somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ শেষ অধ্যায় নেই এবং ম্যাগপাই মার্ডার্স । দুটি বই এবং একটি চুরির অভিযোগ

২০ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদিন থেকেই অনলাইনে একটি ব্যাপার নিয়ে বেশ কথা বার্তা হচ্ছে একজন জনপ্রিয় লেখকের বইকে কেন্দ্র করে । লেখক সাদাত হোসাইনের ব্যাপারে অভিযোগ হচ্ছে তার সর্বশেষ প্রকাশিত "শেষ অধ্যায় নেই' বই অ্যান্টনি হারোউইটযের ম্যাগপাই মার্ডার্স বই থেকে কপি করা । যদিও লেখক সরাসরিই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । এবং আমাদের বাঙালীদের যা স্বভাব কোন কিছু পেলেই কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই এবং না জেনেই এক পক্ষ নিয়ে অন্য পক্ষের ব্যাপারে উঠে পড়ে লাগা । আর অনলাইনে আপনি যতবেশি জনপ্রিয় আপনার শত্রুর সংখ্যা আপনাকে না পছন্দ করার সংখ্যা তত বেশি । যতজন তার এই বই নিয়ে হয়েছে আমি শতভাগ নিশ্চিত ততজন নিজে এই বই দুটো পড়ে দেখেন নি ।

যাই হোক সেই সব কথা বার্তার দিকে না যাই । আসুক আগে এই দুটো বই পড়া সম্পর্কে জানা যাক । আমি গত তিনদিন ধরে এই দুটো বই পড়েছি । জানার চেষ্টা করেছি আসলেই বই দুটোর ভেতরে কত খানি মিল রয়েছে । বই দুটোর পাঠ প্রতিক্রিয়া আগে দেখা যাক ।

পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ শেষ অধ্যায় নেই
একজন লেখক থ্রিলার লেখক হিসাবে তখনই ব্যর্থ হোন যখন তার পাঠক তার গল্পের প্রতিটি মোড় আগে থেকেই অনুমান করতে পারেন । আমার ''শেষ অধ্যায় নেই'' পড়তে গিয়ে ঠিক এই কথাটাই মনে হয়েছে । আগে গল্পের কাহিনী বলে নিই । এবং আগে থেকে একটু সাবধান করে দিই যে এই কাহিনী সংক্ষেপে আমি মোটামুটি সব ঘটনাই বর্ণনা করবো । তাই এ পোস্ট পড়লে আপনার কাহিনী পুরোপুরি জানা না হলেও প্রায় সব জানা হয়ে যাবে । এরপর হয়তো বই পড়ার আগ্রহ জন্মাবে না ।
গল্পের দুই মুল কেন্দ্র চরিত্র একজন হচ্ছে শফিক শাহরিয়ার । সে বিখ্যাত লেখক । তার বউ আছে, আট বছরের মেয়ে আছে । তার একজন প্রেমিকাও আছে । যাকে নিয়ে বাজারে অনেক রকম রসালো খবরও বিদ্যমান । এই বাড়াবাড়ির কারণে তার বউ নাজনীন তাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে । এই নিয়ে লেখক সাহেব মানসিক ভাবে বেশ বিপর্যস্ত । এই কারণে তার ঘুম আসে না, রাতে কিছু লিখতে পারছেন না ।
লেখকের একজন পিতা সদৃশ প্রকাশক রয়েছে যে লেখকের প্রথম বই ছাপিয়েছিলো । এবং তার এই বিখ্যাত হয়ে ওঠার পেছনে সেই বৃদ্ধ প্রকাশকের বড় অবদান রয়েছে । লেখকের সাথে তার সম্পর্ক এখনও বেশ গভীর। এখন তার ছেলেরা প্রকাশনা সামলায় এবং শফিক শাহরিয়ারের বইয়ের কারণে তাদের সেই প্রকাশনা টিকে আছে । টিকে আছে সেই প্রকাশকের পরিবারও ।
আরও দুইজন প্রকাশক রয়েছে যারা শফিক শাহরিয়ারের পেছনে লেগে রয়েছে বই নেওয়ার জন্য । এদের দুইজন লেখকের সাথে এমন চুক্তি করতে ইচ্ছুক যাতে সামনের সব বই তাদের প্রকাশনা থেকে বের হয় । এছাড়াও আরেকজন প্রোজেযোক রয়েছে যে চায় লেখকের বই থেকে সিনেমা বানাতে । সম্ভব হলে বই প্রকাশের আগেই মুভি বানাতে ইচ্ছুক ।
প্রেমিকা তৃনা কে লেখক মশাই এড়িয়ে চলা শুরু করেছেন । কারণ তিনি নিজের সংসার বাঁচাতে মরিয়া । তবে তৃনার ব্যাপারে তিনি নিজেকে খানিকটা অপরাধী মনে করেন । তাই একটা চেষ্টা রয়েছে যাতে তৃনার পেছনে বেশ কিছু টাকা খরচ করে তাকে একটা ভাল পজিশনে পৌছে দেওয়া যায় । যদিও এটা গল্পে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া নেই ।
এখন লেখক মশাই তার এক বন্ধুর টিএস্টেটে গিয়ে হাজির হয় একটা রহস্য উপন্যাস লেখার জন্য । এটা হবে তার প্রথম রহস্য উপন্যাস । এটা নিয়ে সে আগে অনেক স্থানে কথা বার্তা বলেছে । তাই পাঠক মহলে এর আগ্রহ অনেক । সে হাজির হয় টিএস্টেসে । গেস্ট হাউজে বসে লেখা লেখি শুরু করে । তার গেস্ট হাউজের পরেই এস্টেটের সীমানা । সেখানে কিছু অংশ ভাঙ্গা । একদিন রাতে গীর্জার ঢং ঢং আওয়াজে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এবং সে জানালা দিয়ে খেয়াল করে যে সেই ভাঙ্গা অংশে আলো হাতে কয়েকজন মানুষ কি যেন করছে । তার সন্দেহ হয় । সে এটা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে । সে আবিস্কার করে যে প্রতিদিন গীর্জাতে ঢং ঢং বেজে ওঠে না আবার শহরের সব স্থানে বিদ্যুৎ না গেলেও চা বাগানে বিদ্যুৎ চলে যায় নির্দিষ্ট কোন রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে এবং সেদিন প্রতিদিন কার মত জেনারেটর চালু হয়ে যায় না । পুরো বাগান থাকে অন্ধকারে ঢাকা থাকে । লেখক অনুসন্ধান পরে জানতে পারে যে এই চা বাগানে কিছু অবৈধ কাজ কারবার চলতেছে । এবং এর সাথে জড়িত রয়েছে কিছু মানুষ । একদিন নিজে চোখেই সে অনেক কিছু দেখতে পারে ।
এদিকে তার নিজের উপন্যাস লেখা প্রায় শেষ হয়ে যায় । কেবল শেষ অধ্যায়টা বাকি । সে পরিকল্পনা করে যে উপন্যাসের শেষ অধ্যায় লেখার আগে পরিচিত কিছু মানুষকে সে দাওয়াজ দিয়ে নিয়ে আসবে টিএস্টেটে । আড্ডা দিয়ে । সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয় । সবাই আসেও । তার স্ত্রী আসে এবং আসে তার প্রেমিকাও, যদিও প্রেমিকাকে দাওয়াত দেওয়া হয় নি । সেখানে দুজনের মুখোমুখি ঝামেলা হয় এবং সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় ।
তখন লেখক মশাই খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে এবং রুমে গিয়ে ড্রিংক করে । অন্যান্য গেস্টরা যে যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে । সেই দিন ভোরে লেখক সাহেবকে গেস্ট রুমের পেছনে যে খাদ রয়েছে সেখানে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয় মদ খেয়ে মাতাল হয়ে সে খাদ থেকে পড়ে গিয়েছে ।
এবার আশা যাক গল্পের আরেক প্রধান চরিত্র রেজা হক কথায় । তিনি লেখকের ভক্ত । তার প্রায় সব বই তার পড়া । লেখক এখানে আছেন জেনে আগে একদিন লেখকের সাথে কথাও হয়েছিলো । এবং লেখক মশাই তাকে চাবাগানে ঘটা অবৈধ বিষয়টা জানাতে গিয়েও জানান নি । পার্টিতে তাকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছিলো তবে কাজের কারণে সে আসতে পারেন নি । রেজা হক তদন্ত শুরু করে এবং এক সময়ে খুজে বের করে ফেলে যে চা বাগানের চোরাকারবীর কাজ চলছে । এবং এর সাথে চাবাগানের কিছু পরিচিত মুখ জড়িত । কে কে জড়িত সেটা বললাম না । তাহলে হয়তো পড়ার আগ্রহ একদমই চলে যাবে । তাদেরকে জেরা করেই জানা যায় তারা রাতের বেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো তখন লেখককে নিয়ে গিয়ে খাদ থেকে নিচে ফেলে দেয় । সময় তখন ভোর ৫টার কিছু বেশি বাজে। রহস্য যখন সমাধান করেই ফেলেছে তখন ওটোপসি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে লেখকের মৃত্যু পাহাড় থেকে পড়ে নয় বরং আরও রাত তিনটার দিকে হয়েছে এবং সেটা বিষক্রিয়ায় । অর্থ্যাৎ ঐ চোরাকারবারীরা একজন মৃতমানুষকে খাদে ফেলেছে ।
আবারও তদন্ত শুরু হয় । রেজা হক শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা এসে কাজ শুরু করে। এবার সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয় । সবাইকে জেরা করা হয় । এক সময়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয় । এবং রেজা হককে কেস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় । রেজা হক আবারও শ্রীমঙ্গল ফিরে যায় কিন্তু তার মানে শান্ত পায় না । কারণ আসল আসামী ধরা পড়ে নি । লেখকের শেস উপন্যাসটা এবার রেজা হক পরে ফেলে । সেই উপন্যাসটাও এক লেখকে কে নিয়ে । সেও একটা রহস্য উপন্যাস লিখতে শুরু করে এবং সেটা শেষ করার আগে খুন হন । কিন্তু শেষ অধ্যায় লেখার আগে লেখক তার স্ত্রীকে একটা চিঠি লিখে রেখে যায় সেখানে খুনী কে সেটা বলা থাকে । স্ত্রী সেটা বের করে ফেলে । রেজাও সেই উপন্যাস পরে সেই চিঠির অর্থ উদ্ধার করে । এবং এক সময়ে সে প্রমান পেয়ে যায় কে আসলে খুন টা করেছে ।

এই থ্রিলার পড়ে আমার অনুভূতি
সাদাত হোসাইনের প্রায় সব বই আমি পড়েছি । তার লেখার যে ব্যাপার আমার সব থেকে বেশি অপছন্দ সেটা হচ্ছে প্রয়োজনের বেশি বর্ণনা । তার বই বইয়ের ভেতরে রেজা সিরিজের প্রথম বই ছদ্মবেশটা আমার কাছে মোটামুটি ভাল লেগেছিলো কারণ সেটাতে অন্য বইয়ের মত এতো বর্ণনা ছিল না । এবং খুনটা কে করেছে কিভাবে ঐ বদ্ধ ঘরে লাশটা এল এটা জানার আগ্রহ ছিল কিন্তু এই বইতে আমার কেন জানি তেমন আগ্রহ জন্মায় নি । কারণ হিসাবে বলতে পারি প্রতিটি ঘটনা ঘটনা ঘটনার পরপরই আমার মনে হয়েছে এরপর কি হতে পারে এবং প্রতিবারই আমার অনুমান সত্য হয়েছে যা থ্রিলার পাঠকদের কাছে হতাশাজনক । এবং যখনই শফিক শাহরিয়ার খুন হোন সবার আগে আমার মনে ঠিক যে মানুষটার কথা মনে হয়েছে যে এখুনি হতে পারে দেখা গেছে সেই খুনি হয়েছে । এমন কি যখন চোরাকারবারীটা স্বীকার করেই নিয়েছিলো যে তারা পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছে তখনও আমার মনে হয়েছে ওটোপসি রিপোর্টে দেখা যাবে লেখক আগেই মারা গেছে কিংবা অন্য কোন কারণে মারা গেছে । বই জুড়ে টানটান উত্তেজনা কিংবা গভীর রহস্যের কিছুই ছিল না । আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে অবশ্য যে বিষে লেখক মারা গেছে সেটার ব্যাপারে কিছু লেখার দরকার ছিল । একটু রিসার্চ করলেই হয়তো এমন কোন বিষের কথা জানা যেত । সেটা করা হয় নি । এটা আমার কাছে বইয়ের বড় একটা ত্রুটি মনে হয়েছে । রহস্য গল্পে কিভাবে মারা গেল কি অস্ত্র দিয়ে, সেটা বর্ণনা কিংবা কোন বিষ হলে সেটা কেমন বিষ নাম কি কিভাবে কাজ করে এসব তথ্য গুলো যোগ করলে লেখাটা আরও বেশি বাস্তবধর্মী হয় । তবে এই বইটাতেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বার্তা লেখা নেই দেখে ভাল লাগলো । বইয়ের বাঁধাই আর কাগজের মান ভাল । তবে বইয়ের দাম আমার কাছে বেশি মনে হয়েছে । অন্তত আরও ৫০ টাকা কম হওয়ার দরকার ছিল ।
এই রিভিউ পড়েও যদি বই পড়তে ইচ্ছে হয় তাহলে পড়তে পারেন । সাদাত হোসাইনের লেখা হিসাবে পড়তে পারেন কিন্তু যদি একটা ভাল রহস্য উপন্যাসের আশা করেন তাহলে আপনাকে হতাশ হতে হবে ।






পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ ম্যাগপাই মার্ডার্স
ম্যাগপাই মার্ডার্স আসলে এক টিকিটে দুখান ইংরেজি মুভির মত একটা বই । এখানে বই একটা অথচ এর ভেতরে আসলে দুইটা রহস্য উপন্যাস । গল্প হচ্ছে এক বিখ্যাত রহস্য উপন্যাসের লেখকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে । কিন্তু তার আগে ম্যাগপাই মার্ডার্স নামে সেই লেখক একটা উপন্যাস লেখেন । মূলত এটা তার সৃষ্টি চরিত্র অ্যাটিকাস পান্ড চরিত্রের নবম ও শেষ বই । এই বইয়ের একটা পান্ডুলিপি পাঠানো হয়
ফ্লোভারলিফ বুকসে প্রকাশনিতে প্রকাশের জন্য । প্রকাশনির মালিক চার্লস সেটা এডিট করার জন্য পাঠান ফ্লোভারলিফের এডিটর সুজ্যান রাইল্যান্ডের কাছে । সে পান্ডুলিপি পড়তে শুরু করে । এই পান্ডুলিপি আস্তো একটা উপন্যাস । এই উপন্যাস শুরু হয় স্যাক্সবি অন এইভন গ্রামের পাইহলের হাউজকিপার মেরি ব্ল্যাকিস্টেনের মৃত্যু দিয়ে । তিনি কাজ করার সময়ে সিড়ি থেকে পিছলে পড়ে যান এবং ঘাড় ভেঙ্গে মারা যান । মৃতুর কয়েকদিন আগে তার ছেলে রবার্টের সাথে একটু ঝগড়া হন এবং ছেলে তাকে মরে যেতে বলে চিৎকার করে যা গ্রামের অনেকেই শুনতে পায় ! এবং গ্রামের সবাই কানাঘুসা করতে থাকে যে ছেলেই বুঝি তাকে মেরে ফেলেছে । রবার্টের প্রেমিকা জয় এই ব্যাপারে একটু আপসেট হয়ে পড়ে এবং শহরে গিয়ে গোয়েন্ডা অ্যাটিকাস পান্ডকে হায়ার করতে । তাকে অনুরোধ করেন যাতে তিনি স্যাক্সবি অন এইভন গ্রামে এসে তদন্ত করে সবাই কে ভুল প্রমান করেন যে মায়ের মৃত্যুতে রবার্টের কোন হাত নেই । কিন্তু অ্যাটিকাস তখন কঠিন রোগে আক্রান্ত । ডাক্তার বলে দিয়েছেন আর বড়জোর তিন মাস মত বাঁচবেন তিনি । তিনি জয়ের প্রস্তাব মানা করে দেন । কিন্তু সপ্তাহ ব্যবধানে পাই হলের মালিক স্যর ম্যগনাস পাই খুন হন নিজের বাসায় । সেই খবর যখন পেপারে বের হল তখন পান্ড তার সহকারিকে নিয়ে হাজির হন স্যাক্সবি অন এইভনে । তদন্ত শুরু করেন । সেখানেই গ্রামের সবার ব্যাপারে খোজ খবর নিতে শুরু করেন । পড়তে পড়তে দেখা যায় সবারই কিছু না কিছু কারণ রয়েছে স্যর ম্যাগনাসকে হত্যা করার । হিসাব মত যে কেউই খুন করতে পারে । টানা ছয়টা অধ্যায় চলে ।
এই কাহিনীর শেষ অধ্যায়ে গিয়ে এডিটর দেখলেন যে উপন্যাসটা অসমাপ্ত । শেষ অধ্যায় নেই । সুজ্যান ভাবলো হয়তো শেষ অধ্যায়টা বাদ পড়ে গেছে, হয়তো লেখক সাথে দিতে ভুলে গেছে । কিংবা অফিসে রয়েছে, ওকে হয়তো দেওয়া হয় নি । তার কিছু সময় পরে সুজ্যান জানতে পারেন উপন্যাসের লেখক অ্যালান কনওয়ে আত্মহত্যা করেছে । এখান থেকে শুরু হয় সুজ্যানের গোয়েন্দাগিরি । দ্বিতীয় রহস্য উপন্যাস। ফ্লোভারলিফ বুকসের মালিক সুজ্যানকে পাঠান হারানো অধ্যায় খুজে বের করতে । সুজ্যান হাজির হয় লেখকের বাড়িতে । সেখানে হাজির হয়েই সে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে যে এই বাড়িটা যেন তিনি কোথায় দেখেছেন । তারপরেই তার মনে পড়ে এই বাড়িটা অনেকটাই ম্যাগপাই মার্ডার্সের পান্ডুলিপিতে বর্ণনা করা পাই হলের মতই । সুজ্যান যখন এলানের ঘরে হারানো অধ্যায়টা খুজতে থাকে তখন সে এমন কিছু তথ্য জানতে পারে যে তার মনে সন্দেহ হয় অ্যালান কোন ভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না । তাকে হয়তো খুন করা হয়েছে । এই একই কথা অ্যালানের বোনও সুজ্যানকে বলে । কিন্তু সবার কাছে পরিস্কার হয় যে এটা কেবলই আত্মহত্যাই । কারণ অ্যালান নিজেও ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলো । হয়তো কষ্ট সহ্য করা কিংবা তিলে তিলে মরা চেয়ে একবারে মরে যাওয়াই তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে । কিন্তু সুজ্যানের কাছে যেন এই তথ্য কোন ভাবেই যুক্তযুক্ত মনে হয় না । সে নিজের মত করে খোজ খবর নিতে থাকে । এবং আস্তে আস্তে অ্যালানের জীবনের ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারে ।

সুজ্যান নিজে অ্যালানের বই এগারো বছর ধরে সম্পাদনা করে আসছে ঠিকই তবে সে ব্যক্তি অ্যালানকে পছন্দ করতো না মোটেও । তার লেখার ভক্ত ছিল সে কিন্তু ব্যক্তির না । কেবল অল্প কিছু তথ্য ছাড়া কিছুই জানার ছিল না । কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে সে অনেক কিছু জানতে পারে । পান্ডুলিপির ম্যাগনাস পাইয়ের উপর অনেকে যেমন ক্ষোভ ছিল, যে চরিত্র গুলোর যে কেউই তাকে খুন করতে পারতো ঠিক তেমনি লেখক অ্যালানের মৃত্যুেও অনেকে লাভবান হত । তার গে প্রেমিক, তার প্রতিবেশি, তার প্রডিউসার এমনকি এক সময়ে এসে মনে হয়েছে সুজ্যানের প্রেমিক আন্দ্রিয়াসেও খুন করার যথেষ্ঠ কারণ হয়তো রয়েছে । এমন একটা আবহাওয়া তৈরি হয়েছিলো । দিন শেষে যখন সুজ্যান সেই হারানো অধ্যায় টা খুজে পেল তখন সুজ্যানের কাছে সব রহস্য পরিস্কার হয়ে গেল যে কে খুন করেছে ।

বইয়ের কথা বলতে গেলে বই এক কথায় চমৎকার । এই রকম চমৎকার বই আমি অনেকদিন পড়িনি । বইটা আরও বেশি ভাল লাগতো যদি শেষ অধ্যায় নেই বইটা আমার পড়া না থাকতো ! বইয়ের বাঁধাই খুবই চমৎকার, সেই সাথে পাতার মানও অনেক ভাল । মুদ্রিত মূল্য হিসাবে ভাল কাজ করেছে তারা । অনুবানটাও বেশ ভাল । তবে অনুবাদকের ''জ'' আর ''য' ব্যবহারে সমস্যা রয়েছে । সে ''জ'' ব্যবহার করে নি বললেই চলে । সব স্থানেই বলতে গেলে ''য'' ব্যবহার করেছে ।'

এই গেল ম্যাগপাই মার্ডার্সের কাহিনী ।



বইয়ের নাম ম্যাগপাই মার্ডার্স
লেখকঃ অ্যান্টনি হারোউইটয
অনুবাদকঃ সায়েম সোলায়মান




এখন প্রশ্ন হচ্ছে ''শেষ অধ্যায় নেই''এর সাথে ম্যাগপাই মার্ডার্সের মিল আছে কি না কিংবা লেখক সাহেব এই বই থেকে কন্সেপ্ট নিয়ে শেষ অধ্যায় লিখেছে কি না!!

ম্যাগপাই মার্ডার্সের ২৬৫ পেইজ পর্যন্ত পড়ার পড়েও আমার একবারও মনে হয় নি যে এই বইয়ের সাথে শেষ অধ্যায় নেইয়ের কোন মিল আছে । ধারে কাছেও নেই । কিন্তু যখন সুজ্যান শেষ অধ্যায়টা খুজে পেল না এবং তারপর জানতে পারলো লেখক মারা গেছে তখনই আমার মনে হল যে কে খুনি আমি জানি । এবং শেষ পর্যন্ত সেই খুনি হয়েছে । এই কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে শেষ অধ্যায় নেই এবং ম্যাগপাই মার্ডারের কাহিনীর ভেতরে আশ্চার্য রকমের মিল রয়েছে । শেষ অধ্যায় নেই গল্পে লেখক আর খুনির ভেতরে যে সম্পর্ক বিদ্যামান, ম্যাগপাই মার্ডার্স গল্পেও লেখক আর খুনীর ভেতরে সেই একই সম্পর্ক বিদ্যামান । সব থেকে বড় মিল হচ্ছে শেষ অধ্যায় নেই গল্পে ঠিক যে কারণে লেখক খুন হয়েছিলেন, খুনের মোটিভ যেটা ঠিক ম্যাগপাই মার্ডার্সেও ঠিক একই মোটিভ । এই দুইটা বই যেই পড়বে এই মিল তার চোখে পড়বেই এবং তার মনে এই কথা আসতে বাধ্য যে একটা অন্যটা থেকে কন্সেপ্ট নিয়ে লেখা হয়েছে । এই মনভাব আসাটা স্বাভাবিক । লেখক সাহেব কন্সেপ্ট নিয়ে লিখুক কিংবা না লিখুক পাঠকের এই কথাটা মনে আসবেই আসবে । তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় না যে শেষ অধ্যায় বইটা ম্যাগপাই মার্ডার্স থেকে কপি করে লেখা হয়েছে । এমনটা মনে হওয়ার পেছনে আমার নিজের কারণও রয়েছে ।

ঠিক এই রকম একটা ঘটনাই ঘটেছিলো কয়েকদিন আগে । একটা বই আমি পড়েছিলাম এবং সেটার কন্সেপ্ট একটা হিন্দি মুভির সাথে মিলে গিয়েছিলো । কিন্তু লেখক সেই মুভি দেখেননি । এই কথা আমি অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই । কারণ এই একই জিনিস আমার নিজের সাথেও হয়েছে । আমার একটা বড় গল্প আছে । গল্পটা লেখার পর একজন আমাকে ইনবক্সে একটা মুভির নাম বলে এবং সেটা দেখতে বলে । আমি মুভিটা দেখে নিজে তাজ্জব হয়ে গেলাম । কারণ গল্পের থিম আর মুভির থিম অনেকটাই এক যদিও শেষটা অন্য রকম তবে থিমটা অনেক মিল অথচ আমি সেই মুভি সেদিনই প্রথম দেখলাম । অন্তত আমি নিজের কাছে জানি যে আমি গল্প ঐ মুভি দেখে লিখি নি । বোধ করি সাদাত সাহেবের সাথেও একই ঘটনা ঘটেছে । এখন লেখক হিসাবে সাদাত হোসাইন জনপ্রিয় । বর্তমান সময়ে তার থেকে জনপ্রিয় লেখক খূব কমই রয়েছে । সুতরাং তার বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগ পেলে বাঙাল ঝাপিয়ে পড়বে স্বাভাবিক ।



পাঠকদের কাছে পরামর্শ থাকবে যে দুইটা বই পড়ার কোন দরকার নেই । দুটো বই পড়তে গেলে শেষ বইটা পড়তে গিয়ে একদমই মজা পাবেন না । কারণ আপনি আগে থেকেই জানবেন যে খুনি কে এবং কেন তাকে খুন করা হয়েছে । যে কোন একটা বই পড়ুন । তাহলে বই পড়ার মজা পাবেন । এবং যদি জানতে চান কোন পড়বেন তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে ম্যাগপাই মার্ডার্সই পড়ুন । থ্রিলার হিসাবে শেষ অধ্যায় নেই খুব একটা উন্নত মানের বই না । ম্যাগপাই মার্ডার্স সেই তুলনাতে অনেক বেশি ভাল ।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×