বাংলার বারো ভূইয়াদের ভেতরে অন্যতম ছিলেন ঈশা খাঁ। একদিন তিনি সৈন্য নিয়ে এগারোসিন্ধু হতে জঙ্গলবাড়ির দিকে যাচ্ছেন । পথের মাঝে তিনি এক স্থানে এসে খুব চমৎকার ঘ্রাণ পেলেন । সিপাহীদেরকে পাঠালেন যে কোথা হতে এই ঘ্রাণ আসতে তা খুজে বের করতে । সিপাহী এসে খবর দিলো যে এই ঘ্রাণ আসছে রাজ্যহারা রাজা নবরঙ্গ রায়ের বাড়ি হতে ।
ঘ্রাণের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ঈশা খাঁ নবরঙ্গকে ডেকে পাঠালেন । খবর পেয়ে রাজা নবরঙ্গ ছুটে এলেন ঈশা খাঁয়ের কাছে । নবরঙ্গ রায় এসে হাজির হলে ঈশা খাঁ জানতে চাইলেন, এই ঘ্রাণের উৎস কী ?
রায় তখন জানালেন যে দেবতার উদ্দেশ্যে ভোগ দেওয়ার জন্য তৈরি হওয়া খাবার এবং তার থেকেই এই ঘ্রাণ বের হচ্ছে । তারপর রাজা নবরঙ্গ ঈশা খাঁকে ভোগে অংশ গ্রহনের জন্য আমন্ত্রন জানালেন । ঈশা খাঁ তাতে সম্মতি জানালো ।
রাজা নবরঙ্গ ঈশা খাঁর আতিথিয়তায় কোন কমতি রাখলেন না । ঈশা খাঁও আনন্দের সাথেই সে দেবতার ভোগ গ্রহন করলেন । গল্প গুজবের এক সময় ঈশা খাঁ নবরঙ্গের কাছে জানতে চাইলেন যে রাজ্য চিন্তা বাদ দিয়ে সে এমন দেবতার চিন্তায় মগ্ন হয়েছেন কেন? এই পরিবর্তনের কারণ কী?
নবরঙ্গ তখন ঈশা খাঁ কে এক অন্য গল্প শোনালেন । তিনি বললেন রাজ্য হারানোর পরে তিনি সারা দিন নদী পাড়ে এক সাধুর আস্তানায় পড়ে থাকতেন । একদিন স্বপ্নে তিনি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলেন । পরদিন সকালে তিনি সাধুর কাছে সেই স্বপ্নের কারণ ব্যাখ্যা জানতে চাইলে সাধু তাকে বলল যেন এখানে একটা বিগ্রহ মুর্তি স্থাপন করে ভোগ দেওয়া হয় নিয়মিত । রাজা নবরঙ্গ তাই করতে শুরু করলেন । নিয়মিত ভোগের আয়োজন করতে শুরু করেন । এক সময়ে রাজা নবরঙ্গের জীবনে প্রশান্তি মেনে আসে এবং তিনি জীবনের পূর্ণতা খুজে পান । তারপর থেকে এই নিয়েই তিনি ব্যস্ত আছেন । সেই দেবতার ভোগের ঘন্ধেই ঈশা খাঁ আকৃষ্ট হয়ে এখানে এসেছেন ।
ঈশা খা নবরঙ্গের আতিথিয়েতা এবং ব্যবহারে লজ্জিত হয়ে তার তার রাজ্য ফেরৎ দিতে চাইলেন নবরঙ্গ তা নিতে অস্বীকৃত জানালো । সে জানালো যে তার রাজ্যের দরকার নেই । যে আপন রাজ্যের দেখা সে পেয়েছে তাতেই সে সন্তুষ্ট । বাকি জীবনে সে দেব পুজায় কাটিয়ে দিতে চান ।
ঈশা খাঁ তারপর রাজার কাছে জানতে চাইলেন যে দেবোত্তরের জরুরী আবশ্যকীয়তা কী?
রাজা বললেন, একটা দিঘি, দেব মন্দির আর রথ যাত্রার জন্য জমি ।
ঈশা খা দিঘির জন্য ৫০ বিঘা জমি প্রদান করলেন । এই দিঘিই কোঠমন দিঘি হিসাবে পরিচিত । এছাড়া মন্দির স্থাপনের জন্য যাবতীয় খচর প্রদান করলেন ।
মূলত সেই সময় থেকেই গোপীনাথের মন্দিরে রথ যাত্রার আয়োজন করা হয় । বাংলার হিন্দু ধর্মপ্রাণ আবালবৃদ্ধবনিতা, লক্ষ লক্ষ যাত্রিক এসে ভীড় জমায় এখানে । গোপীনাথের এই মন্দির এক ঐতিহাসিক স্মৃতি বহন করে চলেছে । কঠিত আছে যে মোঘল সেনাপতি মানসিংহকে পরাজিত করার পরে ঈশা খাঁ এই মন্দির প্রাঙ্গনেই বিজয় উৎযাপন করেছিলেন ।
নেটে গোপীনাথ মন্দিরের ছবি একদম নেই বললেই চলে । কয়েকটা পাওয়া গেছে । সেগুলোই শেয়ার কারলাম ।
ভুমিকম্পে আসল মন্দিরটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । পাশে নতুন করে আবার মন্দীর তৈরি হয়েছে ।
তথ্য সুত্রঃ বাংলা কিংবদন্তী (আসাদুজ্জামান জুয়েল)
বঙ্গের গোপীনাথের রথযাত্রার আদি কথা
ছবির উৎস
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:০৯