somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমনব্লগঃ যোগী-যোতলং-আয়ানত্লং সামিট

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই বছর আগে এই ফেব্রুয়ারি মাসে যোগী-যোতলং সামিটের উদ্দেশ্যে আমরা হাজির হয়েছিলাম বান্দরবানে । তবে সেইবার একটি পাহাড়ে উঠেই আমাদের ফিরে যেতে হয়েছিল । এর মাঝে দেশের আরও কয়েকটা পাহাড়ে উঠলেও মনের ভেতরে অন্য পাহাড়ে ওঠার যে একটা স্পিহা কাজ করছিলো সেটা কোন ভাবেই দুরে করতে পারছিলাম না । এই বছর ঠিক একই সময়ে হাজির হলাম বান্দরবানে । উদ্দেশ্য যোগী হাফংয়ের চুড়ায় উঠতেই হবে । যোতলং এতো জরুরী না কারণ ওটা আগের বার উঠেছি । মূল লক্ষ্যই ছিল যোগী হাফং ! যোগী হাফং থেকে ফেরার পরে যদি শরীরের অবস্থা ভাল থাকে তাহলে যোতলংয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে । এমনটাই ছিল মুল পরিকল্পনা ।

ভ্রমন বর্ণনা দেওয়ার আগে পাহাড় গুলোর সম্পর্কে কয়েকটা তথ্য জানিয়ে রাখি । বাংলাদেশে মোদকরেঞ্জের পাহাড় গুলোর উচ্চতা সব থেকে বেশি । এই মোদকরেঞ্জের পাহাড় গুলো মায়ানমার বাংলাদেশের বর্ডারে অবস্থিত এবং এগুলোই বাংলাদেশকে মায়ানমার থেকে পৃথক করেছে । এই মোদকরেঞ্জের একটি পর্বত হচ্ছে জোগী হাফং । এটাকে কংদুক নামেও ডাকা হয় । এটা বাংলাদেশের ৪র্থ সর্বোচ্চ পাহাড় । এর উচ্চতা ৩২২২ ফুট । অন্য দিকে এই রেঞ্জের আরেকটি পর্বত হচ্ছে যোতলং । এটি বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ পাহাড় । এটার উচ্চতার ৩৩৩৫ ফুট । এদের মাঝে আরেকটা পর্বত চুড়ার নাম হচ্ছে আয়ান ত্লং। এটি যোতলং থেকে জোগীর দিকে যাওয়ার মাঝে পড়ে ।
নিচের ছবির দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন ।



বিশ তারিখ রাতে আমাদের বাস রওয়ানা দিল রান্দরানের উদ্দেশ্যে । অন্যান্য গাড়িগুলো সাধারণত যায় সরাসরি বান্দরবান শহরে । সেখান থেকে থানচি গিয়ে হাজির হয় । তবে আমরা যে ট্যুর গ্রুপের সাথে যাচ্ছিলাম তারা সরাসরি বান্দরবান না গিয়ে চকরিয়াতে বাস থেকে নেমে পড়লো । বাসটা ছিল কক্সবাজারগামী বাস । আমরা চকরিয়া থেকে নেমে সেখান থেকে হাফবডি চাঁদের গাড়িতে করে হাজির হলাম আলীকদম উপজেলাতে । সেখান থেকে সকালের নাস্তা শেষ করে থানচির জন্য রওয়ানা দিলাম ।

দুপুরের আগেই আমরা থানচি গিয়ে হাজির হলাম । ঢাকা থেকে আমরা মোট ৫জন রওয়ানা দিয়েছিলাম । আমাদের টিমের আরেকজন সদস্য আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলো থানচি থেকে । আমাদের পুরো যাত্রা পথের একটা ম্যাপ নিচে দেওয়া হল ।




যথাযত ভাবে সব ফর্ম পূরণ করে আমরা থাচনি হতে রেমাক্রির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম নৌকাতে করে । এই নৌকা গুলো বেশ সরু ।

নৌকা গুলোর এমন সরু হওয়ার কারণ হচ্ছে রেমাক্রি যাওয়ার পথে একটা স্থানে বেশ বড় বড় কিছু পাথর আছে । সেই পাথরের ভেতর দিয়ে নৌকাগুলোকে নিয়ে যেতে হয় । নৌকা যত মোটা হবে এই পাথরের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া ততই কষ্টকর হবে । একটা নৌকাতে সর্বোচ্চ ৫/৬জন করে যেতে পারে ।

নদীর পানি এখন অনেক কম । শীতকালে পানি কম থাকে । বেশির ভাগ স্থানেই আমরা নিচের পাথর দেখতে পারছিলাম । এবং আমাদের নৌকার সাথে সেই পাথরের ঘষা লাগছিলো প্রতি মুহুর্তেই । এইবার এই যাত্রা পথে আমি বেশি ছবি তুলি নি । তার থেকে বরং দুই পাশের দৃশ্য উপভোগ করছিলাম একভাবে । মাঝে এমন একটা স্থানে এসে হাজির হলাম যেখানে পানি কমে গেছে একেবারে । এখানে নৌকাতে বসে করে যাওয়া সম্ভব না । আমরা নেমে গেলাম । মাঝি সেটা ঠেকে উপরে নিয়ে যেতে থাকলো ।

এই পথে আমরা হাটছিলাম ।



একটা দোকান



নদীতে ভাসিয়ে বাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে



একটা হাঁস



এই দোকান থেকে আবারও আমাদের নৌকাতে যাত্রা শুরু হয় । এরপরে মাঝে পড়লো সেই বড় বড় পাথর গুলো । এদের একটার নাম রানী পাথর একটার নাম রাজা পাথর আরেকটার নাম বড় পাথর ।

প্রায় আড়াই ঘন্টার নৌযাত্রা শেষ করে আমরা পৌছালাম রেমাক্রিতে । এবার আমাদের এখান থেকে হাটতে হবে ।

আমাদের মুল বেজ পয়েন্ট হবে দলিয়ান পাড়া । রেমাক্রি থেকে দলিয়ান পাড়ার যেতে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগে । আমরা রেমাক্রি থেকে হাটা শুরু করলাম । পেছনের ব্যাগটা সবারই একটু ভারী ছিল তাই আমাদের সবারই হাটার গতি একটু ধীর ছিল । যাত্রা পথে দুইবার থামলাম । তারপর আবারও হাটা দিলাম । মাঝে একটা পাড়াতে বসে চাও খেলাম সবাই ।

বিকেল পাঁচ দিকে আমরা পৌছালাম দলিয়ান পাড়াতে । এটাই মূলত আমাদের রাতের থাকার জায়গা । আমরা এখান থেকেই আমাদের পাহাড়ের মুল ট্রেকিং শুরু করবো আগামীকাল ।

গোসল করে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি অতিদ্রুত শুয়ে পড়লাম । ঘড়িতে সময় ছিল তখন রাত সাড়ে আটটা । ঢাকাতে আমরা তো এই সময়ে ঘুমানোর কথা কল্পনাই করতে পারি না । তবে কেবল আমরাই নই পুরো গ্রামই এই সময়ের ভেতরেই আলো বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে ।

দলিয়ান পাড়া নিয়ে কয়েকটা কথা না বললেই নয় । আমি বান্দরবানের বেশ কয়েকটা পাড়াতে থেকেছি । তার ভেতরে দলিয়ান পাড়া সব থেকে পরিস্কার পাড়া আর চমৎকার সাজানো গোছানো পাড়া । পরিস্কার ওয়াশরুম আর পানির ব্যবস্থাও চমৎকার । অন্য সব পাড়াতেই শুকর থাকে যা সব সময় ওয়াশরুমের আসে পাশে ঘোরাফেরা করে । কিন্তু এখানে আমরা সেই জিনিস দেখা পাই নি ।

বাকিটা আগামীতে লেখা যাবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:২৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। টের কি পাও শাহ সাহেব ?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৫



একটানা তিনদিন ছুটি । আমার ছুটি প্রতিদিন । ইচ্ছে হল একটু ঘুরে বেড়াই । আমি যেদিকে যেতে চাই কন্যা সেদিকে রাজী না । হতাশা গ্রাস করল... ...বাকিটুকু পড়ুন

If You Forget Me by Pablo Neruda - কবিতার কথা, কবিতার ব্যথা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:২৭



If You Forget Me by Pablo Neruda

পাবলো নেরুদার এই কবিতাটা আমার কাছে অনেক বেশি প্রিয়, যতটা না প্রিয় তার থেকে বেশি অর্থবহ করে। কবিতাটার শুরুর দিকের কথাবার্তা অনেকটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

নবী (স.) যদি বাংলাদেশে জন্ম নিত !

লিখেছেন রসায়ন, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:১৪

নবী যদি বাংলাদেশে জন্ম নিত তাহলে সুন্নতি পোশাক হতো লুঙ্গি আর গেঞ্জি। গলায় গামছা রাখা হতো আবশ্যক। সহীহ মুসলিম হতে গেলে ছেলেদের লুঙ্গি পরা আবশ্যক হতো!

সুন্নতী খাবার হতো আম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুভ জন্মদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:২১


রাজনীতিতে এসে নিজেকে নয় বরং রাজনীতিকেই অলঙ্কৃত করেছেন দেশে এমন রাজনীতিবিদের সংখ্যা এখন হাতেগোনা। মহান স্বাধীনতার তরে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে নিবেদিত হয়েই ক্ষান্ত না হয়ে বরং স্বাধীন দেশকে গড়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার কামাল১৮'কে নিয়ে ১টি পোষ্ট দিতে চাই।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:৫৯



ব্লগার কামাল১৮ ও রাজিব নুর সামুর সবচেয়ে বড় পাঠক ও মন্তব্যকারী; রাজিব এখন কমেন্টব্যানে আছেন; এই সময় কামাল১৮ ব্যানে গেলে, সামুতে কমেন্টের পরিমাণ দ্রুত কমে যাবে। রাজিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×