somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ নওসাবার বিয়ে

১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নওসাবা শক্ত করে কিছু সময় মীমকে জড়িয়ে ধরে রাখলো । কতদিন পরে যে দুই বান্ধবীর দেখা হয়েছে সেটা বলা মুশকিল । ইন্টারের পরে নওসাবা চলে গিয়েছে ইংল্যান্ডে ওর বড় মামার কাছে । সেখান থেকে পড়াশুনা তারপর চাকরি । বাবা মা পরের বছরেরই সেখানে চলে যাওয়ার পরে এই দেশে আর আসাই হয় নি নওসাবার । এখন এতো বছর পরে আবারও স্বপরিবারে দেশে এসেছে । মুল কারণ অবশ্য নওসাবার বিয়ে দেওয়া । নওসাবার অবশ্য তাতে খুব একটা আপত্তি ছিল না । দেশে এসে পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা করা শুরু করেছে । মীম ছিল নওসাবার সব থেকে কাছের বন্ধু । অবশ্য বিদেশ যাওয়ার আগে মীম আর নওসাবার ভেতরে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো । নওসাবা এমন একটা কাজ করেছিলো যাতে মীম রেগে গিয়েছিলো । নিজ থেকে দুরে চলে গিয়েছিলো । তবে এতো বছর পরে বন্ধুর ফিরে আসার পরে মীম আর রাগ করে থাকে নি । বিশেষ করে নওসাবা যখন নিজেই মীমদের বাসায় এসে হাজির হয়েছে তখন তো আর রাগ করে থাকার কোন কারণ থাকতে পারে না !

দিনভর দুই বন্ধু গল্প করলো । বিকেল বেলা হঠাৎ করে নওসাবা জিজ্ঞেস করলো, হাসানের কী খবর ? জানিস কিছু ?

মীমের মুখটা একটু মলিন হয়ে গেল । তবে সে কাটিয়ে উঠলো সাথে সাথে । এই ব্যাপারটা নিয়ে আর নওসাবার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না । মূলত এই হাসানের কারণেই মীম নওসাবার উপরে রাগ করেছিলো । মীম হাসানকে পছন্দ যে করতো ব্যাপারটা কিন্তু সেই রকম না ।


নওসাবা আর মীম অনেক আগে থেকে ঢাকার লালমাটিয়াতে বাসবাস করে । ওদের এলাকাতে হাসানও থাকতো । মীম জানতো যে হাসান নওসাবাকে পছন্দ করে কিন্তু ছেলেটা অতিরিক্ত ভদ্র হওয়ার কারণে কখনই নওসাবার সামনে আসতো না কিংবা কোন প্রকার কিছু বলার চেষ্টাও করতো না । আর নওসাবার এই দিকে স্বভাব ছিল ছেলেদের সাথে টাইমপাস করা । ছেলেদের সাথে কিছু সময় কাটালো তারপর তাকে ছেড়ে দিলো । এইভাবে কত ছেলের সাথেই যে নওসাবার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল সেটা নওসাবা নিজেও জানে না । ঠিক এমন ভাবে নওসাবার কি মনে হল যে হাসানের সাথেও কিছু সময় টাইমপাস করা যাক ।

টাইমপাস করেও ছিল । তারপর যখন হাসানের সাথে ব্রেক করলো তখন মীম খানিকটা রেগে গিয়েছিলো । মীম ওকে শুরুতেই বলেছিলো যে হাসানের সাথে এই কাজটা না করতে । কিন্তু নওসাবা শোনে নি । সে ঠিক ঠিক হাসানের সাথে টাইম পাস করতে চলে গেল । ব্রেক আপের পরে হাসান অনেকটাই ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিলো । বিশেষ করে মীম যখন হাসানকে একদিন গাছের আড়ালে দাড়িয়ে কাঁদতে দেখেছিলো সেদিন মীমের মনে একটা তীব্র অনুশোচনা বোধ জেগেছিলো । নওসাবাকে অনেক অনুরোধ করলো যাতে আবার ফিরে যার হাসানের কাছে । শেষে রাজি না করাতে পেরে হাসানকে সরি বলতে বলে । নওসাবা তাতেও রাজি হয় না । সেদিন মীম অনেক রাগারাগি করেছিলো নওসাবার সাথে ।

মীম নওসাবার দিকে তাকিয়ে বলল, মাস ছয়েক আগে দেখা হয়েছিলো ।
-এখনও কি এখানেই থাকে ?
-না ! ও কুয়েটে চান্স পাওয়ার পরে ওর বাবা মাও খুলনা চলে গিয়েছিলো । ওর বাবার সরকারি চাকরি তো জানিসই । খুলনা বদলি নিয়ে ছিল ।
-ও !
মীম একটু চুপ করে থেকে বলল, এখন ঢাকাতে আছে । আমার অফিসের নিচে একটা রেন্টুরেন্ট আছে । ওখানে ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিলো । সেদিন দেখা হয়েছিলো ।
-ম্যাজিস্ট্রেস হয়েছে নাকি?
-হ্যা । ভাল ছাত্র ছিল জানিসই তো !
নওসাবা একটু থামলো । কী যেন ভালবো । তারপর বলল, তুই এখনও রাগ করে আছিস আমার উপরে ওর জন্য !
-নাহ ! এখন আর রাগ থাকবে কেন ! ঐ হাসান কাঁদতে দেখে এমন কষ্ট লেগেছিলো ! একটা মানুষ তোকে হারিয়ে কাঁদছে, কী তীব্র একটা অনুভূতি যদি তুই বুঝতিস !
-আমি জানি আমি ঐ কাজ গুলো একদম ঠিক করি নি । একদম না । আই শ্যুড হ্যাভ সেইড সরি !

মীম এবার নওসাবার দিকে তাকিয়ে বলল, আরেকটা ব্যাপার কী জানিস ?
-কী ?
-হাসান এখনও মুভ অন করতে পারে নি !
-মানে?
-মানে ও এখনও তোকে মন থেকে বের করতে পারে নি ।
-কী বলছিস ?
-হ্যা ! যখন দেখা হল কথা হল, এক সময়ে জানতে চাইলাম বিয়ে করেছে কিনা ! কি বলে জানিস?
-কী?
-বলে কিনা তোমার বান্ধবীকে কোন দিন মন থেকে সে বের করতেই পারে নি । কোন দিন পারবেও না ! ভাবতে পারিস ব্যাপার টা !

নওসাবা কি বলবে খুজেই পেল না । এতোদিন পরে মনের ভেতরে সত্যিই একটা তীব্র অপরাধ বোধ জেগে উঠলো ! নওসাবা বলল, ওর সাথে দেখা করা যাবে?
-দেখা করে কী করবি?
-সরি বলবো?
-তাতে কী লাভ? কিছু যাবে আসবে?
-না আসুক । তবুও ...
-বিয়ে করবি ওকে?
-বিয়ে ?
-হ্যা । বিয়ের জন্যই তো এসেছিস? ওকেই কর !
-ও রাজি হবে?
-হবে না মানে ? দৌড়ে চলে আসবে । একবার বলেই দেখ না ! তাহলে আমি ওকে বলি । একটা কার্ড আছে আমার কাছে । ও দিয়েছিলো ।


পরের সাতদিনের ভেতরে সব কিছু কেমন দ্রুত হয়ে গেল । নওসাবা দেখা করলো । হাসান যে এখনও ওকে মন থেকে বের করতে পারে নি সেটা ওর কাছে সত্যি মনে হল । নিজের কৃত কর্মের জন্য অনুশোচনা হল খুব বেশি । হাসান ঠিক আগের মতই লাজুক রয়ে গেছে । তবে দেখতে আগের থেকেও আরও সুন্দর সুদর্শন হয়েছে । নওসাবার সত্যি সত্যি পছন্দ হল হাসান কে । এমন কি নওসাবার বাবা মারও পছন্দ হল খুব । বিয়ে কথা বার্তা ঠিক হতে সময় লাগলো না খুব একটা । দেখতে দেখতে বিয়ের দিন এগিয়ে এল !

নওসাবা বৌ সাজে অপেক্ষা করতে লাগলো বরযাত্রীর আসার জন্য । দুপুরে যখন বরযাত্রীর আসার কথা তখন নওসাবার ফোনে একটা ফোন এসে হাজির হল । হাসান ভিডিও কল দিয়েছে । ফোনটা রিসিভ করতেই একটু অবাক হল । দেখতে পেল মীম ফোনের ওপাশে । ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, তোকে তো সুন্দর লাগছে রে !
নওসাবা বলল, তুই না এখানে আসবি ! হাসানের কাছে কেন ?
মীম হাসলো । তারপর বলল, বাহ আমি হাসানের সাথে থাকবো না তো কে থাকবে ! একটু আগে আমরা বিয়ে করেছি !

নওসাবার প্রথমে মনে হল মীম সম্ভবত ওর সাথে ঠোট্টা করছে । মীম বলল, সরি দোস্ত, প্রতিশোধ না নিয়ে পারলাম না । হাসানের ঐ দিন গুলোতে আমি ওর সাথে খুব বেশি মিশে গিয়েছিলাম । কাছ থেকে দেখেছি যে ও কতটা কষ্ট পেয়েছিলো । তখনই মনে মনে ঠিক করেছিলাম যে সুযোগ আসলে একটা প্রতিশোধ নিবোই । যাই হোক তোকে বলি সেই তখন থেকেই হাসানের সাথে আমার বন্ধুত্ব । তারপর ওর সাথে প্রেম ।

নওসাবা যেন চোখ বড় বড় করে কেবল তাকিয়ে রয়েছে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে । কোন কথাই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না । মীম বলল, যদিও হাসান এসব কিছুই করতে চায় নি কিন্তু আমি ওকে রাজি করিয়েছি । যাই হোক, এখন রাখি । আমাদের ফ্লাইট একটু পরে । হানিমুনের ছবি পাঠাবো তোকে । টাটা !

মোবাইল স্ক্রিন অফ হয়ে গেল । নওসাবা অবাক হয়ে কেবল সেদিকে তাকিয়ে রইলো । ও সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছে না । এমন একটা ঘটনা ওর সাথে ঘটেছে !
এখন কী করবে ও !
বাইরে মানুষ জন ভর্তি । সবাই অপেক্ষা করছে । ওর বাবার এতো বড় অপমান হবে ! আত্মীয় স্বজনের কাছে মুখ দেখাবে কিভাবে ?
সব থেকে বড় কথা যে হাসানকে সত্যিই এবার ও অনেক মনে ধরেছে ! বিয়ের আগে ওরা বেশ কয়েকবার দেখা করেছে, গল্প করেছে । সময় গুলো এতো ভাল গিয়েছিলো । আর এখন কী হয়ে গেল !
কৃত কর্মের ফল পেল ও !

তখনই কানে একটা হইচই কানে এল !
নওসাবা শুনতে পেল, বর এসেছে বর এসেছে বলে কয়েকটা মেয়ে চিৎকারে উঠলো !

বুকের ভেতরে একটা তীব্র উত্তেজনা কাজ করলো সাথে সাথে । দরজা খুলে বের হতে যাবে তখনও দেখতে পেল দরজার ঠিক বাইরে মীম দাড়িয়ে আছে । ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে । এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, সরি রে, এই কাজটা না করে পারলাম না ! হাসান যদিও প্রথমে একদমই রাজি হচ্ছিলো না ওর ফোনটা দিতে । ও কখনো তোর উপরে রাগ করে নি । তোকে কেবল তীব্র ভাবে ভালোবেসেছে কষ্ট পেয়েছে !

নওসাবা অনুভব করলো ও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে । মীম ওকে জড়িয়ে ধরে খানিকটা আদর করতে করতে বলল, বুঝতে পেরেছিস তো ভালোবাসার মানুষ যখন কষ্ট দেয় তখন সেটা কতটা তীব্র ভাবে আঘাত করে !
-হুম !
-আর কখনও কষ্ট দিবি না হাসানকে ! বুঝেছিস ?
-হুম !
-চল এখন চোখ মুছে ফেল । আজকে তো বিয়ে ! মনে নেই সেটা !

নওসাবার সত্যিই যেন কোন কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না । যখন মীম প্রথমবার ফোন দিয়েছিলো তখন একটা তীব্র বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছিলো । সত্যিই কাছের মানুষ যখন ধোকা দেয় তখন সেটা কোন ভাবেই সহ্য করা যায় না । সেই সময় হাসানকে সে কী রকম কষ্ট দিয়েছিলো তার কিছুটা হয়তো সে আজকে অনুভব করতে পারলো ! মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা করলো যে এরপরের জীবনে সে হাসানে ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু পূরণ করে দিবে !


গল্পটা নিজেস্ব সাইটে প্রকাশিত । আর ছবিটা মিডজার্নি দিয়ে আঁকা
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×