আমার আত্মীজীবনীমূলক বই পড়তেই ইচ্ছে করে না। আত্মজীবনী পড়লেই গেলেই মনে হয় যে ডাহা মিথ্যা বলে নিজেকে মহান করে তোলার চেষ্টা করছে। তাই এই বইটা আমি এখনও পড়ি নি। তবে সপ্তাহ খানেক আগে পরিচিত একজনের বাসায় গিয়েছিলাম। একটা দরকারে সে আমাকে ঘরে রেখে বাইরে গেলে, আমার চোখ পড়ে তার বুকসেলফের দিকে। সেখানে অনেক বইয়ের ভেতরে এই বইটা ছিল অসমাপ্ত আত্মজীবনী। শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা। কী জানি কিছুটা কৌতুহল নিয়ে আমি বইটা তুলে নিলাম। পেপাপপ্যাক। একেবারে প্রথম পাতার প্রথম লাইনটা পড়েই আমার কেন জানি কেমন লাগল।

একেবারে প্রথম লাইনটা কী লেখা আছে দেখেন ''চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিক ভাবে তার কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়।'' এবার একটা কথা একটু চিন্তা করেন। শেখ মুজিব নিহত হয়েছেন ১৯৭৫ সালে। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে দেশে অবস্থান করছেন। আর তার বাবার লেখা চারটা খাতা তার হাতে এল ২০০৪ সালে?

শেখ হাসিনা ভেতরে আবার কী লিখেছেন ‘২০০৪ সালে ২১ আগস্ট হামলার পরে তার ফুফাতো ভাই তাকে এই খাতাগুলি দিয়েছে। এই খাতা আরেক ফুফাতো ভাই শেখ মনির অফিস থেকে পেয়েছিল। শেখ মনিও ১৯৭৫ সালেই নিহত হন।’
এখন এই লেখা পড়ে আমার মনে যে প্রশ্ন জেগেছে তা হচ্ছে শেখ মনিকে শেখ মজিব এই খাতাগুলো টাইপ করতে দিয়েছিল। এটা হতেই পারে। ৭৫এর পরে শেখ মনির অফিস থেকে এই খারা উদ্ধার হয়েছে, সেটাই বুঝতে পারলাম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ৭৫ থেকে ২০০৪ মানে ২৯ বছর পার হয়েছে। শেখ হাসিনা ৮১ সাল থেকে দেশে। এই ১৯৮১ থেকে ২০০৪ সালের মাঝে শেখ হাসিনার সেই ফুফাতো ভাইয়ের সাথে কি শেখ হাসিনার একদিনো দেখা হয় নি? এই ২৩ বছর পরে ফুফাতো ভাইয়ের মনে পড়ল যে শেখ হাসিনার বাবার লেখা খাতা তার কাছে আছে, সেটা দেওয়া দরকার!
তার দুদিন পরে দেখলাম চ্যানেল টুয়েন্টিফোর ঠিক এই ব্যাপারটা নিয়ে একটা প্রতিবেদন করেছে।
সেখানে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে এই বইটা মূলত লিখেছে সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী এবং তার ১২৩ সদস্যের টিম। তবে সেই প্রতিবেদনে শুধুই অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেখানে এমন কিছু ছিল না যেটা দিয়ে প্রমান হয় যে আসলেই জাবেদ পাটোয়ারিই বইটা লিখেছে। আজকে প্রথমআলোতে দেখলাম যে দুদক নজরদারিতে রেখেছে এই ১২৩ জনকে। এই অভিযোগ যদি সত্য হয় তবে এর থেকে প্যাথেটিক ব্যাপার আর কিছু হতে পারে না!
আমি আসলে এই অভিযোগ বিশ্বাস করতে চাই না। আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে চাই যে এইটা শেখ মুজিবের নিজেরই লেখা। এই সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে যদি সেই চার খাতা সামনে নিয়ে আসা যায়! সেই চারটা খাতা এখন কই? শেখ মুজিবের নিজের হাতে যখন লেখা তখন সেই চারটা খাতা নিশ্চয়ই দেশের জন্য অমুল্য সম্পদ হিসাবে পরিগণিত হওয়ার কথা। অন্তত লীগের আমলে তো এমনটাই হওয়ার কথা! সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে খাতাগুলো সংরক্ষণ করার কথা নিশ্চয়! এছাড়া সেই খাতাগুলো একটা ডিজিটাল কপিও নিশ্চয়ই তৈরি করা হয়েছে! আমি এই পুরো সময়ে এই খাতাগুলোর কথা শুনতে পাই নি। আপনাদের কারো জানা থাকলে দয়া করে আমাকে জানাবেন।
এই ব্যাপারে শেখ হাসিনার লেখাতেই আরেকটা অংশ তুলে দিচ্ছি। তিনি খাতাটার ফটোকপি করেছেন।

সেই খাতাগুলো কোথায়? কোথায় সংরক্ষণ করা আছে বা ছিল? কেউ কি সেই খাতাগুলো দেখেছে? যখন খাতাগুলোর যাচাই বাছাই আর সম্পাদনা হচ্ছিল তখন তো সেই বইয়ের ডিজিটার প্রিন্ট করতেই হয়েছে নয়তো এতো পুরানো খাতা থেকে তো কোন লেখা উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। এবং সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে! সেই ফটোকপি এখন কোথায়? এমন কোন ফাইল কি কখনও কারো চোখে পড়েছে? এই খাতাতো শেখ হাসিনার আমলে জাদুঘরে রাখার কথা, নয় কী?
কোথাও সংরক্ষণ করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই তবে আমি জানতে চাই। আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে চাই যে এই বইটা শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা। আমি বিশ্বাস করতে চাই না এটা জাভেদ পাটোয়ারি লেখে নি।
প্রথম দুটো ছবি বই থেকে ছবি তোলা, শেষ ছবিটা স্ক্রিনশট নেওয়া

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



