somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অপ্রতিশোধ

৩০ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শফিক সবে মাত্র সকালের নাস্তা সেরেছে । এখনও টেবিল থেকে উঠে নি । রিমা রান্নাঘর থেকে একটা গরম দুধের গ্লাস সামনে এনে রাখলো । গ্লাসটা শফিকের মেয়ে রুমুর জন্য নয় । রুমুর সামনে আগে থেকেই একটা দুধের গ্লাস রাখা। শফিকের দিকে তাকিয়ে রিমা বলল, দুধটা শেষ কর ।
শফিক খানিকটা অসহায়ের মত স্ত্রীর দিকে তাকালো । সে দুধ খেতে পছন্দ করে না একদম । কিন্তু এই কথা রিমাকে বলা যাবে না । বললেই রেগে যাবে । এমনিতেও তার মেজাজ একটু চড়ে আছে । শফিকের কথাটা তোলাই উচিৎ হয় নি । কিন্তু না বলে থাকতেও পারে নি । আবার রিমার রাগের কারণটা শফিক খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে । তাই কিছু বলতেও পারছে না।

শফিক আর কিছু বলার সাহস করলো না । চুপচাপ দুধের ক্লাস টা খালি করলো । তারপর টিভির ঘরে চলে গেল । এখন ওর বিশেষ কাজ কর্ম নেই । যদিও এখন পুরোপুরি সুস্থ । তবে কাজ কর্ম সব বন্ধ থাকার কারণে বাসাতেই সময় কাটাতে হচ্ছে । সারাদিন বসে টিভি দেখে নয়তো বই পড়ে । রিমা ওকে ঘরের কাজে হাত দিতে দেয় না । আগে যা সাহায্য করতো এখন সে সব বন্ধ !

বাড়ির দরজাতে আবারও কড়া নাড়ার শব্দ শোনা গেল । শফিক জানে কে এসেছে । কিন্তু দরজা খুলতে সাহস হল না । রিমা দেখলে চিৎকার চেঁচামিচি করে একাকার করে দিবে ! কিন্তু কলিংবেল বাজতেই থাকলো । এক সময় শফিক দেখলো রিমা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এল দরজা খুলে দিল । শফিক পেছনেই ছিল ।
যাকে আশা করেছিলো সেই এসেছে । আলী চেয়ারম্যানের ছোট ছেলে ডালিম !

রিমার দিকে হাত জোর করে দাড়িয়ে আছে । ভাবী ....
-শুনো ডালিম তোমাকে আমি গতকালই বলে দিয়েছি । শফিক যাবে না !
-প্লিজ ভাবী । একটু দয়া করেন !
-দয়া ! তোমরা করেছিলে ? এতো জলদি কেন ভুলে গেলে শুনি ? খুব তো বেশি সময় হয় নি । মাত্র দেড় মাস পার হয়েছে । এর ভেতরে সব ভুলে গেলে !

রিমা কখনই মানুষের সাথে কড়া করে কথা বলে না । সব সময় নরম সুরেই পাড়া প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে এসেছে কিন্তু মানুষের নিষ্ঠুর আচরন তাকে কঠিন করে দিয়েছে । তাই তো এতো কঠিন করে কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করছে না ।
রিমা ডালিমের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি এখনই আমার বাসা থেকে চলে যাবে ডালিম । তোমাদের বাসায় করোনা রোগী আছে । মনে নেই ? তোমার কারণে তো আমি আমার আর আমার বাচ্চার জীবন ঝুকিতে ফেলতে পারি না । জলদি চলে যাও !

ডালিম আরও কিছু সময় তাকিয়ে রইলো রিমার দিকে । একবার শফিকের দিকেও তাকালো কিন্তু কোন দিক থেকে কোন নমনীয় আচরন না পেয়ে মাথা নিচু করে হাটা দিল । রিমা দরজাটা বন্ধ করে দিল । শফিক রিমার দিকে তাকিয়ে বলল, শোন না, মানে আমি বলছিলাম কি !
-চুপ ! একদম চুপ ! এতো দরদ আসছে কোথা থেকে । মনে নেই কি রকম রলাঠি নিয়ে তোমাকে মারতে এসেছিলো । কিভাবে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো তোমাকে ? মনে নেই !

শফিকের সব মনে আছে ! যখন দেশে করোনা ভাইরাস এসে আঘাত করলো প্রথম প্রথম কেউই ঠিক মত এটাকে বেশি গুরুত্ব দেয় নি । শফিকও না । ফলশ্রুততে শফিক আক্রান্ত হয়ে গেল । তবে ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে বলল যে এখন হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে । শফিকের শরীর সুস্থ সবল । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ ভাল । ও কদিনেই ঠিক হয়ে যাবে ।

কিন্তু গ্রামে ঢুকতে গিয়েই শফিক অবাক হয়ে দেখলো সেখানে চেয়ারম্যান সহ অনেক মানুষ ওর লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে আছে । কিভাবে যেন ওরা খোজ পেয়ে গেছে যে শফিক গ্রামে আসছে এবং তার করোনাতে আক্রান্ত । তারা কিছুতেই শফিককে গ্রামে ঢুকতে দিবে না । দরকার হলে মেরে ফেলবে তাকে ।

রিমা খবর পেয়ে ছুটে গেল সেখানে । কত অনুনয় বিনয় করলো কিন্তু কোন লাভ হল না । একটা মানুষও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এল না । শফিকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হল না । শেষে উপায় না দেখে রিমা তার বাবার সাথে যোগাযোগ করলো । রিমার বাবা বলল যে শফিকে নিয়ে যেন তাদের বাসায় গিয়ে হাজির হয় । কাউকে বলার দরকার নেই যে শফিকের করোনা হয়েছে ।


শফিক সুস্থ হওয়া পর্যন্ত শশুর বাড়িতেই ছিল । চিলেকোঠার একটা ঘরে তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছিলো । ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক সব কাজ কর্ম করতো । সাত দিন পার হতে না হতে সে ভাল হয়ে গেল । পরের পরীক্ষাতে সে করোনা নেগেটিভ চলে এল । আরও কয়েক দিন শশুর বাড়িতে কাটিয়ে সে চলে এল গ্রামে । এবার অবশ্য কেউ তাকে বাধা দিল না ।

মাস খানেক পার হয়ে গেল । তারপরই আস্তে গ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলো । আক্রান্ত হচ্ছে আবার সুস্থ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এইবার আক্রান্ত হয়ে গেল স্বয়ং চেয়ারম্যান সাহেব । তার বেশ বয়স হয়েছে । ৬০ পার হয়েছে । এই জন্য তার ভয়টা সব থেকে বেশি । এ যাত্রায় আর সে বাঁচবে বলে মনে হচ্ছে না । তখনই জানা গেল যে শফিক আর চেয়ারম্যান সাহেবের রক্তের গ্রুপ একই । প্লাজমা চিকিৎসা করলে একটা ভাল কিছু আশা করা যাবে । সেটা জানার পর থেকে চেয়ারম্যান বাড়ির মানুষরা বেশ কয়েকবার ওদের বাসায় এসেছে । কিন্তু রিমা খুব রেগে আছে । বাড়িতে ঢুকতে দেয় নি । প্রতিবারই অপমান করে বের করে দিয়েছে । সেদিন রিমার অসহায় আর কন্না জড়িত মুখটা দেখে শফিক রিমাকে আটকাতে পারে নি । কিন্তু এই চেয়ারম্যান চাচার জন্যও তার খারাপ লাগছে । যতই ওর সাথে খারাপ আচরন করুক লোকটা যদি ওর সামান্য প্লাজমা দেওয়ার কারনে সে ভাল হয়ে যায় শফিক সেটা দিতে চায় । রিমার সেদিকের আঘাতটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না । এই জন্যই সম্ভবত এমন করছে । শান্ত হয়ে এল রিমা আর কিছু বলবে না । রিমা মোটেই প্রতিশোধ পরায়ন মেয়ে নয় । একটু রেগে আছে, এই যা !


দুপুরের দিকে রিমা একটু ঘুমায় সব কাজ কর্ম শেষ করে । আজকে যখনই রিমা ঘুমালো শফিক বের হয়ে গেল বাসা থেকে । দ্রুত হাটা দিল হাসপাতালের দিকে । সেখানেই আপাতত রাখা হয়েছে আলী চেয়ারম্যানকে। খুব সহজের তার খোজ পাওয়া গেল । ডামিল হাসপাতালেই ছিল । শফিককে দেখেই দৌড়ে এল ।
শফিক বলল, যা করার দ্রুত করতে হবে । রিমা ঘুমিয়ে আছে । ওর ঘুম ভাঙ্গার আগেই ফেরৎ যেতে হবে !


প্লাজমা সংগ্রহ করতে খুব বেশি সময় লাগলো না । ডামিল ওকে জড়িয়ে ধরে সেই কি কান্না । শফিক হাসি মুখে বলল, চাচার দিকে খেয়াল রেখো । আমি গেলাম।

বাসায় যখন ফিরলো তখনও রিমার ঘুম ভাঙ্গে নি । বুঝতে পারছে যে রিমা আজকে লম্বা সময় ধরে ঘুমিয়েছে । ও বসার ঘরে টিভি দেখতে শুরু করলো । এমন একটা ভাব করলো যেন কিছু হয়ই নি ! একটু পরেই রিমার ঘুম থেকে উঠে টিভির ঘরে এল । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, চা খাবে ?
-বানাও । খাই একটু!


রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার সময় রিমা হঠাৎ শফিকের কাছে চলে এল খুব । শরীর খারাপ হওয়ার পর থেকে ওরা একদিনও ঘনিষ্ঠ হয় নি । রিমা আরও কাছে এসে বলল, তুমি এতো ভাল কেন শফিক ?
-কেন? কি করলাম?
-তোমার কি মনে হয় আমি কিছু জানি না?
-কি জানো?
-তোমার বুঝা উচিৎ ছিল যে আমি দুপুরে এতো সময় ঘুমাই না । আর আমার ঘুম বেশ পাতলা । তুমি যখন দরজা খুলে বের হলে তখনই আমি টের পেয়েছি ।

শফিক কি বলবে বুঝতে পারলো না । রিমা আরেকটু কাছে এসে বলল, আমি তোমার মত এতো ভাল না শফিক । আমাকে যে আঘাত করে তাকে আপন করে নিতে পারি না । তুমি পারো ।

ধরা পরে গিয়ে শফিকের মনে হয়েছিলো যে রিমা আজকে ওকে খুব বকবে । কিন্তু ওর কন্ঠস্বর শুনে মনে হল যে সে রাগ করে নি । বরং খুশি হয়েছে । রিমা আরেকটু কাছে এসে বলল, এই জন্যই তোমাকে এতো ভালবাসি , বুঝেছো !
শফিক বুঝলো যে আাপতত রিমার কোন রাগ নেই । যাক এখন অন্তত এই রাগ না হওয়ার সুযোগটা নেওয়া যাক ! এই ভেবে সে রিমার দিকে আরও একটু ঝুকে গেল ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×