আমাদের চোখের সামনে যখনই রাশিয়া কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়নের নাম চলে আসে তখন প্রথমেই এক যুদ্ধবাজ কাট খোট্টা দেশের চিত্র ভেসে ওঠে । বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সেই চিত্রটা যেন আরও বেশি বেশি চলে আসে । এছাড়া যখনই কোন মুভিতে কোন রাশিয়ানদের আগমন ঘটে দেখা যায় তাদেরকে প্রায় সব ক্ষেত্রেই মাফিয়া কিংবা সন্ত্রাসী হিসাবে চিত্রায়িত করা হয় । পশ্চিমা আমেরিকা খুব সুক্ষ আর দীর্ঘ সময় ধরে এই চিত্রটা আমাদের মনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে । আমরাও সেইটা মনের ভেতরে সেট করে নিয়েছি যে রাশিয়া মানেই সন্ত্রাসী।
কিন্তু একটা দেশের আসল চিত্র কেমন সেটা বাইরে থেকে, অন্যের বুঝিয়ে দেওয়া চিত্র দিয়ে কি সঠিক ভাবে চেনা যায় ? আসলেই যায় না । রাশিয়া সম্পর্কে আসলে আমার নিজের ধারনাও সেই পশ্চিমাদের দেখানোর পথেই ছিল । তাদের দেওয়া চশমা পরেই দেখে এসেছিলাম রাশিয়াকে । কিন্তু কখন মনেও হয় নি যে রাশিয়ার মানুষজনও ঠিক আমাদের মত আবেগময় হতে পারে, ভালোবাসতে পারে আমাদের মত করেই। ভালোবেসে কতই না পাগলামী করতে পারে তারা !
সামুতে পর্বাকারে লেখা খুব একটা পড়া হয় না আমার । কোন একটা লেখা লেখা পড়ার পর বাকি অংশের জন্য অপেক্ষা করা পছন্দ না । কিন্তু শেরজা তপন ভাইয়ের লেখা ''বাবনিক'' পড়া শুরু করলাম তখন আমার কাছে রাশিয়ানদের কে একেবারেই নতুন মনে হল । মনে হল যে এতোদিন আমি সোভিয়েত রাশিয়ানদের কে ঠিক যেভাবে চিনে এসেছি তাদের সাথে এই মানুষ গুলোর আচরণের কোথায় যেন একটা পার্থক্য রয়েছে । মূলত প্রথম খন্ড শেষ করে আমার সৌম্যের জন্য আমার যে কষ্ট এসে জমা হয়েছিল একেবারে শেষ খন্ড পড়ে আমার এলিনার জন্য তীব্র একটা কষ্ট জমা হল ! ঠিক যেমন ভাবে হুমায়ূন আহমেদের কোন মেয়ে চরিত্রের জন্য আমার মনে কষ্ট এসে জমা হয় তেমন । আমার কেবল মনে হল যে দেশ আলাদা হলেও আসলে এলিনা যেন আমারই দেশের কোন ললনার চিত্র যে ভালোবাসায় বারংবার মার খেয়েছে। ভালোবেসে কষ্টই পেয়েছে কেবল ! আসলে দেশ যেখানেই হোক না কেন ভালোবাসার কষ্ট সব জায়গাতেই একই রকম । এই ভালোবাসা হতে প্রাপ্ত কষ্ট হল সব মানুষই একই ভাবে ভোগ করে থাকে ।
বাবনিক এর প্রতিটা পর্বে তৎকালীন রাশিয়ার একটা চিত্র বর্ণনা উঠে এসেছে । সেখানকার মানুষজন কিভাবে জীবন যাপন করে কিভাবে ভালোবাসে কিভাবে জীবন উপভোগ করে । বোধ করি এই চিত্র গুলো আমাদের চিরায়িত পশ্চিমাঘেষা লেখকদের লেখায় কখনও ফুটে উঠবে না । বাবনিকটা শেষ করার পরে আমার এই রাশিয়া সম্পর্কে আরও জানার আগ্রহ হল । শেরজা তপন ভাইয়েরই লেখা একটা বই চোখে পড়লো তখনই । বইটার নাম রুস্কাইয়া ব্লুদা । একধরনের রাশিয়ান খাবার । সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়ার পরে রাশিয়া যখন কমউনিস্ট শাসন থেকে বের হয়ে পুজিবাদীর ট্রেনে চড়ে বসেছে সেই সময়টাকে শেরজা তপন তার লেখায় তুলে এনেছে সদ্য গঠিত রাশিয়া কেমন ছিল, সেখানকার মানুষজন কেমন ভাবে জীবন যাপন করেছে তাদের কালচারের উপরে এই পুজিবাদী ছোঁয়া কেমন প্রভাব ফেলেছে তা লেখক নিজের স্মৃতি থেকে লিখেছেন বইটাতে ।
বইটাতে মোট ২১টা পর্ব আছে । রাশিয়ার তখনকার সময় লেখকের সাথে ঘটে যাওয়া কিংবা তার সাথে সম্পর্কৃত অনেক কিছু তার লেখায় ফুটে উঠেছে । তরুন লেখক রাশিয়ার বিভিন্ন স্থান কাল পত্রের সাথে পরিচিত হচ্ছে তার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছে । পড়তে পড়তে আমি নিজেও সেই সময়ের রাশিয়াকে দেখতে পাচ্ছিলাম চোখের সামনে । লেখক নিজের অভিজ্ঞতার সাথে সাথে সেই অংশের কোন ইতিহাতও বর্ণনা করে গেছেন । তাতে আমাদের পুরো ব্যাপারটা বুঝতেও বেশ সুবিধাও হয়েছে ।
রাশিয়া সম্পর্কে যাদের আগ্রহ আছে তারা অবশ্যই বইটা সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন । পরিপূর্ন ভাবে উপভোগ করবেন আশা করি ! রাশিয়ার এক নতুন চিত্র আপনাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে আশা করি ।
মূলত শেরজা তপন ভাইয়ের বাবনিক আর রুস্কাইয়া ব্লুদা পড়ার পরেই আমার রাশিয়া সম্পর্কে জানার আরও আগ্রহ জন্মেছে । বিশেষ করে যারা রাশিয়া ভ্রমন করেছেন এবং সেখানে থেকেছেন তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা গুলো জানতে আগ্রহ বোধ করছি প্রবল ভাবে । মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছি যে আমার চেনা জানা রাশিয়ার সাথে তাদের দেখা রাশিয়ার কতখানি পার্থক্য । এরই ভেতরে কয়েকটি বই সংগ্রহ করা হয়েছে । ব্লগের মনিরা সুনতানার আপুর কাছে থেকে ধার করে এনেছি কয়েকটি বই । এই বই গুলোর সবই চমৎকার লাগছে তবে একটা ব্যাপারই বেশ কষ্টসাধ্য ঠেকছে । রাশিয়ানদের নাম গুলো এতো কঠিন হয় যে উচ্চারণ করেই ঠিকমত পড়তে কষ্ট হয় । এটা নিয়ে বেশ ঝামেলাতে আছি আপাতত !
আজকের ব্লগ এই পর্যন্তই । সামনে আবারও হয়তো এই রাশিয়াকে নিয়েই লেখা হবে !
সবাই ভাল থাকুন ।
হ্যাপি ব্লগিং
যারা বাবনিক পড়েন নি এখনও তারা আজই পড়া শুরু করে দিন । না পড়লে ব্লগ জীবনের একটা চমৎকার লেখা মিস করবেন ।
প্রথম পর্ব পড়তে পারেন এই লিংক থেকে ।
আর বইটা কিনতে চাইলে রকমারি থেকে কিনতে পারেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১৯