somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ উপহার

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিয়ন লোকটি আমাকে এসে বলল, ম্যাডাম তো একটু কাজে আটকে গেছে । আপনাকে একটু বসতে বলেছে ।
আমি বললাম, আচ্ছা । কত সময় বসতে হবে ? বেশি দেরি হবে কি ?
-না না । এই আধা ঘন্টা । ম্যাডামের ডিউটির সময় শেষ হয়ে এল বলে ।
আমি বললাম, আচ্ছা আমি অপেক্ষা করছি ।

আমি মোবাইল বের করলাম । সুদৃশ্য প্রাইভেট হাসপাতালের ওয়েটিং রুমটা বেশ চমৎকার । আমি ছাড়া আপাতত এখন আর কেউ নেই এখানে । মনটা খানিকটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে । ঠিক বুঝতে পারছি না ডাক্তার মীরাকে আমি কি বলবো ! হয়তো আমার কথা শুনে উনি খানিকটা বিরক্ত হয়ে যাবে । বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু একবার উনার সাথে কথ বলাটা আমার জরূরি মনে হল ।

ডাক্তার মীরা অবশ্য আমাকে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করালো না । পনেরো মিনিটের মাথায় এসে হাজির হলো । আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, বেশি অপেক্ষা করিয়েছি কি ?
-না না । সমস্যা নেই । আমিই কাজের সময়ে এসেছি ।
মীরা বলল, এখানে বলবেন নাকি অন্য কোথাও ?
-আপনার যেখানে সুবিধা হয় ।
-তাহলে আসুন আমার কেবিনে ।
এই বলে তিনি হাসপাতালের ভেতরে হাটা দিল । আমি খানিকটা ইতস্তত করে মীরার পেছনে হাটা ধরলাম ।

কেবিনে বসতে বসতেই মীরা বলল, বলুন কি সমস্যা । আপনার মায়ের শরীর কি ভাল আছে ?
-হ্যা হ্যা ভাল ।
-পেশারটা এখন কি স্টেবল ?
-হ্যা । সব ঠিক আছে ।
-তাহলে ? অন্য কোন ব্যাপার ?

আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । কথাটা কিভাবে তুলবো সেটাও বুঝতে পারছি না । তারপরেও বললাম, আপনি গত সপ্তাহে আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন ।
মীরা হাসলো । বলল, জি গিয়েছিলাম ।
-আসলে আমার মা বেশ হাসিখুশি আর চঞ্চল ধরনের মানুষ । সব সময় কথা বার্তা বলে । কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে সে একদম চুপ মেরে গেছে । তার এই আচরণে আমি বাবা আর আমার ছোট বোন সবার কাছেই খানিকটা অস্বাভাবিক । বুঝতে পারছি না কি করবো ! রিমি বলল যে আপনি মায়ের সাথে কথা বলে যাওয়ার পর থেকেই সে একদম চুপ হয়ে গেছে । আসলে আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে আপনাদের মাঝে এমন কোন কথা কি হয়েছিলো ? মানে আপনি কি মাকে তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এমন কোন কথা বলেছেন যেটা নিয়ে সে এমন আচরন করতে পারে । প্লিজ আমাকে বলুন !

একবারে অনেক কথা বলে আমি চুপ করলাম । একটু দম নিলাম । মীরা আমার কথা শুনে কি বলবে সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। মীরা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আমি জানতাম আপনি আসবেন ।
-তারমানে আপনি আচ করতে পারেন যে সে কেন এমন আচরন করছে?
-খানিকটা।
-আমাকে বলুন প্লিজ !

মীরা একটু হাসলো । তারপর বলল, আমি বরং আপনাকে দেখাই । ঠিক আছে? আপনার হাতে কি এখন কাজ আছে কোন ? না থাকলে চলুন আমার সাথে ।

ঘড়িতে সময় দেখলাম বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজে । অফিস থেকে আজকে আমি একটু আগে আগেই বের হয়েছিলাম এখানে আসার জন্য । আপাতত এটা ছাড়া আর কোন কাজ নেই । বললাম, কোথায় যেতে হবে ?
-ভয় পাবেন না । আপনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি না ।

গাড়িটা যখন বাসার ভেতরে ঢুকলো আমি তখনও বুঝতে পারলাম না যে কার বাসায় আমি এসেছি । সময়টা সন্ধ্যা । এই সময়ে কার বাড়ি নিয়ে এল কে জানে ! আর কেনই বা নিয়ে এল । লিফটে উঠতে উঠতে আমি জানতে চাইলাম, কার বাসা এটা ? মানে কার বাসায় যাচ্ছি ?
মীরা বলল, আমার বাসা ?
-আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছি না ।
-বুঝবেন । বাসায় চলুন । তাহলেই বুঝবেন !

কলিং বাজার একটু পরে একজন দরজা খুলে দিল । কাজের মেয়ে সম্ভবত । মীরা আমাকে সোফাতে বসার ইঙ্গিত করে বলল, বসুন !
আমি বসলাম । মীরা কাজের মেয়েটিকে বলল, আম্মু কোথায় ?
-রান্না ঘরে ।
মীরা ঘরের ভেতরে না গিয়ে আমার সাথেই দাড়িয়ে রইলো । আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে কি হচ্ছে ? মীরা আমাকে এখানে কেন ডেকে আনলো !
মীরা একটু গড়া উচু করেই বলল, আম্মু এদিকে এসো তো ! একজন তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে ! তোমাকে বলেছিলাম !
একটু দুর থেকেই আমি শুনতে পেলাম কণ্ঠস্বরটা । আসছি !

মীরা আমার দিকে একবার তাকালো । তার চোখ যেন কিছু বলতে চাইছে । আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারছি না কিছু ।

ভেতরের ঘর থেকে কারো গলার আওয়াজ পেলাম আমিম । এগিয়ে আসছে সে । যখন বসার ঘরে সে ঢুকলো আমি চমকে উঠলাম ! আপনা আপনিই আমি উঠে দাড়ালাম । আমার চোখের পলক পড়া বন্ধ হয়ে গেল । মীরা আম্মু দেখতে হুবাহু আমার নিজের মায়ের মত । মাথার চুলে একটু মেহেদী রং করা কেবল । পাকা চুল ঢাকার জন্য রং মেহেদী দেওয়া হয়েছে । আমার মায়ের এই দিকে অল্প একটু সাদা চুল । এই যা পার্থক্য ! আমি কেবল অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়েই রইলাম ।
মীরার আম্মু বলল, কে এটা ?
মীরা বলল, আমার বন্ধু । ভাবলাম যে আজকে বাসায় নিয়ে আসি । ঐদিন ওদের বাসায় গিয়ে চা খেয়ে এসেছি । ঐ বললাম না !
-ও হ্যা হ্যা মনে পরেছে ।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছো বাবা তুমি ?
আমি কোন মতে বললাম, জি ভাল আছি । আপনার শরীর ভাল ?
-এই ভাল । এই বয়সে আর ভাল থাকা !
এই বলে মীরা আম্মু হাসলো । একদম অবিকল আমার মায়ের মত হাসি । আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । মীরা বলল, আম্মু একটু চা করে নিয়ে আসো প্লিজ
-আচ্ছা আচ্ছা নিয়ে আসছি । তোরা বসে গল্প কর ।


মীরার আম্মু চলে যাওয়ার পরে মীরা আমার তাকিয়ে বলল, আপনার প্রশ্নর উত্তর পেয়েছেন কি ?
-আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
মীরা আমার দিকে তাকিয়ে আবারও হাসলো । বলল, একটু বসুন আপনি । আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি । তারপর আমাকে আর কিছু কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঘরের ভেতরের দিকে হাটা দিল । আমি চুপ করে বসে রইলাম কেবল । আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না । শুনেছি পৃথিবীতে একজন মানুষের মত দেখতে সাতজন মানুষ থাকে । তাই বলে এমন ভাবে একই রকম হুবাহু দেখতে হবে সেটা আমি ভাবতেও পারি নি !

রাতে ফিরতে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল বটে । যখন মীরাদের বাসা থেকে বের হচ্ছি তখন প্রায় এগারোটা বাজে । মীরা মা কোন ভাবেই আমাকে রাতে না খাইয়ে আসতে দিবে না । সিএনজিতে করে যখন বাসার দিকে আসছিলাম তখন আমার পুরো মনে কেবল মীরার বাড়ির ঘটনা গুলো ভাসতে লাগলো । সত্যিই ই এমন হতে পারে ? এমন ঘটনা কেবল গল্প উপন্যাসেই হয় জানি কিন্তু আমাদের জীবনেও এমন কিছু হবে আমি কোন দিন ভাবতে পারি নি ।

সন্ধ্যার কিছু পরেই মীরার বাবাও এসে হাজির হয়েছিলেন। আমি মীরার বন্ধু শুনে বিপুল উৎসাহে আমার সাথে গল্প শুরু করে দিলেন । খুবই স্বাভাবিক ভাবে আচরন করলেন । এমন কি আমাকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলেন না যে আমরা কেমন বন্ধু । বোঝাই যাচ্ছে যে মেয়ের উপর তাদের ভাল ভরশা আছে । যাকে তাকে তার মেয়ে বাসায় নিয়ে আসবে না ।

একটা সময় পরে মীরা আমাকে নিয়ে ওর ঘরে গিয়ে বসালো । আমার কাছে খানিকটা অস্বাস্তিই লাগছি বটে ! মীরার সাথে আমার পরিচয় সব মিলিয়ে দুই কি তিন দিন হবে । আমি মাকে নিয়ে মীরার চেম্পারে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম । সেখানে একদিন দেখেছি । একদিন মীরা আমার বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছিলো । আর আজকে আমি আবার ওর সাথে দেখা করতে এলাম । এর পরিচয়ে ও খুব স্বাভাবিক ভাবে আমাকে ওর ঘরে নিয়ে বসালো এটা দেখে একটু অবাক লাগলো । তবে সেই কারণটা আমি বুঝতে পারলাম একটু পরেই । মেয়েরা কেবল তাদেরকেই নিজেদের ঘরে নিয়ে বসায় যাদেরকে তারা নিরাপদ মনে করে । মেয়েদের ঘর মেয়েদের নিজেদের জায়গা । এখানে সবাই ঢুকতে পারে না । আমাকে সে কেন নিরাপদ মনে করছিলো সেটা একটু পরেই আমি বুঝতে পারলাম । মীরা নিজের গল্প শুরু করলো ।

করিম গঞ্জের আছিয়া বেগমের ৫ মেয়ে হয়েছিলো পরপর । আছিয়া বেগমের স্বামীর অবশ্য এনিয়ে খুব একটা রাগ কিংবা অসন্তুষ্টি ছিল না । তবে তার একটা ছেলের শখ ছিল বটে । তিনি ছিলেন পুলিশের বড় দারোগা । এছাড়াও তার বাবার ছিল জমিদারি। টাকা পয়সার অভাব ছিল না কোন কালে । সন্তান মানুষ করতে তার সমস্যা ছিল না । পরপর পাঁচটা মেয়ে হওয়ার পরেও সে চেয়েছিলো তার একটা ছেলে হোক ।

ছয়বারের বারের বারও তার মেয়েই হল । তবে যে কথাটা কেউ জানলো সেটা হচ্ছে ষষ্ঠবার তার জমজ মেয়ে হল । হাসপাতালে আছিয়া বেগমের পাশের বেডের পেসেন্ট তখন মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছে । বাইরে তখন প্রবল ঝড় হচ্ছে । হাসপাতালে তখন আছিয়া বেগমের কাছের মানুষ বলে কেউ নেই । ডাক্তার বলেছিলো সন্তান আসতে আরও কয়েক দিন বাকি আছে । তাই চিন্তা নেই কোন । বাড়ির লোকজন তাই খুব বেশি চিন্তা করে নি । হাসপাতালের কাছেই তাদের বাড়ি ছিল । হাসপাতালের লোকজনের বলা ছিল যে দরকার হলেই যেন তাদের ডাক দেয় । তারা চলে আসবে । আর এতোবার মা হওয়ার ফলে সন্তান প্রসব করাটা আছিয়া বেগমের কাছে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হয়ে গিয়েছিলো । এটা নিয়ে কারো মনেই কোন ভয় কিংবা দুষ্চিন্তা ছিল না । আর আছিয়া বেগমও খুব একটা চিন্তা করে নি ! কিন্তু যখন নিজে জমন কন্যা জন্ম দিলেন তখন একটু মন খারাপ হল বটেই । তার স্বামীর একটা ছেলের সখ । কিন্তু এইবারও তার মেয়েই হল । তাও আবার দুইটা ।
তখনই পাশের বেডের মহিলা তার কাছে এসে হাজির হলেন । সাথে এক বৃদ্ধ আর হাসপাতালের নার্সটি । হাসপাতালের বাইরে তখন ঝড় বয়ে চলছে । মহিলাটি তার কাছে হাত জোর করে বললেন যে এই নিয়ে পরপর তিনবার সে মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছে ! স্বামীর বাসা থেকে তাকে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে যে এইবারও যদি মৃত সন্তান হয় তাহলে সে তাকে তালাক দিয়ে দিবে । আছিয়া বেগমের তো ৫ মেয়ে আছেই । এখনও আরও দুইটা । একটা তাকে দিয়ে দিক । তারপর খুব ব্যকুল হয়ে কাঁদতে থাকলো ! বৃদ্ধ মহিলাটি সম্ভবত মেয়েটির মা । তার চোখেও পানি এমনি নার্স মেয়েটিও কাঁদছে । আছিয়া বেগম তখন রাজি হবেন না কোন ভাবেই । শত হোক নিজের সন্তান বলে কথা । কিন্তু ভোরের আজানের সময় আছিয়া বেগমের কি মনে হল সে রাজি হয়ে গেল । একটা সন্তান মেয়েটিকে দিয়ে দিল । তারপর তাকে বলল যে যে যেন এই আশা পাশের এলাকা থেকে ছেড়ে চলে যায় । কারন যদি কোন দিন তার সাথে আছিয়া বেগমের দেখা হয়ে যায় সেদিন হয়তো নিজেকে সে ধরে রাখতে পারবে না । আবার নিজের মেয়েকে ফেরৎ নিয়ে নিবে ! আছিয়া বেগমের সাথে সেই মহিলার আর কোন দিন দেখা হয় নি ।

আমি গল্প শুনে কিছু সমট চুপ করে রইলাম । আমি জীবনে কত গল্প পড়েছি । পাশাপাশি হাসপাতালের বেড । একজনের দুটো সন্তান হল অন্য জনের মৃত বাচ্চা তারপর মহান মহিলা তার একটা বাচ্চা দিয়ে দিল ! বাংলাসিনেমাতে এই দৃশ্য খুবই পরিচিত । ৫টা মুভি দেখলে তার ভেতরে একটার কাহিনী এমন হয় ! এই ঘটনা দেখি আমার নিজের সাথেই হচ্ছে । ঠিক আমার সাথে না তবে চোখের সামনে তো হচ্ছে ! এটা কি বিশ্বাস করার মত? কিন্তু চোখের সামনে যা দেখছি সেটা বিশ্বাস না করে উপায় কি ?

মীরা বলল, এই আছিয়া বেগম হচ্ছেন আমার নানী । বছর দুয়েক আগে তিনি মারা গেছেন । আমাদের সাথেই থাকতেন । আমাকে কেন জানি আমার সব কাজিনদের ভেতরে বেশি আদর করতেন । রাতের বেলা মাঝে মাঝে আমার বিছানায় এসে ঘুমাতেন আমার সাথে কুটুর কুটুর করে গল্প করতেন ! শেষ সময়ে এসে তিনি আমাকে এই গোপন কথাটা বলে যান । আমি কাউকে বলি নি এতোদিন । কিন্তু ঐদিন আপনাকে যখন আপনার মায়ের সাথে আমার চেম্বারে ঢুকতে দেখলাম, অবাক না হয়ে পারলাম না । আপনার মাকে না বলে পারলাম না ঘটনা টা ! জানি না কাজটা ঠিক হল কি না ! হয়তো এতো দিন পরে এই সত্যটা খালামনি সম্ভবত স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে নি !

মীরা আমার আম্মুকে খালামনি ডাকলো । সে নিশ্চয়ই তার মায়ের অন্য সব বোনদেরও এমন ভাবেই খালামনি বলে ডাকে । আর আমি তার কাজিন ব্রাদার হই । আমাদের বয়সটা প্রায় কাছাকাছিই হবে । শুনেচি যমজ সন্তানদের ছেলে মেয়েদের মাঝেও মিলটা স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশিই থাকে । এই কারনেই সম্ভবত মীরা আমার উপর বিশ্বাস খুব জলদি স্থাপন করতে পেরেছে ।
মীরা একটু থামলো । তারপর আবার বলল, অথবা খালামনি হয়তো নানীর উপর খুব রাগ করেছে । তার কারণেই সে তার বোনের আদল ভালবাসা থেকে বঞ্চিত থেকেছে ! কিন্তু আমি বলবো সেদিন এক মা আরেক মায়ের জীবন রক্ষা করেছিলো । সেই সময়ে স্বামী যদি কোন মেয়েকে ঘর থেকে বের করে দিতো তখন তার বুঝি মরন ছাড়া আর কোন উপায় থাকতো না !

আমি বললাম, নাহ ! মায়ের অভিযোগ থাকার কথা না ।
মীরা আমার দিকে ফিরে তাকালো । আমি বললাম, আমার এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত আমার নানীকে আমি দেখেছি । ঐ বৃদ্ধ বয়সেও নানী যে আমার মাকে কি পরিমান আদর করতেন সেটা চোখে পড়ার মত । আমি আর আমার বোন প্রায়ই আমার মাকে এই অভিযগো করতাম যে সে তার মায়ের গুণ মোটেই পায় নি । আমাদের কে বেশি আদর করে না ! হা হা হা !
মীরা হাসলো ।
আমি বললাম তবে সময় এখনও চলে যায় নি । মাকে একদিন নিয়ে আসি এই বাসায় ?
-উহু ! আনতে হবে । বরং আমি একদিন আপনাদের বাসায় নিয়ে যাই সবাইকে । দেখার মত একটা দৃশ্য হবে বটে ! সামনের মা দিবসেই একটা সারপ্রাইজ গিফট দেওয়া যাবে !


পরিশিষ্টঃ

মীরা আমার পাশেই দাড়িয়ে আছে । আমাদের ঘরের ড্রয়িং রুমটা একটা আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে ।
পরিকল্পনা মত মীরা তার মা আর ৫ খালামনি সহ আমাদের বাসায় এসে হাজির হল । প্রথম কিছু সময় তারা কেবল আমার মায়ের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো । তারপর সবাই এসে মাকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না জুড়ে দিল । এই দিনের মায়েদের জন্য এর থেকে বড় উপহার সম্ভবত আর কিছুই হতে পারে না !

মীরা সাথে সাথে আমিও দৃশ্যটার দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলাম । কোনদিনই কান্নাকাটি আমার একদমই পছন্দ ছিল না । কেন জানি আমার কাছে দৃশ্যটা বড় মধুর মনে হল !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×