somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু-গল্পঃ দৃশ্যটা এমন হলেও হতে পারতো !

২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি কার্টেসীঃ রহমান আযাদ

সামিনা হকের মনটা মেজাজটা বেশ ফুরফুরে লাগছে । আলিপুরের বাজারে গিয়েছিলেন পরিদর্শনে । বাজারে লোকজন একেবারে নেই । একেবারে সব ফাঁকা । কয়েকটা দোকান খোলা । কেবল নিত্য দরকারি আর কাঁচা বাজারের দোকান গুলো খোলার অনুমূতি আছে এখন। বাকি সব কিছু বন্ধ থাকবে। সব কিছু ঠিক মত চলছে কি না সেটাই দেখতে গিয়েছিলেন । চলেই আসছিলেন তখন দেখতে পেলেন একজন ইলিশ মাছ নিয়ে বসে আছে । হাত দিয়ে দেখলেন সেগুলো একেবারে তাজা । সম্ভবত এখনই আড়ত থেকে এসেছে । চট জলদি ছয়টা মাছ কিনে নিলেন । সামিনার স্বামী আর ছোট ছেলেটা এই ইলিশ মাছ অনেক পছন্দ করে । আজকে বাসায় গিয়ে গরম গরম ভেজে দিতে হবে ।

প্রায় দুই বছর ধরে তিনি এই উপজেলাতে কর্মরত আছে । এখানকার ভূমি উপজেলা সহকারী কমিশনার সে। নিত্য দিন নানা সময়ে নানান স্থানে যাতায়াত করতে । প্রতিটা সময় তিনি এখানে অসংখ্যা মানুষ দেখতে পেতেন । সব দোকান পাট খোলা থাকে । মানুষ জন তাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত থাকে । কিন্তু আজ কদিন থেকে সব যেন থেমে গেছে । এক মরণ ঘাতি ভাইরাসের ছোবল থেকে বাঁচতে সরকার সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে । মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে । আর মানুষ যেন ঘরের ভেতরে থাকে সেই ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । সেই কাজটাই সে করছে নিষ্ঠার সাথে ।

এমন সময় ফোন বেজে উঠলো । ওসি সাহেব ফোন দিয়েছে ।
-হ্যা বলুন বদলুল সাহেব ।
-ম্যাডাম একটু রসুল পুর বাজাতে আসতে হবে ।
-আমি রাস্তাতে আছি । আসছি । কি হয়েছে ?
-ম্যাডাম কজন বাজার বসিয়েছে । আমরা মানা করেছিলাম ।
-আচ্ছা ধরে রাখুন । আমি আসছি ।

সামিনা হক ফোন রেখে সামনের দিকে তাকালো । রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা । ড্রাইভার বেশ দ্রুতই গাড়ি টানছে । খুব বেশি সময় লাগলো না বাজারে পৌছাতে । সেখানে গিয়ে দেখতে পেল ওসি সাহেব তিন বৃদ্ধকে দাড় করিয়ে রেখেছে ।

তিনজনের শরীরই হাড় জিরজিরে । পরনে লুঙ্গি আর সেন্ড গেঞ্জি । একজনের আমার গেঙ্গিটা ছেড়া । একেবারে প্রান্তিক মানুষ দেখলেই বোঝা যায় । এই করোনা ভাইরাসের কারণে সব থেকে বেশি বিপদে পড়ে এই মানুষ গুলো । সামিনা হক তিন জনের দিকে এগিয়ে যেতেই ওসি সাহেব এগিয়ে এল । তার দিকে তাকিয়ে ওসি সাহেব বললেন, একে তো এখানে মানা করা সত্ত্বেও এরা নিজেদের মালামাল নিয়ে বসেছে । তার উপরে মাস্ক পরে নি । দুইটা অপরাধ করেছে । এদের কি করা উচিৎ ? শক্ত একটা মাইর দিলে অন্যেরা সাহস করবে না ।
সামিনা হক ওসি সাহেবের কথায় খুব বেশি মনযোগ দিলেন না । তিনি আরও একটু এগিয়ে গেলেন । বৃদ্ধ তিন জনের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন, কি ব্যাপার মানা করা সত্ত্বেও কেন বের হয়েছেন ?
বৃদ্ধ বলে উঠলো, কি করমু মেডাম আমাদের তো জমা টাকা নাই । খাইতে তো হইবে ।
-তা মাস্ক পরেন কি কেন ?
-একটা মাসকের দাম ৪০ টেকা । চাল কিনতে পারতাছিনা আর মাসক !

ওসি বদলুল বৃদ্ধ লোকটার দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলল, চুপ ! মুখে মুখে কথা ।
সামিনা এবার একটু বিরক্ত হল । সে এখানে দাড়িয়ে আছে । তার পরেও ওসি বদলুল কথা বলছে । সে ওসি সাহেবের দিকে তাকাতেই সে চুপ করে গেল । সামিনা পেছন দিকে তাকিয়ে ডাক দিল, রুপম এই রুপম ।
রুপম তার ড্রাইভারের নাম । সে দৌড়ে এল ।
-জি ম্যাডাম ।
দেখো তো আমার গাড়ির পেছনে কয়েকটা মাস্ক আছে । ওগুলো নিয়ে আসো ।

বদলুল সাহেব এগিয়ে এসে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তাকে হাতের ইশারাতে থামিয়ে দিল । রুপম ততক্ষনে দৌড়ে গাড়ি থেকে মাস্ক নিয়ে চলে এসেছে । সামিনা হক নিজে এগিয়ে গিয়ে মাস্ক গুলো বৃদ্ধ তিনজনের হাত দিল । তারপর বললেন, ঐ যে নলকূপটা দেখছেন ওখানে প্রতি এক ঘন্টা পরপর গিয়ে হাত ধুয়ে আসবেন । মনে থাকবে?
-জে মেডাম ।
-আর কেউ যদি কিছু কিনতে আসে তাদের কিছু দেওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিবেন । মনে থাকবে । এটা অনেক দরকারি । এই মাস্ক পরে নিন । যতক্ষন এখানে থাকবেন । খুলবেন না ।

সামিনা হকের ঘুরে চলেই যাচ্ছিলো তখনই চোখ গেল বাজারের দিকে । বাজারে লোকজন নেই বললেই চলে । বৃদ্ধ তিনজনের একজন আবার ভ্যান চালক । আজকে কি তারা ঠিক মত বাজার করে নিয়ে যেতে পারবে বাসায় ! কেউ কি কিনতে আসবে কিছু ? মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অশান্তি কাজ করতে লাগলো । চিন্তাটা মাথা থেকে দুরে দিতে চাইলো । এখানে আপাতত আর কাজ নেই । দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে । বাসায় যাওয়া দরকার ।

গাড়ির কাছে গিয়ে পেছনে রাখা মাছ গুলোর তাকিয়ে সামিনার কি যেন হয়ে গেল । মাছ গুলো দুইটা প্যাকেটে রাখা । একটা প্যাকেট তিনি তুলে নিলেন হাতে । তারপর আবার হাটা দিলেন ঐ তিন বৃদ্ধের দিকে । মাছ তিনটা যখন তিনজনের হাতে দিলেন সামিনা হক লক্ষ্য করলেন তীব্র বিস্ময় তিনি তিনজন তার দিকে তাকিয়ে আছে । তার থেকেও অবিশ্বাস চোখে ওসি বদলুল তাকিয়ে আছে তাদের দিকে ।
সামিনা হক দেখতে পেল তীব্র বিস্ময় একটা সময়ে অশ্রুতে পরিনত হল । তিনজনই অশ্রুসজল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
সামিনা হক বলল, বাসায় গিয়ে গরম গরম ভেজে খাবেন । ঠিক আছে ?
তিনজনই কেবল মাথা কাত করলো । কোন কথা বলতে পারলো না । তীব্র আনন্দে মানুষের মুখ দিয়ে কথা বের হতে চায় না ।

সামিনা হক আসার আগে বললেন, আমি কি আপনাদের একটা ছবি তুলতে পারি ।
-তুলেন আম্মা ! কুনো সমস্যা নাই ।

সামিনা হক একটু খুশি হলেন । একটু আগে তাকে এই লোক গুলো ম্যাডাম বলে ডাকছিলো । সবাই তাকে ম্যাডাম বলেই ডাকে । কিন্তু এখন আম্মা বলে ডেকেছে । আপন আপন একটা ভাব চলে এসেছে সেই ডাকে । বৃদ্ধ তিনজন তাকে কাছের মানুষই মনে করছে ।

নিজের মোবাইলের ক্যামেরা তুলে ধরলো সামিনা হক । বৃদ্ধ তিনজন তাদের সামনে মাছটা তুলে ধরলো মুখে হাসি নি । সামিনা টুপ করে ছবি তুলে নিল । বৃদ্ধ লোক গুলোর আনন্দ দেখে নিজের মনে অদ্ভুত এক আনন্দ এসে জমা হয়েছে । যে অশান্তিটা কাজ করছিলো সেটা চলে গেছে ।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×