somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দ্য ডক্টরস

২২ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃষা খানিকটা বিরক্ত চোখে বুয়ার দিকে তাকালো । বুয়া আজকে দুইদিন পরে বাসায় এসেছে । এখন দেশের পরিস্থিতি ভাল না । ওকে বেশির ভাগ সময়ই হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে । বাসায় আসার সময় পাচ্ছে খুব কম । তার উপর যদি বুয়া এভাবে কামাই করে তাহলে ঘর সংসারের কি অবস্থা হবে কে জানে ! তৃষা বলল, কি ব্যাপার কাজে আসছো না কেন ?
বুয়া খানিকটা কাচুমচু কন্ঠে বলল, আফা আমি আর আফনের বাড়িত কাম করুম না ।

তৃষা এবার বিরক্ত হল না । বরং খানিকটা বিস্মিত হল । বুয়াকে সে চেনে অনেক দিন । বুয়া তার খুবই ভক্ত । বুয়ার টাকা পয়সার সমস্যা থেকে শুরু করে বুয়া যখনই কোন সমস্যাতে পড়ে তৃষা সবার আগেই এগিয়ে আসে। মাঝে মাঝে বুয়াকে তো কিছু বলতেও হয় না। তৃষা নিজ থেকেই সাহায্য করে । কদিন আগেই বুয়ার বড় মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার ফি দিতে পারছিলো না । তৃষা সেটা জানতে পেরে বুয়াকে টাকা দিয়ে দিল । এবং সাথে সাথে এও বলে দিল যে এই টাকা তাকে ফেরৎ দিতে হবে না । এই রকম আরও কত সাহায্য যে করেছে তার ঠিক নেই । আর আজকে বুয়া বলছে সে তার বাসায় কাজ করবে না । তৃষা বলল, কেন করবে না ?
বুয়া চুপ করে রইলো । কিছু যেন বলতে চেয়েও বলতে পারছে না । হঠাৎ পেছন থেকে তাইশা এসে বলল, আম্মু রাহেলা আন্টি মানা করেছে ।
তৃষা নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, মানে ?
-মানে জানো না ? তুমি না ডাক্তার !
-তো ?
-রাহেলা আন্টি মনে করে যে আমাদের বাসায় কাজ করলে বুয়ার কাছ থেকে তার বাসায় করোনা ভাইরাস চলে যাবে । তিনি আমাদের বিল্ডিংয়ের সব ছেলে মেয়েদের বলে দিয়েছে যেন আমার সাথে না খেলে !

কথা টা শুনতেই তৃষার মাথায় আগুন ধরে গেল । এই অকৃতজ্ঞ মানুষ গুলোর জন্য সে সহ এতো ডাক্তারেরা কষ্ট করে যাচ্ছে । তৃষার বুয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, এটাই কি কারণ ?
-জে আফা !
-এই বাসার কত গুলো ফ্ল্যাটে কাজ কর তুমি ?
-আপনে বাদ দিয়া আরও তিন বাসা ?
-কত পাও সব মিলিয়ে ?
-ছয় হাজার টেকা দেয় !
-আমি তোমাকে সাত হাজার দিবো । ওদের বাসার কাজ ছেড়ে দাও ! কেবল আমার বাসায় কাজ কর ! করবা ?
বুয়ার মুখ উজ্জল হয়ে গেল । সে তৎক্ষনাত বলল, জে আফা করুম ।
-তোমার করোনার ভয় নাই তো ?
-জে না আফা ! আমি জানি আফনে কিরাম সাবধান মানুষ । তাইশা মামনির কিছু হয় এরাম কাম আফনে কুনো দিন করবেন না !

তাইশার দিকে তাকিয়ে তৃষা বলল, মামনি কটাদিন ছাদে যাওয়ার দরকার নেই । বাবার সাথে খেলবে কেমন ! বাবা চলে আসবে এখনই। তোমার বাবার অফিস কাল থেকে বন্ধ থাকবে । সে বাসায় থাকবে ।
-আচ্ছা মামনি । আমার বাবার সাথেই খেলতে বেশি ভাল লাগে !
-গুড ! আর সব সময় হাত পা পরিস্কার রাখবে ।

তারপর বুয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি বাসায় এসে আগে ভাল করে গোসল করবে । মনে থাকবে ? যেহেতু এখন অন্য কারো বাসাতে যাচ্ছো না তাই সকাল বেলা আসবে । এখানে গোসল দিবে খাবে, কাজ করবে, টিভি দেখবে বিকেলে যাবে । মনে থাকবে ?
-জে আফা !

তৃষার মেজাজটা তবুও ভাল হল না । এই মহিলাকে সে দেখে নিবে । এই মহিলা শুরু থেকেই এই ঝামেলা করে আসছে । একবার সামনে পড়ুক । তখন মহিলাকে কড়া কথা শুনিয়ে দিবে। তৃষার সামনে ঠিকই রাহেলা বানু পড়লো তবে অন্য পরিস্থিতিতে ।


তৃষা রোগীদের একবার রাউন্ড দিয়ে এসে নিজের চেম্বারে এসে বসলো । আজকে যেন একটু বেশিই ক্লান্ত লাগছে তার । তাইশার সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছে হল ।
অপুর ফোনে ভিডিও কল দিতেই অপু সেটা ধরলো সাথে সাথে। ভিডিও কলে তাইশাকে দেখ গেল একটু দুরে বসে কি যেন আঁকছে । দুজনই ড্রয়িং রুমে বসে আছে । টিভি চলছে ।
-বাবা মেয়ে কি করছো ?
-দেখছেই পাচ্ছো ? একটু আগে তাইশার সাথে ছবি আকার প্রতিযোগিতা দিয়েছি আমি ।
-তারপর ?
-যথারীতি হেরে গেছি ।
-হারবাই । কার মেয়ে দেখতে হবে না ?
-ইস ! আমার মেয়ে যেন না !
-কি করেছো শুনি ? আমার মেয়ে ! আমার !
-আইছে আমার !
-এই ভাষা ঠিক করো !
-আচ্ছা বাবা ! আসছে আমার ! এই শুনো শুনো ....
-কি হল ?
-তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে ?
-কি সারপ্রাইজ ? বল ।
-আমি বলবো না । তবে একটু পরেই টের পাবা !
-কি হয়েছে বল না !
-আহা টের পাবা । আগে দেখো তাইশা কি একেছে ! তাইশা মাকে ছবি দেখাও ।

তৃষা দেখতে পেল তাইশা এগিয়ে এল । মোবাইলে ওর খাতাটা এগিয়ে দিল । দেখতে পেল একজন ডাক্তার রোগীদের দেখছে । পাশে লেখা আমার আম্মু !

তৃষার মনটা মুহুর্তেই ভাল হয়ে গেল । সব ক্লান্তি দুর হয়ে গেল সাথে সাথেই।

সেই সময়েই বাইরে একটু হইচইয়ের আওয়াজ পাওয়া গেল । তৃষা বলল, এই শুনো ঝামেলা হয়েছে কিছু একটা । আমি রাখি কেমন !
-আচ্ছা । সাবধানে থেকো !

ফোন রেখে দিতেই তৃষা বাইরে এল । এসেই একটু অবাক হল । ওদের রাহেলা বানু আর তার স্বামী গার্ডের সাথে কথা কাটাকাটি করছে । ওকে দেখতেই রাহেলা বানু চিৎকার করে ওকে ডাক দিল । তৃষা এগিয়ে যেতেই গার্ড বলল, ম্যাডাম ইনারা আসলে করোনা ইউনিটে ঢুকতে চাচ্ছে । বলছে আপনাকে নাকি চিনে !
তৃষা বলল, হ্যা চিনে । যাও তুমি আমি দেখছি ।
তারপর রাহেলা বানুর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনারা আসুন আমার সাথে !

নিজের চেম্বারে বসালো । তৃষা বলল, বলুন কি সমস্যা ?
রাহেলা বানু এবার হঠাৎ করেই কেঁদে ফেলল । তৃষা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে উঠলো । বলল, আরে কি হয়েছে বলবেন তো !
তারা যা বলল তার সারমর্ম হচ্ছে রাহেলার বানুর বড় মেয়ে আর মেয়ে জামাই বাহরাইন থাকতো । কারোনার কারনে তারা দেশে চলে এসেছে । দেশে আসতে গিয়ে পুলিশ তাকে আটকে দিয়েছে এয়ারপোর্ট থেকেই । তাদের শরীরে করোনার লক্ষ্যন দেখা গিয়েছে । তাদের প্রথমে আইসোলোশনে এবং পরীক্ষার পরে করোনা পজেটিভ আসার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । এবং এই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । এখন রাহেলা তাদেরকে একটু দেখতে চায় !

তৃষা বলল, এভাবে তো আসলে দেখা করার নিয়ম নাই ।
-মা তুমি প্লিজ একটু কিছু কর ! চাইলেই পারবা ! আমি জানি ! একটু সাহাস্য করো !

তৃষা খুব ইচ্ছে করলো সেদিনের কথা তুলতে । কিন্তু তুলতে পারলো না । অসহায় মানুষকে আঘাত করা ওর মন মানসিকতা না । এদেশের অসংখ্যা মানুষ আছে এই রাহেলা বানুদের মত যারা নিজেদের ভাল ছাড়া আর কিছু বোঝে না । যেই মানুষ গুলো তাদের জন্য কষ্ট করে যাচ্ছে, ঝুকি নিচ্ছে নিজেদের জীবন সেই মানুষ গুলোকেও এরা এক ঘরে করে দিতে পিছপা হয়না ।

তৃষা এক কলিগকে তার বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে কেবল সে এখানে কাজ করে বলে । তৃষা নিশ্চিত সে যদি এই মহিলার বাসায় ভাড়া থাকতো এই মহিলাও তাই করতো । তৃষা বলল, আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায় !

রাহেলা বানু আর তার স্বামীকে তার মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে দেখার সুযোগ করে দিল সে । তবে কথা হল না । কেবল দুর থেকে দেখতে দেওয়া হল । আসার সময় তৃষার হাত ধরে মহিলা আবারও কেঁদে উঠলো । তার মেয়েকে যেন ভাল ভাবে দেখা হয় সেই অনুরোধ করলো বারবার । তৃষা তাকে আস্তত্ব করলো যে এখানে তার মেয়ে ভাল থাকবে । তারা সর্বোচ্চ সেবা দিবে ।



তৃষায় বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল । বাসায় ফিরে দেখে অপু এক মনে সোফাতে বসে বই পড়ছে । তাইশা ওর কোলে ঘুমাচ্ছে । ওকে ঢুকতে দেখে উঠে বসতে গেল । তৃষা ওকে উঠতে মানা করলো । দিন শেষে শত ক্লান্তির পরেও এই দুইজনের মুখ দেখলে তৃষার সব ক্লান্তি দুর হয়ে যায় । এদের নিরাপদ রাখতে অন্য সব মানুষকে সেবা দিয়ে যেতে হবে । যত সে কাজ করবে ততই এরা নিরাপদ থাকবে । মানুষ তাদের কে না চাক, অন্যায় আচরন করুক, সে তবুও এদের জন্য কাজ করে যাবে । যেতে হবে !

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৩৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×