বাংলার বারো ভূইয়াদের ভেতরের সব থেকে প্রভাবশালী জমিদার ঈশা খাঁ এবং স্বর্ণময়ীর প্রেমকথা নিয়ে অনেক রকম গল্প। তার ভেতরকার একটা গল্প আছে যেখানে স্বর্ণময়ীকে ডাকাতেরা অপহরণ করে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে ঈশা খা তাকে রক্ষা করে ফিরিয়ে দেওয়ার কালে রাজ পুরোহিত জানায় স্বর্ণময়ীকে ঘরে তুললে জাত যাবে । এমন অবস্থায় ঈশা তাকে বিয়ে করেন । আবার অন্য আরেকটি প্রচলিত গল্পে আছে যে ঈশা খা দিল্লী থেকে ফেরার নিজ রাজধানী জঙ্গলবাড়িতে ফেরার পথে শ্রীপুরে আশ্রয় গ্রহন করেন । রাজা কেদায় রায় ঈশা কে নিজ প্রাসাদে আপ্যায়ন করলেন । এমন সময় ঈশা এক অতীব সুন্দরী কন্যাকে দেখতে পেলেন । খোজ নিয়ে জানা গেল যে মেয়েটির নাম স্বর্ণময়ী । তিনি কেদায় রায় এবং চাঁদ রায়ের বিধবা ভগ্নী ।
ঈশা খাঁ রাতে শ্রীপুরে অবস্থান করলেন তারপর সকালে সূর্য ওঠার আগেই স্বর্ণময়ীকে হরণ করে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়ে দিলেন । খুব জলদি ঢাকা পৌছে গেলেন কোশার বহর নিয়ে। তারপর ঢাকা হতে বিয়ে উপঢৌকন, মিষ্টি, পান সুপারী আরও নানান উপহার সামগ্রী কিনে আবারও রওয়ানা হলেন রাজধানী জঙ্গলবাড়ির দিকে ।
সেই সময়ে ব্রহ্মপুত্র থেকে মির্জাপুর হয়ে একটা শাখা নদী জঙ্গলবাড়ির দিকে প্রবল বেগে প্রবাহিত হত । ঈশা খাঁ সেই পথেই নৌকা বহর চালানোর নির্দেশ দিলেন । যাত্রা পথে কিছু সময়ের জন্য ঈশা খাঁ খানিকটা সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । সেই সময়েই তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে জলের অধিষ্ঠাত্রী গঙ্গাদেবী তাকে নির্দেশ দিচ্ছে যে স্বর্ণময়ী কে বিয়ে করার উপলক্ষে সবাইকে মিষ্টি মুখ করানোর জন্য যে মিষ্টি সে ঢাকা থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে তার একটা অংশ যেন তাকেও দেওয়া হয় । দেবী নির্দেশ দিলেন সামনের কুঁড়ে (কোশাকান্দা গ্রাম ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনা) দিয়ে যেতে ।
ঈশা খাঁয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল । তিনি স্বপ্নের কথা কাউকে বললেন না । কিন্তু যখনই কুঁড়ে পার হয়ে যাচ্ছিলো কোশা বহর তখনই শান্ত পানিতে সেই মিষ্টি বোঝাই নৌকাটি ডুবে গেল কোন কারণ ছাড়াই । শত চেষ্টা করেও নৌকাটিকে আর উদ্ধার করা গেল না ! নৌকা ছাড়াই ঈশা খাঁ রাজধানীতে ফেরৎ চলে গেলেন । এবং মহা ধুমধামে বিবাহ সম্পন্ন হল ।
তবে ঘটনা এখানেও শেষ না । কিছু দিন পরেই নদীর সেই নির্দিষ্ট অংশ শুকিয়ে গিয়ে চড় পড়তে শুরু করলো । এবং সেই ডুবে যাওয়া নৌকাটি স্পষ্ট হয়ে উঠলো । তারও কিছুদিন পরে নৌকার শুরু এবং শেষ অংশ থেকে দুটি তালগাছ জন্মালো । এবং প্রতি আমাবস্যায় সেই তালগাছ থেকে লোকজন দুটি তীব্র আলোর ঝলকানী দেখতে শুরু করলো ।
এরপর আস্তে আস্তে মানুষ সেই কোশার আশে পাশে চাষাবাদ করতে শুরু করলো কিন্তু কোশার আকৃতির কাছে অর্থ্যাৎ তাল গাছের নিকটে যেতে সাহস পেত না । একদিন গ্রামের একজন সেই কোশা আকৃতির স্থানে কোদাল চালালো সাহস করে । কিন্তু কোপ দেওয়ার সাথে সাথে সেখান থেকে রক্ত বের হওয়া শুরু করে এবং যে কোদাল চালিয়েছিলো সে চিরোদিনের জন্য বধির হয়ে যায় । স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস যে ঐ কোশাকৃতির অংশ কাটবে সে নির্বংশ হয়ে যাবে ।
এই কোশাকৃতির জন্য গ্রামের নাম হয়েছে কোশাকান্দা !
কোশাকান্দা নিয়ে এই হচ্ছে প্রচলিত কিংবদন্দী ।
ইন্টারনেটে কোশাকান্দা নিয়ে কোন তথ্যই নেই । এমন কি ভাল কোন ছবিও নেই। আমি কোশাকান্দার কথা জানতে পারি ''বাংলা কিংবদন্তী'' বই থেকে । সেখান থেকেই এই টুকু লেখা । একটা ইউটিউব ভিডিও পেলাম যেখানে একজন আমেচার ইউটিউবার কোশাকান্দার উপরের ইতিহাসটা বর্ণনা করেছেন । বর্ণনা শুনে মনে হল তিনিও একই বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন । ইউটিউব লিংক এখানে । তবে ভিডিওতে কোশাকান্দার সেই তালগাছটি দেখা যাচ্ছে ।
তথ্য সংগ্রহঃ
বাংলা কিংবদন্তী বই
লেখক আসাদুজ্জামান জুয়েল
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




