somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ কোয়ারেন্টাইনের দিন গুলোতে প্রেম

২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দরজাতে কত সময় ধরে বেল বাজছে কে জানে ? আমি কোন মতে চোখ খুলে তাকালাম । বালিশের পাশে মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে দেখি সবা মত্র ৭টা বাজে !
মেজাজটা খারাপ হল । এই সকাল বেলা কে এল এখানে ?

পুরো শহরে লক ডাউন করা হয়েছে । করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেই মূলত এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । সবার বাইরে বের হওয়ার উপর এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । বলা হয়েছে যে দরকার ছাড়া কেউ যেন বাইরে বের হয় । আর আমার কাছে কারো দরকার থাকতে পারে না । তাও আবার এই সকাল বেলা । সরকারের আদেশ অমান্য করে কে বাসায় ?

এই আইন অমান্যকারীকে আজই জেলে দেওয়া উচিৎ ।
আরও দুবার বেল বাজলো ! বিরক্ত হয়ে উঠলাম । এই লোক আমার দেখা না পেয়ে যাবে না বুঝ যাচ্ছে । কি আর করা !
হাই তুলতে তুলতে উঠলাম । দরজা খুলে খানিকটা চমকাতে হল । কারন কোন লোক আসে নি আমার সাথে দেখা করতে । এসেছে একটা মেয়ে !

মেয়েটাকে এর আগে সম্ভবত দেখেছি আমি !
কোথায় দেখেছি ?

আমি খানিকটা জিজ্ঞসু চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । এই মেয়ে আমার কাছে কি চায় ?
মেয়েটি বলল, একটু হেল্প দরকার !
-বলুন !
-আমাকে একট কফি ধার দেওয়া যায় !

আমি তখনই মেয়েটাকে চিনতে পারলাম । আরে এই মেয়ে তো আমার নিচের ফ্লোরে থাকে । আমার আগেই বুঝা উচিৎ ছিল পোশাক দেখে । মেয়েটার পরনে একটা টিশার্ট রয়েছে । সেই একটা টাইট থ্রিকোয়াটার প্যান্ট । মুখে কোন মেকাপ নেই । চুল গুলো একটু অগোছালো । কোন মেয়ে যখন এই অবস্থায় অন্যের বাসায় যাবে না । সম্ভবত আমার মতই মেয়েটাও ঘুমিয়ে ছিল এতো সময় ।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতো বাসা থাকতে এই মেয়ে আমার কাছে কফি ধার চাইতে কেন আসলো ? এই এপার্টমেন্টে মোট ৪০টা ফ্লাট আছে । প্রতি ফ্লোরে পাঁচটা । মেয়েটার ফ্লোরে আরও চারটা ফ্লাট থাকার কথা । সে সেখানে না গিয়ে সরাসরি আমার কাছে কেন এল ? তার উপর এই মেয়ের সাথে আমি এর আগে কথাও বলি নি ।

আমি এক ভাবে দাড়িয়ে আছি দেখে মেয়েটা বলল, অবাক হচ্ছেন ?
-জি একটু হচ্ছি ?
-অবাক হচ্ছেন যে এই মেয়েকে হঠাৎ আমার কাছেই কেন কফি চাইতে এল। তাই না ?
-তা ঠিক !
মেয়েটা এবার মিষ্টি করে হাসলো । তারপর বলল, পুরো এলাকার কফি তো আপনি কিনে এনেছেন । পুরো এলাকাতে তো আর কাউকে কফি খেতে দিবেন না । সব কফির মজুদ আপনার কাছে ।

কথা খানিকটা সত্য আসলে । আমার কাছে ব্যাপারটা হচ্ছে আমি একদিন ভাত না খেয়ে থাকতে পারি কিন্তু একদিন কফি না খেয়ে থাকতে পারি না । আমাকে সময় মত কফি খেতেই হবে । যখনই শুনলাম শহর লকডাউন করা হচ্ছে সবার আগে আমি এই কফি কিনতে গেলাম । নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হয়তো সাপ্লাই অব্যহত থাকবে কিন্তু এই সব চা কফির সরবারহ নাও থাকতে পারে । তাই এলাকাতে মোটামুটি যত কফি ছিল সবই আমি কিনে এনেছি । এবং যখন কফি কিনে আমি উপরে উঠছিলাম তখন এই মেয়ে আমার সাথে লিফটে ছিল । সে আমাকে দেখেছে ।

আমি বললাম, না না কফি দেওয়া যাবে না ।
মেয়েটা এবার চোখ কপালে তুলে বলল, দেওয়া যাবে না মানে । ফাইজলামি পাইছেন ? দেখুন খুব ভাল করে বলতেছি কফি নিতে এসেছি । দিয়ে দিন । টাকা দিয়েই কিনে নিবো দরকার হলে । কিন্তু কফি ছাড়া আমার চলবে না । সকালবেলা খালি পেটে কফি না খেলে আমার পুরো দিন কোন কাজ করতে পারবো না । অফিস ছুটি দিয়েছে কিন্তু একগাছা কাজ ধরিয়ে দিয়েছে । এই কাজ আজ থেকেই শুরু করতে হবে !

আমি কি করবো বুঝতেই পারলাম না । এই মেয়ে যে এই ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি । অবশ্য দোষ যে আমার খানিকটা নাই সেটা বলবো না । আমার যেমন কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে ঠিক তেমনি ভাবে অন্য কারো এই অভ্যাস থাকতে পারে । আমার যেমন কফি ছাড়া চলে না, অন্য কারোও ঠিক এমনটা হতে পারে ।

মেয়েটা সম্ভবত অধৈর্য্য হয়ে গেল । অবাক করে আমাকে খানিকটা ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো । ছেলে মানুষ হলে না হয় তার সাথে ধস্তাধস্তি করে বের করা যেত । কিন্তু এই মেয়েকে তো কোন ঘর থেকে আমি বের করতে পারবো না যদি না সে ইচ্ছে করে বের হতে চায় ।
আমি বললাম, আপনি কোথায় যাচ্ছেন ? আরে আজিব আপনি এভাবে অন্যের ঘরে ঢুকে পড়তে পারেন না ।
মেয়েটা আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, বাহ ! আপনি অন্যের কফি সব একা কেড়ে নিতে পারেন আর আমি পারবো না ঘরে ঢুকতে ?

কেড়ে ! রিয়্যালি ! মেয়েটার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন আমি টাকা দিয়ে কিনি নাই । জোর করে নিয়ে এসেছি !
মেয়েটা সম্ভবত রান্না ঘর খুজছে । কফির বাক্স হাতে পেলে সেটা নিয়ে চলে যাবে । হয়তো টাকা দিয়ে যাবে কিন্তু সেটা তো হতে দিতে পারি না । মেয়েটাকে এক কাপ কফি খাইয়ে বিদায় করি আপাতত । বললাম, আচ্ছা আপনি বসুন বসার ঘরে । আমি আপনার জন্য কফি বানিয়ে আনছি !

এইবার দেখলাম মেয়েটা একটু থামলো । তারপর আমার দিকে ফিরে তাকালো ! বলল, দ্যাটস বেটার ! আমি কফিতে চিনি কম খাই । একেবারে ব্লাক কফি । আধা চামচ চিনি দিবেন !



কফি বানাতে বেশি সময় লাগলো না । আমি এখনও মুখ ধুই নি তারপরেও মেয়েটার সাথে বসে এক কাফ কফি খেলাম । সকাল বেলাটা কফি দিয়ে শুরু না হলে আসলে কাজ ঠিক মত হয় না । মেয়েটার মত আমারও এই অভ্যাস !

খেতেই মেয়েটার নাম জানলাম । মেয়েটার নাম আদ্রিতা হাসান । একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে । এই সময়ে তার অফিস থেকে বলা হয়েছে যেন বাসা অফিস থেকে ।

মেয়েটা কফি খেয়ে বিদায় নিল । আমি ভাবলাম যে যাক এবার মত ঝামেলা শেষ হল । মেয়েটা নিশ্চয়ই আর আসবে না । কিন্তু আমি তখনও বুঝি নি যে ঝামেলা এখনও শেষ হয় নি । ঠিক ঠিক বারোটার দিকে মেয়েটা আবারও এসে হাজির । এবার দেখলাম মেয়েটা বেশ সেজে গুজেই এসেছে । সেজে গুজে বলতে বিয়েবাড়ির সাজাগোজ না । স্বাভাবিক ভাবে মেয়েটা যেমন করে ফিটফাট থাকে, সেই ভাবেই এসেছে । মেয়েটা একটা এইবার একটা টিশার্ট পরে আছে । তবে সেটা সাদা রংয়ের । সাথে একটা সাদা জিন্সের প্যান্ট পরে আছে । গলায় একটা সাদা স্কার্ফ । ঠোটে হালকা লিপস্টিপ দেওয়া ! মেয়েটার হাতে একটা ল্যাপটপ !

আদ্রিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হাই !
-আপনি ?
-হ্যা আমি !
-আবার !!
-আরে বাবা আজকে বাসার বইরে যাওয়ার সময় পেলাম কোথায়? আমি দিনে চার কাপ কফি । আজকে পুরোটাই আপনার বাসায় !
আমি বললাম, এসবের মানে কি ! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না । দেখুন এসব ...
আদ্রিতা আমার কথা শেষ করতে দিল না । সে ল্যাপটপ নিয়ে আমার ঘরে ঘুরে পড়লো । এমনি কি আমার বসার ঘরেও বসলো না । আমার বেড রুম ছাড়াও আরও একটা ঘর আছে । আমার স্টাডি রুম । আমি এখানে বসেই কাজ কর্ম করি । টেবিলের পাশে একটা খাট রাখা আর একটা বুকসেলফ আছে এখানে। আদ্রিতা চলে এলে গেল সেখানে । বিছানার উপরে বসে পড়লো । তারপর ল্যাপটপ কাজ শুরু করলো । এমন একটা ভাব যেন এটা আসলে ওর নিজেরই ঘর । আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । আদ্রিতা আমার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের মনে কাজ করতে শুরু করলো ।

দুপুর দুইটার দিকে আমার বাসায় কলিংবেল বেজে উঠলো । আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলাম এক মাঝ বয়সী মহিলা আমার বাসার সামনে দাড়িয়ে । তার হাতে একটা বড় ট্রে। সেখানে বেশ কিছু খাবার দাবার রয়েছে । দুপুরের খাবার । আমি মহিলাকে ঠিক চিনতে পারলাম না । আমার জন্য সে রান্না করে নিয়ে এসেছে ভাবতেই মনটা ভাল হয়ে গেল ।
কিন্তু সেই মন ভাল বেশি সময় থাকলো না । আমার পেছনে আদ্রিতা এসে দাড়িয়েছে । আমাকে খানিকটা উপেক্ষা করে সামনের মহিলাকে বলল, আরে দিন দিন ।
সম্ভবত মহিলা আদ্রিতার বাসায় কাজ করে । আদ্রিতা আমার সামনেই ট্রেনে নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল । মহিলা কিছু সময় আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলো । আমি যদিও কিছুই বুঝতে পারছি না আসলে এখানে কি চলছে !

আমি দরজা বন্ধ করে যখন ঘরে ঢুকলাম দেখি আদ্রিতা খাবার সাজাতে শুরু করেছে টেবিলে । বেশ ভাল পরিমান খাবারই নিয়ে এসেছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কই বসুন । আসুন খাওয়া শুরু করা যাক !
আমি আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললাম, আচ্ছা এসবের কি মানে আছে । আপনি কফি খাবেন ভাল কথা ! কিন্তু এভাবে ?
-হ্যা এভাবেই ! শুনুন আপনি যে কাজটা করেছেন সেটা অন্যায় করেছেন ।
-আমি কি চুরি ডাকাতি করেছি ?
-না । চুরি ডাকাতি করেন নি তবে অন্যায় করেছেন ঠিকই । কেবল একবার চিন্তা করেন আপনার টাকা আছে বলে আপনি দোকানের সব চাল কিনে বাসায় মজুত করে রাখলেন কেবল নিজের ভালর জন্য । যে সামনে আপনি আর আপনার পরিবার খাবেন । এখন এলাকাতে আর কেউ চাল কিনতে পারলো না । এখন এটা কি আপনার অন্যায় নয় ? দেখুন ক্রাইসিসের সময় কেবল নিজের কথা ভাবাটা অন্যায় ।

আমি কিছু বলতে পারলাম না । কারন কথাটা মিথ্যা না । কফি একটা বিলাশ দ্রুব্য তাই কোন সমস্যা হয় নি হয়তো । কিন্তু আমি যদি সত্যই নিত্য দরকারী কোন খাদ্য এই রকম নিজের জন্য কেবল মজুত করে রাখতাম তাহলে ব্যাপারটা মোটেই ভাল হত না । আমি বললাম, আচ্ছা আমি বুঝতে পারছি যে আামর উচিৎ হয় নি । আই এম সরি । আমি আপনাকে একটা প্যাকেট দিয়ে দিই । আপনি নিজে যান । এবং অন্য কারো যদি এই রকম কফির অভ্যাস থাকে আমি তাকেো দিয়ে দিবো ।
আদ্রিতা বলল, ভাল সিদ্ধান্ত । তবে এই শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে ।
-কি শাস্তি?
-এই যে এই কয়দিন আমি আপনাকে এসে জ্বালাবো । আপনার বাসায় এসে কাজ করবো আর আপনি কফি বানিয়ে খাওয়াবেন ।
-মানে কি !
-এটাই মানে । তবে আপনার সুবিধা হচ্ছে দুপুরের খাবার আমার বাসা থেকে আসবে । বুঝেছেন ?

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । কিছু বলে সম্ভবত লাভও হবে না । এই মেয়ে সহজে যাবে না । আদ্রিতা বলল, আসলে নিজের বাসায় বসে অফিস অফিস ফিল আসে না । আপনার বাসায় এসে কাজ করা যাবে । এখন আসুন খাওয়া দাওয়া করা যাক !

এভাবে সাত দিন পার হলে গেল । আমার দুইজনের রুটিন এই ভাবেই চলতে লাগলো । আমি মিথ্যা বলবো না যে আমার সময় খারাপ গিয়েছে । সত্যি বলতে প্রথমদিন আমার একটু বিরক্ত লাগলেও পরের দিন গুলো কেমন যেন আমি আদ্রিতার জন্য অপেক্ষাই করতাম । মানুষ তো এখন মাত্র কোয়ারেন্টাইনে গেল ভাইরাসের ভয়ে তবে আমি আমার সারা জীবনেই কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম । মানুষ থেকে দুরে থেকে সব সময় । একা একা সময় কাটাতে আমার ভাল লাগলো । আসলে এই ভাবে আগে কোন মেয়ে আমার সাথে এই রকম করে কোন আচরন করে নি । আমি যেমন সবার থেকে দুরে থেকেছি তেমনি সবাই আমার থেকে দুরে থেকেছে । এই কারণেই হয়তো মেয়েটাকে আমার ভাল লেগে গেল ।

কিন্তু আট নম্বর দিনে আদ্রিতা আর এল না । আমি সকাল বেলা কফি বানিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু সে আর এল না । প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেয়েটা আমার বাসায় আসতো কফি খেতে । কিন্তু আজকে আর এল না । এমন কি যখন এগারোটা বেজে গেল তখনও আদ্রিতা এল না । খানিকটা কৌতুহল নিয়ে আমি হাজির হলাম ওর বাসায় । দরজা নাড়াতে যাবো দেখি দরজা খোলা । ঢুকবো কি না ভাবছি এভাবে ঘরের ভেতরে ঢোকা উচিৎ হবে কি না সেটা ভাবছি এমন সময় মনে হল ভেতর থেকে কেমন একটা গোঙ্গানীর মত আওয়াজ হল ।

আমি আর চিন্তা না করে ঘুরে পড়লাম ভেতরে । আমার মতই ফ্ল্যাট । আমি মাস্টার বেড রুমে ঢুকে পড়লাম । দেখি আদ্রিতা বিছানায় পড়ে আছে । ওর চেহারার দেখেই মনে হচ্ছে ওর শরীর খারাপ । আমি কাছে যেতেই ও চিৎকার করে উঠলো, কাছে আসবেন না । সম্ভবত আমার করোনাতে ধরেছে ।
বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো ।
আদ্রিতা বলল, আপনি চলে যান । বুয়াকে চলে যেতে বলেছি । সে সম্ভবত চলে গেছে ।
আমি একভাবে দাড়িয়েই রইলাম । তারপর বসলাম ওর বিছানায় । বললাম, গত সাতদিন আপনি আমার বাসায় নিয়মিত গেছেন করোনা হলে আর লাভ নেই । আমি নিজেও ইনফেক্টেড !
এই বলে আমি ওর কপালে হাত দিলাম । সত্যিই জৃে পুড়ে যাচ্ছে শরীর । আমার মনে হল যে সবার আগে ওর মাথায় পানি ঢালা উচিৎ । ওকে খানিকটা জোর করেই শুইয়ে দিলাম । তারপর ওয়াশরুম থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে এসে মাথায় পানি ঢালতে শুরু করলাম ।

বেশ কিছু সময় পানি দেওয়ার পরে মনে হল ওর জ্বর সম্ভবত একটু কমেছে । তোয়ালে দিয়ে ওর মাথা মুছিয়ে দিলাম যত্ন করে । কেন এতো কিছু করছি আমি নিজেই জানি না । আমি কোন দিনই এমন ছিলাম না । মানুষের ঝামেলা নিতে আমার মোটেও ভাল লাগে না । সব সময় এগুলো থেকে আমি দুরে দুরে থেকেছি । আর আজ আমি নিজেই এই কাজ করছি । কেন করছি ?

আরও কিছু সময় পরে দেখলাম দরজা কলিংবেল বাজছে । দরজা খুলে অবাক হলাম । বুয়া ফিরে এসেছে । এবং সে একা আসে নি । একজন ডাক্তার নিয়ে ফিরেছে ।
ডাক্তার প্রথমে একটু ভয়ে ভয়ে আদ্রিতার সাথে কথা বলছিলো । তবে সব কিছু শুনে একটু আশ্বস্ত হল । বলল, মনে হচ্ছে না যে করোনা হচ্ছে । কেবল জ্বর ছাড়া আর কোন লক্ষণ নেই । তারপরেও বলবো একবার পরীক্ষা করিয়ে নিন । আপাতত এই ঔষধ গুলো খেয়ে নিন

আমি রাতে আদ্রিতার অবস্থা বেশ ভাল হয়ে উঠলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার ভয় করলো না ? সত্যিই যদি করোনা হত?
-হলে হত ! আগেই বলেছি ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে । সো এভাবে ছেড়ে যাওয়াটা মোটেও যুক্তি সঙ্গত হত না । আর একা থাকার কষ্ট অনেক । যখন মনে হয় আপনি সত্যিই একা এই জগতে । আপনার পাশে দাড়ানোর মত কেউ নেই তখন যে অনুভুতি হয় সেটা অনেক বেশি কষ্টের ।

আদ্রিতা আমার দিকে অনেক টা সময় তাকিয়ে রইলো । ঐ চোখের ভাষায় অন্য কিছু ছিল ।

কয়েক দিনের ভেতরে আদ্রিতা একেবারে সু্স্থ হয়ে ঊঠলো । এবং তবে সকাল বেলা আর আমার বাসায় এসে হাজির হল না কফি খাওয়ার জন্য । আবারও শরীর খারাপ করলো কি না দেখতে যখন ওর বাসায় সামনে হাজির হলাম । এবারও দেখলাম দরজাটা হাট করে খোলা । এবং ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামিচির আওয়াজ আসছে । আদ্রিতা কারো সাথে চিৎকার করে কথা বলছে । আমার মনে হল এখনই চলে যাওয়া উচিৎ । কিন্তু হঠাৎই আমি দরজাতে আদ্রিতাকে দেখতে পেলাম । সে কোন কিছু না বলে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরলো । তারপর এক প্রকার জোর করেই আমাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল । ভেতরে বুয়াকে দেখতে পেলাম এক পাশে দাড়িয়ে আছে । সোফার উপরে এক মাঝ বয়সী মানুষ বসে আছে । তার মুখ খানিকটা গম্ভীর । আদ্রিতা ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলল, জানতে চেয়েছিলেন না ? এই যে সেই ছেলে । এই ছেলেকেই আমি বিয়ে করবো ।

ভদ্রলোক কিছু সময় আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো । আমি নিজেও খানিকটা অবাক চোখে আদ্রিতার দিকে তাকালাম । কি বলে এই মেয়ে ! আমি তো এই সবের কিছুই জানি না ।

ভদ্রলোক বলল, দেখো আদ্রি আমার অমতে বিয়ে করলে কিন্তু সম্পত্তি থেকে একটা পয়সাও তুমি পাবে না !
-লাগবে না । তুমি এখনই চলে যাও এখান থেকে । তোমার এই জেদের জন্য বড় আপুর জীবনটা নষ্ট করেছ । আমার জীবনটা তোমাকে নষ্ট করতে দিবো না । আমি যদি জীবনে বিয়ে করে পস্তাই তো নিজের বুদ্ধি আর ইচ্ছেতে পস্তাবো । তুমি এখনই চলে যাও নয়তো কিন্তু দারোয়ান ডেকে বের করে দিব ।

ভদ্রলোক তাহলে আদ্রিতার বাবা । আমার এখনে কোন ভূমিকা নেই । বুঝলাম চুপ থাকাই শ্রেয় ! আদ্রিতার বাবা আমার আর আদ্রিতার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে চলে গেল আমাদের সামনে দিয়ে । সে চলে যেতেই দেখলাম আদ্রিতা সোফাতে বসে পড়লো । আমার কি হল আমি জানি না আমিও ওর ঠিক পাশে গিয়ে বসলাম । তারপর বললাম এতো কি হল?
-বাদ দিন । অনেক লম্বা কথা ।
-আচ্ছা বাদ থাকুক । আজকে অফিস যাবেন না ?

আদ্রিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, না । অফিসে বসে বসে নাকি আমি প্রেম করছি এই অভিযোগে বস আমাকে অফিস থেকে ছুটি দিয়েছে ।

লাইনটা বলেই ও হেসে ফেলল । আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । আদ্রিতা বলল, বাবা এসে ভালই করেছে । যদি সে না আসতো তাহলে হয়তো আপনাকে এভাবে বলাই হত না । তবে রাগের মাথায় যাই বলি না কেন এটা আমার মনের কথাই ছিল । এখন অবশ্য আপনার ইচ্ছের ব্যাপার । আপনি না চাইলে ....

আমি হাসলাম কেবল । এই কটা দিনেই মেয়েটার সাথে আমার কোথায় যেন একটা বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে । নয়তো এখন কেবল সারাটা সময় কেবল মেয়েটার কথাই ভাবি কেন আমি । আমি আদ্রিতার হাত ধরলাম । ঠিক করলাম যে এই হাত আর ছাড়বো না । এই কোয়ারেন্টাইনের দিনে কিছু তো কাজের কাজ হল ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৩৫
৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×