"চরণ ধরিতে দিয়োগো আমারে
নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে।
কোন কোন সময় মনে হয় বাংলাদেশের বইপ্রেমী যারা আছেন তারা বইয়ের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন কিভাবে। সবার ক্ষেত্রে বিষয়টি এক নয়৷ দেখা যায় কেউ কেউ তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, এসব পরে বড় হয়েছেন। আবার কেউ সুনীল, সমরেশ, শরৎ, বঙ্কিম, শীর্ষেন্দু পড়েছেন। তবে সকল বই প্রেমী পড়েছেন এমন একজন লেখক সম্ভব হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদ কে নিয়ে তর্ক বিতর্ক থাকতে পারে৷ তিনি বাজারী লেখক হতে পারেন, অথবা সাহিত্যে গভীরতা কম থাকতে পারে, অনেক কিছুই হতে পারে। তবে তিনি যেটা করেছেন সেটা বিপ্লবের কাছাকাছি থাকবে। বাংলাদেশে বইপ্রেমীর সংখ্যা বাড়াতে তিনি যে অবদান রেখেছেন সেটা অনস্বীকার্য। তার একটিও বই পড়েনি এমন বই পড়ুয়া খুব কম রয়েছেন।
যতদূর জানি তিনি কখনই এটা বলেননি যে আমার বইয়ে সাহিত্যের গভীরতা অনেক বেশি, বা আমার লেখায় সাহিত্য উতরে যাবে। তিনি শুধু লিখেছেন। যদিও তাকে ও তার সাহিত্য নিয়েও কম বিতর্ক নেই। তবে মানুষ হুমায়ূন সম্ভবত অনেক একা ছিলেন। ওই যে দিন শেষে আমরা সবাই একা এমন নয়। সত্যিকার অর্থেই একা।
এত যশ, খ্যাতি তাকে স্পর্শ করলেও রেখে কর্পদশুন্য। তিনি চারপাশে মানুষ নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন। তবে সব সময় সেটা হয়ে উঠত না৷ হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ মানুষ খুব কম ছিল। সেখানেও তিনি অনেক সময় সবাইকে ধরে রাখতে পারেননি। হয়ত মান অভিমান অভিযোগ সব কিছু মিলিয়ে সেই মানুষটা আর তার যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি৷
ব্যক্তিগত জীবনের বাইরে লেখালিখির জীবনে হুমায়ূন আহমেদ অন্য একজন মানুষ ছিলেন। এছাড়া সিনেমা বানানোর প্রতি তার অসম্ভব রকমের তাড়না ছিল। তার সে ছবি "ঘটুপুত্র কমলার" জন্য তিনি নিজেই সব কাজ করেছেন। বলা যায় তিনি নিজ মুখেই বলেছেন এটাই তার শেষ সিনেমা। সিনেমা বানানোর ধকল আর নিতে পারছেন না৷
লেখক শাকুর মজিদ হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিন গুলোতে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মোটামুটি সব জায়গাতেই তার অবস্থান ছিল৷ তিনি খুব কাছ থেকে হুমায়ূন আহমেদ এর ব্যক্তিগত ও লেখালিখির জীবন তুলে এনেছেন। তবে "যে ছিল এক মুগ্ধকর" বইটিতে হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিচ্ছবি বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে। তবে লেখক চেষ্টা করেছেন বিতর্কিত বিষয় গুলোকে বাদ দিতে। আর সেটা করেছেনও। এজন্যই হয়ত বইটি আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে।
হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে আমার সেভাবে ফ্যাসিনেশন কখনও ছিল না। তবে ওনার লেখা কিছু বই অবশ্যই পাঠ্য বলা যায়। আত্মজীবনী বা এই স্মৃতিকথা হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিন গুলিকে বেশ সুন্দর ভাবে তুলে এনেছেন। লেখকের সাথে শেষ কথোপোকথন ও হুমায়ূন আহমেদের বিদায় সব কিছুই তুলে এনেছেন এখানে।
হুমায়ূন আহমেদ হয়ত বাংলা সাহিত্যের সেই গভীরতা দিয়ে যেতে পারেননি অথবা পেরেছেন এটা পাঠকবোদ্ধা সমাজ ও সাহিত্যপ্রেমীরা ভাল বলতে পারবেন। আমি ক্ষুদ্র বই পড়ুয়া এটাই বলতে পারি যে তিনি বইবিমুখ একটা প্রজন্মকে বইয়ের দিকে আসতে অনেক বেশি উৎসাহী করেছেন।
বইয়ের শেষ কথাটি লিখছি,
স্যার, আমরা ভাল আছি।
আপনি আছেন তো
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:০৮