somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গত বৃহস্পতিবার মায়ের সাথে দেখা হয়েছিল !

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সপ্তাহ আগে মায়ের সাথে দেখা হল । যদিও এবার দেখা হওয়াটা অনেক দিনের ব্যবধানে নয় তারপরেও মনে হল যেন কতদিন পর তাকে যেন দেখলাম । আরও সপ্তাহখানেক আগে সে এসেছিলো বিক্রমপুরে । বিক্রমপুরের আমাদের পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে । মায়ের পৈত্রিক মাত্রিক সব বাড়িই এই বিক্রমপুরেই । কিছু কাজ ছিল আর অনেক দিন সে আসে না তাই মায়ের দুই বো আর বড় মামা মামী এবার এসেছিলেন । যাওয়ার দিন আমাকে জানায় নি । একেবারে পৌছে তারপর ফোন দিয়েছে যে তারা পৌছে গেছে । বড় মামা ছিল সাথে তাই আর অন্য কারো দরকার হয় নি ।

গত বুধবার ফোন দিয়ে জানালো যে তারা বাসায় ফেরৎ যাবে । আমি তাদের গুলিস্তান থেকে গাবতলি পৌছে দিতে পারবো কিনা । বড় মামা নাকি আরও কয়েকদিন থাকবে । আমার কোন সমস্যা ছিল না । ঠিক যে শুক্রবার সকালে তারা বিক্রমপুর থেকে রওয়ানা দিবে আমি তাদের গুলিস্তানে রিসিভ করে গাবতলি পৌছে দিবো ।
বৃহস্পতিবার সকালে আমি নিজের কাজে ব্যস্ত । বারোটার দিকে মায়ের ফোন এসে হাজির । তারা নাকি ইতিমধ্যে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছেন । মুক্তারপুর চলে এসেছেন । আমি বললাম এই না বললে শুক্রবার আসবে । মা জানালো যে ছোর খালার বাসা থেকে নাকি বড় চাপ দিচ্ছে আজই যেতে হবে ।


হাতের সব কাজ কর্ম বাদ দিয়ে তখনই রওয়ানা দিলাম । মনে হচ্ছিলো যেন এখনই তারা গুলিস্তান পৌছে যাবে যদি আমি এখনই সেখানে গিয়ে না হাজির হই । আমি যখন গুলিস্তান পৌছালাম তখন প্রায় দুইটা বেজে গেছে । বৃহস্পতিবার এই এলাকায় ছন্নছাড়া জ্যাম থাকে । তবে আশার কথা হচ্ছে তারা এখনও এসে পৌছাই নি । কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করুক এটা আমার মোটেই ভাল লাগে না । আমি আমার সারা জীবন ভর সব সময় সব স্থানে সময়ের কিছু আগে গিয়ে পৌছেছি । আমার জন্য নয় বরং আমি সবার জন্য অপেক্ষা করেছি ।

তাদের আসতে আসতে সাড়ে তিনটা বাজলো । গত ডিসেম্বরে গিয়েছিলাম বাসায় । এই কদিনেই মায়ের চেহারা কেমন যেন হয়ে গেছে ! নাকি আমি এই কদিন পরে দেখলাম বলে এমন মনে হচ্ছে ।
খুব ইচ্ছে ছিল যে মাকে উবারে করে গাবতলি নিয়ে যাবো । এপে ডাক দিলাম । বেটা ২৭ মিনিট রিচ টাইম দেখাচ্ছে । এই সময়ে গুলিস্তানে ২৭ মিনিট অপেক্ষা করা কি সম্ভব । কয়েকবার ক্যান্সেল করে নতুন করে রাইড রিকোয়েস্ট দিলাম । প্রতিবারই একই সময় দেখাচ্ছে । আর কোন উপায় না দেখে সিএনজিই নিতে হল ।

আমি ঢাকাতে থাকি জ্যাম ঠেলে চলাচলে আমার অভ্যাস আছে । কিন্তু মা খালাদের এই অভ্যাস নেই । সিএনজির ভেতরে যদি হাসফাস করে এই কারণেই খুব চাচ্ছিলাম যে উবার পেয়ে যাই কিন্তু কপালে না থাকলে যা হয় আর কি । তবে আমাদের ভাগ্য ভাল বলতে হবে । গুলিস্তানে কিছুটা জ্যাম পরলেও আর কোথাও তেমন জ্যাম পেলাম না । এক ঘন্টার কিছু বেশি সময়ে পৌছে গেলাম গাবতলি । বাসের টিকিট আগে থেকেই আমি ম্যানেক করে রেখেছিলাম । এই বৃহস্পতিবারে আমাদের এলাকার বাস গুলোতে প্রচুর লোক হয় । তারা বৃহস্পতিবার বাসায় গিয়ে রবিবার একেবারে সকালের বাসে ঢাকা এসে অফিস ধরে ।

খালা বললেন তিনি ভাত খাবেন । মা কিছু খাবে না । সে ফলমুল খাবে। ফলমুল কিনে নিয়ে এলাম । বাসে গিয়ে বসলাম কিছু সময় পরে । তাদের সিটের সামনেই দাড়িয়ে রইলাম । হঠাৎ আমার কেন জানি মন খারাপ হতে শুরু করলো । ঠিক তিন চার বছর আগে একই ভাবে মাকে বাসে তুলে দিয়েছিলাম ষেদিনও ঠিক একই রকম অনুভূতি হয়েছিলো।

বাস ছাড়বে আর কিছু সময় পরেই । হঠাৎ মা আমার হাতে একটা এক হাজার টাকার নোট গুজে দিল । বলল, কিছু কিনে খাইস ।

আমার কেন জানি হাসি চলে এল । আমি প্রায় পনের বছর ধরে বাসা থেকে একবারে টাকা পয়সা নেওয়া বন্ধ করেছি । এখন আমার নেওয়ার সময় নয়, দেওয়ার সময় । তাই করি । কিন্তু আজকে আমার আমার হাতে এক হাজার টাকা গুজে দিল । ঠিক আগেরবার মানে ৩/৪ বছর আগে যখন তাকে তুলে দিতে এসেছিলাম সেবারও একই ভাবে টাকা দিয়েছিলো ।
আমি নিতে চাইলাম না । খালা বললেন, নে, মা খালা কিছু দিলে নিতে হয় ।
টাকাটা হাতেই রইলো ।

আর কিছু সময়ের ভেতরে বাসের ইঞ্জিন চালু হয়ে গেল । একটু নড়ে উঠলো বাসটা । সেই সাথে আমার বুকের ভেতরটাও । আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম । নামার আগে বাসের সুপারভাইজারকে বলে দিলাম যেন তাদের দিকে খেয়াল রাখে । নিচে নেমে দাড়ালাম কাছেই । জানালা খুলে আমার মা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । বলল যেন সাবধানে ফিরে যাই বাসায় ।
একটা সময়ে বাসটা সত্যিই চলতে শুরু করলো । আমিও চলতে শুরু করলাম । যত সময় জানালা দিয়ে মায়ের চেহারা দেখা যায় তত সময় সে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । আমিও তাই করলাম । বাসটা একেবারে চোখের আড়াল চলে যাওয়ার পর বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভূতি হল । শূন্য শূন্য অনুভূতি !

আমার মা প্রায়ই আমাকে ফোন করে বলে যে আমার মনে আসলে দয়া মায়া কম । মাঝে মাঝে আমার নিজেরও তাই মনে হয় । মানুষের জন্য আমি খুব একটা চিন্তা করি না । আমার সকল চিন্তা চিন্তা আমাকে নিয়ে আর আমাকে ঘিরে আমার মানুষ গুলোকে নিয়ে । অন্য মানুষকে নিয়ে ভাবি না বলেই কাছের মানুষ গুলোকে নিয়ে আমার ভাবনা সব সময় বেশি । কিন্তু আমি কখনই আমার এই ভাবনা তাদের জানাতে পারি না । কিসে যেন আটকে যাই । আমার বড় ভাই আবার একেবারে উল্টো । সে ঢাক ঢোল পিটিয়ে নিজের ভালোবাসার কথা জানান দেয় । আমার মনের কথা মনেই রয়ে যায় । বলতে পারলে হয়তো ভাল লাগতো । কিছুটা শান্তি লাগতো ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৪১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×