somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেলস ফ্রম দ্য ক্যাফেঃ যে ক্যাফে আপনাকে নিয়ে যাবে অতীত ভ্রমনে

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি আপনি জানতে পারেন যে আপনার শহরেই এমন এমন একটা ক্যাফে আছে যেখানে গিয়ে আমি অতীতে গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন তাহলে আপনার মনভাব কেমন হবে? এমন যদি কিছু সম্ভব হয়ে থাকে তাহলে অতীতে গিয়ে আমি যে কয়টা প্রেম করেছি সব গুলোকে প্রোপোজ করার আগে নিজেকে সংশোধন করে আসতাম। জীবনে অনেক প্যারা কমে যেত । আমাদের জীবনে এই রকম কত ঘটনা থাকে যা করার পরে আমাদের মনে হয় যে যদি ভুলটা বদলানো যেত তো, যদি আমি অতীতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তও এই ভুলটা ঠিক করে নিতে পারতাম । এই রকম একটা কফি হাউজ আছে জাপানে যেখানে মানুষ সত্যিই চলে যেতে পারে অতীতে । এমনই এক কিংবদন্তী চালু আছে সেখানে । টেলস ফ্রম দ্য ক্যাফে গল্পের কাহিনীটা ঠিক এই রকমই । বইটা এই সিরিজের দ্বিতীয় বই । প্রথম বইটা বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড এর ঠিক পরের পর্ব বইটা । প্রথম বইয়ের মত এই বইতে মানুষ এসে হাজির হয় ক্যাফেতে অতীতে কিংবা ভবিষ্যতে যাওয়ার জন্য ।

বইতে মানুষ সত্যিই যেতে পারে সময় ভ্রমনে । এমন একটা গল্প চালু হলে মানুষজনের তো ভীড় উপচে পড়ার কথা সব সময় । তবে অতীত ভ্রমনের কিছু বিদঘুটে নিয়ম রয়েছে ক্যাফেতে । এই নিয়ম গুলো শোনার পরে মানুষজন আর আগ্রহবোধ করে না । কী সেই নিয়ম গুলো ?

প্রথম নিয়মটা হচ্ছে অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ ভ্রমন করলে আপনি যাই করেন না কেন সেটা আপনার বর্তমানের উপর কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না । ধরুন আপনার কোন বন্ধু এক্সিডেন্ট করে মারা গেল । আপনি অতীতে গিয়ে তাকে সাবধান করলে যে এই সময়ে সে এক্সিডেন্ট করবে, তাহলেও সে কিন্তু রক্ষা পাবে না । সে মরবেই । এই নিয়মটা জানার ফলেই মানুষ অতীত ভ্রমনের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে । যদি অতীতে গিয়ে কেউ অতীতকে বদলানোই না গেল তাহলে অতীতে গিয়ে লাভই বা কী !
এরপরের নিয়মটা আরো বিদঘুটে । আপনি অতীতে গিয়ে কোন ভাবেই ক্যাফে থেকে বের হতে পারবেন না । এমন কি আপনি যে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে অতীতে যাবেন, সেখান থেকেও উঠতে পারবেন না । চেয়ার থেকে উঠলেই আপনি ফিরে আসবেন বর্তমানে । এবং এরই ফলে আপনি এমন কারো সাথে দেখা করতে পারবেন না যারা এই ক্যাফেতে আসে নি । অর্থ্যাৎ আপনার অতীত ভ্রমন কেবল মাত্র এই নির্দিষ্ট ক্যাফের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকবে । যারা অতীতে এই ক্যাফেতে এসেছে কেবল তাদের সাথেই আপনার দেখা হবে, কথা হবে যে কোন জিনিস দেওয়া যাবে, নেওয়া যাবে ছবি তোলা যাবে ভিডিও করা যাবে ।
একটা মাত্র নির্দিষ্ট চেয়ারে বসেই আপনি কেবল সময় ভ্রমন করতে পারবেন । তবে সেই চেয়ারে একজন অশরীরি আত্মা সব সময় বসে থাকে । তাকে আপনি কোন ভাবেই উঠে যেতে বলতে পারবেন না । দিনের কেবল একটা সময়ই সে চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় ওয়াশরুমে । সেই সময়ে আপনি গিয়ে বসতে পারবেন চেয়ারে । সেই সময়টা কখন তা কেউ জানে না । এবং কেবল মাত্র একজন আপনাকে কফি পরিবেশন করলেই আপনি যেতে পারবেন অতীত কিংবা ভবিষ্যতে । তবে নিয়ম হচ্ছে কফি ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার আগেই আপনাকে সেই কফি শেষ করে চলে আসতে হবে অতীত হতে । কফি ঠান্ডা হয়ে যায় তাহলে আপনি মারা যাবেন । অর্থ্যাৎ আপনার হাতে সময় খুব বেশি নেই । অল্প কিছু সময়ের জন্য আপনি অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ ভ্রমন করতে পারবেন । ও হ্যা আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হচ্ছে একজন মানুষ জীবনে কেবল একবারই অতীটে ভ্রমন করতে পারবে ।

এই এতো এতো নিয়ম দেখে মানুষ আর আগ্রহ করে না অতীতে যাওয়ার । তবে তার পরেও কেউ কেউ গিয়ে ঠিকই হাজির হয় অতীতে । এই রকম চারজনের গল্প নিয়ে এই বইটা । আগের বইতেও চারটা গল্প ছিল । এই বইতেও যুক্ত হয়ে চারটা গল্প । একজন অতীতে গিয়ে হাজির হয় তার ২২ বছর ধরে মৃত বন্ধুর সাথে দেখা করতে, অন্যজন গিয়ে হাজির হয় তার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য । আরেকজন অতীতে নয়, ভবিষ্যতে যায় তার প্রেমিকার সাথে কথা বলতে । সর্ব শেষ জন একজন ডিটেকটিভ, সে ত্রিশ বছর পেছনে গিয়ে হাজির হয় তার মৃত স্ত্রীকে একটা উপহার দেওয়ার জন্য । আসলে এগুলো কোন সময় ভ্রমনের গল্প না । গল্প গুলো মানুষের জীবনের গল্প । চারজন মানুষের জীবন কিভাবে কাটছে তারা কাকে কিভাবে ভাল বাসে কিভাবে জীবনে এগিয়ে চলেছে তাদের আশা আকাঙ্খা কিংবা জয় পরাজয়ের গল্প এগুলো । শেষবারের মত নিজের মানুষের সাথে দেখা করার একটা স্পিহার গল্প । সময় ভ্রমন বলতে আমরা সাধারণ সায়েন্স ফিকশনই বুঝি কিন্তু এটা কোন ভাবেই সায়েন্স ফিকশন নয় । টেকনিক্যাল কোন ব্যাপার নেই বইতে । তবে বইটা শেষ করে নিজের মাঝে একটা প্রশান্তি অনুভব করতে পারবেন ঠিকই ।

প্রথম পর্বটা আগে পড়তে হবে । তারপর এই দ্বিতীয় বইটা পড়বেন। তাহলে বেশি উপভোগ্য হবে ।

বইয়ের নাম বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ডঃ টেলস ফ্রম দ্য ক্যাফে
লেখক তোশিকাযু কাওয়াগুচির ।
অনুবাদ করেছেন সালমান হক ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×