আমাদের বাড়ির ঠিক সামনেই একটা বড় কৃষ্ণচুড়া গাছ ছিল । বিশাল বড় সেই গাছ আমাদের বাড়ির ছাদের অর্ধেকটাই ছায়া দিয়ে রাখত । আর বাড়ির পেছনের দিকে ছিল একটা বড় বাঁশ ঝাড়। যদিও বাঁশ ঝাড়টা পাশের জমির মালিকদের । যারা বাঁশের ঝাড় দেখেছেন তারা জানেন যে এগুলো কিভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে । তাই সেই ঝাড়ের অধিকাংশ আমাদের বাড়ির ছাদের উপরে এসে পড়ত ।
এতে লাভ হত যে আমাদের ঘর গুলো তীব্র গরমেও ঠান্ডা থাকত । তীব্র গরমের কথা বলছি কারণ আমার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা । প্রতি বছর শীত এবং গরমের সময়ে আমাদের জেলা বেশ কিছু দিন সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকে । আজকেও সব থেকে বেশি তাপমাত্রা আমাদের চুয়াডাঙ্গাতেই ।
এই বাঁশের ঝাড় আর কৃষ্ণচুড়া গাছের জন্য আমাদের বাড়িটা ঠান্ডা থাকত সব গরমে । তবে এতে একটা সমস্যা ঠিকই ছিল । যে সব স্থানে সব সময় ছায়া পড়ত সেই স্থানে খানিকটা স্যাঁতস্যাতে ভাব জমত। সিলিংয়ের প্লাস্টার নষ্ট হয়ে যেত, রং নষ্ট হত । কিছু পাইতে হলে কিছু দিতে হয় । ঠান্ডার বদলে প্লাস্টার নষ্ট হওয়া !
তবে বছর তিনেক আগে বাঁশ ঝাড়ের মালিক পুরো ঝাড় কেটে ফেলে সেখানে বাড়ি তুলল । ফলে আমাদের বাড়ির ছাদের একটা অংশ একেবারে পরিস্কার হয়ে গেল । সেই সাথে তীব্র রোদ সব সময় ছাদের উপরে পড়তে শুরু করল । বাড়িতে গিয়ে আমি আবিস্কার করলাম যে ঘরে থাকা যাচ্ছে না । অথচ এই ঘরেই আমি আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি। আমার তখন এতো গরম মনে হত না। ঐ বাঁশের ঝাড়টা ঠিক আমার ঘরের উপরে ছিল । সে বছরই আমার বাবা কৃষ্ণচুড়া গাছটা কেটে ফেললেন । তার মতে বাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছের এই ছায়ার কারণে । ঠিকমত রোদ না পাওয়ার কারণে । ফলে এখন আমাদের বাড়ির উপরে কোন ছায়া নেই । রোদ সরাসরি আমাদের বাড়ির ছাদের উপরে পড়ছে । স্যাঁতস্যাত ভাবটা চলে গেছে একেবারে কিন্তু এখন এই গরমে ঘরে টেকা দায় হয়ে গেছে । বাড়ির সামনে কিছু গাছ আছে, পেছনেও আছে তবে সেটা বাড়ির ছাদকে কোন ছায়া দেয় না । রোদ একেবারে সরাসরি বাড়ির ছাদের উপরেই পড়ে ।
দুই
ধানমণ্ডির দিকে যারা থাকেন কিংবা যাতাযাত আছে তারা দেখেছেন রাস্তার ডিভাইডারের মাঝে কত বড় বড় কিছু গাছ ছিল । এই গাছ গুলো বেশ বড় ছিল । পুরো রাস্তা না হোক দুই পাশের অর্ধেক পরিমান জায়গা ছায়া দিত। গত বছর উন্নয়নের নামে এই পুরো রাস্তা একেবারে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। একেবারে শেষ বেলা এলাকাবাসির প্রতিবাদে কয়েকটা গাছ টিকে গেছে। সেই বড় বড় গাছ কেটে সেখানে ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে । এর থেকে উন্নয়নের কাজ আর কী হতে পারে! শুধু কি তাই ! দেশের প্রতিটি জেলাতে সব বড় বড় গাছ গুলো কেটে ফেলা হচ্ছে নানান উছিলাতে । অথবা রাতের আধারে । কারো কিছু বলার সাহস নেই । আপনি গুগলে কেবল গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে লিখে সার্চ দেখেন কত খবর আসে ! এই যে কদিন আগে বান্দরবান থেকে ঘুরে এলাম । সেখানেও এ গাছ কাটার হিরিক পড়ে গিয়েছে । এবং এই গাছ কাটার পেছনে উপর থেকে নিচে সবাই জড়িত । এভাবে যদি চলতে থাকে বান্দরবানের বনভূমিও ধ্বংস করে ফেলবে চাটার দল ।
এখন আবার দেখছি আমার সবার প্রিয় হেলমেটের দল এই তীব্র গরমে লোক দেখানো গাছ লাগান শুরু করেছে । গাছের গোড়া কেটে ফেলে আগায় পানি দেওয়া । বড় বড় গাছ গুলো কেটে ফেলে এই গরমে তারা চারা লাগাচ্ছে!
তিন
আমি যদি আমাদের এলাকা আর ঢাকার পরিবেশ তূলনা করি তাহলে আমাদের জেলার তীব্র গরম থেকে ঢাকার পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ । আমাদের বাড়ির চারপাশেই গাছে ভর্তি । গরমে এই গাছের নিচে চলে যাওয়া যায় । বাড়ির মানুষজন তাই করে । কেবল মাত্র আমাদের বাড়ির লোকজনই না, গ্রামে যাদের বাসায় বড় বড় গাছ রয়েছে তারা এই কাজটাই করে । বাড়ির পাশেই একটা বড় আমবাগান রয়েছে । অনেক মানুষ সেখানে গিয়ে বসে থাকে এই রকমে । সেদিন ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখলাম । একজন সরাসরি ভিডিও করে দেখালো, গুলশানের একটা রাস্তায় দশ ফুটের ব্যবধানে, রাস্তায় এবং গাছের নিচে তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ছয় ডিগ্রি !
আমি যে হাউজিং এ থাকি সেখানে বলতে গেলে কোন গাছই নেই । গাছ তো দূরে থাকি এখানে ফাকা মাটিই নেই । সব কনক্রিট । তবে একটা ভাল দিক যে এই হাউজিং এর প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদে বাগান রয়েছে । আমি যে বাড়িতে থাকি বাড়ির মালিকের খুব শখের বাগান রয়েছে ছাদে । বড় বড় ড্রামে কত রকমের গাছ যে রয়েছে তার ঠিক নেই । এবং সব থেকে আরাম দায়ক ব্যাপার হচ্ছে আমার ঘরে গরমের তাপ অন্য যে কোন বাসার থেকে কম যদিও একেবারে টপফ্লোরেই আমি থাকি । এই যেমন আমার ঘরের টেম্পারেচার মিটার বলছে বাইরের তাপমাত্রা যেখানে ৪০.৭ আমার ঘোরে সেটা ৩৩.৪ । সবটুকু ক্রেডিট এই গাছকেই দিতে হবে !
যদি সামনের বার গরম থেকে বাঁচতে চান গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই । সত্যি নেই । গ্রামের বাড়িতে যেখানে যা জায়গা রয়েছে সেখানেই এই বর্ষায় গাছ লাগান। আমার মনে হয় সামু থেকে একটা ইভেন্ট তৈরি করা যেতে পারে । ইভেন্টটা এমন হবে আমরা যত ব্লগার রয়েছি তারা প্রত্যেকে গাছ লাগাবে এবং সে গাছ লাগানোর ছবি নিয়ে একটা পোস্ট করবে । যদি গ্রামে নিজেদের জায়গা না থাকে তাহলে সরকারি জায়গাতে লাগাবে । অথবা ঢাকাতে যাদের বাসা রয়েছে তারা ছাদে গাছ লাগাবে । লিখে রাখেন সামনের বার গরমের অবস্থা এইবারের থেকেও আরও খারাপ হবে যদি আমরা গাছ না লাগাই !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২১