(১)
ছবিটা জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের । সকালে ক্লাস শুরু হবে । পৌছে দেখি কুয়াশা ঢাকা । এবার কুয়াশা তেমন চোখে পরেনি । এই কুয়াশা দেখে দাঁড়িয়ে ছবিটা তোলার লোভ সামলাতে পারিনি । ছোট বেলার কথা মনে পরে যায় । তখন অনেক কুয়াশা পরত । ঘাসে শিশির জমত মুক্তার মত ।
খালি পায়ে ঘাসে হেটে বেড়াতাম । সকাল বেলা বের হতাম গুটিসুটি হয়ে বন্ধুরা মিলে আগুন জ্বালাতাম । দূরে হাটতে যেতাম । নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে কুয়াশা দেখতাম । আবার পানির উপর ধোয়া উঠা দেখতাম । ভাবতাম পানি গরম ।
শৈশব অনেক আনন্দের ছিল । ছিল না কোন চিন্তা । ছিল না কোন ভাবনা । শুধু দুরন্ত শৈশব । ব্যান্ডমিন্টন, ক্রিকেট ফুটবল নিয়ে হারিয়ে যাওয়া । বাবার হাতে মার খাওয়া । স্কুল পালিয়ে ক্রিকেট খেলা বা ঘুরে বেড়ানো । কত কিছু করেছি । শীতের ছুটিতে নানা বাড়ি, দাদু বাড়ি বেড়াতে গিয়েছি । গুড়ের পায়েস আর নানা রকম পিঠা । সব যেন এখনও চোখের সামনে ভাসে ।
আজকাল যান্ত্রিকতা আমাদের চেপে ধরেছে । আমরা আমাদের সন্তানদের কি দিচ্ছি । তাদের শৈশবটা কি আমাদের মত । হবে না জানি । তবে তাদের শেকড় এর সাথে পরিচয় করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের । আমাদের প্রকৃতি আর পরিবেশের যে স্বমন্বয় তাকে ধরে রাখা ।
তাই বলতে চাই, " দাও ফিরিয়ে অরন্য, লও এ নগর "
(২)
সেদিন এক কাজে পল্টনের ওই দিকে গিয়েছিলাম । অফিসের কাজে এখন বাইরে যেতে হয় । বস বলেছে বাইক কিনতে । কিন্তু আপাতত বলে দিয়েছি বাইক কেনা আমার জন্য সম্ভব না । উনি বলেছেন রাইড নেও । তাই উবার ই ভরসা । পাঠাও যা করেছিল । তারপর আর ভরসা পাই না । উবার ছাড়া এখন চলি না ।
তো পল্টনের কাজ শেষ ফিরছিলাম উবার মোটোতে করে । শাহাবাগের ট্রাফিক এ আটকে গেলাম । ভাল, সবাই জেব্রা ক্রসিং এর দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । ভাল লাগল । সবাই নিয়ম একটু একটু করে মানছে । আশা আছে তাহলে পরিবর্তন আসবে । হঠাৎ চোখ চলে গেল সামনে । দেখি একটা বাইক একে বারে ট্রাফিকের সামনে জেব্রা ক্রসিং এর ওপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । নিজেকে নিজেই গালি দিলাম । এদের জন্য বাইকারদের গালি খেতে হয় । ভাবলাম নেমে যাই । তারপর ভাবলাম অফিসে পৌছানো জরুরী । তাই গেলাম না ।
আমাদের সমস্যা এটাই । সবাই মানলেও দু একজন এমন বের হবেই । তার চেয়ে বড় কথা । গ্রাম থেকে অনেক বাইকার এখন ঢাকা শহরে বাইক চালায় । আমি দু দিন দেখছি । তারা এটাকে গ্রাম মনে করে বাইক চালায় । বললাম ভাই এটা গ্রাম নয় । তাই নিয়ম কানুন আর রাস্তার অবস্থা রাইড করুন । না হলে কোন দিন খবর হয়ে যাবেন ।
আমাদের নিয়ম আছে কিন্তু আমাদের মানতে কষ্ট । আর কেউ মানলে তাকে তিরস্কার করি, হাসাহাসি করি । অথচ এটা আমার দেশ এই চিন্তাটা কারো মাথায় আসেই না ।
(৩)
আমি সব সময় নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করি । চেষ্টা করি নিজেকে একটু একটু করে নতুন কিছু শেখার জন্য তৈরি করতে । অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম কি শেখা যায় । তারপর মনে হলো ভাষা শিখি । কি ভাষা শেখা যায় । যেহেতু মুভি দেখি । তাই যেটা শিখতে হবে সেটা হলো জাপানীজ ।
তাই জাপানীজ শেখার জন্য ভর্তি হলাম । যত আগ্রহ নিয়ে শুরু করেছি ক্লাস করে ততই যেন হতাশ হয়েছি । কি শিখতে আসলাম । কিছুই বুঝি না । বর্নমালা তো সেই রকমের সহজ । তবে ক্যালিগ্রাফি তে লেখা । তাই টানের বিষয়টা বুঝতেই দুই সপ্তাহ লাগল । জাপানীজ ভাষার বর্নমালার দুটি ভাগ । একটা হিরাগানা ও অন্যটি কাতাকান । দুটির উচ্চারন একই শুধু লেখায় ভিন্নতা । আর এটা আমার মাথা জট পাকিয়ে গিয়েছে । একটা মুখস্থ হলে অপরটি ভুলে যাই ।
তবে হাল ছাড়িনি । কিছু কিছু শব্দ শিখে ফেলেছি । আশা করি প্রতিদিন একটু একটু করে ভাল হবে ।
" কোন কিছু শিখতে হলে ধৈর্য্য ধরা জরুরী "
(৩)
গতকাল গিয়েছিলাম একটা মোটরসাইকেল কোম্পানিতে । তারা নতুন বাইক নিয়ে আসবে । সেটার বিষয়ে জানতে । নতুন বাইকের লঞ্চ হবে তো তাদের জন্য একটা আর্টিকেল লিখতে হবে । বসেরা কেউ ঢাকায় নেই । তাই আমাকেই যেতে হবে ।
কোম্পানির ঠিকানায় লেখা আছে লিংক রোড । পরে আমাকে ঘুরে যেতে হয়েছে । কারন পুলিশ কনকর্ড এর ওইপাশে যে আড়ং এর শো-রুম সেখানেই ওই কোম্পানির অফিস । প্রায় তিন কিলো হাটতে হয়েছে । তবে ঠিক টাইমেই পৌছে যাই । হাটতে হাটতে দেখি লেকের পাড়ে এই ছেলের দল ক্রিকেট খেলছে ।
আবার সেই শৈশব আর বন্ধুদের কথা মনে পরল । তারচেয়ে বেশি আহত হলাম আমাদের সন্তানরা আজ কোন মাঠ পাচ্ছে না । তারা মুক্ত ভাবে দৌড় লাফ ঝাপ দেবে তার কোন উপায় নেই । আমি যখন বড় হয়েছি তখন আমাদের মাঠ গুলোও আস্তে আস্তে দখল হয়ে গিয়েছে । কষ্ট লাগত খেলতে পারতাম না । অনেক দূরে দূরে যেতে হতো । আগে বাসার সাইডে খেলতে পারতাম । আর এখন কিছুই নাই ।
আমরা আসলে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য কি রেখে যাচ্ছি? আসলেই কি ভেবে দেখেছি ?
(৪)
আমি নীলক্ষেত যেতে চাই না । কি কাজে জানি গিয়েছিলাম । মনে নেই । তারপর ই এই অঘটন ঘটে গেল আমার সাথে । বই যেন আমার পিছন ছাড়েই না । তারপর কি বাসায় নিয়ে আসলাম ।
বই পড়তে হবে । প্রচুড় পড়তে হবে ।
(৫)
আমি বাসায় ওয়াফাই নিয়ে আসার পর মোবাইলে নেট কেনা বন্ধ করে দিয়েছি । তারপর কি জন্য জানি কিনে ছিলাম । মনে নেই । তাই নেটে ঢুকলে সামুর এপে ঢু মেরে যাই । লেখা পড়ি । যদিও কমেন্ট করতে পারি না । তবে পড়তে তো আর খারাপ লাগে না ।
আশা করি খুব শীঘ্র ই কমেন্ট করা যাবে ।
(৬)
বস এবং একই সাথে আমার বড় ভাই ইংরেজি বইয়ের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল যাও কিনে নিয়ে আসো । কি আর করা নীলক্ষেত চলে গেলাম । তারপর কি পকেট ফাকা । এরা আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না ।
ভাবছি বইয়ের বিজনেস করব । তখন আর কিনে পড়তে হবে না । বেচব আর পড়ব । তবে আপাতত ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে । এত বই যে এখন আমার বিছানায়ও বই দখল করে ফেলেছে । আম্মা এ নিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত । কোন দিন জানি আমাকে বই সহ বের করে দেন । আপাতত একটা আলমিরা কিনতে হবে ।
তবে বই নিয়ে আমার এই নেশা তিনি খারাপ চোখে দেখেন না । আর বাবার কাছে তো আমি অনেক বেশি প্রশংসা পাই । তবে কলেজের পর বাবার কাছ থেকে বই কেনার টাকা নিয়েছি খুব কম । আর এখন তো নেই না ।
আমার মতে সবার বই কিনে পড়া উচিত । কারন যারা লিখেন, তারা অনেক কষ্ট করে লিখেন । তাই পিডিএফ পড়ে লেখকের ক্ষতি করবেন না ।
ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । বই পড়ুন । আপনার চারপাশ পরিস্কার রাখুন ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৫৮