somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম সুন্দরবনে । আমাদের লঞ্চ যখন করমজল পার করল তখনই নির্দেশ এল যে ঘুর্ণিঝড় আসছে । সব লঞ্চকে ফেরৎ যেতে হবে । আমরা অবশ্য ফেরৎ গেলাম না । রাতে সুন্দরবনের এক খালের ভেতরে ঢুকে পড়লাম । তবে তখনও ঝড় আসে নি । পথে রয়েছে । পানি তখনও শান্ত । তবে মনের ভেতরে একটা ভয় ঠিকই ছিল। সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন দেখি আমাদের লঞ্চ তীব্র বেগে ছুটে চলছে খুলনার দিকে । বাকি ট্যুর সেখানেই শেষ । বাকি দিন গুলো আমরা খুলনা লঞ্চঘাটেই পার করলাম । ঝড়ের সাথে এটাই আমার সব থেকে কাছের এনকাউন্টার ।

আমার বাড়ি দেশের সব থেকে উচু স্থানে । ৮৮ কিংবা ৯৮ সালের বন্যাতে যেখানে দেশের প্রায় সব অঞ্চলে ডুবে গিয়েছিলো, সেখানে আমাদের হোম টাউনে ডুবে নি । যদিও ৮৮র কথা আমার দেখার কথা না তবে ৯৮ সালে নিজের চোখেই দেখা । প্রতিদিন বিটিভিতে আমরা দেখতে সারা দেশ কিভাবে পানিতে ডুবে গেছে কিন্তু আমাদের এলাকাতে কোন পানি নাই ।
প্রতিবার যখন কোন ঘুর্ণিঝড় আসে আমি সব সময়ই নিরাপদই থেকেছি । মজবুত নিরাপদ বাসস্থানের ভেতরে কেবল শো শো আওয়াজই শুনেছি । আমাদের সিড়িঘড়ের কাঁচ প্রায়ই খুলে ভেঙ্গে যেত । সেগুলো সময় মত ঠিক করানো হত না । এমন যদি কোন ঝড় আসতো তাহলে সেই কাঁচ দিয়ে বৃষ্টির পানি নামতো । সেটা যদিও ঘরে ঢুকত না । কেবল সিড়ঘর ভিজিতে দিত ।
একেবারে যখন ছোট তখন বেশ কিছুদিন আমরা যশোরে ছিলাম বাবার কাজের কারণে । আমাদের ভাড়ার বাসা গুলোর ভেতরে একটা ছিল টিনের ঘর । যখন বর্যায় বৃষ্টি আসতো তখন সেই টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ত । আমরা সেই ফুটোর স্থানে কোন বালতি বা হাড়ি বসিয়ে দিতাম । সেই পানি পড়া দেখলেও মজা লাগতো !

তখন স্কুলে পড়ি। আমাদের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে রাস্তার ওপাশে কয়েকটা মাটির ঘর ছিল । এক ঝড়ের দিনে সেই মাটির ঘরের টিন উড়ে গেল । সব থেকে কাছের বাড়ি আমাদেরটাই । সেখানকার বাসিন্দরা তাদের কিছু জিনিসপত্র নিয়ে দৌড়ে আমাদের সিড়িঘরের নিচে এল । এভাবে বেশ কয়েক দফায় তাদের ঘরের কিছু জিনিসপত্র আমাদের সিড়িঘরের নিচে এনে রাখল । মা গেট খুলে দিলেন । সেখানেই ওরা রাত ভর থাকল বসে । আমি বসে বসে তাদের দেখছিলাম। তাদের মনে অবস্থা আমি তখন বুঝতে পারি নি । কিংবা বোঝার চেষ্টাও করি নি । সেই বয়সই ছিল না।

আমার দাদা বাড়িতে আগে প্রতি বর্ষায় পানি উঠে যেত । একেবারে নাকি বাড়ির উঠোন পর্যন্ত পানি আসতো । আমি কয়েকবার বর্যায় পরে দাদা বাড়িতে গিয়েছি । সেই সময়ে পুরো এলাকা থাকতো পানির নিচে । বাড়িগুলো সব দ্বীপের মত মনে হত । যদিও তখন উঠনে পানি থাকতো না। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যাওয়ার জন্য নৌকা ব্যবহার করতে হত। বাজারে যেতে হলেও নৌকা নিচেই যেতে হত । প্রতিটা বাড়িতেই ৪/৫টা নৌকা থাকতো বাড়ির সদস্যদের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে । আমার বেশ মজা লাগতো । তবে বর্যায় যখন একেবারে উঠনে পানি উঠতো সেই সময়ে আমি কখনও দাদা বাড়ি যাই নি । তবে ছোট বেলাতে যাওয়ার অনেক ইচ্ছে ছিল । এখন অবশ্য নেই আর !
এখন মোবাইল ক্যামেরার কল্যানে উপকূলের ছবি ভিডিও আমরা দেখতে পাই । একটু আগে একটা ভিডিও দেখলাম যেখানে পুরো একটা বাড়ি পানির নিচে চলে গেছে । কেবল টিন দেখা যাচ্ছে । বাড়ির বাসিন্দরা পাশের উচু রাস্তার উপরে বসে রয়েছে ছাতা মাথায় দিতে । ওটা সম্ভবত ঝড়ের পরবর্তী কিংবা আগের সময় । আমি ভিডিওটার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলাম । ভাবার চেষ্টা করলাম ওদের মনে অবস্থা ? আমি যদি ওদের অবস্থানে থাকতাম তাহলে আমার অবস্থা কী হত ?

এই যে এখন বাইরে তীব্র বাতাস হচ্ছে । আমার ঢাকার ঘরের জানাল গুলোর কাঁপছে । আমি আরাম করে বসে কফি খাচ্ছি আর ব্লগ লিখছি । আজকের সকালের উঠে ঠান্ডা বাতাসে মনে হচ্ছিলো যে কতই না চমৎকার সকাল আজকে । অথচ উপকূলীয় মানুষদের জন্য আজকের সকাল কতই না বিভিষীকাময় ছিল !

আপনার প্রকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা কেমন?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পত্রিকায় লেখা প্রকাশের ই-মেইল ঠিকানা

লিখেছেন মি. বিকেল, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৩৩



যারা গল্প, কবিতা, সাহিত্য, ফিচার বা কলাম লিখতে আগ্রহী, তাদের জন্য এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা, সাহিত্য পাতা ইত্যাদির ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া হলো। পত্রিকায় ছাপা হলে আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তার দায়ভার কি সেনাবাহিনী নেবে? তাদের সমালোচনাকে অনেকে সেনাবাহিনীর সমালোচনা মনে করছে কেন?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:২৯

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এখনও আমাদের জন্য গর্ব এবং আস্থার জায়গা। কারণ দুর্নীতির এই দেশে একমাত্র সেনাবাহিনীই সেই প্রতিষ্ঠান যার আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সুনাম এখনও আছে। কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ: মৃতদেহ সৎকার এবং সঙ্গীতসৎকার....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৯

প্রসঙ্গ: মৃতদেহ সৎকার এবং সঙ্গীতসৎকার....

কথা সাহিত্যিক শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বহু বছর আগে তার “শ্রীকান্ত” উপন্যাসে ইন্দ্রকে দিয়ে সর্বকালীন এবং সর্বজন গৃহীত একটি উক্তি করিয়েছিলেন, সেটি হলো,- ”মরার আবার জাত কি”!

মৃতদেহ সৎকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: শেষ রাতের সুর (পর্ব ২)

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০

রাফি সাহেবের পড়ে যাওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল দ্রুত। সকালের মিষ্টি রোদ গাজীপুরের এই ছোট্ট গ্রামে যখন পড়ছে, তখনই কাজের লোক রহিমা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। সিঁড়ির নিচে রাফি সাহেব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপসকামী বিরোধী রাজনীতিবিদদের জন্য পাঁচ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা নয়.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:০১


..... বলেছেন নাগরিক জাতীয় পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। নাহিদ মিয়া বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস ও ফখরুল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেছেন। নাগরিক জাতীয় পার্টির নেতারা নিজেদের পচানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×