“আমি সৃষ্টি তাই স্রষ্টায় ভালবাসি”
জীবনের শুরু কোথায় আর শেষ কোথায়। এই জীবনের উদ্দেশ্যই বা কি। আমরা এই এক জীবনে কি করতে চাই, সৃষ্টা আমাদের কাছে কি চান। সৃষ্টার কাছে আমাদের চাওয়ার কি আছে। আমাদের এই জীবনের কাছে আমাদের চাওয়ার কি আছে। সৃষ্টি আর সৃষ্টার সাথে সম্পর্ক গভীরতা কতটুকু।
সুফিবাদ বা তাসাউফের গভীরতা অনেক, আর এসব গভীরতার এক বিশ্বস্ত নাম হচ্ছে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি, যিনি রুমি নামেই সারাবিশ্বে পরিচিত। ইসলামের একদম শুরুর দিকেই সুফিবাদের শুরু হয়, তবে আধুনিক সুফিবাদের সাথে মূল সুফিবাদের পার্থক্য রয়েছে অনেক!
মূল সুফিবাদের জন্ম হয় সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের নতুন ধারা হিসেবে, যে ধারা ইসলামের সকল ফরয আইন মেনে তার সাথে নিজেদের ধ্যান ধারণা নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সুফিবাদ আসলে সরাসরি মানুষের পরিশুদ্ধার সাথে জড়িত, আত্ম-সম্পর্কীয় আলোচনা যার মুখ্য বিষয়। খুব সহজভাবে বলতে গেলে সুফিবাদের মূল কাজ হচ্ছে আপন নফসের সঙ্গে, নিজ প্রাণের সাথে, নিজের জীবাত্মার সাথে, শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ করে তার থেকে মুক্ত হয়ে এ জড় জগত থেকে মুক্তি পাওয়া।
মৃত্যুর আটশ বছর পরও মাওলানা জালালুদ্দীন রুমি’র ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা যে কোনো জননন্দিত ব্যক্তির ইর্ষার কারণ। তাঁর কবিতায় দর্শন ও প্রেমের মধ্যে বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে মানুষ শান্তি ও নৈতিকতার সন্ধান করেন; ফিরে তাকান পথের দিশা ও অনুপ্রেরণা লাভের আশায়।
তারা রুমির দীর্ঘ বর্ণনামূলক কবিতা থেকে উদ্ধৃতিযোগ্য অংশ বেছে নিয়ে মুখে মুখে উচ্চারণ করেন। তিনি যথার্থই এক বিশ্বজনীন কবি ও দার্শনিক। যেকোনো দেশ অথবা সংস্কৃতি তাঁকে তাদের একান্ত আপনজন বলে দাবি করতে পারে? “দ্য লিটল বুক অব উইজডম” তাঁর জীবনের সেরা উদ্ধৃতি গুলোর একটি ছোট সংকলন।
মুলত এই “দ্য লিটল বুক অব উইজড” বইটি সংকলন করা হয়েছে “ফিহি-মা-ফিহি” বইটি থেকে, যা মুলত রুমি বিভিন্ন সভা, আলোচনা এবং মজলিসে দেয়া বক্তব্য থেকে নেয়া হয়েছে। এই সংকলনে রুমি সৃষ্টা, সৃষ্টি এবং তাদের জীবন ধারণের ধারণাকে তুলে ধরেছেন।
রুমি বলেছেন, তুমি যেখানেই থাকো না, কেন, যেখানে তোমার থাকা প্রয়োজন, তুমি সেখানে আছ।
মানুষ চাইলেও তার নিয়তির বাইরে যেতে পারে না। তাই নিয়তি আমাদের যেখানে নিয়ে যাবে আমাদের সেখানেই যেতে হবে। তবে এর মানে এটাই নয় যে নিয়তি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাব কিন্তু পরিশ্রম করা থামানো যাবে না।
আমাদের নিয়তি আগে থেকেই হয়ত নির্ধারিত অথবা নয়, কিন্তু আমরা যদি আমাদের জন্য কাজ ও পরিশ্রম না করি তবে আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আমরা সেই জায়গাতেই থেকে যাব। তাই সৃষ্টার উপর বিশ্বাস রেখে, কাজ করে যেতে হবে।
“রুমি’স লিটল বুক অব উইজডম” বইটি আকারে ছোট হতে পারে। কিন্তু গভীরতায় অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে। ছাড়া প্রতিটি উক্তি, বানী এবং ছোট ঘটনা জীবনের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করে। তবে অনুবাদের কথা বলতে হয় যে, এই প্রথম আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু এর অনুবাদ পড়লাম। একটু সংশয় ছিল। কিন্তু সাবলীল অনুবাদ হবার কারণে পড়তে কোন সমস্যা হয়নি।
যেহেতু বইটি বানী বা উক্তির উপর ভিত্তি করে লেখা এর মুল ভাব বুঝতে একটু সময় লাগবে। তবে প্রতিটি উক্তি আপনার আমার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।
হয়ত রুমি তাই বলেছেন, আমরা এমন এক স্বপ্নরাজ্যে বাস করি এবং শুধু পরবর্তি পৃথিবীতেই এর মর্মার্থ জানতে পারি।
বইঃ রুমি’স লিটল বুক অব উইজডম
মুলঃ মরিয়ম মাফি
অনুবাদঃ আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৩৬