somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক- প্রথম পর্ব

২০ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাবনিক-এর বাংলা শব্দার্থ চরিত্রহীন বা লম্পট। কিন্তু যে জাতি নারী পুরুষের যথেচ্ছা যৌনাচারকে চারিত্রিক ত্রুটি বিচ্যুতির মধ্যে ধরেনা, মা-মেয়ে, বাপ-ছেলে সদ্য পরিচিত নর-নারীর সাথে একই ছাদের নীচে ভিন্ন কামরায় সহবাস করে তাদের কাছে বাবনিকে’র অর্থ ভিন্ন। বুদ্ধিমান পাঠক এর অর্থ নিজ বুদ্ধিতে বুঝে নিলে কৃতার্থ হব। না বুঝলেও সমস্যা নেই। বাবনিকে’র অর্থ সেটাই থাকবে যেটা রুশীয়রা বোঝে। যত দেশ তদাচার- সেখানে পৌছে আমরাও দু-দন্ডে বাবনিকের আসল মানে বুঝে ফেললাম। আমরাও রুশ অর্থে চরিত্রহীন/ লম্পট হলাম!
• আড্ডার ভাষা শুদ্ধ/ অশুদ্ধ, যার যার এলাকার টানে দুষ্ট থাকে। আমার লেখার ভাষাও সেই রকম।

‘বাবনিক’ মুলত আলকাশে’র যমজ লেখা। বাবনিক সিরিজ শেষ না হলে আলকাশ কখনো পরিপুর্নতা পাবে না বলেই আমি মনে করি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আদৌ কি ‘বাবনিক’ সিরিজ কখনো শেষ হবে?? সে সম্ভাবনা ক্ষীণ...
‘বাবনিক’ এর কাহিনী শুরু হয়েছে সূদীর্ঘ দুই যুগেরও আগে- কিন্তু এর সমাপ্তি একটা জীবনের শেষ না দেখেতো শেষ হয় না। আমি জানিনা এর শেষ দেখে যেতে পারব কি না? যদি না পারি তাহলে হয়তো এ লেখাটা অসমাপ্তই থেকে যাবে...
আমির লেখক হিসেবে অতি মামুলি! আমার কল্পনা শক্তি অতি দুর্বল-আমি যা লিখি তার সিংহভাগ সত্যি ঘটনা। কোন কিছু না দেখে বা জেনে শুধু কল্পনায় কাহিনীর শেষ আঁচড় দেবার মত ক্ষমতা আমার নেই। তাই যে দু-চারজন ব্লগার আমার লেখা নিয়মিত পড়েন বা পড়তে চান তাদের জন্য নিঃসন্দেহে দুঃসংবাদ! আমি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তাদের কাছে এই বলে যে,’বাবনিক’ সিরিজ শেষ হতে এক দেড় যুগ ও লেগে যেতে পারে। জানিনা ততোদিন আমরা সবাই থাকব কি না- সামু থাকবে কিনা!!
তবে না হলে নাই- আমার একটা লেখা অসমাপ্ত থেকে গেলে পৃথিবীর কারো কোন ক্ষতি বৃদ্ধি হব বলে মনে হয় না।
(বাবনিক সিরিজটা শুরু করতে চেয়েছিলাম ব্লগে আমার একযুগ পূর্তির দিনে(১৩ ডিঃ ২০২০)- কিন্তু পারলাম না। তবে শুরু তো করলাম- দেখি এই ‘লক ডাউনে’ কতদুর এগিয়ে যেতে পারি।)

. বাবনিক- ১ম পর্ব (এলিনা)
. দেড়যুগ আগের কথা বলছি আমি;দেড় যুগ অনেকগুলো বছর- মানুষের জীবনের প্রায় তিনের একভাগ সময়।
. মস্কো থেকে হাজার কিলোমিটার দুরে ইউক্রাইনে কৃষ্ণ সাগরের কোন ঘেঁষে সোভিয়েতের চতুর্থ বৃহত্তম শহর গ্রীক, তাতার আর মধ্য ইঊরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর সপ্নের এক নগরী ওডেসা’তে কোন এক গ্রীস্মের শুরুতে এলিনা’র সাথে দেখা। ওডেসাকে নাকি "কৃষ্ণ সাগরের মুক্তো" বলা হয়। সেখানেই প্রথম পরিচয় আমার কৃষ্ণ সাগরের মুক্তোর সাথে।
. ওর সন্মন্ধে অবশ্য আগেই একটু আধটু শুনেছিলাম। কিন্তু সামনা সামনি দেখে একটু চমকে গিয়েছিলাম।ওদের বাসায় কিছু বাঙ্গলী সাবলেট থাকত- সেই সুত্র ধরে একটু ইচ্ছে করেই ওদের বাসায় গমন।
. বেশ সুন্দরী নিঃসন্দেহে। তবে এই বয়েসী গড়পড়তা রুশ তরুনীদের চেয়ে একটু সাস্থ্যবতী-ভারি দেহ তবে বেশ পেটা শরির।পোষাকে বেশ মার্জিত- কোন রকম সাজ গোজের বালাই নেই। সোনালী বাদামীতে মেশানো চুলগুলো কোন রকমে ধরে চেপে পনিটেল করে রেখেছে।টিন এজ মেয়েদের উচ্ছলতা-উচ্ছাস একদম নেই চেহারায় কেমন একটু বিষন্নতা!চাল চলন কথা বার্তায় বয়েসের থেকে বেশ একটু ভারিক্কি। অন্য পাঁচটা রুশ তরুনীর সাথে তার চলন বলন প্রকৃতি অসাঞ্জস্যতা দেখে আমি স্বাভাবিক ভাবেই একটু চমকে গিয়েছিলাম।
. অন্য দিকে ওর ছোট বোন নাদিয়া ঠিক উল্টো স্বভাবের। বয়সে হয়তো ওর থেকে বছরখানেকের ছোট হবে। কিন্তু এত ছটফটে আর চঞ্চল যে তাল মেলাতে গিয়ে দু মিনিটেই হাঁফিয়ে উঠলাম।ও বাসায় গিয়ে কথা বার্তা হল মুলত এলিনার মা আর ছোট বোনের সাথেই। আশে পাশে রুশ ভাষা জানা বাঙ্গালী কম থাকায়-মওকামত আমাকে পেয়ে আমার কাছ থেকেই জেনে নিচ্ছিল সব বাঙ্গালীর জাত পাতের খবর! কথা বলতে গিয়ে আমি বার বার হোঁচট খাচ্ছিলাম এলিনার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির দিকে চোখ পড়তেই। কি যেন ও জিজ্ঞেস করতে চায়? একান্ত গোপন কোন কথা। এমন কথা-যা আর কাউকেই বলা যায়না।
. গল্প শেষ করে যখন ফিরে আসছিলাম – করিডোরে বসে জুতোর ফাঁকে পা গলাতেই এলিনা আমাকে বেশ নিন্ম স্বরে ডাকল।
. আপনি এদিকে একটু আসবেন।‘ আমি উঠে দাড়াতেই সে উল্টোদিকে ঘুরে হাটা শুরু করল। অগত্যা তাকে অনুসরন করতেই হল।হাটতে হাটতে সে গিয়ে দাড়াল নির্জন রান্নাঘরের এককোনে।আমি স্বভাবতই তখন একটু বিস্মিত- হোক সে রুশ তবু সদ্য পরিচিত একটা মেয়ে এইভাবে সবার সামনে আমাকে ডেকে নিয়ে ঘরের নির্জন এক কোনে গিয়ে কি বলতে চায়?
. অগত্যা গিয়ে দাড়ালাম তার মুখোমুখি। সে তখন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে পায়ের নখ দিয়ে কার্পেট খুটছে।আমি তখন ভেবে কুল পাচ্ছিলাম না- কি বলতে চায় ও? এমন লাজুকতা কি ছদ্মবেশ?
. কি কিছু বলবে?’ প্রশ্নটা আমিই করলাম তাকে।
. সে এবার মুখ তুলো চাইল। চোখের কোনে জল চিক চিক করছে।ফর্সা মুখখানা লাজে রক্তিম হয়ে আছে।
. কিছু মনে করবেন না। একটা প্রশ্ন করি?
. কর।
. আপনি কি সজলকে চেনেন?
. হ্যা চিনি।‘
. আমি জানতাম আপনি চিনবেন। ও অনেকবার আপনার নাম বলেছে।আমি আপনার সন্মন্ধে আগে থেকেই অনেক কিছু জানি। রেনেতা’র কাছেও শুনেছি আপনার কথা। রেনেতা’তো আপনাকে এক সময় খুব ভাল বাসত।
এতগুলো কথা একবারে বলতে গিয়ে সে হয়তো হাঁপিয়ে গেল। একটু থেমে আবার বলল,আপনি কি জানেন সজল এখন কোথায় আছে?
. আমিও শুনেছি তোমার সন্মন্ধে একটু একটু রেনেতা’র কাছে। তুমিতো জানো এখন ওর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই?
. জানি’ কথাটা বলতেই ওর শরিরটা একটু কেঁপে উঠল। চকিতে আমার দিকে এক নজর চেয়েই ফের চোখ সরিয়ে বলল। জানতাম’এজন্য কিছুটা হয়তো সজলই দায়ী। আপনাকে আমি না চিনলেও, ওকে বার বার নিষেধ করেছিলাম।
. থাক এসব কথা। সজলের খোঁজ করছ কেন?
. সে ফের চোখ নামাল। বাইরে থেকে আমি টের পাচ্ছি তার ভিতরের অস্থিরতা। মুখখানা নামিয়েই বলল’ তার সাথে আমার কথা আছে। সে বলেছিল খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। কিন্তু তিন মাস হয়ে গেল- ফিরে আসাতো দুরের কথা একটা ফোন পর্যন্ত করেনি।

আমি জানি সজল কোনদিন হয়তো আর ফিরে আসবেনা।সে রাশিয়া ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে।ওর সাথে একটু ঘনিষ্ঠতা আমার ছিল কিন্তু বন্ধু ছিলনা সে আমার।শুধু ইদানিং তার প্রতি একটু আগ্রহ বেড়েছে আমার-যাবার আগে শেষ মুহুর্তে তার চতুরতার জন্য।আমার বেশ বড় সড় একটা ক্ষতি করে গেছে সে।
আমি তার কিছুই বললাম না এলিনার কাছে। শুধু বললাম,-অপেক্ষা কর বলেছে যখন আসবে হয়তো। তুমি কি ওকে ভাল বেসেছিলে?
সে ফের এক নজর আমার দিকে চাইল।লাজুক মুখে রক্তের আভা।‘নাহ্ ভালবাসা না তবে আন্তরিকতা ছিল। ওকে আমি খুব ফিল করি।
আমি ওর সাথে পরিচয়ের পর থেকেই উত্তরোত্তর অবাক হচ্ছি। আমার চেনা জানা অন্য দশটা রুশীয় ললনার সাথে একদম মেলাতে পারছিনা তাকে। যেই রুশ নারীরা ভাল লাগার প্রথম দিনেই বাবা মার সামনে পর পুরুষকে নিয়ে চোখের সামেন দুয়ার দেয়- সেই দেশেই আমি একি দেখছি! এ দেখি আমার চিরচেনা বাঙ্গালী নারীদের চেয়েও এককাঠি সরেস।এত বিনম্রতা-এত লাজুকতা ভাবতে পারিনা।প্রথম দিনেই ওকে আমার ভাল লেগে গেল।
ওদিকে বন্ধুরা তাড়া দিচ্ছে বেরুবার জন্য। এলিনা আমাকে বিদায় দিতে দিতে তাড়াহুড়ো করে বলল,
. ওর সাথে যোগাযোগ হলে দয়া করে আমার কথা একটু বলবেন। আর আপনি সুযোগ পেলে আসবেন আমাদের বাসায় বেড়িয়ে যাবেন।
. ঠিক আছে তুমি আমাকে তোমাদের বাসার ফোন নাম্বারটা দাও। সে একটা চিরকুটে নম্বরটা লিখে হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাসি মুখে বলল, বিদায়। ভাল থাকবেন ফের দেখা হবে।
এই প্রথম ওর দাঁত দেখলাম। ঝকঝকে শক্ত একপাটি দাত- রুশ মেয়েদের থেকে ভিন্ন রকমের। প্রায় সব রুশদের দাতই একটু হলদেটে হয়।
. পরিচয়ের সেই শুরু।

১ম পর্ব শেষ।
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:০৩
৫৬টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×