল । অপুর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । রাতের বেলা বেশ কিছুটা সময় সে অপুর এই ঘুমন্ত চেহারার দিকেই তাকিয়ে ছিল । সেই অনুভূতিটা আবার ফিরে এল ।


####
কবীর চৌধুরী তার বড় ছেলে দিপুর সাথে ব্যবসার কিছু ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছিলো । এমন সময় হাসান দরজা থেকে মাথা তুলে ভেতরে তাকালো ।
কবীর চৌধুরী বলল, কি ব্যাপার হাসান ?
-স্যার সময়ে সময়ে রিপোর্ট দিয়ে বলেছিলেন ছোট স্যারের ব্যাপারে !

দিপু তখন তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা তুমি এখনও অপুর পেছনে চর লাগিয়ে রেখেছো ? কেন ? সে নিজের ইচ্ছেতে নিজের ইচ্ছে চলে আসবে !
কবীর চৌধুরী বলল, আমি তাকে চিনি । সে কোন দিন আসবে না ।
দিপু খানিকটা বিরক্ত কন্ঠে বলল, সেটা তো তার নিজের চয়েজ ! এখানে আমাদের কি বলার আছে ? তুমি কেন কষ্ট পাচ্ছো ?
কবীর চৌধুরী কিছু বলতে গিয়েও বলল না । সে হাসান কে ভেতরে আসতে বলল । হাসান টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো । কবীর চৌধুরী বলল, নতুন কিছু ?
-জি স্যার ?
-কি নতুন খবর ?
-স্যার আমার মনে হচ্ছে ঐ লেডি অফিসারের সাথে ছোট স্যারের সিরিয়াস কিছু শুরু হয়েছে ।
-মনে হওয়ার কারন ?

দিপু মাঝ খান থেকে বলল, কোন লেডি অফিসার ?
হাসান বলল, নিকিতা আহমেদ !
দিপুর চোখে এবার তীব্র বিস্ময় দেখা গেল । সে নিকিতা আহমেদকে ভাল করেই চেনে । নিকিতা আহমেদই সেই অফিসার যে ওর পেছনে লেগেছে বেশ কিছুদিন ধরে । কবীর চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল, এসব কি ? দুনিয়াতে আর মেয়ে পেল না সে !
কবীর চৌধুরী বলল, ব্যাপারটা ঘটে গেছে । তাকে সরানোর হুকুম দিয়েছিলাম । কিন্তু মাঝে খান দিয়ে অপু এসে হাজির হয় । তারপর অপুর নিজ থেকে এই নিকিতা আহমেদের কাছে গিয়ে হাজির হয়েছে । আমার কাছে প্রথমে মনে হয়েছিলো সে অপু এইটা ইচ্ছে করে করছে । মেয়েটাকে রক্ষা করার জন্য । কিন্তু এখন দেখি ব্যাপার সব অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে ।
-তো কি হয়েছে ? এই মেয়ে আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ ! তুমি খুব ভাল করেই জানো । তাহলে তাকে সরিয়ে দিচ্ছো না কেন ?

কবীর চৌধুরী কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল, শোন তোমাকে একটা কথা আমি ভাল করে বলে দেই । আমরা যাই করি যেমনই করি না কেন আমাদের লড়াই সব সময় সামনের মানুষটার সাথে হবে, সরাসরি । কখনই তার ফ্যামিলির-বন্ধ বান্ধবের সাথে নয়! তুমি জানো এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলে কি হবে ? এই কারনে তোমার মা কে আমি হারিয়েছি । আমি চাই না এমন কিছু আর ঘটুক ! সে তোমার ছোট ভাইয়ের বন্ধু । সে এখন আমাদের ফ্যামিলি । তার ক্ষতি কোন ভাবেই করা যাবে না । পরিস্কার বুঝতে পেরেছো ? এই কথার যেন নড়চড় না হয় । আমি অন্য ভাবে তার সাথে মোকাবেলা করবো কিন্তু ক্ষতি না । পরিস্কার হয়েছে কথা ?

দিপু কথা বলল না । কবীর চৌধুরী তখন ঠান্ডা কন্ঠে বলল, কথা পরিস্কার হয়েছে ?
দিপু এবার একটু ভয় পেল যেন । তারপর বলল, জি বাবা !
-হ্যা যাও তুমি । যা করতে বললাম সেটা কর ! আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব ।

দিপু খানিকটা অসন্তুষ্ট ভাবেই উঠে দাড়ালো । তবে কিছু বলল না আর । বাবার হুকুমের বিপরীতে যাওয়ার সাহস তার নেই ।
দিপু চলে যেতেই কবীর চৌধুরী হাসানের দিকে তাকালো আবার ! তারপর বলল, তোমার এই রকম মনে হওয়ার কারন ?
-গত দিন আগে নিকিতা আহমেদ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে । এবং এই পুরোটা সময় সে ছোট স্যারের সাথেই থাকছে । একেবারে পুরোটা সময় ।
-ইউ মিন ওর বাসায় ?
-হ্যা । কখনও স্যারের ঐ চিলেকোঠায় আবার কখনও নিকিতা ম্যাডামের কোয়াটারে !
-ঐ মেয়ের সাথে কেউ থাকে না ।
-থাকে স্যার । বাবা মা আছে ! এক ছোট ভাই আছে । ছোট ভাইয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কারনে তারা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে ।

কবীর চৌধুরী কিছু সময় চিন্তিত হলেন । এই মেয়ের ব্যাপারে তিনি কি করবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না । প্রথম থেকেই এর দিকে আরও ভাল করে নজর দেওয়া দরজার ছিল । যদিও এখনও বিপদের কিছু নেই কিন্তু অস্বস্তি লাগছে তার । হাসান বলল, স্যার আরেকটা ঘটনা ?
-কি ঘটনা !
-ঐ যে নাদিয়ে ম্যাডাম ছিল না ? ছোট স্যারের আগের বন্ধু ?
-হ্যা তার আবার কি হল ?
-সে বারবার স্যারের বাসায় গিয়ে হাজির হচ্ছে । মনে হয় সে আবার স্যারের কাছে ফিরে আসতে চাচ্ছে । গতকাল সে নিজের হাতের রগ কেটে ফেলেছে । এখন হাসপাতালে আছে !

কবীর চৌধুরী খানিকটা দ্বিধান্বিত বোধ করলেন ! আজকালকার ছেলে মেয়েদের কে সে আসলেই বুঝতে পারেন না । এদের মাথার ভেতরে কি চলে কে জানে ! হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, এই মেয়ের সাথে আমার দেখা হওয়ার একটা ব্যবস্থা কর । সুস্থ হলে নিয়ে আসবে আমার কাছে । ঠিক আছে ?
-জি স্যার !
হাসান বেরিয়ে গেলে আবারও গভীর চিন্তায় হারিয়ে গেল সে ! কিছু একটা করতেই হবে । কিন্তু কি করবে !




নিকিতার মন ইদানিং কোন কারন ছাড়াই ভাল থাকে । এর পেছনে যে অপুর হাত আছে সেটা কাউকে বলে দিয়ে হয় না । ছেলেটার মাঝে অন্য রকম কিছু একটা আছে । নিকিতা সেটা পরিস্কার বুঝতে পারছে । কিন্তু তার ভেতরে যে কি আছে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না । আর সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে অপু কোন ভাবেই তার বাবা মত নয় । তার বাবাকে সে ঘৃণা করে । নিকিতা এই ব্যাপারটা এখনও পরিস্কার ভাবে জানতে পারে নি । অপুর কাছে জিজ্ঞেস করতেও পারে নি । কেবল সে জানে বছর চারেক আগে একবার কবীর চৌধুরীর উপরে হামলা হয়েছিলো । কবীর চৌধুরী তখন গাড়িতে করে তার বাসার দিকে যাচ্ছিলো । সাথে তার স্ত্রী ছিল । হামলাতে কবীর চৌধুরীর কিছু না হলেও তার স্ত্রী অর্থ্যাৎ অপু মা মারা যায় ।
যদিও তার বছর খানেক আগেই অপু বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো । তবে তখনও মাঝে মাঝেই মায়ের কাছে আসতো । মা মারা যাওয়ার পরে আর আসে নি সে । অপু নিজের মায়ের মারা যাওয়ার পেছনে কবীর চৌধুরীকে দায়ী করেন ।

নিকিতা চুপচাপ হাটছিলো রাস্তা দিয়ে । অফিসের গাড়িটা আজকে সে আনে নি । একটা রিক্সা নিয়ে অপুর ওখানেই যাবে । ওদের ব্যাপারটা এখনও অফিসে জানে না । নিকিতা এখনই সেটা মানুষকে জানাতে চায় না । পরে এসব নিয়ে ভাবা যাবে ।

অফিস থেকে একটু দুরে এসে দাড়ালো রিক্সার জন্য । এখান গাড়ি গুলো খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে । নিকিতা নিজের মোবাইল অপুকে ফোন দিতে গেল । ফোনটা বের করে কল দিতে যাবে তখনই ওর চোখের কোণে একটা কিছু ধরা পরলো । একটা মাইক্রবাস ঠিক ওর সামনে এসে থামলো । মাইক্রবাসের দরজা খুলে গেল । নিকিতা নিজের কোমরে গোজা পিস্তালটা বের করার সুযোগ পেল না । তার আগেই একটা ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেল ওর কোমরে । কানের কাছে এসে কেউ বলল, কোন চালাকি নয় ! চুপচাপ গাড়িতে উঠুন !

নিকিতার দুই হাত দুইজন ধরে ফেলেছে । মুখ দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ একটা রুমাল চেপে ধরলো ওর মুখে ! ওকে ঠেলে দিলো গাড়ির ভেতরে । গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেল । পুরো ঘটনা ঘটতে আধা মিনিটের কম সময় লাগলো । কেউ লক্ষ্যও করলো না !



ছয়

নিকিতার সামনে রাখা জুসের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে । জুসের গ্লাসের ঠিক পাশেই একটা ট্রেতে একটা স্যন্ডউইচ রাখা । সবার শেষ একটা মিনারেল ওয়াটার । নিকিতা অন্য কিছুতে না হাত দিয়ে কেবল পানির বোতলটা হাতে নিল । বোতল খুলে একটু পানি খেল ।

ওকে কোথায় আনা হয়েছে সেটা ও বলতে পারবে না । তবে ওকে যে ঘরে রাখা হয়েছে সেটা মোটেও বন্দীশালা মনে হচ্ছে না । সাদা পেইন্টা করা চমৎকার দেওয়াল । খুব বেশি আসবার পত্র নেই । একটা সেমি ডাবল খাট রয়েছে । তার পাশে একটা সোফা সেট । সামনে একটা ছোট রিডিং টেবিল । আর টেবিলের ওপাশে একটা চেয়ার । ব্যাস আর কিছু নেই ।
একটা জানলা রয়েছে । তবে সেটাতে ভারী আর দামী পর্দা দেওয়া । ঘরে মৃদু এসি চলছে ।
নিকিতা চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো । রুমের অবস্থা দেখে নিকিতার মনে খানিকটা দ্বিধা জন্ম নিয়েছে । রুম দেখে মনে হচ্ছে ওকে কোন হোটেল রুমে রাখা হয়েছে । এবং হোটেলটা বেশ দামী হোটেল সেটাও বুঝতে পারছে । এখানে কেন আনা হয়েছে ওকে ?


পকেটে হাত দিয়ে দেখলো ওর মোবাইল ফোনটা সাথে নেই । তবে পিস্তলটা সাথেই রয়েছে । ওরা এটাকে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে নি ।
নিকিতার মনে হল এখনই সামনের দরজা দিয়ে বের যায় । সামনে যাকে পাবে তাকেই গুলি করে দেয় । ওকে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে । নিজেকে রক্ষার জন্য এই কাজটা সে করতেই পারে ।

কিন্তু তারপরেই মনে হল ওরা ওকে অজ্ঞান করেই নিয়ে এসেছে । ওর কাছে যে পিস্তল আছে সেটা ওরা জানে । ওকে তুলে নেওয়ার সময়ই নিকিতা সেটা বুঝতে পেরেছিলো । পকেট থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে অথচ পিস্তল নেয় নি । এই কারনটা ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না ।

নিকিতা কি করবে সত্যিই বুঝতে পারলো না । ওকে এখানে কেন আনা হয়েছে সেটা ও বুঝতে পারছে না । পালিয়ে যেতে মন চাইলেও এখানে এভাবে আনার পেছনের কারনটা জানতে ইচ্ছে করছে । এই জন্যই ও চুপচাপ বসে আছে । অবশ্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হল না । কিছু সময় পরেই দরজাটা খুলে গেল ।

দরজার দিকে তাকিয়ে নিকিতা খানিকটা চমকে গেল !
স্বয়ং কবীর চৌধুরী সামনে দাড়িয়ে আছে ! শান্ত সৌম্য চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিে !

ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে সামনে রাখা চেয়ারে বসলো সে । তারপর নিকিতার দিকে ওর মোবাইলফোনটা বাড়িয়ে দিল ।

নিকিতা ততক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছে । মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছে কবীর চৌধুরীকে কি বলবে !

কবীর চৌধুরী বলল, আশা করি কষ্ট হয় নি এখানে আসতে !
নিকিতা খানিকটা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, এখানে আসতে ?
কবীর চৌধুরী হাসলো । তারপর বলল, যাই হোক এসব কথা বাদ দেই । আসল কথায় আসি ! আমি তোমার কাছ থেকে কিছু সিরিয়াসলি জানতে চাই ! আশা করি সত্যি উত্তর দিবে !
নিকিতা দেখলো কবীর চৌধুরী ওকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তুমি করে বলছে । অবশ্য এটা বলতেই পারে সে । তার ছোট ছেলের গার্লফ্রেন্ড সে । এই তথ্য তার কাছে নিশ্চিত ভাবেই অজানা নয় !
নিকিতা বলল, আমি আপনার কোন কথার জবাব দিবো না । আর এখান থেকে বের হয়ে আপনার নামে কেস ফাইল করবো !

কবীর চৌধুরী খুব জোরে হেসে ফেলল । তারপর বলল, তা অভিযোগ কি ? আমি তোমাকে কিডন্যাপে করেছি ?

কবীর চৌধুরী কিছু সময় হাসলো । তারপর বলল, আমাকে তুমি এতো কাঁচা লোক মনে কর ? যাই হোক তোমাকে কেবল একটা কথা বলি । আমি যে এখানে আছি তুমি কোন ভাবেই সেটা প্রমান করতে পারবে না । আর মানুষ তোমার কথা বিশ্বাসও করবে না এমন কি তোমার সুপিরিয়রও না । তুমি যেখানে আছো এটা একটা ফাইভ স্টার হোটেল । এখানে তোমার এন্টি করা করা ! তোমার ফেসবুকে যদি দেখা যায় দেখবে সেখানে তুমি নিজে চেক ইন দিয়েছো ! আর তুমি অফিস থেকে বের হয়েছো দুই ঘন্টাও হয় নি ।

নিকিতা খানিকটা দমে গেল । সত্যি সে প্রমান করতে পারবে না যে কবীর চৌধুরী এখানে আছে । আর কবীর চৌধুরী যা বলছে সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে কোন ভাবেই তাকে আটকানো যাবে না । কবীর চৌধুরী বলল, কাজের কথায় আসি । তুমি কি সত্যিই আমার ছেলের ব্যাপারে সিরিয়াস ? নাকি তাকে আমার বিরুদ্ধে দাড় করানোর জন্যই তুমি ওর সাথে যুক্ত হয়েছো ?
নিকিতা এবার একটু সহজ বোধ করলো । অপু সত্যিই বলেছিলো । অপুর ব্যাপারে সে আসলেই চিন্তিত । নিকিতা বলল, আপনার কি মনে হয় ? সিরিয়াস আমি ? নাকি তাকে ব্যবহার করছি?
কবীর চৌধুরী ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইলো নিকিতার দিকে । নিকিতাও একই ভাবে তাকিয়ে রইলো তার দিকে । এই খেলাতে নিকিতা খানিকটা মজা পেতে শুরু করেছে । নিকিতা বলল, আমার সাথে অপুর কি সম্পর্ক সেটা সাথে আপনার কিংবা আপনার কেসে কোন সম্পর্ক নেই । আমি আপনার শেষ দেখে ছাড়বো ?

কবীর চৌধুররী এবার খানিকটা শান্ত হয়ে গেল । তারপর বলল, তোমার রক্ত গরম । তুমি কিছু জানো না কিভাবে এই সিস্টেম চলে !
-আমি খুব ভাল করে জানি !
-তোমার কি মনে হয় আমি চলে গেলেই সব কিছু ঠান্ডা হয়ে যাবে ? কোন দিনও না । একটা পেছনে তাকিয়ে দেখ । আমি টেক ওভার করার আগে পরিস্থিতি কেমন ছিল ? তখন দিনে কটা খুন হত কটা রেপ আর কটা চাঁদাবাজি হত আর এখন কতগুলো হয় !
-তো আপনি মাছিহা হিসাবে হাজির হয়েছেন ?
-তুমি স্বীকার কর কিংবা না কর হয়েছি । শুনো মেয়ে আমি কারো সাথে এতো কথা বলি না । বলার দরকারও নেই আমার নেই । আমার পথের বাঁধা আমি খুব সহজেই উপড়ে ফেলতে পারি ।
-তাহলে আমাকে ফেলছে না কেন ? নাকি পারছেন না ? হা হা হা ! কেন পারছেন না শুনি ?

কবীর চৌধুরী কোন জবাব দিল না । কিছু সময় তাকিয়ে রইলো নিকিতার দিকে । তারপর উঠে দাড়ালো ।
-তুমি যদিও হেল্পফুল না তবুও তোমার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো । অপুর সাথে তোমাকে মানাবে ভাল । এন্ড কন্গ্রাচুলেশন ইন এডভ্যান্স !

এই বলেই কবীর চৌধুরী দরজা খুলে বের হয়ে গেল ।
কন্গ্রাচুলেশন ইন এডভ্যান্স । নিকিতা ঠিক বুঝতে পারলো না কবীর চৌধুরী তাকে কন্গ্রাচুলেশন জানালো কেন ! মাথা থেকে দুর করে দিলো চিন্তাটা !

নিকিতা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করলো । তারপর নিজেও দরজা খুলে বের হয়ে এল । যখন করিডোর দিয়ে হল রুমে বের হয়ে এল অবাক হয়ে গেল । ওকে ইন্টার কন্টিনেন্টালে আনা হয়েছে । ওর অফিসের ঠিক পাশেই ।

মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল । নিজেকে খানিকটা অসহায় মনে হল । ক্ষমতাবান মানুষের কাছে নিজের অসহায় হওয়ার ক্ষোভ ! নিকিতা যখন সামনে দিকে পা বাড়াতে যাবে তখনই পেছন থেকে কেউ দাড়ালো !
-ম্যাম !
নিকিতা পেছন ফিরে দেখলো একজন কোর্ট টাই পরা লোক দাড়িয়ে আছে ।
নিকিতা কিছু বলল না । লোকটা বলল, আপনার জন্য টেবিল ১৭তে একজন অপেক্ষা করছে !
-আমার জন্য ?
-জি ! আসুন !

নিকিতা কি করবে বুঝতে পারলো না । ততক্ষনে সামনের মানুষটা হাটতে শুরু করেছে । নিকিতা তার পেছনে হাটতে শুরু করলো । যখন টেবিল নাম্বার ১৭ নাম্বারের সামনে গিয়ে দাড়ালো দেখতে পেল অপু ওকে বসে আছে । ওকে দেখেই উঠে দাড়ালো । তারপর এগিয়ে এসে বলল, কন্গ্রাস !
নিকিতা বলল, মানে ?
অপু বলল, আরে মানে কি করছো ? তুমি না মেসেজ পাঠিয়ে জানালে যে তোমার প্রমোশোন হয়েছে । এখানে আসতে বললে ! এসিস্ট্যান্ড ডেপুটি কমিশনার হয়ে গেছ ! ওয়্যাও ! আমি তো ভাবতেই পারছি না !

নিকিতার তখনই মনে পড়লো কবীর চৌধুরীর কথা । সে তাকে কন্গ্রচুলেশন জানিয়েছিলো !

-ম্যাম !

পেছনে তাকিয়ে দেখলো আবার সেই কোর্ট টাই পরা লোকটা এসে দাড়িয়েছে । ওর দিকে একটা খাম বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আপনার রুমে এই খামটা ফেলে এসেছেন আপনি !

খামটা হাত বাড়িয়ে নিল সে ! খুলতে ইচ্ছে হল না । ও জানে কি আছে এর ভেতরে । অপু ওর হাত থেকে খাম টা নিয়ে নিল । তারপর সেটা খুলে জোড়ে জোড়ে পড়তে শুরু করলো ওর সামনেই ।

নিকিতার মাথার ভেতরে তখন আগুন ধরে গেছে । আবারও নিজেকে বড় বেশি অসহায় লাগছে ওর ! ক্ষমতাবানের কাছে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে খুব !



ড্রয়িং রুমে মেয়েটাকে বসে থাকতে দেখে দিপু দাড়িয়ে গেল । মেয়েটা চুপচাপ বসে সোফার উপরে । দিপু কিছু সময় মেয়েটাকে চেনার চেষ্টা করলো কিন্তু চিনতে পারলো না । আগে দিপুর বড় বোন যখন পড়াশুনা করতো তখন তাদের বাসাতে মাঝে মধ্য তার বান্ধুবীরা আসতো কিন্তু সেটা এখন একদমই বন্ধ হয়ে গেছে ।
অফিসের কেও সাধারনত এই বাসায় আসে না । তাহলে এই মেয়ে কে ?
এই সময়ে এখানে কেন বসে আছে !

দিপু এগিয়ে গেল । মেয়েটা ওকে দেখতেই উঠে দাড়িয়ে সালাম দিল । চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে একটু ভয় পেয়েছে । চেহারাতে একটা ভীতভাব দেখা যাচ্ছে ।

দিপু এগিয়ে গিয়ে বলল, আপনি কে ? এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছেন ?
মেয়েটা একটা বড় ঢোক গিলে বলল, আসলে আমি জানি না আমি কার সাথে দেখা করতে এসেছি । আমাকে এখানে আসতে বলা হয়েছিলো !
-কে আসতে বলেছে ?
-শিল্পপতি কবীর চৌধুরী নাকি আমার সাথে দেখা করতে চান । কিন্তু আমি কোন ভাবেই বুঝতে পারছি না আমার সাথে দেখা করতে কেন চান !

দিপু খানিকটা সময় ভাবলো । ওর বাবা এই মেয়েটার সাথে কেন দেখা করতে চাইছে সেটাই তো বুঝতে পারছে না । ওর এখনই উচিৎ এখান থেক চলে যাওয়া । বাবার ব্যাপারে নাক গলানো ওর কাজ নয় ।

দিপু চলে যেতে পা বাড়াবে তখনই মেয়েটা বলল, আপনার চেহারাটা আমার কাছে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে । যদি কিছু মনে না করে তাহলে একটা প্রশ্ন করবো ?
-করুন !
-আপনি কি অপু নামের কাউকে চিনেন ! না মানে অপুর চেহারার সাথে আপনার চেহারার বেশ মিল আছে !

তাহলে মেয়েটা অপুকে চিনে ।
অপুর বন্ধু নাকি গার্লফ্রেন্ড !
দিপু বলল, আমি অপুর বড় ভাই !

মেয়েটার চোখে এবার একটা তীব্র বিস্ময় দেখতে পেল ! দিপু বলল, আর কবীর চৌধুরী আমার বাবা !
মেয়েটার বিস্ময় আরও বেড়ে গেল । দাড়ানো অবস্থা থেকে সে এবার বসে পড়লো । দিপুর মনে হল যে মেয়েটা যেন তথ্যটা ঠিক মত নিতে পারছে না ।
-আপনি ঠিক আছেন ?
-এ্যা !
মেয়েটা ওর চেহারার দিকে তাকালো । দিপুর মেয়েটার চোখে এক ধরনের দিশেহারানোর দৃষ্টি দেখতে পেল । মেয়েটা বলল, অপু কোন দিন আপনাদের কথা বলে নি ।
-আসলে ও আমাদের সাথে থাকে । একা একা থাকে ! তুমি কি অপুর পরিচিত ?
মেয়েটা কোন কথা না বলে দিপুর দিকে কেবল তাকিয়ে রইলো । দিপু আরও কিছু বলতে যাবে তখনই দেখতে পেল তার বাবা বেরিয়ে এল রুম থেকে । দিপু আর কিছু বলার সুযোগ পেল । মেয়েটা সাথে বাবার কি কথা থাকতে পারে সেটা ভাবতে ভাবতেই সে ঘর থেকে বের হয়ে এল । চিন্তাটা মাথা থেকে দুর করতে পারলো না !



সাত

নিকিতার পুরো শরীর রাগে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছ । একটু আগে সে তার বসের রুম থেকে বের হয়ে এসেছে । বসের কথা গুলো শুনে ওর কান লাল হয়ে গেছে । মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে । ওর বস ওর নামে যা যা বলেছে তার কোনটাই সত্য নয় কিন্তু সে বসের কথার কোন জবাব দিতে পারে নি । কারন জবাব দেওয়ার মত কিছু ছিল না তার কাছে ।

কবীর চৌধুরীর সাথে তার দেখা হয়েছে সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেছে । নতুন পোস্টে সে যোগদান করেছে । তাকে প্রোমশন দিয়ে ডিবি থেকে কলাবাগান থানা ট্রান্সফার করা হয়েছে । অপু কলাবাগানে থাকে । বলতে গেলে থাকার একেবারে কাছেই । সব কিছু যে কবীর চৌধুরীর পরিকল্পনা সেটা নিকিতার বুঝতে মোটেই কষ্ট হয় নি । সব থেকে বড় কথা হচ্ছে ওকে ডিবি থেকে সরিয়ে দিয়েছে ।

যদিও এই ব্যাপারটা কবীর চৌধুরীর সাথে একদমই যায় না । অন্যান্য গড ফাদারদের ক্ষেত্রে নিকিতা যেটা দেখেছে যে তারা কোন অফিসারকে প্রথমে টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করছে । বেশির ক্ষেত্রেই তারা সফল হয়ে যায় । অল্প কিছু অফিসারকে যখন কিনতে পারে না তখন তাদের কে দুরে কোথাও বদলি করে দেয় । কিন্তু কবীর চৌধুরী সেই সবের ভেতরে নেই । সে যদি কাউকে নিজের জন্য সমস্যা মনে করে প্রথমে তাকে ওয়ার্নিং দেয় । পরিস্কার ভাবে বুঝিয়ে দেয় যে তার সাথে লাগতে যাওয়াটা মোটেই ভাল কিছু বয়ে আনবে না । তার পরেও সেই অফিসার সোজা না হয় তাহলে তাকে গুম করে ফেলা হয় । কবীর চৌধুরীর হাত এতোটা লম্বা আর তার কাজ এতো নিখূত যে কেউ কোন প্রমানই খুজে পায় না । নিকিতাকে প্রথমে ওয়ার্নিং তারপর ওর হামলাও করা হয়েছিলো । হয়তো আরেকবার হামলা করা হত কিন্তু অপুর কারনে সেটা আর হয় নি ।

আজকে নিকিতা গিয়েছিলো তার বসের কাছে । সে আগের কেসটাতে কাজ চালিয়ে যেতে চায় ! তখনই তার বস তাকে বেশকিচু কথা শুনিয়ে দেয় । সেটা নিকিতার মোটেই সহ্য হ নি কিন্তু সে কিছু বলতেও পারে নি । বস যখন বলল, তুমি ঐ কেস থেকে সরিয়ে দিয়েছি আমি । আর সেখানে কাজ করার কোন মানে হয় না ।
নিকিতা খানিকটা অবাক হয়ে বলল, মানে হয় না কেন বলছেন স্যার ?
নিকিতার রাফিক আরমান বলল, তুমি কি মনে কর যে ডিপার্টমেন্টে এসব নিয়ে কথা হয় না । ভেবো না যে তোমার পেছনে শক্ত কেউ আছে বলেই তুমি সব সময় পার পেয়ে যাবে । এটা নিয়ে ইনকোয়ারি হবে !
নিকিতা আগের থেকেও বেশি অবাক হয়ে বলল, আমার পেছনে শক্ত কেউ আছে বলতে কি বোঝাতে চাইছেন ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
রফিক আরমান বলল, ওহ কামান ! এতো অবুঝ হওয়ার ভান কর না । তোমার এখন কোন ভাবেই প্রমোশন হওয়ার কথা না । সেটা হতে আরও মাস খানেক বাকি ছিল । এতো জলদি এতো তাড়াহুড়ো করে সেটা করা হয়েছে । তাও আবার এক পোস্টে টপকে ! কে এটার পেছনে আছে সেটা তুমি বুঝি জানো না ? শোনো তোমার আগে অন্তত ১১ জন অফিসার ছিল প্রোমোশনের জন্য । তাদের কে টপকে তোমাকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে । এটা স্বাভাবিক না ।
নিকিতা কিছু বলতে গেল কিন্তু বলতে পারলো না । ও যাই বলতে যাক না কেন সেটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য হবে না ।
রফিক আরমান আবার বলল, তারপর কবীর চৌধুরীর ছোট ছেলের সাথে তোমার গভীর বন্ধুত্বের কথা তো নাই বললাম ।
নিকিতা আবারও চুপ করে রইলো ।
রাফিক আরমান বলল, তোমাকে আর কবীর চৌধুরী কেস রাখা যাবে না । আম বড় আশা করে তোমাকে এটাতে সংযুক্ত করেছিলাম । কিন্তু আমার সেটা ভুল ছিল । যাই হোক সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়ে গেছ মানিয়ে চল । এখন আসো তুমি !

রুম থেকে বের হওয়ার সময় নিকিতা অনুভব করলো ওর মুখ কান সব লাল হয়ে গেছে লজ্জা আর অপমানে । তার বস পরিস্কার মনে করছে যে সে কবীর চৌধুরীর সাথে যুক্ত হয়েছে । তার ছোট ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে । সব কিছু সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে । কিন্তু আসল কথা কেউ জানে না । নিকিতা বললেও কেউ সেটা বিশ্বাস করবে না । নিকিতা যখন বের হয়ে যাচ্ছিলো তখন ওর কাছে মনে হল সবাই ওর দিকে যেন অন্য চোখে তাকাচ্ছে । ওকেও একজন অসৎ অফিসার হিসাবে দেখছে ।
নিকিতার মাথায় কেবল আগুন জ্বলছিলো । অন্য কিছু তার মাথায় কাজ করছে না । মনে হচ্ছে সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয় । এখনই ইচ্ছে করছে চাকরি ছেড়ে দিতে ! কিন্তু চাকরি ছেড়ে দেওয়া মানেই হচ্ছে কবীর চৌধুরীর কাছে একেবারে পরাজয় স্বীকার করে নেওয়া !

নিকিতা মনে মনে ঠিক করে নিল । যদি তাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে এই কেস থেকে দুরেও সরিয়ে দেওয়া হয় তবুও সে নিজ থেকে এই কাজ করে যাবে । যেভাবেই হোক কবীর চৌধুরীকে সে দেখে নেবেই । সবার আগে এখন তাকে অপুর কাছেই যেতে হবে । এক মাত্র সেই পারবে তাকে সাহায্য করতে ।



##
নাদিয়া আরেকবার চিন্তা করলো দরজাতে টোকা দিবে কি না । নাকি এখান থেকেই চলে যাবে । এর আগেও এই বাসায় সে বেশ কয়েকবার এসেছে । শেষবার তো অপমানিত হয়েই চলে গেছে । তখনই ভেবেছিলো আর কোন দিন সে আর এখানে আসবে না । কিন্তু অপুর বাবার সাথে কথা বলার পরে সে আবারও আসতে বাধ্য হয়েছে ।

নাদিয়া সব সময় জিততে পছন্দ করে । ছোট থেকে সে সব সময় সব থেকে ভাল জিনিসটাই পেয়ে এসেছে । এর জন্য যদি মাঝে মধ্য তাকে কিছু আনফেয়ার কাজ করতে হত সেটাও সে করতো নির্ধিধায় ।

একবারের ঘটনা তার এখনও মনে আছে । তখন সবে মাত্র কলেজে পড়তো । তার সব থেকে কাছের বন্ধু আইরিনের সিনিয়ার ক্লাসেরই একটা ছেলের সাথে গভীর প্রেম শুরু হয় । নাদিয়ার ব্যাপারটা পছন্দ হল না কারন সিনিয়ার সেই ছেলেটা পুরো কলেজের ক্রাশ ছিল । এমন একটা ছেলে তার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার কথা ! তারপরেই নাদিয়া সেই অনফেয়ার কাজটা করলো । ভাল বন্ধু হওয়ার কারনে আইরিন এবং আইরিনের ফ্যামিলি সম্পর্কে সে বেশ কিছু কথা জানতো । সেটাই সে সেই ছেলেকে জানিয়ে দিল । ব্যাস ! ব্রেক আর !

পরে বেশ কিছু সেই ছেলের সাথে নাদিয়ার প্রেম চলেছিলো ।

ভার্সিটিতেও সে এমন কাজ করেছিলো কয়েকবার । বেশ কয়েকবার সে নিজের বয়ফ্রেন্ড বদছিল কেবল আরও একটু ভাল কিছুর জন্য । বেস্ট কিছুর জন্য ! তবে অপুর সাথে সে কেন যুক্ত হয়েছিলো সেটা সে নিজেও জানে না । অপুকে সে যেভাবে চিনতো তাতে ওর কিছুই সব থেকে সেরা ছিল না । হয়তো নাদিয়া সব থেকে ভাল জিনিসটা পেয়ে পেয়ে খানিকটা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো ।

কিন্তু ব্রেকআপের পর অপুর যখন ওকে সহজেই ছেড়ে চলে গেল তখন নাদিয়ার সেটা সহ্যই হয় নি । এর আগে যতবার সে ব্রেক আপ করেছে ততবারই সেই বয়ফ্রেন্ড গুলো তার আগে পিছে কুকুরের মত ঘুড়ে বেড়িয়েছে । তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য হাত জোর করেছে । কিন্তু অপু সে সবের কিছুই করে নি । হয়তো এই জন্যই নাদিয়ার সেটা সহ্য হয় নি । তারপর যখন অপুর সাথে নতুন কাউকে দেখেছে তখন সেই ব্যাপারটা আরও অসহ্যের কারন হয়ে উঠেছে । ওর যেকোন ভাবেই আবার অপুকে চাই ওর জীবনে ।
তারপর যখন সে অপুর আসল পরিচয় টা জানতে পারলো তখন সে আরও একটু মরিয়া হয়ে উঠলো । অপুকে তার এখন চাই ই চাই । যে কোন ভাবেই হোক ! তার উপর সে কবীর চৌধুরীর আশ্বাস পেয়েছে । এর থেকে বড় সুযোগ আর কিছু হতেই পারে না । এই জন্যই সে আবার এসে হাজির হয়েছে অপুর বাসার সামনে ।

দরজায় কড়া নাড়তে যাবে তার আগেই দরজা খুলে গেল । নাদিয়া অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো দরজার ওপাশে সেদিনের সেই মেয়েটা দাড়িয়ে আছে । ওর মেজাজটা আবারও একটু খারাপ হতে শুরু করলো কিন্ত সেটা সামলে নিল সাথে সাথেই। মনে মনে কবীর চৌধুরী কথা গুলো মনে করে নিল । রাগ করলে চলবে না । সামনের এই মেয়ে যে কোন ভাবেই অপুর জীবন থেকে সরিয়ে দিতে হবে ।

নিকিতা বলল, কি চাই ?
-আমি অপুর সাথে দেখা করতে এসেছি ।

নাদিয়ার একবার মনে হল যে মেয়েটা সম্ভব ওকে ঘরের ভেতরে ঢুকতেই দিবে না । কিন্তু সেটা করলো না । দরজা ছেড়ে সরে দাড়ালো । নাদিয়া ঘরে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভেতরের ঘরে চলে গেল । নাদিয়া সোফার উপর বসতে বসতে ঠিক করে নিল আসলে কি বলবে অপুকে । সম্পর্কের দিন গুলোতে অপুর দিকে তাকিয়ে সে ভাল করেই বুঝতে পারতো যে ছেলেটা ওকে দারুন পছন্দ করে । ঠিক ঠাক মত বুঝিয়ে বলতেই হবে । নয়তো মনে শান্তি পাবে না ও ! ওর চোখের সামনে অপু অন্য কাউকে নিয়ে ঘুরবে সেটা ওর সহ্যই হবে না ।


###
হাসানের দিকে তাকিয়ে কবীর চৌধুরী বুঝতে পারলো আবারও কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে । হাসানের মুখটা সে রকমই মনে হচ্ছে !
-কি হয়েছে হাসান ? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন ?
-স্যার একটা সু সংবাদ আছে!
-সু সংবাদ তা এমন চেহারা নিয়ে বলছো কেন ?
হাসান একটু ঢোক গিললো । তাররপ বলল, স্যার আজকে বিকালে ছোট স্যার বাসায় ফিরে এসেছে।
কবীর চৌধুরী এবার একটু চমকে গেল । এটা সে কোন ভাবেই আশা করে নি ।
-এটা তো সুংবাদ । এর জন্য মুখ এমন করে রেখেছো কেন ?
হাসান আরও একটু ঢোক গিলল । তারপর বলল, ছোট স্যারের সাথে ঐ লেডি পুলিশও বাসার ভেতরে ঢুকেছে ।

কবীর চৌধুরী এবার খানিকটা চিন্তিত চোখে তাকালো হাসানের দিকে । তার বাসা অনেকটাই দুর্গের মত । তার সব কাজ কর্ম মূলত এই বাসা থেকেই পরিচালিত হয় । বাসার নিচ তলাতে বিশাল বড় গুদাম রয়েছে । যদিও সেটা আজ পর্যন্ত কেউ খুজে পায় নি । সব থেকে বড় কথা আজ পর্যন্ত তার বাড়ির ভেতরে কোন পুলিশ ঢুকতে পারে নি । ঢুকতে দেওয়া হয় নি । আর এই মেয়ে কত সহজেই না ঢুকে পড়েছে ! মেয়েটাকে যেভাবে শায়েস্তা করবেন ভেবেছিলেন সেভাবে করতে পারছেন না দেখে খানিকটা অস্বস্তি লাগা শুরুখল তার ! মেয়েটা আসলে কি চাইছে ! বুঝতে পারছে কোন ভাবেই তার পিছু ছাড়বে না এই মেয়ে !

কবীর চৌধুরী আবার চিন্তায় পড়ে গেল । আবারও পরিকল্পনা বদলাতে হবে ! নতুন করে ভাবতে হব । তবে অপু যে বাসায় ফিরে এসে এতোদিন পরে সেটা জেনে খুশি লাগছে তার ।



পরের পর্ব

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×