somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসা নাকি ধোকা না জীবন - যখন পুলিশ ছিলাম - ধীরাজ ভট্টাচার্য

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সারাজীবনে কখনো ভালো না বেসে থাকার চেয়ে, একবার ভালোবেসে তাকে হারানো উত্তম।
-আগাস্টিনভ।


মানুষ জীবনে একবার হলেও ভালবাসে বা ভালবাসা উচিত। কে এই কথা বলেছেন আমি জানি না। তবে হয়ত সত্যি অথবা না। কারণ কারও জীবনে অনেক ভালবাসা থাকার পরও অনেকেই আছেন ভাবেন পূর্ণতা কোথায়। আবার কেউ কেউ কিছু না থেকেও যেন পূর্ণ হয়েছেন অল্প ভালবাসায়।

তাই মানুষের জীবনে ভালবাসার অবদান অনস্বীকার্য বলা যায়। মানুষের অপূর্ণতা তখনই থাকে যখন সেই ভালবাসা তার কাছ থেকে হারিয়ে যায়। সে তার পূর্ণতা আর খুজে পায় না। হয়ত এটাই নিয়তি। আর জীবনে নিয়তির কাছে সবাই অসহায়।

কিন্তু এসব বলছি কেন। বইয়ের কথা বলার জায়গাতে ভালবাসার কথা বলে চলেছি। তার পেছনেও একটি রহস্য আছে। একটি বইয়ের কথা বলছি এবং বইটি হচ্ছে ধীরাজ ভট্টাচার্যের লেখা “যখন পুলিশ ছিলাম”। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে বইয়ের নামের সাথে ভালবাসার সম্পর্ক কোথায়।

যদিও এই বইটি ধীরাজ ভট্টাচার্যের পুলিশে থাকা অবস্থায় তার জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। সেখানে তিনি তার কাজের এবং দৈনন্দিন সব কিছু উল্লেখ করে গিয়েছেন। এর সাথে তার ভালবাসার উপাখ্যানও রচনা করেছেন।

মুল কাহিনীতে যাবার আগে লেখকের সম্পর্কে কিছু জানা যাক। ধীরাজ ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯০৫ সালে, যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া গ্রামে। তাঁর পিতা ললিতমোহন ভট্টাচার্য ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ ও স্কুল শিক্ষক। নিজ গ্রাম পাঁজিয়ার স্কুলে শৈশবশিক্ষা শেষে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিশন থেকে ১৯২৩ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন তিনি।

এরপর আশুতোষ কলেজে পড়ার সময় সিনেমার প্রতি প্রবল অনুরাগ জন্মে তাঁর যা তাঁকে কলেজ শেষ করতে দেয় নি। কিন্তু চলচ্চিত্রের প্রতি এই অনুরাগ তাঁর পরিবার নাকচ করে দেন। ফলে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন পেছনে ঠেলে বাবার আদেশে তাঁকে ভর্তি হতে হয় কলকাতা পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চে।

সিনেমার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকলে পরিবারের কথা চিন্তা করে তিনি যোগদেন পুলিশের ইন্টিলিজেন্স। এরপর শুরু হয় পুলিশে টিকে থাকার লড়াই। দিন যতই গড়ায় তার ছিটেফোটা যেন হারিয়ে যায়। এই চাকরি যায় তো যায়। অবশেষে একদিনের ঘটনা অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। তাই তাকে বদলি করে দেয়া হয় চট্টগ্রাম। এটি ১৯২৩-১৯২৪ সালের দিকের ঘটনা। আমি পুরোটা বলব না, তাহলে বই পড়ার আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম এসেও শান্তি নেই। কারণ মানুষ তিনি বেশি আবেগ প্রবণ। তাই সকলের কাছে আপন হলেও কারও কারও শত্রুও হয়েছেন। আবারও সেখান থেকে তাকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এ বদলি করা হয়। এখানে জানিয়ে রাখি সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এত ভাল ছিল না। টেকনাফ যেতে হত স্টিমারে এবং তাও প্রায় আড়াই দিনের মত সময় লাগত। এছাড়া সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিতে হত।

লেখক তার সব কিছুর বর্ণনায় হুবহু সেটা তুলে ধরেছেন। এছাড়া তিনি কক্সবাজার ও টেকনাফে অবস্থিত “মগ” দের আচার আচরণ, কৃষ্টি-কালচার, জীবন বৈচিত্র্যের সব কিছু তুলে ধরেছেন। এছাড়া অপরাধী ধরার জন্য চার পাচ দিন জঙ্গলের যাত্রা পাঠককে রোমাঞ্চিত করতে বাধ্য করবে। দুর্গম পথ ও গরিব লবণ চাষীদের প্রতি ব্যবহার আপনাকেও ভাবিয়ে তুলবে মানুষ স্বার্থের জন্য কতটা নিচে নামতে পারে সেটা সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন।

ধীরাজ ভট্টাচার্যের জীবনের পরিবর্তন আসে এই টেকনাফেই। তার জীবন পরিবর্তন করে দেয় মগ জমিদার কন্যা “মাথিন”।

থানার কূপ থেকে প্রতিদিন সখীবেষ্টিত হয়ে জল সংগ্রহে আসত কিশোরী মাথিন। সময়ের সাথে সাথে ধীরাজের হৃদয়ে স্থান দখল করে ফেলে সেই সুদর্শনা। দুজনের মুখের ভাষা ভিন্ন হলেও চোখের ভাষায় তারা নিজেদের কাছে টেনে নেন। এক পর্যা য়ে, জাতপাত-ধর্ম-বয়স-পেশা ভুলে ধীরাজ মাথিনের সাথে বিবাহ বন্ধনের দিন-তারিখ-ক্ষণ ঠিক করে ফেলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিচ্ছেদ বেদনায় পুড়তে হয় এই প্রেমীযুগলকে।

কক্সবাজার জেলার শেষ সীমান্তে টেকনাফ থানার কম্পাউন্ডে অবস্থিত শত বছরের পুরনো বিশুদ্ধ পানির ‘মাথিনের কূপ’ ধীরাজ-মাথিনের সেই যুগপৎ প্রেম ও বিরহের নিদর্শন হিসেবে আজও দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে আছে।

কেন ‘মাথিনের কূপ” আজও এত জনপ্রিয় নিদর্শন? ধীরাজ-মাথিনের বিচ্ছেদের কারণ কী? কে, কারা কেন ধীরাজ-মাথিনের বিচ্ছেদের পিছনে দায়ী ছিল? মাথিনের পরিণতি কী হয়েছিল? ধীরাজই বা শেষ পর্যন্ত কী করলেন? কেন করলেন?

অনেক প্রশ্ন তবে উত্তর আছে “যখন পুলিশ ছিলাম” বইটিতে। উত্তর গুলো জানতে এই বইটি পড়তে হবে। আশা করছি বইটি সবার ভাল লাগবে।

ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×