somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামাদান ডায়েরিঃ ঢাকায় প্রথম রোজার স্মৃতি

২৬ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোজার সময়টা আমাদের বাসার পরিবেশ সব সময় আলাদা হত । রান্না বান্নার দিক থেকে একটা আলাদা আবহাওয়া তৈরি হয়ে যেত আপনা আপনি । রমজানে আমাদের বাসাতেই সব সময় ইফতার তৈরি করা হত । হয়তো কালে ভাদ্রে বাজার থেকে অন্য কিছু কিনে আনা হত তবে সব সব কিছু বাসাতেই আমার মা তৈরি করতো । ছোট বেলা থেকেই এই খাবার খেয়ে আমরা অভ্যস্ত । তাই যখন ঢাকায় এলাম প্রথম তখন সব কিছু কেমন অন্য রকম ঠেকলো । কারণ তখন উঠেছি মোহাম্মাদপুরের একটা ছেলেদের মেসে । সেখানে কোন কিছুরই ঠিক নেই । যে যার মত থাকছে খাচ্ছে ঘুমাচ্ছে । আমা বড় অস্বস্তি লাগতো । তবে কি আর করা থাকতে তো হবেই ।

রমজান মাস শুরু হল । ঢাকাতে সেটাই ছিল আমার প্রথম রোজা । পরিবার ছেড়ে প্রথম রোজা । রোজার একটা স্মৃতি আমার এখনও খুব ভাল করে মনে পড়ে । আমাদের রোজার শুরুর প্রথম দিন মেসের সবার মাঝে মিটিং হল । ঠিক হল যে রোজার সন্ধ্যা রাতে আমরা একটু কম খাবো আর শেষ রাতে ভাল খাবো । কম খাবো মানে হচ্ছে তরকারির মান কম থাকবে । শেষ রাতে ভাল তরকারি হবে । সবাই রাজি হল আমি আর আলাদা ভাবে কী বলবো ।

রাতে যখন ভাত খেতে গেলাম দেখলাম সেখানে কেবল আলুভর্তা আর ডাল রাখা হয়েছে । খাবার মানে যে কেবল আলুভর্তা আর ডাল হতে পারে এটা তখনও আমার মাথাতে আসে নি । আমার জীবনে বলতে গেলে সেটাই ছিল শুধু আলুভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া । ছোটবেলা থেকে আমাদের বাসায় ডাল রান্না হত বারো মাস । এটা তাই আলাদা কোন তরকারি হিসাবে গন্য হত না । এখনও হয় না । আমি কোন মতে অর্ধেক ভাত খেয়ে উঠে পড়লাম । এই কথা মাঝে মাঝে আমি এখনও ভাবি । তবে শেষ রাতের খাওয়া ভাল ছিল । মুরগির মাংস । খাওয়া শেষ করে আমরা সবাই মিলে নামাজ পড়তে গেলাম এক সাথে । সেই অন্ধকার সিড়িয়ে নামার দৃশ্য আমার চোখে এখনও ভাসে ।

এরপর অবশ্য আমি আর মেসের খাবারের জন্য বসে থাকি নি । নিজেই বাইরর হোটেল থেকে খেয়ে আসতাম । আমার হোটেল থেকে খাওয়ার অভ্যাস তখন থেকেই শুরু হয়েছে । এখনও সেই অভ্যাস আছে ।

এরপর আসি ইফতারের কথায় । ঢাকায় প্রথম ইফতারের জন্য আমরা মেসের কয়েকজন গিয়ে হাজির হলাম মোহাম্মাদপুরের তখনকার সব থেকে বড় হোটেলে । ক্যাফে বাগদাদ নাম হোটেলটার । হোটেলটা এখনও বেশ চমৎকার ব্যবসা করে যাচ্ছে । সেই হোটেলে প্রথম ইফতারটা করলাম । প্লেট প্রতি দাম ছিল ৪৫ টাকা । আর যদি শরবত খাওয়া হয় তাহলে সাথে দশটা যোগ হবে । আপনাদের কাছে হয়তো মনে হচ্ছে ৪৫ টাকার আবার কীসের ইফতার সেই সময়ে এই ৪৫ টাকা অনেক বেশি ছিল ।

ঢাকার সেবারের আরও একটা কথা মনে পড়লো । আমি যখন যশোর ছিলাম তখন আমার এক মেয়ে বন্ধু ছিল । মেয়ে বন্ধু মানে প্রেমিকা টাইপের কিছু না । বন্ধুই । বলা যায় আমার জীবনে এই মেয়েটির সাথেই আমার প্রথম বন্ধুত্ব হয়েছিলো । ক্লাস ফাইভের পরে অবশ্য আমার সাথে ওর আর দেখা হয় নি । এই মেয়েটিও তখন ঢাকাতে এসেছিলো । কিভাবে যেন মেয়েটির কাছে আমার নম্বর গিয়ে হাজির হয় কিংবা আমার কাছে ওর নম্বর এসে হাজির হয় । ফোনে যোগাযোগ হয় । এবং প্রায় সাত বছর পরে আবার আমাদের দেখা হল । দুপুরের দিকে কোচিংয়ের দিকে জিয়া উদ্যানে দেখা হল । সেখানেই বসে গল্প করলাম বেশ কিছু সময় । তারপর ওকে নামিয়ে দিতে গেলাম ফার্মগেটে । ও তখন সেখানকার একটা হোস্টেলে থাকতো । ততক্ষনে ইফতারের সময় হয়ে এসেছে । ওকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম । দেখি অনেকেই এসে হাজির হয়েছে । আমি জীবনের প্রথম এমন কাঁচে ঘেরা এসিওয়ালা রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকলাম । ইফতার এল । আমরা তাজা আমের জুস খেয়েছিলাম এটা আমার মনে আছে । সেই সময়টা চমৎকার ছিল । তারপর অবশ্য আরো অনেকবারই দেখা হয়েছে ওর সাথে । এখনও নিয়মিত যোগাযোগ আছে ।

এরপর ঢাকাতে আমি খুব বেশি দিন থাকি নি । যদিও কোচিং চলছিলো আমি তার মাঝেই বাসায় চলে আসি । বাসায় এসে বাসার খাবার খেয়ে একটু শান্তি আসে মনে । তখন মন বারবার বাড়ির দিকে চলে আসতো । একটু সুযোগ পেলেই আমি বাড়িতে দৌড় দিতাম ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে প্রতি রমজানে একটা কাজ আমার খুব পছন্দ ছিল । সেটা হচ্ছে আমাদের বন্ধুদের কয়েকজন মিলে একসাথে ইফতার করা । বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ১২/১৩ জনের একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছিলো । আমরা এক সাথে পড়াশোনা ট্যুর দিয়ে বেড়াতাম । প্রতি রমজানে আমরা একসাথে ইফতার করতাম । কোন হোটেলে ঠিক না । ইফতার কিনে এনে খোলা জায়গা ইফতারের ব্যবস্থা হত । নিজেরাই সব কিছু করতাম । খাওয়ার থেকে এই এক সাথে সব কিছুর প্রস্তুতি করাটাই সব থেকে চমৎকার ব্যাপার ছিল । পড়াশোনা শেষ করার পরে আর সেই একসাথে ইফতার করা হয় নি । এখন অবশ্য কেউ ঢাকাতে নেই । আমরা কয়েকজন আছি । সবাই নিজের নিজের কাছে ব্যস্ত । আমিও সম্ভবত সামনের রোজা আর ঢাকাতে করবো না ।

রোজা এলে আমার রুটিনের সব এলোমেলো হয়ে যায় । সব কিছুর বারোটা বেজে যায় । কোন কাজ কর্ম হয় না ঠিক মত । অনেক দিন পরে পরে আমার ঘুমানোর সময়ের একটা যুতসই টাইম টেবিলে এসেছিলো । সকাল সকাল ঘুমিয়ে যেতাম আর ঘুম থেকে উঠতাম একেবারে আযানের সময়ে । এই রুটিন চালু হয়েছিলো । কিন্তু রোজার কারণে আবার সব এলোমেলো হয়ে গেল । রোজা চলে যাওয়ার পরে আবারে ঐ রুটিনে ফেরা কষ্টকর হয়ে যাবে ।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:৩৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×