নতুন বছরের শুভেচ্ছা সকল ব্লগারদের। নতুন বছরের শুরুতে কিছুটা ব্যস্ততা যাবার কারণে ব্লগে আসতে পারিনি। তবে ব্লগে আসব আসব করে সময় না পাওয়া ব্লগ লেখা বা এসে পড়াও হচ্ছিল না। তাই ভাবলাম একে বারে নির্বাচনের পর ব্লগে আসব। এই সুযোগে বাড়ি মানে গ্রামের বাড়ি কুয়াকাটা থেকেও ঘুরে এসেছি। বেশি অল্প সময়ের জন্য ভাল একটা রিফ্রেশমেন্ট হয়ে গিয়েছে।
তারপর ব্লগবাসী সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। এবার থেকে নিয়মিত ব্লগ লেখার চেষ্টা করব। সেই সাথে পড়া। আর এই সুযোগে জানিয়ে দিচ্ছি রাস্তা ঘাটে চলতি পথে - যাপিত জীবন কড়চা নামে ব্লগ শুরু করে দিলাম।
ঘটনা - ১
আজ শুক্রবার হবার কারণে বাসা থেকে বের হয়নি। বিকেলে ভাবলাম বের হই। তাই বাইক নিয়ে বের হলাম। বাসা থেকে বের হয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানের দিকে যাবার ইচ্ছে হল। শুক্রবার অনেক মানুষ থাকে। মানুষ দেখতেও ভাল লাগে। তাই সেই দিকেই যাচ্ছিলাম। রাস্তায় অনেক রিকশা থাকার কারণে আমি আস্তেই যাচ্ছি। বাইক নিয়ে হর্ণ বাজিয়ে উড়াধুরা টান কখনই দেইনি। আর গলি বা এলাকার রাস্তায় এমনিতেই রিকশার জ্যাম থাকে। তাই এসব উঠতি বয়সী পোলাপান করে থাকে।
আমি আমার মতই যাচ্ছিলাম। হুট করেই একটা রিকশা ইউটার্ন নিয়েছে। হুট করে মানে হচ্ছে একদম হুট করেই, আমি সেকেন্ডের ভগ্নাংশের সময় পেয়েছি বাইকটি ব্রেক করার। হয়ত রিকশা লাগতে পারত। ক্ষতি হয়ত তেমন হত না, তবে শখের বাইকের কিছু তো ক্ষতি হতই। আমি বাইকটি দাড় করিয়ে রিকশাওয়ালার দিকে একটু তাকিয়ে রইলাম। আমি কিছুই বলিনি তাকে। কারণ বাইক চালানোর সময় মাথা গরম করা যাবে না।
আমি সুন্দর ভাবে চলে যাব বলে এক্সেলারেশন দিচ্ছি তখন রিকশাওয়াল বলে বসেছে, "চোখ নাই, দেখেন না"। সত্যি বলতে আমার মেজাজ তখন গরম হয়েছে। এই বেটাকে আমি কিছুই বললাম না, সে আমাকে এই কথা বলে। তখন আমি ওকে একটু চড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "আমি কি তোমাকে কিছু বলছি?"। তো সে রীতিমতো আমাকে শাসিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি তখন আর চুপ থাকতে পারিনি। আমিও ইউটার্ন নিয়ে ওকে যেয়ে ধরলাম। আর একটা কথাই জিজ্ঞেস করছি, আমি কি কিছু বলছি। তখন সে থতমত খেয়ে বলে যে না, এই সেই, এমনকি ওনার যাত্রী পর্যন্ত আমাকে বলেছে ভাই আপনার কোন দোষ নাই। কিন্তু সে স্বীকার করবেই না। আমার পেছনে এক বাইকার ছিল। উনিও চলে আসল।
উনিও রিকশাওয়ালাকে বলল, তোমাকে তো কিছু বলে নাই। তুমি উলটা কথা বললা কেন। কিন্তু তার এক কথা, উনি এই সেই ভাবে বলেন। আমি তখন আবার জিজ্ঞেস করছি আমি কি গালি দিছি? খারাপ কিছু বলছি? উত্তর দেও। তখন বলে যান যান দোষ আমারই। কিন্তু তার বলার ধরণ ছিল হু, দোষ আমার না আমি তাও স্বীকার করে নিলাম।
রিকশাওয়ালাদের প্রতি একটা সিম্প্যাথি কাজ করত। এখন ধীরে ধীরে সেটা কমে এসেছে। আরও কমে যাবে। এরা কোন উপলক্ষ্য পেলেই রেট বাড়িয়ে দেয়। ৪০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা হয়ে যায়। পুরো সিন্ডিকেট করে বসে থাকে। তাও ভাড়া কমায় না। এরপর তো ওইদিকে যাব না, তো দশ বিশটাকা বাড়ায়ে দিয়েন। এসব আছেই।
এরপর আমি আর কথা না বাড়িয়ে নিজের কাজে চলে গিয়েছি। কারণ দেরি হয়ে যাচ্ছিল। এজন্য ওই রিকশাওয়ালার সাথে আর কথা বাড়াইনি।
ঘটনা - ২
ঘুরতে ঘুরে চলে গেলাম হাতিরঝিল। শীত হলেও মানুষের আনাগোনা কম না। ভাবলাম রামপুরা বা বনশ্রীর দিকে যাই। তো বনশ্রীর দিকে ঢুকতেই একটা পুলিশ বক্স আছে। সেখানে সার্জেন্ট সহ কনস্টেবল দাঁড়িয়ে থাকে। আমি ওই দিকে প্রায় যাই। কিন্তু আমাকে সেভাবে কখনই থামায়নি। আজকে থামিয়েছে।
আমি জানি কি কি দেখাতে হবে, তাই আমাকে দাড় করানোর সাথে সাথে। আমি ব্যাগ থেকে লাইসেন্স, বাইকের ট্যাক্স টোকেন, রেজিস্ট্রেশন কার্ড বের করে দিলাম। ব্যাস আমার কাজ শেষ। সার্জেন্ট উনি আমার সব কিছু দেখে আমাকে কাগজ ও কার্ড ফেরত দিলেন। আমি ছোট করে তাকে বললাম, থ্যাংক ইউ। উনিও জবাবে বললেন, ওয়েলকাম। সেই সাথে একটা মুচকি হাসি দিলেন।
বিশ্বাস করুন আমার যে কিছু আগে রিকশাওয়ালার সাথে ঝগড়া হয়েছিল সেটা বেমালুম ভুলে গেলাম। আমি পুলিশের কাছ থেকে এমন সুন্দর ব্যবহার পাবো সেটা কিন্তু একটু হলেও সবার কাছে স্বপ্নাতীত বলে মনে হয়। তবুও মানুষটার ব্যবহার আমাকে ও ৫ মিনিটে বেশ মুগ্ধ করেছে। কিন্তু জ্যাকেট পরে থাকার কারনে নাম দেখতে পারিনি।
ঠিক আমার অপর পাশে এক বাইকার বাইকের কাগজ ছাড়াই চলে এসেছে। উনি ওনার কাছে গিয়ে কাগজ চাইলেন তখন সে বাসায় বা কোথাও ফোন দিয়েছে কাগজের জন্য। সুন্দর ভাবে তাকেও বললেন যে আপনি কাগজ দেখিয়ে চাবি নিয়ে যাবেন। এই বলে বাইকের চাবি নিয়ে গেলেন। কোন জরবদস্তি না, কথাকাটাকাটি না। বেশ সুন্দর ও ভদ্র ভাবেই বললেন।
আমি যখন চলে আসছি তখন ভাবছি সব সার্জেন্ট যদি ওনার মতো হতো। তবে আমরা যারা মোটরসাইকেল রাইড করি তাদের রাস্তা ঘাটে চলে আর অসুবিধা হত না। এরপর আমি আমার মতো হাতিরঝিল ঘুরে বাসায় চলে আসি।
দুদিন হল বেশ ঠান্ডা ও শীত। সবাই সাবধানে থাকবেন। আজকের মত এই পর্যন্তই।
ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৩৯