মানুষের অঙ্গের সবচেয়ে দরকারী অঙ্গ কোনটি প্রশ্ন আসতেই পারে । আপনি কি আসলে ভেবে দেখেছেন মানব দেহের সবচেয়ে দরকারী অঙ্গ কোনটি । হয়ত ভেবেছেন হয়ত না । তবে সব দিক বিবেচনা করে যেটা মনে হয় তা হলো চোখ । হ্যা, চোখ মানুষের অন্যান্য অঙ্গ থেকে একটু বেশি গুরুত্ব পাবে । ভেবে দেখুন তো আপনার চোখ না থাকলে কেমন লাগত । কিভাবে চলতেন । হাটতে চলতে সাহায্য লাগত । সব দিক থেকেই কিন্তু একটু অসুবিধা বেশি । আবার আমরা প্রবাদ হিসেবে বলে থাকি চোখ থাকিতে অন্ধ । আসলেই মানুষ চোখ থাকতে অন্ধ হয়ে যায় । আর এই অন্ধত্ব নিয়েই তৈরি হয়েছে মুভি “আন্ধাধুন”।
কাহিনীসূত্র
আকাশ একজন অন্ধ পিয়ানো বাদক । সে একাই থাকে এবং সাথে থাকে তার বিড়াল । সে পিয়ানো শিখিয়ে বেড়ায় । তার প্রতিবেশী একটা ছোট বাচ্চা আছে যে প্রতিদিন থাকে পরীক্ষা করে যে সে আসলেই অন্ধ কিনা । তবে আকাশের সেসব নিয়ে চিন্তা নেই । কারন পরীক্ষা করুক আর নাই করুক সে তো অন্ধ । তবে সে জন্মান্ধ নয় । ক্রিকেট খেলতে গিয়ে তার চোখে আঘাত লাগে এরপর থেকেই সে অন্ধ । সে পিয়ানো বাজিয়ে তার ইনকাম করে থাকে ।
প্রতিদিনের মত একদিন বের হয়েছে পিয়ানো শিখাতে রাস্তায় সে সোফিয়ার স্কুটারের সামনে পরে যায় । সোফিয়া অনেক কষ্ট পায় । তাই সে তার বাবার মিউজিক রেস্টুরেন্ট এ তাকে নিয়ে যায় । তার পিয়ানো বাজানোর মেধা তাকে মুগ্ধ করে । সে তাকে এখানে জব অফার করে । তারপর আকাশ এখানে পিয়ানো বাজায় । এরপর আস্তে আস্তে তারা অনেক বেশি ক্লোজ হয়ে যায় ।
সোফিয়াদের রেস্টুরেন্টে খেতে আসেন বিখ্যাত অভিনেতা প্রোমোদ সিনহা । আকাশের পিয়ানোর মেধা দেখে সে মুগ্ধ হয় । তাকে তার বাসায় পিয়ানো বাজানোর জন্য আমন্ত্রন জানায় । আকাশ সময় মতো প্রোমোদ সিনহা এর ফ্ল্যাটে চলে যায় । প্রোমোদ সিনহা এর প্রতিবেশি দেখতে পায় আকাশ ও সিমি(প্রোমোদ সিনহার স্ত্রী) কথা বলছে । সিমি আকাশ কে চলে যেতে বলে । প্রতিবেশী দেখা ফেলায় সে আকাশ কে ভেতরে আসতে বলে । আকাশ ভেতরে ঢুকে পিয়ানোর কাছে চলে যায় ।
তবে বাসায় প্রোমোদ সিনহা না থাকায় আকাশ বেশ অসুবিধার মধ্যে পরে যায় । কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে প্রোমোদ সিনহা তখন মৃত । তিনি খুন হয়েছেন আরও আগে । আকাশ এসব জানত না । সে বুঝতেও পারেনি এসব ঘটনা ঘটছে তার চোখের সামনেই । অথচ সে পিয়ানো বাজিয়ে চলেছে । কারন তাকে লন্ডন যেতে হবে ।
এরপর সোফিয়ার সাথে তার সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় । কারন আকাশ কে অন্য একটি মেয়ের সাথে বিছানায় দেখতে পায় । তখন সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না । নিজ থেকেই সম্পর্ক ভেঙ্গে দেয় ।
অনেক চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে আকাশ লন্ডন পৌছায় । এর মধ্যে সোফিয়ার সাথে তার আর যোগাযোগ হয়নি । সে লন্ডনের এক গিগে পিয়ানো বাজায় । তার চোখ আগের মত ই কালো চশমা থাকে । অন্ধদের হাতের লাঠিও । যদিও তখন সোফিয়া তাকে দেখছে । সোফিয়া তাকে জিজ্ঞেস করে সব ঘটনা । আকাশ বলে তার অন্ধত্ব আর জীবনের ঘটনা গুলো । তারপর সেখান থেকে চলে যায় ।
এভাবেই শেষ হয় আকাশ আর সোফিয়ার গল্প ।
আলোচনা
আমি এই মুভিটির ব্যাপারে এক ভাইয়ার কাছ থেকে জেনেছি । উনি রিভিউ দেয়ার পর আমি ভাল প্রিন্ট এর জন্য অপেক্ষা করেছি । তারপর দেখেছি ।
মুভিটি সত্যিকার অর্থেই এন্টারটেইনিং । এছাড়া কাহিনী ও পরিচালনাও অসাধারন হয়েছে । যদিও মুভিটি আপনাকে থ্রিল একটু কম দেবে । তবে কাহিনীড় জন্য উঠতে মন চাইবে না । কারন একের পর এক টুইষ্ট পাবেন । যখন ই মনে হবে এই শেষ, তখন আবার নতুন করে শুরু ।
মুভির টাইমিং একটু স্লো । ধীর গতির কারনে আপনি বিরক্ত বোধ করতে পারেন । তবে দেখতে থাকলে খারাপ লাগবে না । কারন মার্ডার মিস্ট্রি তাও এক নয় দুটো মার্ডার । তাহলেই ভাবুন কি হতে পারে । তারপর উপর একজন অন্ধ মানুষ এসবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । প্রতিটি ঘটনায় সে জড়িয়ে আছে । কেমন লাগবে । আমার কাছে সময়টা ভাল গিয়েছে । থ্রিল কম হলেও একেবারে খারাপ লাগেনি ।
এবার কথা বলি অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে । মুভিটিতে অভিনয় করেছেন আয়ুস্মান খুরানা, আকাশের চরিত্রে । তার অভিনয় শৈলী নিয়ে আমার কোন ব্যক্তব নেই । কারন চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে সে অসাধারন । একদম সত্যিকার মনে হয় । যেকোন চরিত্রে সে নিজেকে একদম জড়িয়ে নেয় ।
অপর দিকে টাবু হচ্ছে বলিউডের অন্যতম মেথড এক্ট্রেস । তার অভিনয় নিয়ে কিছু বলার নেই । এর আগে অজয়ের সাথে দৃশ্যম মুভিতে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছে । এছাড়া টাবু অনেক দিন থেকে বলিউডের মুভিতে অভিনয় করে আসছে । নায়িকার চরিত্রে রাধিকা আপ্টে । যিনি নিজের প্রতিটি কাজে নিজেকে ছাড়িয়ে যান । যদিও এখানে তার চরিত্রটি তেমন গুরুত্বপূর্ন নয় । এছাড়া আরো কয়েকজন কলাকুশলী রয়েছেন যারা এই মুভিতে যথেষ্ট ভাল অভিনয় করেছেনে । এক ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাকির হুসেইন । মুভিটি পরিচালনায় ছিলেন শ্রীরাম রাঘবান ।
সবমিলিয়ে মুভিটি আপনাকে মার্ডার মিষ্ট্রি এর দারুন এক অনুভূতি দেবে । কারন শেষের টুইষ্টাই যথেষ্ট ।
আজই দেখে ফেলুন “আন্ধাধুন” ।
মুভি ডাউনলোড লিংকঃ Andhadhun
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৫৩