somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যখন শরীরে বেশি তেল জমে ..... :D

০২ রা নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতমাসে প্রজেক্ট চলার সময়ে বাল্যবন্ধু রিংকু আমাদের রুটে ট্রেনের নতুন সময় সূচি দেখালো । তখন কেবল মনের খেয়ালেই ওকে বলেছিলাম যে, চল একেবারে প্রথম যেদিন ট্রেন প্রথম বারের মত পদ্মা সেতু দিয়ে যাবে সেদিন যাই ট্রেনে করে । রিংকু তখন হাসতে হাসতে বলল, শরীরে তেল বেশি জমেছে বুঝি! আমিও জানি এক পাগলামো । কাজ ফেলে শুধু শুধু একদিনের জন্য এতো প্যারা খেয়ে আর টাকা পয়সা খরচ করে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার কোন মানে হয় না । প্রজেক্ট একটু আগে আগেই শেষ হল । সে হিসাবে কাজের অবসর পাওয়া গেল । রিংকু গতদিন ফোন করে বলল, রেডি হও । টিকেট কাটা শেষ ।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম যে কোথায় যাব।
-আরে মনে নেই ? তুমিই না প্রথম ট্রেনে চড়তে চাইলে !

কথার কথা তখন বলেছিলাম । সেই যাত্রা ঠিক হয়ে গেল । আমাদের রুটের তিনটা ট্রেন ঢাকাতে আসে । তার ভেতরে দুইটা ট্রেন রুট বদলে এখন সরাসরি পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাবে এবং ঢাকা থেকে প্রথম বারের মত আমাদের জেলা হয়ে খুলনা যাবে দুই তারিখে । সেই ট্রেনে চেপে বসব আমরা দুই বন্ধু । ইতিহাসের সাক্ষী হব !
জানি বড় ছেলেমানুষী চিন্তা ।
গেলেও গ্রামে থাকা যাবে না বেশি সময় । দ্রুত ঢাকা ফিরে আসতে হবে । রিংকু পরিকল্পনা বলল। যাবো দুই তারিখ আর ফিরে আসব চারতারিখ ভোরে । শুক্রবারের ছুটি আছে, কোন সমস্যা হবে না । তবে এখন আর আগের মত তেল নেই মনে । আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে সপ্তাহে একদিন এক্সট্রা ছুটি পেলেই বাড়ির দিকে দৌড় দিতাম । সেই সময়ে খুব হোমসিক ছিলাম । তবে এই ক'বছরে কেবল ঈদে আর বছর শেষে হয়তো সপ্তাহ খানেকের জন্য বাসায় যাওয়া হত । এছাড়া সব সময় ঢাকাতে । নিজের ঢাকার ঘরই এখন সব থেকে পছন্দের জায়গা । এমন কি নিজের গ্রামের বাড়িতে নিজের ঘরের থেকেও ।

আবার এদিকে ঢাকাতে বিএনপির অবরোধ শুরু হয়েছে । এর ভেতরে যাবো ঢাকার বাইরে ! তবে একবার যখন মন উঠেছে তখন শরীরের তেলও পাওয়া যাবে।

একদম সকাল বেলা হাজির হয়ে গেলাম । দেখলাম ট্রেন ভর্তি মানুষ । অনেকে ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে । কয়েকটা টিভি ক্যামেরাও দেখতে পেলাম। প্রথমবারের মত ট্রেন যাচ্ছে । এটা নিয়ে নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও সংবাদ হবে । দুই বন্ধু মিলে ছবি তুললাম।





ঠিক সময়ে ট্রেন ড়লো । সত্যি বলতে কি এই রুটে আমি এই প্রথম ট্রেনে চড়লাম । এর আগে কোন দিন এদিক দিয়ে যাই নি । ট্রেন লাইন একেবারে মাখন । ট্রেনে কোন ঝাকি পর্যন্ত অনুভব করলাম না ।
এদিকে দেখি ট্রেনে বড় হর্তাকর্তারা বগিতে এসে হাজির । তাদের হাতে ফুল । আমরাই যেহেতু প্রথম যাত্রী তাই আমাদের সবাইকে রজনীগন্ধ দিয়ে বরণ করে নেওয়ার পরিকল্পনা । দেখলাম একে একে সবাইকে সেই ফুল দিতে শুরু করলেন । কিন্তু আমাদের কপালে সম্ভবত ফুল ছিল না । আমাদের পর্যন্ত আসার আগেই দেখি তাদের কাছে ফুল শেষ হয়ে গেল । যাক কয়েকজনকে যে ফুল দিয়েছে সেটাই অনেক ।
এর মাঝে দেখতে দেখতে আমরা পদ্মা সেতুর কাছে চলে এলাম । একটু পরেই আমরা সেতুতে উঠব। আপনারা যারা বঙ্গবন্ধু সেতু ট্রেনে পার হয়েছে তারা জানেন যে কী পরিমান আস্তে চলে ট্রেন । প্রায় ৫ কিলোমিটারের সেতু পার হয়ে ২০/২৫ মিনিট লাগিয়ে দেয় । অথচ এই ট্রেন পদ্মা সেতুর উপর দিতে ঝড়ের বেগে পার হল । সেতুর রেলিং গুলো এতো দ্রুত পার হতে লাগল যে বলার কথা না ।



ভাঙ্গা স্টেশনে আমরা পৌছালাম সাড়ে নয়টার দিকে । এক ঘন্টার কিছু বেশি সময় লাগল। এতো দ্রুত এখানে আসা যাবে ভাবি নি । এরপর থেকে আবার আমাদের গতানুগতিক ট্রেন যাত্রা শুরু হল । এই রুটের পরে লাইন আবার আগের মতই । একটা ব্যাপার যে আমরা একবারের জন্যও ক্রসিংয়ে পড়লাম না । অন্য দিকে, আগের রুটে ঢাকা আসতে গেলে কম করে হলে দুইবার ক্রসিংয়ে পড়তেই হত। অবশ্য এখনো পুরোপুরি ট্রেন চালু হয় নি । শুনছি মোট ১৬টা ট্রেন নাকি চলবে । তখন হয়তো ক্রসিংয়ের মুখোমুখী হতে হবে।

দুপুর বেলা ট্রেন এসে হাজির হল চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে ।একটার কিছু পরে । মিনিট পরেন লেট ছিল পুরো সময়ের ভেতরে । অবশ্য বাংলাদেশের ট্রেনের কাছে পনের মিনিট লেট কোন লেটই না। এই ট্রেন আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে খুলনার দিকে।



একটু আগে আমি যতই বলি না কেন যে ঢাকার ঘরটাই আমার সব থেকে পছন্দ আসলে এই চুয়াডাঙ্গার বাতাসের ভেতরে অন্য কিছু রয়েছে । যদিও এক দিনের জন্য হলেও এই বাড়িতে আসা সব সময়ের জন্যই আনন্দের ।

বাসায় এসেই সবার আগে ভাত খেলাম । আমি ঢাকাতে এখনও যা সব থেকে বেশি মিস করি তা হচ্ছে বাসায় বানানো খাবার । এমন না ঢাকাতে খারাপ কিছু খাই । আমি অন্তত এই একটা ব্যাপারে এখনও অনমনীয় । আমি ঢাকাতে হোস্টেল কিংবা মেস বাসায় থাকিই নি কেবল এই ভাল না খাওয়ার কারনে । একা থাকার কারণে সব সময় নিজের পছন্দের মত জিনিসই খাওয়া যায় । তবে সেই রান্না কোন ভাবেই বাসার রান্নার মত না ।

মুরগির মাংসের সাথে লাল শাক আর মসুরের ডাল ছিল তরকারিতে । সাথে আচার নিলাম । আবারও সেই কথাই মনে হল । মনে হল যেন এই এক বেলা খাওয়ার জন্য এখানে আসাটাই স্বার্থক। আসলে এই প্রথম ট্রেন চড়ার ব্যাপারটা তো অযুহাত । বাড়ি আসার প্রিয় মানুষের কাছে আসার একটা অযুহাত মাত্র।

কেবল প্রথম ট্রেনে চড়ার অযুহাতই নয়, আরও একটা কারণ রয়েছে । সেটা হচ্ছে আমি বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি । এবার বিয়ে করেই যাব!
হে হে হে ! মিছা কথা কইলাম । আমার কপালে বিয়ে টিয়ে নেই । আরেকটা কারণও আসলে এই খাওয়া কেন্দ্রীক । গতমাসের মাঝামাঝি সময়ে দুপুরের দিকে বাসা থেকে নিচে নামছি, এমন সময় চার নম্বর তলাতে নামতেই পোলাউয়ের গন্ধ নাকে এল । নিশ্চিত সেদিন সেটাই রান্না হয়েছে সেই ফ্লাটে। বাসায় রান্না করা পৌলাউ । বাসায় রান্না করা সাদা পৌলাউয়ের ভেতরে একটা আলাদা ব্যাপার আছে । আগেই বলেছি আমি ঢাকাতে মনে সুখে খাওয়া দাওয়া করি । তখনই মনে হল আজকে আমি মোরগ পোলাউ খাব । তাই খেলাম । কিন্তু ঐ যে বললাম বাসায় রান্না করা পৌলাউয়ের ভেতরে একটা আলাদা ব্যাপার আছে যা দোকানের পোলাউয়ের ভেতরে পাওয়া যায় না । সেই দিন থেকে এই বাসার পৌলাউ খেতে মন চাইছে। কালকে আশা করি এই পোলাউ খাওয়া হবে । এই হরতাল অবরোধের সময়ে রাস্তা ঘাটে যদি হঠাৎ মারেটরে যাই তাহলে এই পোলাউ না খাওয়ার আফসোস থেকে যাবে । জীবনে আর যাই হোক না খাওয়ার আফসোস নিয়ে আমি মরতে চাই না ।


আজকের এ বেহুদা ব্লগ এখানেই শেষ আপাতত । যারা অবশ্য সামুতে বসে উজির নাজির মারেন দেশ বিশ্ব বদলান তাদের এই লেখা পছন্দ হবে না । যাক আপাতত আম্মাজান ঝালমুড়ি বানিয়ে নিয়ে এসেছে । সেটা আগে খাওয়া যাক । পরে আবার প্যাঁচাল হবে।


অপু তানভীর
নিজের বাপের বাড়ির বিছানা,
জাফরপুর, চুয়াডাঙ্গা।



একটা গ্রুপে দেখলাম এই প্রথম ট্রেনের যাওয়াটাকে ভিডিও করে পোস্ট করেছে । যদিও প্রাইভেট গ্রুপ তবে গ্রুপে জয়েন করলে ভিডিওটা দেখতে পারবেন । বেশ চমৎকার লাগবে। এই যে লিংক রইলো। অথবা এই ফেসবুক রিলস টি দেখতে পারেন কিনা দেখুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৬
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×