somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তির জন্য চুক্তি তবুও বেদনার্ত সমাপ্তি - পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (বুক রিভিউ)

০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যুদ্ধ নয় শান্তি চাই

যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে আমাদের কারো সন্দেহ নেই। তবুও মানুষ যুদ্ধে জড়ায়৷ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়। যুদ্ধের জন্য নিজেদের তৈরি করে। ঠিক বিপরীত দিকে যুদ্ধের বিপক্ষে শান্তির পক্ষে এজেন্ডা দাড় করিয়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷ কারণ যুদ্ধে শুধু সামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয় এমন নয়৷ পুরো বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এক একটি যুদ্ধ।

মানুষ ভ্রমণ প্রিয়। কারণ ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ অপর একটি জায়গার শিক্ষা সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পায়। মানুষের ভেতর জানার আগ্রহ তৈরি হয়। মানুষ তাই ভ্রমণ করে, সেটা নিজ দেশ, অঞ্চল বা অন্য কোন দেশ অঞ্চলে।

এখন যুদ্ধের সাথে দেশ ভ্রমণের সম্পর্ক কোথায়৷ এটাও সঠিক। কারণ যুদ্ধের সময় মানুষ আনন্দ নিয়ে ভ্রমণ করে না। জীবন বাচাতে ভ্রমণ করে। তবুও "পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ" যুদ্ধ ও ভ্রমণ দুটোর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বর্ণনা করেছে।

এই বইটির নাম দেখে প্রথমে মনে হবে যে বইটি সম্ভবত ভ্রমণ কাহিনী। কারণ শুরুতে পেশোয়ার থেকে যাত্রা শুরু করে সেটি তাসখন্দ ও তাদের জীবন মান ভূ-প্রকৃতি, রাজনীত প্রতিটি বিষয় উঠেছে বললে ভুল হবে না। বিষয়টি বলা যায় অনেকটা তেমনই। তবুও এটা কোন সাধারণ ভ্রমণ নয়। কারণ বইটি আদৌ গতানুগতিক ভ্রমণ কাহিনী নয়।

বইটির শুরুটা কিন্তু যুদ্ধ থেকে, মানে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ৷ যুদ্ধটা হচ্ছে নিজেদের সীমান্তের কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে৷ কে কার নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে পারে সেটাই দেখা হচ্ছিল। যদিও এই যুদ্ধ সেপ্টেম্বরের ১৮ দিন ধরে চললেও পাকিস্তান অপারেশন জিব্রাল্টার ও ভারত অপারেশন গ্র্যান্ড স্লাম নামে প্রায় এক মাস অভিযান পরিচালনা করেছে৷ এই যুদ্ধ হয়ত অনেক দিন বা দীর্ঘ সময়ের জন্য পৃথিবীর পট পরিবর্তন করে দিতে পারত। যদি না একজন মানুষ এর মাঝে আসতেন।

তিনি আর কেউ নন তৎকালীন সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই কোসিগিন। তিনি এই যুদ্ধ থামাবার উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট কে আমন্ত্রণ জানান। নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে নির্ধারণ করা হয় উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ।

ভারত পাকিস্তান উভয়পক্ষ এই আলোচনার জন্য সাড়া দেয়। যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও ভারতীয় কর্মকর্তার আসেন৷ আর পাকিস্তানের পক্ষে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সাথে তৎকালীন পাকিস্তানের কর্মকর্তারা সফর সঙ্গী হন। এই সফর সঙ্গীদের তালিকায় ছিলে খ্যাতনামা লেখক ও সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার।

মুলত "পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ" বইটিতে ছোট আকারে তাসখন্দের আতিথিয়েতা, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা, ও ভূ-প্রকৃতির আলোচনা করেছেন। সেই সাথে পাক-ভারত আলোচনা ও উত্তেজনার বর্ণনাও উঠে এসেছে।

এখন শহীদুল্লাহ কায়সার ছাত্রজীবনে বামপন্থী বা বাম ঘরনার রাজনীতির সাথে সংশ্লিস্ট ছিলেন। এর কারণে অনেক বার জেলেও গিয়েছেন রাজনৈতিক কারণে৷ আর এ কারণে সমাজতান্ত্রিক দেশ ভ্রমণের সুযোগ ও সেই দেশ সম্পর্কে কাছ থেকে জানা অনেকটাই স্বপ্নের মতো। তিনি তাসখন্দের নামার পর প্রতিটি পদক্ষেপে মুগ্ধ হয়েছেন, তা তার লেখা থেকে বোঝা যায়৷

তিনি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছেন রাষ্টীয় ও যৌথ খামারের নিখুত ব্যবস্থাপনা দেখে৷ কারণ তিনি রাষ্টীয় ব্যবস্থাপনায় মানুষ ও রাষ্ট্রের সংযোগ দেখতে পেয়েছেন। যদিও এর ভবিষ্যত কি হবে বা কেমন সেটা তিনি বিশ্লেষণ করেননি।

এছাড়া তাসখন্দের ভূপ্রকৃতি, মানুষ নিয়ে লেখকের পর্যবেক্ষণ গুলো নিখুত না হলেও বেশ উপযোগী বলা যায়। লেখক তাসখন্দের আতিথিয়েতায় অনেক বেশি মুগ্ধ হয়েছেন। এছাড়া তরুণ তরুনীদের ভেতর জ্ঞানচর্চায় যে আগ্রহ উনি দেখেছেন তা এইখানে বেশ বিরল বলা যায়। যদিও লেখক এখানে সাংবাদিক হিসেবেই গিয়েছেন তাই তার কর্মক্ষেত্রে কিছুটা আভাসও আমরা পেয়েছি।

বইটির শেষ কেমন হবে সেটাই ভাবছিলাম। তবে পরিসমাপ্তি হয়েছে সেই সময়ের সবচেয়ে বিতর্কিত একটি বিষয় নিয়ে। যা আজও বিতর্কিত হয়েই আছে। সমাপ্তিতে আমরা দেখতে পাই লাল বাহাদুর শাস্ত্রী যেদিন তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, ঠিক ওই দিন রাতে পরলোকগমন করেন ।

এই মৃত্যু নিয়ে পরবর্তিতে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে। অনেক তথ্য উপাত্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ এমনকি এই কন্সপাইরেসি থিওরি নিয়ে বিবেক আগ্নিহোত্রী তৈরি করেছেন "দ্য তাসখন্দ ফাইল" মুভিটি৷ লেখকের উক্তি থেকে আমরা দেখতে পাই -

"রাত তিনটা। হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল। রিসিভার কানের কাছে নিতেই নির্বাক হলাম। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পরলোকগমন করেছেন। অবিশ্বাস্য কথা। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে যে লোকটা নাচ দেখল, গান শুনল, স্বাভাবিক ভাবে কথা বলল, সে লোকটা এখন এই পৃথিবীতে নেই?"

লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজীর মৃত্যু একটি ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করে। তবে ওনার মৃত্যুর পর মৃতদেহ বিমানে তুলতে কাধ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই কোসিগিন এবং রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান। যদিও চুক্তি স্বাক্ষরের পর লেখকসহ সবাই ভেবেছিল এই দুই দেশের মধ্যে এবার শান্তি আসবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুটি দেশ এগিয়ে যাবে৷ রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি সব কিছুতেই নিজদের স্থান তৈরি করে নেবে।

তবে সব স্বপ্নের একটা সময় থাকে, এই স্বপ্নেরও সময় ছিল। তাও ঠিক ৫ বছর। কারণ পাচ বছর পর লেখক নিজেও হয়ত ভাবেননি তিনি নিজেও হারিয়ে যাবেন। ঠিক ৫ বছর পর দুই দেশ দেখল ১৯৭১। তৈরি হল নতুন একটি দেশ, যার নাম "বাংলাদেশ"। এই দেশ তৈরি হতে গিয়ে লেখক নিজেও হারিয়ে গিয়েছেন ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে শহীদুল্লাহ কায়সার নিখোজ হন। এরপর তিনি আর কখনও ফিরে আসেননি।

বই: পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ
লেখক: শহীদুল্লাহ কায়সার
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:৪২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার বাকস্বাধীনতা সব সময়ই ছিলো, এখনো আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯



ছোটকালে ক্লাশে অপ্র‌য়োজনীয় কথা বলে, অকারণ অভিযোগ করে, অন্যকে কটু কথা বলে শিক্ষকের মার খেয়েছিলেন নাকি? আমি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ক্লাশে কিংবা সহপাঠিদের বিরক্তির কারণ হইনি; ইহার পেছনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিডলাইফ ক্রাইসিস: বাঁচতে হলে জানতেই হবে

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০০



"ধুর ছাই!
কিচ্ছু ভাল্লাগে না।
বা**, কী করলাম এতোদিন।
সব ফালতু।"


ক্যালেন্ডার কী বলছে? চল্লিশ পেরিয়েছে?

তাহলে দশটা মিনিট দিন। কারণ ব্যাপক সম্ভাবনা ৯৯% যে এই মুহূর্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের বাড়ির কাজের বুয়া যদি ব্লগে আসত ! :D

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৩

কয়েক বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির দীর্ঘদিন এক মহিলা কাজ করেছেন । তারপর তার ছেলেদের অবস্থা একটু ভাল হয়ে গেলে আর তাকে কাজ করতে দেয় নি। তবে অভ্যাসের কারণে বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি ১১ বছর ১ সপ্তাহ

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪২


গত কয়েকমাস যাবত চাকরিগত ঝামেলায় ব্লগে তেমন সময় দিতে পারিনি। দেশের পরিস্থিতির মতো আমার পরিস্থিতিও ছিল টালমাটাল। আগের চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি টিকিয়ে রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলেছি। অফিসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×