somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডানপিটে ছেলেটি !!!!

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটি একটু ডানপিটে ছিল । কারো কথা তেমন শুনত না । কোন কিছুর পরোয়া করত না । সাহস যেন পুরো শরীর জুরে । কোন কিছুই দমিয়ে রাখতে পারত না তাকে ।

.

১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ । টগবগে ১৮ বছরের ছেলেটি । তরুন রক্ত । মুক্তির নেশা । আর বেচে থাকার লড়াই । নিজের দেশ আর জাতির স্বত্ত্বা কে বাচানোর । মাকে বলে বের হয়ে গেল ছেলেটি "" দেশ কে শত্রু মুক্ত করেই বাড়ি ফিরব "" । কিন্তু দেশ স্বাধীন হলো ঠিক ই , শুধু ছেলেটির বাড়ি ফেরা হলো না । হ্যা , যার কথা বলছি তিনি আর কেউ নন "" বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ""

.


২রা ফেব্রুয়ারী ১৯৭১
হামিদুর রহমান ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে সিপাহী হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষভাগে হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। সিলেটের সীমান্ত এলাকা৷ শ্রীমঙ্গল হতে দশ মাইল দক্ষিণে ধলই সীমান্ত ঘাঁটি৷ এরই মধ্যে চা বাগানের মাঝে আস্তানা গেড়েছে পাকহানাদার বাহিনী৷ মাত্র চারশো গজ দূরে ভারতীয় সীমান্ত৷ চা বাগানেই বাঙ্কার করে এক শক্ত অবস্থান নিয়ে বসে আছে পাকিস্তানি হানাদাররা ৷

.

২৮ অক্টোবরের ভোর ৪টা
.
মুক্তিবাহিনী লক্ষ্যস্থলের কাছে পৌছে অবস্থান নেয়। চারদিকে
সুনসান নীরবতা ৷ সেখানে জেগে আছে মুক্তিবাহিনীর একটি ইউনিট৷ এই ইউনিটটি ছিল জেড ফোর্সের অধীনস্থ৷ এই ইউনিটটির ওপরই দায়িত্ব পড়েছে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে হটিয়ে ধলই সীমান্ত ঘাঁটি দখল নেয়ার৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোরারাতেই আক্রমণ করা হবে ঘাঁটিটি৷ লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম এ অভিযানের নেতৃত্বে আছেন৷ সারা রাত চলেছে আক্রমণের প্রস্তুতি৷ রাতভর পথ চলে ভোরের দিকে ঘাঁটির কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে ইউনিটটি৷ সবকিছুই
হচ্ছে নীরবে-নিভৃতে ৷ হানাদার বাহিনী যেন কিছুতেই টের না পায় ৷

.


মুক্তিবাহিনীর এই দলটি হানাদার বাহিনীর তুলনায় অনেক ছোট । কিন্তু ছোট হলে কী হবে- সাহসে দেশপ্রেমে তাঁরা অনেক বড়, অনেক অগ্রগামী ৷ তাঁদের অস্ত্রশস্ত্রও হানাদার বাহিনী অপেক্ষা যথেষ্ট অনাধুনিক৷ এই দলেরই তরুণ যোদ্ধা হামিদুর রহমান৷ যুদ্ধ শুরু হবার মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনীতে৷ দুর্দান্ত সাহসী, দৃঢ়চিত্ত, অসম্ভব পরিশ্রমী এই তরুণ দেশপ্রেমে গরীয়ান৷ মাঝারি গড়নের সুঠাম দেহের অধিকারী এই তরুণের মনের জোর অসম্ভব৷আক্রমণের জন্য তৈরি ইউনিটটি৷ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয় । সামনে দুই প্লাটুন সৈন্য এবং এক প্লাটুন সৈন্য পেছনে । প্রথম দুই প্লাটুন ডান ও বাঁদিক থেকে ঘাঁটি আক্রমণ করবে ৷ আর পেছনের প্লাটুনটি পেছন থেকে ঘাঁটিটি আক্রমণ করবে৷একটি প্লাটুন ঘাঁটির কাছাকাছি পৌঁছতেই ঘটে সর্বনাশ৷ হানাদার বাহিনী আগেই মাইন পেতে রেখেছিল৷ মাইন ফেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার দেহ৷ আহত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লাগলেন৷ রক্তে রক্তে লাল হয়ে গেল মাটি ৷ কিন্তু এত মৃত্যুর পরও পেছনে হটার কোনো সুযোগ নেই৷ ঘাঁটি দখল করতেই হবে৷ এক পর্যায়ে হতাহতের সংখ্যা আরও বেড়ে গেল ৷ মুক্তিযোদ্ধারা আরও অগ্রসর হলেন৷ কিন্তু ঘাঁটির কাছে এসেও তাঁরা শুধু একটি কারণে ঠিক সুবিধা করতে পারছেন না ৷ বিওপির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের একটি এলএমজিই এর প্রধান কারণ ৷ এটি থেকে মুহুমুহু ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে আসছে বুলেট৷ এদিকে ঘন গাছগাছালির কারণে মুক্তিযোদ্ধারাও সঠিকভাবে তাঁদের মেশিনগান চালাতে পারছে না ৷ সামনের এগোতে হলে অবশ্যই সেই এলএমজিটা থামিয়ে দিতে হবে ৷ লে. কাইয়ুম সিদ্ধান্ত নিলেন, যেভাবেই হোক ওই এলএমজিটা থামাতেই হবে৷ তিনি সহযোদ্ধা সিপাহী হামিদুর রহমানকে ডেকে বললেন, 'ওই এলএমজিটা থামাতেই হবে৷'-এ কাজটা তোমাকেই করতে হবে৷সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত হয়ে গেলেন সিপাহী হামিদুর রহমান৷ টগবগ করে উঠল শরীরের রক্ত৷ আদেশ পালনের জন্য তিনি মরিয়া হয়ে ওঠলেন ৷ এখন তাঁর একটাই লক্ষ্য, ওই এলএমজিটা থামাতেই হবে ৷ আঠারো বছরের এক উদ্দীপ্ত তরুণ শপথ করলেন জীবনবাজি রেখে ৷ বিদায়ের সময় মাকে বলে এসেছিলেন, 'দেশকে শত্রুমুক্ত করে বাড়ি ফিরব' ৷ বুকে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যেতে লাগলেন এলএমজিটার দিকে৷ বুকের নিচে কঠিন মাটি, ডাইনে-বায়ে-উপরে সমানে চলছে গুলি ৷ মাটির নিচ থেকে যে কোনো সময় ফুটতে পারে মাইন৷ উভয় পক্ষের আগ্নেয়াস্ত্রগুলো গর্জে উঠছে মুহুমুহু৷ এসব উপেক্ষা করে মৃত্যুকে পরোয়া না করে সিপাহী হামিদুর রহমান এসে পড়লেন একেবারে এলএমজিটার কাছাকাছি ৷ দেখলেন, এলএমজিটার পেছনেই দুজন পাকিস্তানি সেনা ৷ একা দুজনকে কাবু করতে পারবেন তো! পারবেন তো! পারতেই হবে৷ এক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন না তিনি৷ এবার তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন এলএমজি পোস্টের ওপর৷ এলএমজি চালনায় নিয়োজিত দুই পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে শুরু হলো ধ্বস্তাধস্তি ৷ এভাবে আক্রণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যমে এগিয়ে যান, এবং শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি পোস্টের কাছে দৌড়ে এসে পেলেন শহীদ হামিদুর রহমানের মৃতদেহ৷ তাঁর পাশেই মৃত অবস্থায় পড়ে আছে দুই পাকসেনা৷ ধলাই বর্ডার আউটপোস্ট দখল হলো কেবল সিপাহী হামিদুর রহমানের কারণেই ৷ কিন্তু হামিদুর
রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের
লাশ উদ্ধার করে।

.


হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয়
ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। নীচু স্থানে অবস্থিত কবরটি এক সময় পানির তলায় তলিয়ে যায়। ২০০৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহন করে, এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১২ই ডিসেম্বর ২০০৭ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×