আপনাদের বাসায় ফ্রিজ কবে এসেছে?
হয়তো মনেও নেই আপনাদের । আমারও ঠিক মনে নেই । তবে সময়টা সম্ভবত আমি যখন ক্লাস ফাইভ কিংবা সিক্সে পড়ি তখন আমাদের বাসায় ফ্রিজ কেনা হয় । সেই সময়ে পুরো গ্রামে দুই কি তিন বাড়িটে ফ্রিজ ছিল । আর এখন গ্রামের বলা চলে সবার বাসায় ফ্রিজ আছে । অনেকের বাসায় আবার দুই করে রয়েছে ।
যাই হোক এই গল্প ফ্রিজের না । তবে ফ্রিজের কারণে হারিয়ে যাওয়া দুটো খাবারের গল্প । ফ্রিজ থাকার কারণে আমরা এখন দীর্ঘদিন খাবার জমিয়ে রাখতে পারি । বিশেষ করে কাচা মাছ মাংস অনেক দিন পর্যন্ত জমিয়ে রাখা যায় । বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না তবে আমাদের বাসায় এখনও পর্যন্ত কুরবানির মাংস রয়েছে । এটা লম্বা সময় পর্যন্ত থাকে ।
ফ্রিজ কেনার আগে এই আমরা এই মাছ মাংস সবজি কিভাবে সংসক্ষণ করতাম ?
উত্তর হচ্ছে করতাম না । বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সব সময় তাজা সবজি মাছ বাজার থেকে কিনে এনে সেই দিনই খেয়ে ফেলতাম । কিন্তু এমন মাঝে মাঝে ঘটতো যে সেটা দিনে দিনে খেয়ে শেষ করা সম্ভব হত না । যেমন এই কুরবানির মাংস !
সেই সময়ে সকাল মাংস বিলি ব্যবস্থা করার পরেও অনেক বেশি পরিমানে মাংস রয়ে যেত আমাদের সবার বাড়িতে । কুরবানির কয়েকদিন পর্যন্ত আমরা কেবল মাংসই খেতাম । এই সময়ে বড় হাড়িতেই রান্না হত । এরপর প্রতিদিন সেই মাংস জ্বাল দেওয়া হত । এক পর্যায়ে দেখা যেত সেই মাংস বেশ খানিকটা কালো হয়ে গেছে । শেষ পর্যন্ত দেখা যেত একেবারে ঝোল শুকিয়ে ঝোলহীন মাংস অবশিষ্ট রয়েছে ।
এই কালাভুনা টাইপের মাংস আমরা ছোটরা বিশেষ করে পছন্দ করতাম । আপনারা করতেন কিনা জানি না তবে আমি করতাম খুব । দুপুরের ভাত থেকে শুরু করে বিকেলে মুড়ির সাথে এই পোড়া মাংশ বেশ মজা করেই খেতাম । আরেকটা ব্যাপার তখন হত, এই মাংস দিয়ে ডালের বলার তৈরি করা হত সন্ধ্যার জন্য । এটাও একটা চমৎকার একটা খাবার ছিল আমাদের কাছে । এখনও অবশ্য হয়। বাসায় গেলে মাকে বললেই সে ডালের মাংশ মিশিয়ে বড়া বানিয়ে দেন । তবে এখন সেই কালো পোড়া মাংস আর খাওয়া হয় না । সেই খাবার উঠে গেছে একেবারে । এখন আর মাংস সংরক্ষণের জন্য ঘন ঘন জ্বাল দেওয়ার কোন দরকার পড়ে না ।
একই কান্ড হত ইলিশ মাছের সাথে । মাঝে মাঝে বিশাল সাইজের ইলিশ বাড়িতে আসতো । তখন একদিনে সব খাওয়া যেত না । আবার দেখা যেত যে বিকেল কিংবা সন্ধার দিকে বাজার থেকে ইলিশ নিয়ে আসা হয়েছে । আজকের রান্না তো হয়ে গেছে তাই সেদিন আর রান্না হবে না । অথচ ফ্রিজ তো নেই । সেই ইলিশ ওভাবে রাখাও যাবে না । তখন আমাদের বাসায় ইলিশকে লবন আর হলুদ দিয়ে আধ সিদ্ধ অবস্থায় রাখা হত । পুরোপুরি রান্না করা হত না । মা হয়তো আরো হয়তো কিছু করতেন । সেই অবস্থায় ইলিশটা থাকতো রাতভর। আরেকটু খাওয়ার উপযোগি হত । পরদিন সকালে এই মাছটা দিয়ে আর পান্তা ভাত দিয়ে খেতাম আমি । জীবনে খুব কম সুস্বাদু খাবারই ছিল এমন । হলুদ দেওয়ার কারণে মাছটা যখন পাতে নেওয়া হত তখন একটা হলদে ভাব হয়ে যেত । সেই ইলিশ মাছ দিয়ে আমি আর ভাত খাই নি । ফ্রিজ আসার পরে এই জিনিস আর কখনই আমাদের বাসায় রান্না হয় নি । ওভাবে মাছ সংরক্ষনের কোন দরকারই পড়ে নি তাই রান্না হবেই বা কেন !
প্রযুক্তি আমাদের কত কিছুই না দিয়েছে ! কিন্তু সেই সাথে আমার থেকে অনেক কিছুই কেড়েও নিয়েছে !
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৫