somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বিল্টুর করোনা হইছে :D

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিল্টুর শরীরটা সকাল থেকে কেমন যে ম্যাজ ম্যাজ করছে । সে নিজের কপালে হাত দিয়ে দেখলো । তার মনে হল যেন একটু শরীরটা গরম গরম ঠেকছে । করোনা হল না তো আবার ?
অবশ্য খুব বেশি চিন্তিত হল না সে । দেশ আজ অনেক উন্নত । ১৯০৯ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় । আমাদের আছে সাবমেরিন আর আছে স্যাটেলাইট । এতো এতো উন্নয়ন হয়েছে যে দেশে করোনা নিয়ে চিন্তার কোন কারন নেই । আর সরকার থেকে তো বলাই হয়েছে যে তারা প্রস্তুত রয়েছে । তাদের কাছে সব সময় প্রস্তুতি সামগ্রি উপস্থিত । তাদের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই সম্পন্ন হয়েছে বলেই রিলাক্স মুডে তারা সেদিন আতশবাজির উৎসব করতে পেরেছিলো । পরীক্ষার সব পড়া রিভাইস দেওয়া শেষ হয়ে গেল যেমন মাথাটা একটু হালকা করার জন্য মানুষ মুভি দেখে, গান শুনে, ঠিক সেই রকম । পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছিল সেদিন !

যাই হোক, বিল্টু ফোনটা হাতে তুলে নিল । হেল্প লাইনে ফোন দিল । একবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ হয়ে গেল ।
-শুভ সকাল । আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
বিল্টু বলল, শুভ সকাল । আজকে সকাল থেকেই আমার শরীরটা কেমন যেন একটু গরম গরম মনে হচ্ছে ।
-আচ্ছা, আপনার কি ঠান্ডা আছে ?
-একটু আছে ।
-কাশি ?
-সেটাও অল্প অল্প আছে ।
-আপনার ঠিকানাটা বলুন প্লিজ । আমাদের এজেন্ট আপনার বাসায় গিয়ে হাজির হবে । আপনার নমুনা সংগ্রহ করবে । এই সময়ে আপনি নিজেকে ঘরের ভেতরে সেল্ফ কোয়ারেন্টানে রাখুন !
-জি অবশ্যই ।

বিল্টু ফোন রেখে দিল । নিজেকে ঘরের ভেতরে সে অনেক আগে থেকেই আলাদা করে রেখেছে । এটা নিয়ে চিন্তা নেই ।

ঘড়ির দিকে তাকালো । সকাল এরারোটা । এখনই ওর অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। যেদিন থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে সবাই ঘর থেকে কাজ করা শুরু হয়েছে । দেশটা অনেক আগেই ডিজিটাল হয়ে উঠেছে । দক্ষ আইটি সেক্টর গড়ে উঠেছে । দেশ ডিজিটাল হয়ে ওঠার কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে । দেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তরের মানুষ গুলো এখন ঘর থেকে তাদের দপ্তর সামলাচ্ছে । অফিস বন্ধ হয়ে গেলেও পারতপক্ষে দেশ পরিচালনা বন্ধ হয় নি । সব কাজ চলছে আগের মতই । বিল্টুর ক্লাসে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও অনলাইনে ক্লাস চলছে নিয়মিত । স্কুল কলেজ বন্ধ তবে পাঠ্যদান বন্ধ নেই । ডিজিটাইজেশনের এই এক খেল । মানুষ যেখানে খুশি যেমন খুশি সেবা নিতে পারে । সকলের বাসায় বাসায় পৌছে যাচ্ছে শিক্ষা । ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার কোন ক্ষতি হচ্ছে না ।

বিল্টুর অনলাইন ক্লাস শেষ হতেই এজেন্ট এসে হাজির হল । প্রটেক্টিভ স্যুট পরা এজেন্ট দেখতে অনেকটাই এপোলো এগারোর এস্ট্রোনটের মত মনে হল বিল্টুর কাছে । তারা এসে বিল্টুর শরীর বেশ কিছু সময় পরীক্ষা করলো । তারপর নমুনা সংগ্রহ করে চলে গেল । যাওয়ার আগে তাকে জানালো যে তাকে আরও কিছু সময় সাবধানে থাকতে হবে । বাইরে বের হওয়া যাবে না ।

করোনা হামলা করলেও সব কিছু এখনও সরকারের নিয়ন্ত্রনেই আছে । নিন্ম আয়ের মানুষ গুলোর যদিও এখন কোন কাজ নেই তারপরেও সময় মত তাদের বাসায় খাবার সরবারহ নিশ্চিত করেছে সরকার । সময় মত সকলের হাতে হাতে পৌছে যাচ্ছে ত্রান সরবারহ । যদিও কারো কাছে পৌছাচ্ছে না, তারা ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই সরকারী এবং সরকার দলীয় জন প্রতিনিধির দল সেখানে পৌছে যাচ্ছে । নির্বাচনের মধ্যমে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা সবার আগে মানুষের সাহায্য এগিয়ে আসছে । দেশের মানুষ বুঝতে পারছে যে ২০১৯ সালের সুষ্ঠ এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনীধিরা সত্যিই জনগনের জন্য নিজেদের প্রাণকে উৎসর্গ করে দিচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও, তারা সব সময় মাঠে রয়েছে । দেশের জনগনের কখন কি দরকার সেটা তাদেরকে সময় মত পৌছে দেওয়া হচ্ছে ।

বিল্টু গতদিন দেখতে পেল যে এলাকার কমিশনার তাদের এলাকার প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোজ নিচ্ছে তাদের কিছু দরকার কি না । গত কাল এসেছিলো এই এলাকার এমপি । বিল্টুর মন খুব ভাল হয়ে গিয়েছিলো । এতো জনদরদী মানুষ জনের হাতে দেশের দায়িত্ব দেখে । বিল্টু ঠিক করেছে বড় হয়ে সেও এই দলের একজন কর্মী হবে ।

বিকেল বেলাতেই রিপোর্ট এসে হাজির হল জানা গেল বিল্টুর করোনা পজেটিভ । বিল্টু অবশ্য খুব বেশি চিন্তিত হল না । সারা দেশের ৬৪টা জেলাতে ১০০টার বেশি করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে । স্কুল কলেজ আগে থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । প্রতিটি জেলার সরকারি কলেজ গুলির ক্লাস রুম গুলো বানানো হয়েছে করোনা ইউনিট । সেখানে পর্যাপ্ত করোনা বেড, ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । ডাক্তারদের পিপিই এবং জীবন রক্ষাকারী সকল সরঞ্জাম অনেক আগে থেকেই পৌছে দেওয়া হয়েছে । দেশের সকল চাহিদা পূরন করে বাইরের দেশেও সাহায্য পাঠানো হচ্ছে ।

বিল্টুকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল । তাকে নিয়ে যাওয়ার আগে পুরো বাড়ি লক ডাউন ঘোষণা করা হলে । বাড়ির সবার টেস্ট জরুরী এখনই । সেটা আগে করা হবে । তারপর যারা যারা পজেটিভ আসবে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে । এবং পুরো বাড়িটাকে জীবানু মুক্ত করা হবে ।

এদিকে হাসপাতালে ডাক্তারেরা তার দেখাশুনা করতে শুরু করলো । মাত্র ৫ দিনেই বিল্টু সুস্থ হয়ে ফিরে এল বাসায় । গাড়িটা বিল্টুকে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল । বিল্টু এতোই আনন্দিত ছিল যে সে একটু দ্রুত সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গেল । তখনই পা ফসকে গেল তার । মুখ থুবড়ে সে উল্টে পড়লো সিড়ির উপরে । তারপর.... তারপর বিল্টুর ঘুম ভেঙ্গে গেল । বিল্টু এতো সময় স্বপ্ন দেখতেছিলো !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×