আমি এই পোস্টটা যখন লিখছি তখন আমার এলাকায় একদল ছেলে রোজার জন্য মানুষকে ডাকছে । আরও ভাল করে বললে চিৎকার চেঁচামিচি করছে । কদিন থেকে আবার দেখছি হ্যান্ড মাইক নিয়ে মানুষকে ডাকছে ! এখন এই যুগে এই ডাকাডাকির কি আসলেই কোন দরকার আছে?
অপ্রয়োজনীয় একটা কাজ ! এবং মানুষকে বিরক্ত করার কাজ !
তবুও আপনাদের অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে রোজার জন্য মানুষকে ডাকাডাকির ব্যাপারটা খুব মহান মনে হতে পারে !
আমার কাছেও প্রথম প্রথম ব্যাপারটা এমনই মনে হয়েছিল । বিশেষ করে যখন আমি প্রথম ঢাকাতে এলাম, তখন রোজার সময়ে দেখতাম একদল ছেলে রাতের বেলা সেহরিতে মানুষজনকে ডাকছে ।
তখন মনে হয়েছিলো আহ ! কতই না ভাল একটা কাজ !
আমাদের এলাকাতে এমন কাজ কেউ করে না । অবশ্য এটা কোন দরকারও পড়ে না । সবার কাছে তখন ঘড়ি আছে, এলার্ম ক্লক । তখনও মোবাইল এতোটা প্রচলন হয় নি । সেহরিতে যা ডাকা সবই মসজিদের মাইকেই । আর তাছাড়া গ্রামের মানুষদের ভেতরে প্রাকৃতিক এক ঘড়ি আছে । তারা এমনিতেই জেগে যায় সময় মত। আলাদা ডাকাডাকির দরকার পড়ে না !
যাই হোক, ঢাকাতে এসে এই ছেলে গুলোর কাজ দেখে আমার মন ভাল হয়ে গেল ! আমার মনে হল আরে এরা এমন ধর্ম কর্মে মন দিয়েছে । অবশ্য সেই ভুল আমার ভাঙ্গল কদিন পরেই । বিশ রোজা পার হতেই একদিন এক ছেলে আমাদের ফ্লাটের দরজায় এসে হাজির হল। চেহারা দেখে মোটেই ভদ্র মনে হল না । পাড়ার বখাটেদের চেহারা যেমন তেমন !
আমার মনে আছে আমিই দরজা খুলে দিয়েছিলাম । দরজা খুলে দিতেই সেই ছেলেটা আমার হাতে একটা রশিদ ধরিয়ে দিল । আমি বললাম, এটা কিসের ?
সে বলল, আমরা রাতে ডাকি সেইটার !
আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না । রাতে ডাকি মানে কী !
সে আবার বলল, রাতে আমরা সেহরিতে ডাকি !
ব্যাপারটা হজম করতে আমার কিছুটা সময় লাগল । মানে হচ্ছে আমি যেটা মহান কাজ মনে করছিলাম এটা আসলে এদের একটা ধান্দা ! ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ধান্দাবাজি ! রাতে এরা ডাকে এই জন্য এদের এখন টাকা দিতে হবে । এমন একটা কাজের জন্য যার কোন দরকার আসলে নেই ।
আমি কিছু বলতে পারলাম না । আমাদের কথা শুনে আমাদের ফ্ল্যাটে থাকা এক বড়ভাই এল । সে রশিদটা দেখে বলল, আমরা কোন টাকা দিবে না ।
ছেলেটা তখন বলল, দিতে হবে !
বড়ভাইও কম যায় না । সে সাফ জানিয়ে দিল কোন টাকা দেওয়া হবে না । তবে সেই ছেলে চোখ মুখ রাগত ভাবে বলে গেল যে টাকা কিভাবে না দেয় সেটা সে দেখে নেবে !
অবশ্য পরে কী হয়েছিলো আমি জানি না । তার পরের দিনই আমি বাড়িতে চলে আসি !
এরপর থেকে এটার উপর বিরক্তই জন্মালো । এরা এই যে রাতের বেলা চিৎকার চেঁচামিচি করে মানুষকে বিরক্ত করতে এর ভেতরে কোন ধর্ম নেই, কোন ধর্মীয় প্রাপ্তি নেই আছে কেবল টাকা কামানোর ধান্দা !
প্রতিবছর এরা এই একই কাজ করে । এদের এলাকা ভাগ করা থাকে । পাড়ার সব থেকে বখাটে নেশাখোর যেগুলো আছে তারা এই কাজে নিয়যিত । ২০ রোজা পার হলেই এবার এরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রশিদ দিয়ে টাকা নিতে থাকবে । টাকা না নিলে মস্তানী করে ! ধর্মকে কাজে লাগিয়ে চাঁদাবাজী!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৩:৪০