প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
এবার 'বাবনিক'এর মুল চরিত্রের সাথে পরিচয় পর্বটা সেরে ফেলি;
ববি আমার জিগার দোস্ত! অথচ ছ’মাস আগেও কেউ কাউকে জানতাম না।মস্কোর এক হোস্টেলে তার সাথে পরিচয়। হোস্টেলের সবচেয়ে সুদর্শন, প্রানবন্ত, বাগপটু সেই ছেলেটা সবার মধ্যমনি ছল। গানে কথায় গল্পে( চাপাবাজিতেও) সহজাত দখল থাকায় আড্ডা জমে যেত মুহূর্তেই।
চেহারায় কিছুটা নাকি সালমানের আদল আর স্টাইলে নাকি সঞ্জয়! তাই অনেকেই তাকে সালমান ভাই কিংবা সঞ্জয় ভাই বলে ডাকত। আর সেও মোটামুটি সে হাবে ভাবে চলত।
ওর বড় ভাই বেশ আগে থেকে মস্কোতে থাকে। মস্কোর বাঙ্গালী পাড়ায় বেশ নাম ডাক। সে-ই নিয়ে এসেছে ছোট ভাইকে।
ইচ্ছে দু’চার পাতা রুশ ভাষা শিখিয়ে ব্যাবসায় তালিম দেয়া। তাইতো নিজের কাছে না রেখে হোস্টেলে রেখেছেন। যদিও তাকে হোস্টেলে রাখার কারন- সে আমি সহ সবাই জানে, কারনটা অন্য কিছু। ভাইয়ের পেয়ারা দোস্ত-ইয়ার আর কিছু বান্ধবীর আনাগোনা-তো ঘটে সেখানে নিত্য। পাছে ছোট ভায়ের কাছে মান যায় সেই ভয়ে ‘দুর রাহানা হি বেহাতার হ্যায়’।
এদিকে ছোট ভাই যে তার থেকে কয়েক কাঠি সরেস- তা তিনি টের পেলেন মাস না ঘুরতেই।
হাই, হ্যালো, কেমন, ভাল এমন দু’চারখান রুশ শব্দ শিখেই সে মহা উদ্যোমে লেগে গেল নারী হন্তায়! ক্যান্টিনের ওয়েট্রেস, ফ্রন্ট ডেস্কের ম্যানেজার থেকে শুরু করে কেউ তার হাত ফস্কে যেতে পারে না। কেমনে যে পটায় সে এক ঈশ্বর-ই জানেন।
আমাদের দেখে পানসে মুখে সম্ভাষন জানায় –আর ওকে দেখলেই বিগলিত হাসি! মোমবাতিটা যেন কাত করে রাখা-শুধু টুপ টুপ গলে পড়ে।
দিন দিন তার ফ্যাশনের জেল্লা বাড়ে- নিজের না থাকলেও এর ওর সরেস-খানা ধার করে নিয়ে যায়। আরেকটু ভাষা শিখেই হাত বাড়াল তার চেনা জানা গন্ডির বাইরে। আমাদের ‘বেহুদা’ কামে পার্কে নিয়ে যায়। মোটামুটি সুবেশা সুন্দরী কোন কিশোরী, যুবতী, বা রমনী হলেই সে একটা হাসি দিয়ে এগিয়ে যায়। রুশীয় রমনীরা এই ভেঁতো বাঙ্গালীদের সন্দেশ রাখত কম! গন্য মান্য বিদেশি ভেবেই, হেসে হেসে কথা বলত। প্রত্যাখান করতও হাসি মুখে।
ওদিকে বড় ভাই তার এই লেডি কিলিং এর তথ্য পেয়ে গেল শুভাকাঙ্ক্ষী মারফৎ।
শুরু হল দুই ভায়ের ‘catch me if you can’ খেলা।
আগে থেকেই টাকা পয়সা হাতে ছিল তার বেশ। আর দিল দরিয়া বন্ধুরাতো আছেই। তখন অবশ্য এক ডলারে পুরো মস্কো ঘুরে ফের তিন দিন আয়েশ করা যেত !
তবে রনি ভাই(ববির বড় ভাই) আমাকে অতি সভ্য ভব্য ভেবে ছোট ভায়ের চরিত্র সংশোধনের গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমার ঘাড়ে।
রনি ভায়ের নজরদারি এড়াতে খোলা হাওয়া খেতে ববি এবার ছুটল মস্কো ছেড়ে ইউক্রাইনের পথে; সঙ্গী হলাম আমি।
কিয়েভে উঠলাম এক বন্ধুর হোস্টেলে। সারাদিন মদ খাওয়া, আড্ডা আর তাস খেলা চলে।
আচমকা একদিন ববি উধাও!
দু’দিন বাদে ফিরে এল বগল দাবা করে সেই রকম সুন্দরী এক ইউক্রাইনী রমণীকে নিয়ে। দুর্ধর্ষ ফিগার আর অত্যুচ্চ স্মার্টনেস! নামটাও মাইরি- শায়লা। এই নাম রুশীয় কিংবা উক্রাইনীয় কোন রমণীর আছে বলে শুনিনি আগে।
সবার চোখ তখন কপালে! আমি জিগাই কিরে দোস্ত বিষয় কি? সে হাসে আর বলে,পরে কই। ভাগায় নিয়ে আসছি।
অবশেষে, আমাকে এক কোনে নিয়ে সে তার ভাগানোর গল্প করল;
গত পরশু তার বড় ভায়ের এক বন্ধু আছে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। বহু পুরনো ছাত্র, এখন ব্যাবসা করে। একাই বাসা নিয়ে থাকে। তার ওখানে তিনি স্বভাবতই আপ্যায়ন শুরু করলেন মদ আর শুকনো ‘জাকোজকা’ দিয়ে।
খানিক বাদেই ওখানে হাজির হল এক রুপসী কন্যা!
-দোস্তরে দেখেই আমার মাথায় চিলিক দিয়ে উঠল- কি কড়া জিনিস!
-বড় ভাই আমারে পরিচয় করিয়ে দিল, তার বান্ধবী। জার্মানিতে থাকে- বেড়াতে এসেছে কদিন ধরে।
আমি ভাবি-দুস শালা এই কাঊয়ার সাথে এই মেয়ে যায়? আমার খালি মাথা ঘুরাচ্ছিল- এই বল্টু টাইপের মানুষ!! ক্যামনে কি পুরাই মাথা আউলায় গ্যাল!
আমিতো ভাষা টাষা জানি কম। দু-একটা মজার কথা বার্তা বলতে গেলে দেখি এই মেয়ে গম্ভীর হয়ে থাকে- পাত্তা টাত্তা দেয় না।
- তখন ফর্মুলা দুই ধরলাম; হের কথা ভুলে গিয়ে বড় ভাইরে ভজা শুরু করলাম। আমি মাল খাই একটু, অনেক্ষন ধরে বোতল থেকে ঢালি, পানি নেই বেশী। আর ওর টায় পুরা ‘র’ দেই। ছেমড়ি আমার কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসে।
-তখন আরেকটু আগাইলাম। মামারে এমন পটানো শুরু করলাম! কইলাম ভাইজান, আমার দু’বছরের রাশিয়ার জীবনে (সে এসেছে ছয় মাস ও হয় নাই), আপনার মত এই রকম খোর(মদ) আর দেখি নাই। আপনি আসলেই ভাই গুরু। বইলাই পা জড়ায় ধরলাম। বড় ভাই তখন নিজেরে শালার ‘রাস্পুটিন’ ভাবা শুরু করছে। আমি দেই এক পেগ, সে আরো ডাবল করে নেয়। ঘন্টা খানেকের মধ্যে কাত।
-পুরা বেহুঁশ! ততক্ষনে মাইয়া পটে গেছে। তারপরে ভাই’র নিজের বিছানাতেই তারই বান্ধবীর সাথে পুরা রাত। চরম ক্রেজি ছেমড়ি। নিজের বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে বলল, দ্যাখ এমন এক কামড় দিছে- আঙ্গুলটাই গেছিল।
আমি দেখলাম বেশ গভীর কামড়ের দাগ। দেখে শিউড়ে উঠলাম! মনে মনে কল্পনা করলাম- কোন রকম ক্রেজি সে!
-তারপর কালকে কোথায় ছিলি?
ভোর বেলা ওখান থেকে ভেগে গিয়ে ওর এক বান্ধবীর বাসায় ছিল। সেইটাও সেই! তুই চল আজকে বিকালে, ওইটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। তারপর দুই বন্ধু মিলে ব্লাক সি’তে মৌজ-মাস্তি করে আসি।
ওইদিকে উক্রাইনের সেই বড় ভাই পুরা শহরে নাকি ওরে পাগলের মত খুজতেছে।
বিকেলে ববি’র ‘রাদনোই ব্রাত’(মায়ের পেটের ভাই) ফোন দিল আমাকে। কুশলাদি বিনিময় করে, জিজ্ঞেস করল ববি’র কথা? তার বন্ধু নাকি ফোন দিয়েছিল তাকে, বলেছে বিস্তারিত! ও কোথায় বলতে পার?
আমি পুরোপুরি চেপে গেলাম। না রনি ভাই আমিতো তিনদিন ধরে ওরে খুঁজতেছি। ভাবছিলাম আপনাকে ফোন দিব।
- তুমি একটু খোঁজ লাগাও-তো ভাই! বিরাট শরমের ব্যাপার।
- জ্বী ভাই অবশ্যই। ওর খোঁজ পেলে প্রথমে আপনাকেই জানাব।
আহারে বড় ভাই’এর ওকে নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই!
তিনি আমাকে কতবার অনুরোধ করেছেন; তোমার কথাতো শোনে। তুমি ওকে বোঝাও- এভাবে মেয়েদের পেছনে চক্কর কাটলে-তো লাইফ বরবাদ হয়ে যাবে। যদি চায় সেরকম মেয়ে পেলে বিয়ে করিয়ে দিব।
আমি বুঝিনি সেই রকম মেয়ে বলে উনি কি মিন করেছিলেন? জিজ্ঞেস করলাম, সেইকম মেয়ে বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন ভাই?
-এই ধর আমাদের সাথে যায়।
তবুও আমি বুঝিনি- তবে ঘরোয়া,শান্ত, স্বামী ভক্ত, ধর্ম-টর্ম পাল্টে ধার্মিক হবে- এইসব মিন করেছিলেন হয়তোবা।
বাপরে এই রকম ‘প্লে বয়’ টাইপ ছেলের সাথে তিনি খুঁজছেন কিনা – আমাদের সাথে যায় তেমন মেয়ে।
সুযোগের সদ্ব্যাবহারে আমরা বিশ্ব সেরা। যেখানে ইউরোপের অন্য দেশে সিংহভাগ বাঙ্গালী কোন মতে কানা ল্যাংড়া একটা পেলে বর্তে যায়। সেখানে সারা রাশিয়াতে ঘুরে আমাদের টাইপ মেয়ে খুঁজতে হবে। নারী’র সহজ লভ্যতা এদের কত নাক উঁচু করে ফেলেছে!!!
দ্বিতীয় পর্ব শেষ!
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:২৬